আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট (১০ ভাগ লাজুক খ্যাঁকের জন্য)
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ আমি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আপনাদের সাথে আমার চিন্তা-ভাবনাও সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেয়ার করব। |
---|
। কিন্তু এ রাষ্ট্র গঠনের মূল ভিত্তি ছিল অসম ব্যবস্থা। পরিপেক্ষিতে দেশ শোষণের প্রথম ধাপ ছিল ভাষা অর্থাৎ তারা বাংলা ভাষাকে চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল। একটি দেশের ভাষা যদি কেড়ে নেওয়া হয় তাহলে তাদের শোষণ করা খুব সহজ। দেশ ভাগ হওয়ার মাত্র কয়েক মাস পরেই ১৯৪৮ সালের প্রথম দিকেই ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। প্রথমত এই আন্দোলন সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে সূচনা হলেও এটি ধীরে ধীরে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ নেয়। পাকিস্তানের ভেবেছিল এখানে বহু ভাষাভাষী লোকজনের ভাষাকে একটি ভাষায় রুপান্তর করা হয় তাহলে অন্য ভাষার প্রয়োজন নেই। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তারা সংখ্যায় কম হলেও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল যদিও পাকিস্তানের ৫৬ ভাগ লোক বাংলা ভাষায় কথা বলতো। তারা সম্পূর্ণ বাংলা কে অগ্রাহ্য করল এবং রাষ্ট্রভাষা উর্দু হিসেবে ঘোষণা করল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ববাংলায় এক প্রতিবাদের ঝড় ওঠে তারা কখনোই উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে নারাজ । এভাবে ধীরে ধীরে সবার মনে ভাষার জন্য লড়াই মনোভাব সৃষ্টি হয় ,গড়ে ওঠে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ সহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠন।
১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসলে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রেসকোর্স ময়দানে উর্দুই হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে ঘোষণা দেয় এবং পরের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সরকারি ভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন উর্দু হবে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাথে সাথে উপস্থিত ছাত্ররা না না ধ্বনিতে কম্পন সৃষ্টি করেন। পুরো হল না ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে যায়। এরপরে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যুর পরে কিছুদিন এই আন্দোলন স্থগিত হলেও ধীরে ধীরে সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেক্ষাপট বদলাতে থাকে। তাছাড়া হয়তো অনেকেই জানেন না ১৯৪৯ সালের দিকে বাংলাভাষাকে সুকৌশলে বদলানোর জন্য তারা আরবি ভাষায় বাংলা হরফ লেখার প্রচলন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। কিন্তু আন্দোলনের মুখে তা বানচাল হয়ে । বাংলাদেশের সকল আন্দোলনের সূতীকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হতে শুরু করে। পরে যখন খাজা নাজিমুদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন তিনিও উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন এর প্রতিবাদে ছাত্ররা ধর্মঘট ডাকেন। এরপর নাজিমউদ্দিনের ওই উক্তির প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৩০ জানুয়ারি মাওলানা ভাসানী সভাপতিত্বে এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
এই সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গে হরতাল আহ্বান করে কিন্তু সেই হরতাল পালনে বাধা দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি বাহিনী ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ভাষার প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের আপোষহীন প্রতিবাদকে দমাতে পারেনি । তাই নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় তারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ সামনে দিয়ে যখন বর্তমান শহীদ মিনারের নিকটবর্তী এলাকায় পৌঁছালে পাকিস্তানি বাহিনীর গুলি করে। এগুলিতে শহীদ হন রফিক, বরকত, সালাম, জব্বার, সহ আরো অনেকে। পৃথিবীর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যারা প্রথম ভাষার জন্য রক্ত দিল। মুহূর্তের মধ্যে এই খবর সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবাদ লিপি পাকিস্তান সরকারের কাছে আসতে থাকে । তারা যখন দেখল আন্দোলনকে আর দমন সম্ভব না বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করে উপায় নেই তখন ১৯৫৬ সালে তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করে।
কিন্তু বাঙ্গালীদের মনে আজন্ম একটি দাগ রয়ে যায় যে দাগ ধীরে ধীরে বিভিন্ন আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আর এই ভাবেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশের জনগণ একুশে ফেব্রুয়ারিকে রাষ্ট্রভাষা দিবস হিসেবে পালন করে । ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন হয় এবং ২০১০ সাল থেকে সারা বিশ্বে এ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বর্তমান ভাষাভাষীর দিক দিয়ে বাংলা ভাষা পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। এই ভাবেই বাংলা ভাষা সারা পৃথিবী জুড়ে স্বীকৃতি পায় অপরাজেয় জাতির ভাষা হিসেবে। পৃথিবীর বুকে একমাত্র রাষ্ট্র যারা ভাষার জন্য ইতিহাস লিখেছিল তাদের জীবন দিয়ে। সারা বিশ্বে এই দিনটি ঐতিহ্য ও গর্বের সহিত পালন করা হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে।
