ঐতিহাসিক রামসাগর দর্শন (১০%🦊🦊🦊)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। এই ঈদে আপনারা সবাই বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেছেন এবং ঘোরাঘুরি বিভিন্ন চিত্র আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। ঈদ আসলে আমাদের মাঝে আনন্দের সীমা থাকে না বিশেষ করে ঈদুল ফিতরের আনন্দ একটু বেশি হয় ।কারন এই সময় নতুন জামাকাপড় বেশি পরিধান করা হয় সেই সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করার জন্য উপযুক্ত। যদিও বৃষ্টি ছিল ঈদের দিনে তেমন কেউ ঘোরাঘুরি করতে পারে নাই কিন্তু পরবর্তী দিনগুলোতে আপনারা যে বেশ ঘোরাঘুরি করেছেন ভালোভাবে লক্ষ্য করেছি। তবে আমি আপনাদের মত তেমন ঘোরাঘুরি করতে পারিনাই। শুধু ঢাকায় আসার আগে আমার খালামনির বাসায় গিয়েছিলাম। খালামনির বাসায় যাওয়ার কারণ হচ্ছে খালামণি আমাকে ভীষণ ভালোবাসে ।সেখানে গেলে আমার মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তাই বাসায় থাকলে যখন মন ভালো থাকে না নিজেকে একা মনে হয় তখন আমি চলে যাই খালামনির বাসায়। রংপুর থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব মাত্র 2 ঘন্টা তাই সহজেই যেতে পারি । তবে এবারে খালামনির বাসায় গিয়ে আমি নতুন একটি জায়গায় গিয়েছি সেই জায়গা সম্পর্কে আপনাদের সাথে আলোচনা করব ।

20220508_111805.jpg

siam,.png

দিনাজপুর শহরের একটি প্রাচীন ও বিখ্যাত জায়গার নাম হচ্ছে রামসাগর। নাম সাগর হলেও এটি আসলে একটি বিশাল পুকুর। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের সব থেকে বড় মনুষ্য সৃষ্ট একটি পুকুর হচ্ছে রামসাগর। রামসাগর এতটাই বিশাল এই পাড় থেকে ওই পাড় খুব আবছা দেখা যায়। আমার অনেক দিনের শখ ছিল রামসাগর ঘুরতে যাওয়ার তাই আমার কাজিন দের নিয়ে রামসাগর ঘুরতে গেলাম এই প্রখর রোদে। রোদের মাঝে যাওয়ার আর একটা কারণ ছিল আমার ওইদিন বাসায় আসা লাগত। রামসাগর দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় 10 কিলোমিটার দূরে তাজহাট গ্রামে অবস্থিত। বলা হয়ে থাকে রাজা রামনাথ এই পুকুর খনন করেছেন। খনন করতে প্রায় তৎকালীন 30 হাজার টাকা ব্যয় হয়েছি ।পুকুর খননের কাজে প্রায় 15 লাখ শ্রমিক কাজ করেছে। জনশ্রুতি হিসেবে শোনা যায় তৎকালীন সময়ে অনেক খরা যাচ্ছিল,আশেপাশে পানির অভাব, প্রজারা পানির অভাবে ফসল চাষ করতে পারছেনা এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছিল।

20220508_111658.jpg

siam,.png

তাই রাজা জনগণের কথা বিবেচনা করে এবং খরা থেকে রক্ষা করার জন্য এই বিশাল পুকুর খনন করে। সেখানে গিয়ে আমি এক বৃদ্ধ লোকের সাথে আলাপ করি তাকেই পুকুর সম্পর্কে যখন জিজ্ঞেস এই করলাম যে আসলে কিভাবে এই বিশাল খনন করা হলো বা কেন করা হলো ?তিনি বলেন তৎকালীন রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে জনগণের দুঃখ-দুর্দশার দূর করার জন্য একটি বিশাল পুকুর খনন করতে হবে। পানি উঠার জন্য তার নিজ পুত্রকে বলি দিতে হবে।এছাড়াও বিভিন্ন জনশ্রুতি সেখানে প্রচলিত আছে এখনো।

20220508_111646.jpg

siam,.png

তবে আমার কাছে পুকুরের সৌন্দর্য অনেক ভালো লেগেছে এর চারপাশে প্রচুর গাছপালা । বর্তমানে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এখানে বনভোজনে নিয়ে আসা হয় ঐতিহাসিক কিছু জানার জন্য। যেহেতু এই রামসাগর টি বর্তমান বন বিভাগের অধীনে চলে গেছে সেই জন্য দেখলাম এখানে কৃত্রিম একটি চিড়িয়াখানা করা হয়েছে। এই ছাড়াও রয়েছে অতিথিদের থাকার জন্য এক বিশাল অতিথিশালা। তবে আমাকে সবথেকে যে বিষয়টি মুগ্ধ করেছে তা হচ্ছে এই জায়গায় স্নিগ্ধ বাতাস। শহরের ইট-পাথরের জীবন থেকে মুক্ত বাতাস পেতে হলে এই জায়গাটি হতে পারে অনন্য।চারপাশটা গাছপালায় ঘেরা পুকুর মাঝে এক মনোরম দৃশ্য। পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ফুচকার দোকান রয়েছে। এই পুকুর চারপাশ হেঁটে ভ্রমণ করা আমাদের পক্ষে ভীষণ কঠিন ।

20220508_111549.jpg

siam,.png

তবে আমরা যখন ভিতরে প্রবেশ করার জন্য গেটের কাছে আসলাম সেখানে ভ্যান গাড়ী অনেক দেখা যায় ।তারা আমাদের বলল যে আপনারা ভ্যানে উঠেন এত বড় জায়গা ঘুরে দেখতে পারবেন না ।এটার আয়তন অনেক বড় আমরা গা জুরি করে বিশ্বাস করিনি ।ভেবেছিলাম ভাঁওতাবাজি করছে আমাদের সাথে। তাই আমরা হেঁটেই রওনা দিলাম কিছুক্ষণ যাওয়ার পরে আমরা অনেকটাই ক্লান্ত হয়ে গেছি কারণ একদিকে প্রখর রোদ অন্যদিকে পায়ে হেঁটে যাওয়া। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ভ্যানে করে পুকুরের চারপাশে ঘুরে দেখব।তবে একটা জিনিস খুবই ভাল লেগেছে ভ্যানে চড়ে যখন চারপাশ সুন্দর লাগছিল আমার কাছে ।একদিকে মনোরম বাতাস পাচ্ছিলাম অন্যদিকে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছিল।

20220508_105225.jpg

siam,.png

তবে আমার মনে হয় এই জায়গাটিতে আরো কাজ করার আছে। যদি এই জায়গা সুপরিকল্পতভাবে কাজ করা যায় তাহলে অনেক সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে রামসাগর। কারণ আমি দেখেছি এই জায়গাটি পুকুরে ছাড়া পাড় গুলো অপরিকল্পিতভাবে পড়ে আছে। কোন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ নেই, কোন বিনোদনের জন্য তেমন কিছু নেই শুধু পুকুর ছাড়া। আর একপাশে কৃত্রিম চিড়িয়াখানা করা হয়েছে যা প্রায় জরাজীর্ণ হয়ে আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে সরকার যদি এখানে ভালো একটি পর্যটনকেন্দ্র করার উদ্যোগ নেন তাহলে প্রতিবছর এখান থেকে ভালো রাজস্ব আদায় হবে।

পরিশেষে বলব রামসাগর পুকুর আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। বিশাল এই পুকুরের নির্মল বাতাস আমার মন খারাপের সময়কে ভালো করে দিয়েছে। আমরা যে সময় গেছি তখন প্রায় দুপুর বেলা তাই পুকুরেই ভেতরে থাকা নৌকা তে উঠতে পারিনি। এই নৌকাতে উঠতে পারলে ভালো লাগাটা বেশি হতো। পরবর্তীতে গেলে এই নৌকাতে অবশ্যই উঠবো।

Sort:  
 2 years ago 

ছোটবেলায় রামসাগর এ পিকনিকে যেতাম। জায়গায় টি অনেক ভালো ছিলো, এই সাগরের একটি ইতিহাস রয়েছে। তবে এর পরিবেশটি অনেক শান্ত। যে কারো মন শান্ত করার জন্য যথেস্ট। আমি কিছুদিন আগে নীলসাগর গিয়েছিলাম।

 2 years ago 

আমি নীলসাগরে কখনও যায়নি তবে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। রামসাগর নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। তাহলে টুরিস্ট আকৃষ্ট হবে।

 2 years ago 

নীল সাগর অনেক উন্নত হয়েছে, তবে রাম সাগরের অবস্থা ভালো না। কিছু দিন আগে ও গিয়েছিলাম।

 2 years ago 

আমিও ঈদ এর দিন কোথাও যেতে পারিনি। তবে ঈদ এর পরের দিন ভালোই ঘুরেছি। আর আমার খালাও আমাকে খুব আদর করে। তাই ওনাদের বাসায় অনেক ভালো লাগে। যে যায়গাটি ঘুরেছেন ভালোই লাগলো দেখে। তবে অবাক হলাম এতো আগের সময়ে মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ১৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেছে। যদিও তখন টাকার মান অনেক অনেক বেশি ছিলো।

 2 years ago 

আমি ঈদের দিনও যেতে পারিনি ঈদের পরের দিন যেতে পারিনি। আপনার ঘুরাঘুরি তো দেখেছি পোস্টে।

 2 years ago 

রামসাগর ভ্রমণ করে তথ্য এবং তথ্যবহুল আলোচনা আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন খুবই ভালো লাগলো 15 লক্ষ শ্রমিক মাত্র 30 হাজার টাকায় বড়ই প্রকৃতি খুন করেছে আসলে সেই সময় তো টাকার অনেক দাম ছিল।
এটা ঠিক যে রাজা পানির অভাব পূরণ করার জন্য বড়ই পুকুর খনন করে তবে স্বপ্ন এবং তার নিজ পুত্র বলি দেওয়ার খবরটা সম্পূর্ণ পরবর্তীতে বানানো আমি যতদূর শুনেছি আরকি।

 2 years ago 

এখানে অনেক কাল্পনিক গল্প প্রচলিত আছে। ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

আপু আমি গিয়েছিলাম দিনাজপুরের রাম সাগরে।আমার বড় ভাই দিনাজপুর মেডিকেল দিনাজপুর পড়াকালীন তখন গিয়েছিলাম।তারপর ভেনে করে ঘুড়েছি।বেশ ভালো লেগেছিলো।আজকে মনে পরে গেলো।আপনার রাম সাগরের।ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনিও রামসাগর গেছেন শুনে ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জি আপু পরবর্তীতে যখন যাবেন তখন অবশ্যই আমাদেরকে নক করে যাবেন আপনার সাথে হয়তো আমার ও যেতে পারি এবং একসাথে নৌকায় ঘুরতে পারি। যেহেতু আপনি নৌকায় উঠতে পারেন নাই তাই আপনার রামসাগর ভ্রমণ সম্পন্ন হয়নি আশা করি ভবিষ্যতে যেদিন যাবেন নৌকায় উঠে ভ্রমণটি সম্পন্ন করবেন। হাহাহাহা... এতক্ষণ বেশ কিছু মজা করলাম কিছু মনে করবেন না আবার। আসলে আপনার মাধ্যমে এ রামসাগরের পুরো কাহিনীটা জানতে পারলাম যদিও এর আগে শুনেছি তেমন একটা মনে নেই। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আপনার মাধ্যমে দেখতেও পেলাম পুরো রামসাগরের ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি এবং বেশ ভালো লাগলো আমার কাছে। শুভকামনা অবিরাম আপনার জন্য।

 2 years ago 

কিন্তু আমি তো সাঁতার জানিনা তাই নৌকায় উঠতে ভয় লাগে। জানিনা আর কখনো যাওয়া হবে কিনা তবে ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

যারা আমাদের বেশি ভালোবাসে আমাদেরও তার প্রতি বেশি টান। যেমনটা আপনার ক্ষেএেও দেখা গিয়েছে। আপনি আপনার খালাকে অনেক ভালোবাসেন এবং আপনার খালা আপনাকে।

পুকুরের নাম রামসাগর এটা বেশ লাগল। এবং সত্যি পুকুরটা দেখছি অনেক বড়। এবং পুকুরটা কাটার পেছনের কারণটাও মহৎ। আপনার পোস্টে অজ দারুণ একটা জিনিস সম্পর্কে জানতে পারলাম।।

 2 years ago 

আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া। ভালোবাসার সম্পর্ক গুলো এমনই হয়। ধন্যবাদ আপনাকে।

ঐতিহাসিক একটি স্থান ভ্রমণ করে, সেখানকার দর্শনীয় দর্শনীয় ছবি এনে, আমাদের উপহার দিয়ে দেখার সুযোগ করার জন্য, আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সামান্য ভাবে হলেও আপনি স্থানটির ঐতিহাসিক বর্ণনা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যা সবার বুঝতে কোন অসুবিধা হবে না।

 2 years ago 

আপনি সব সময় গঠনমূলক মন্তব্য করেন যা আমার অনেক ভালো লাগে।

আপনার ভালোলাগায় আপনার জন্য আবারো আবারো শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আমার বাসার কাছে রামসাগর । আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছিলাম। জায়গাটা বেশ সুন্দর ও পরিবেশটা সুন্দর। আপু আপনি সুন্দর একটি সময় কাঠিয়েছেন। তার কিছু কথা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার পোষ্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। সব মিলিয়ে আপনার পোস্টটি অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক ভালোবাসা ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

আগে বললে আপনার বাসায় যেতাম। হাহাহা
অনেক সুন্দর মন্তব্য করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

প্রায় আট দশ বছর আগে কলেজে পড়াকালীন সময়ে এক বন্ধুর সঙ্গে রামসাগরে গিয়েছিলাম। সেই অনুভূতি ভোলার নয়। বর্তমান অবস্থা আমার জানা ছিল না তবে আপনার কথা শুনে মনে হল আসলেই এখানে সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। এটা হতে পারতো একটা আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। যাই হোক খালা বাড়ি ভ্রমণ আপনার ভালোই হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন

 2 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া এটি নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত।

 2 years ago 

আপু, ঐতিহাসিক রামসাগর দর্শন আমিও করেছিলাম। তবে অনেক অনেক বছর আগে। যদিওবা রামসাগর নাম হয়ে থাকে তবুও জায়গাটিতে সাগরের কোন অস্তিত্ব এখানে নেই। মানুষের তৈরি বিশাল বড় পুকুরের নামকরণ করা হয়েছে রামসাগর। তবে এই রামসাগরে আমি মোটর বাইক নিয়ে গিয়েছিলাম এবং পুরো এরিয়াটা মোটরবাইক দিয়ে ঘুরে ঘুরে দেখেছিলাম আমার কাছে ভীষণ ভাল লেগেছিল। কারণ এত বড় পুকুর আমি এর আগে কখনো দেখিনি। আজ আপনি অত্যন্ত সুন্দর বর্ণনার মাধ্যমে ঐতিহাসিক রামসাগর দর্শন উপস্থাপন করেছেন। আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে, আপনার সুন্দর উপস্থাপনার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাইয়া এটাতো সাগরও না সাগর থাকবে। পুকুরটি বিশাল বড় তাই বলা হয়েছে রামসাগর। আপনার মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 63578.68
ETH 3314.57
USDT 1.00
SBD 3.94