শিক্ষার গোড়ায় গলদ (10% beneficiaries for @shy-fox)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালো আছেন । আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। বিষয়টির সাথে আমরা সবাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। আমি পুরো শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে যাব না সামান্য কিছু নিয়ে আমি আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করব ।

20220202_194956.jpg

আমার বাসার নীচ তলায় আমার ফুফু থাকে তার মেয়ে ক্লাস ফাইভে পড়াশোনা করছে। অনেক আগে থেকেই আমি তার পড়াশোনার বিষয়টি খেয়াল রাখছি বিভিন্ন সময়। অনেক ভাবে তাকে শেখানোর চেষ্টা করি কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ে আমার ভীষণ বিরক্ত লাগছে।সে ক্লাসের ফার্স্ট । তবে সে যেভাবে ফার্স্ট হয় সে ফার্স্ট হওয়া তে আমার ভীষণ মন খারাপ। বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সব থেকে ঘৃণ্য একটি দিক আমার কাছে মনে হয় মুখস্ত বিদ্যা যা বর্তমান কিন্ডার গার্ডেন স্কুল বা কেজি স্কুল গুলোতে প্রবলভাবে বিদ্যমান। বর্তমানে কেজি স্কুল গুলোতে শিক্ষার ব্যবসা শুরু হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণরূপে মুখস্ত বিদ্যা নির্ভর করে শুধুমাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানের ফলাফল ভালো হওয়ার জন্য। কারণ তাদের প্রধান উদ্দেশ্যই থাকে যে কোন ভাবেই প্রতিষ্ঠান ফলাফল ভালো হবে তাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বেশি ভর্তি হবে তারা অধিক মুনাফা লাভ করবে। শিক্ষার্থী কিছু শিখুন আর না শিখুক তাদের ব্যবসা ঠিকই পুরোদমে চলছে এটাই তাদের মুখ্য বিষয়। আমি কেন বলছি এই কথাগুলো তাহলে শুনেন। আজ ও আমাকে সব বলছে আপু মনি আমার পড়া গুলো একটু ধরেন। কাল ওর সাপ্তাহিক পরীক্ষা সেই জন্য বাংলাদেশের সুন্দরবন রচনা পড়তে দিয়েছে, সেই সাথে আরও কিছু বিষয় পড়া আছে তবে সে যখন আমাকে বলছে আপনি রচনা টা একটু ধরেন আমি মুখস্থ বলছি আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম রচনা কিভাবে মুখস্ত করতে পারে সে। আমি দেখছি সেই দুপুর থেকে রাত আটটা থেকে নয়টা পর্যন্ত টানা পড়াশোনা করতেছে। একজন ক্লাস ফাইভেরর শিক্ষার্থী প্রতিদিন ১০/১২ ঘন্টা পড়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনা। তারপর আমি বললাম আচ্ছা বলতো দেখি। সে যখন রয়েল বেঙ্গল টাইগার ,বানর ,সাপ এগুলো নিয়ে মুখস্থ বলতেছে ।

20220202_194858.jpg

  • রয়েল বেঙ্গল টাইগার অনেক সুন্দর একটি প্রাণী। বাংলাদেশের সুন্দরবনের বসবাস। পৃথিবীর আর কোথাও এই প্রাণী দেখা যায় না।

  • সুন্দরবনের বানর বাস করে , তারা বনের বিভিন্ন ফলমূল খেয়ে বেঁচে থাকে।

  • সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির সাপ বসবাস করে যার মধ্যে অজগর অন্যতম। সাপ একটি সরিসৃপ প্রানী।

সে যখন এই বিষয়গুলো মুখস্থবিদ্যা থেকে আলোচনা করছেন তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম এগুলো মুখস্ত করতে হয়? সে বলছে আপু লাইন টু লাইন না দিলে মার্ক দেয়না। বলে কিনা ম্যাম যেভাবে দিচ্ছে ঐভাবে নেয় । তখন বুঝলাম একপ্রকার বাধ্য হয়ে তারা মুখস্থবিদ্যার দিকে ঝুঁকছে। সে যখন সংস্কৃতি সম্পর্কে বলতেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি হাজার বছরের ঐতিহ্য ঘেরা । তখন আমি বললাম বলতো সংস্কৃতি কি? তখন সে বলে সংস্কৃতি আবার কি ম্যাম তো এটা পড়ায় নি। অথচ সে এই বিষয়ে সে পুরো মুখস্থ করেছে। তখন আমি তাকে বুঝালাম। এখন একটি অপ্রিয় সত্যি কথা বলি হয়তো অনেকেই আমার সাথে এক হবেন না তবুও আমি বলব। আমি কিন্ডারগার্ডেন টাইপ প্রতিষ্টান গুলোকে দু চোখে দেখতে পারিনা। এখানে বাচ্চাদের উপর যেভাবে অযাচিত ভাবে পড়া চাপিয়ে দেওয়া হয় তা ঐ বয়সের শিক্ষার্থীর জন্য নয়। আমাদের গাইড বা মুখস্ত নির্ভর বিদ্যা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে।যদিও বাংলাদেশ সরকার মুখস্থকরণ কে বারবার নিরুৎসাহিত করে আসতেছেন এমনকি গাইড বই পড়া নিষিদ্ধ করেছেন। কিন্তু এসব নিষিদ্ধ করেই লাভ কি যদিনা তদারকির কোনো ব্যবস্থা না থাকে। আপনি যতই আইন করুন কোনো লাভ হবেনা। তবে নতুন যে শিক্ষা পদ্ধতি সরকার হাতে নিয়েছে তাকে আমি সাধুবাদ জানাই।

20220202_194846.jpg

একজন বাচ্চার সৃজনশীলতা মুখস্থবিদ্যা দিয়ে কিভাবে নষ্ট করা হচ্ছে আপনি ভাবতে পারবেন না। বাবা মা কি করবে তারাও বাধ্য হয়ে শহরের ভালো স্কুল, রেসাল্ট ভালো হয়, সবার বাচ্চা সেখানে পড়ে তাই সেও পড়ে। কিছু শিখলেই কি আর না শিখলেই কি রেসাল্ট তো ভালো হচ্ছে এটায় অনেক। আমি ফুফুকে বললাম স্কুলে অভিযোগ করবেন এতো পড়া তারপর আবার সব মুখস্থ এটা কেন? তখন বলে যে বাচ্চার গার্ডিয়ান অভিযোগ দিবে সেই বাচ্চাকে নাকি ঐ স্কুলে পড়াবে না আর পড়লেও তখন যে ম্যাম বা স্যারের নামে অভিযোগ দিবে তারাও আর ভালো ভাবে দেখেনা। তখন বিভিন্ন সময় পড়া না পারলে খোটা দেয়। এইতো গেল একটা দিক। কেজি স্কুল গুলোতে নতুন একটি ব্যবসা শুরু হইছে কোচিং। অর্থাৎ আপনার বাচ্চাকে এই স্কুলে পড়াতে হলে অবশ্যই কোচিং করাতে হবে না হলে ভালো চোখে দেখা হবেনা। তাদের স্কুলের ক্লাসের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কোচিং এ বেশি পড়ায়, বেশি জোর দেয় তখন বাধ্য হয়ে অভিভাবক সন্তান কে কোচিং এ দেয়। এতে যেমন অর্থনৈতিক খরচ বেশি হচ্ছে সেই সাথে এক কমলমতি শিক্ষার্থীকে সারাটা দিন পড়ারশুনার আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে। অথচ এই সময় তার খেলাধুলার করার কথা। আমি দেখি সে সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ৮টায় স্কুলে যায় ২ টা পর্যন্ত স্কুল করে আবার ৪ টা পর্যন্ত কোচিং করে। তারপর বাসায় ফেরা।বাসায় ফিরে নাকেমুখে একটু খাবার দিয়ে সারাদিনের পড়া করতে বসে। এইভাবেই চলে প্রতিদিনের রুটিন। আসলে এই পদ্ধতি কি কখনো সুস্থ সুন্দর ভাবে মানসিক বিকাশ করতে দিবে? তাকে অন্য বিষয় গুলোকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।কিন্তু কি আর করার ট্রেন্ড ফলো করতে হবে। এসব প্রতিষ্টানের কাছে এক প্রকার ভিম্মি হয়েই থাকতে হবে।

তবে আশা করব এই পদ্ধতির উন্নতি হবে। প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। যেখানে মুখস্থ বিদ্যা থাকবেনা।

ধন্যবাদ

@abidatasnimora


break.png

banner-abb23.png

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 59190.13
ETH 3187.58
USDT 1.00
SBD 2.45