আমার ছবির লোকেশন W3W
ধন্যবাদ
সারা বিশ্বের কাছে এ বাংলা ভাষা অনেক প্রিয়। সারা বিশ্ব একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে। আপনার পোস্টে আপনি অনেক সুন্দর করে মাতৃভাষা জয়ের ইতিহাস গুলো তুলে ধরেছেন যেগুলো জানতে পেরে অনেক ভালো লাগলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনি দারুন একটি মন্তব্য করেছেন আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
তথ্যপূর্ণ একটি পোস্ট পড়তে আমার ভীষণ ভালো লাগে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসটা আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন। প্রতি বার যখন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসটা পাল্টে দেখি তখনই নিজের ভাষার প্রতি একটা মায়া ও ভালোবাসা অনুভব করি। আর যারা এ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তাদের স্মরণ করলে বুক কষ্ট ভরে যায়। ধন্যবাদ আপু সুন্দর করে ভাষা আন্দোলনের বিষয়বস্তুটি তুলে ধরার জন্য , খুব ভালো লিখেছেন আপনি।
আপনি অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
সুন্দর ফটোগ্রাফির পাশাপাশি ভাষা আন্দোলনের বিষয়গুলো সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। বাঙালি হিসেবে আমাদের ভাষা আন্দোলনের বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অতি জরুরী। পৃথিবীতে শুধু বাঙালি জাতি তাদের মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে।
আপনি অনেক সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন ভাইয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনাকে স্বাগতম আপু 🥰
মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট গুলো আপনি অনেক সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। যেটা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে । আপনার তোলা ফটোগ্রাফি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে । এত সুন্দর কিছু আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল
আমার লেখা আপনার লেগেছে শুনে খুশি হলাম। শুভকামনা রইল।
অসাধারণ লিখেছেন। আমার কাছে আপনার লেখাটা অনেক ভালো লেগেছে।ভাষা শহীদদের নিয়ে সুন্দর করে সব কিছুর বর্ণনা দিয়েছেন।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের গর্ব।সুন্দর কিছু ছবি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
আপনার ভাল লেগেছে শুনে আমার ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রেক্ষাপট নিয়ে আপনি ব্যাপক আলোচনা করলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অনেক বিষয় আপনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। আমার কাছে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদদের স্মরণে ছাত্র সমাজের অগ্রগতিতে বিষয়টি অনুপ্রাণিত করে। এত সুন্দর করে শহীদদের স্মরণ উপলক্ষে তথ্যমূলক কিছু তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যটি দেখে খুব ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী আমাদের এই দেশ সম্পর্কে পেয়ে গেলাম আপনার পোস্টটি সত্যি অনেক যুক্তিশীল ছিল। একুশে ফেব্রুয়ারি হলো আমাদের বাঙালির কাছে অনেক বিশেষ একটা দিন । মাতৃভাষার জন্য কোন দেশ জীবন দিয়েছে এই বিষয়টি ইতিহাসে তেমন একটা দেখা যায় না সত্যি আমরা বাংলা ভাষা পেয়ে গর্বিত। সত্যি আপনার পোস্টটি অনবদ্য ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থিত হন করার জন্য।
আমি শুধু সংক্ষিপ্তভাবে লেখার চেষ্টা করেছি। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনি অনেক সুন্দর একটি পোষ্ট উপস্থাপন করেছেন। আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে একুশের চেতনা জাগ্রত হবে অনেকের মাঝে। অজানা তথ্য আপনি উপস্থাপন করেছেন যেগুলো হয়তো বা জানতাম কিন্তু আমাদের মনে ছিল না এইসব জিনিস গুলো জানতে পেরেছি আপনার পোস্টের মাঝে থেকে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি জ্ঞান মূলক পোষ্ট করার জন্য।
আপনার মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। জানি আমাদের এই মাতৃভাষার জন্য আমাদের ভাইয়ের রক্ত তাজা রক্ত দিতে হয়েছে এবং অনেকের শহীদ হয়েছে। আর রক্তের বিনিময়ে আমাদের মাতৃভাষা অর্জিত বাংলা ভাষা। আর সেই ভাষার আমরা যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনা। তবে আজকে আপনার এই তথ্য বহুল পোষ্ট থেকে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি, অনেক কিছুই অজানা ছিল। তবে সর্বপ্রথমে রফিক, জব্বার, বরকত, সালাম তাদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ভাষা। ভাবতেই কষ্ট লাগে আমরা সেই বাসার যথাযথ মর্যাদা দিতে পারি না। আর আপনার এই তথ্য বহুল পোষ্ট থেকে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। আর আমাদের সাথে এত সুন্দর করে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আপনার প্রতি রইল আন্তরিক অভিনন্দন এবং ভালোবাসা অবিরাম।
আপনি একদম সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার এই পোস্ট থেকে প্রায় বিস্মৃত হয়ে যাওয়া ইতিহাসের অনেকটা মনে পড়ে গেল। বেশ গুছিয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে ।