পোড়া হৃদয়ের গল্প | 10% beneficiaries for @shy-fox
আপনারা জানেন বাংলাদেশের সদ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষের দিকে আগামীকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা আছে হয়তো তার পরের পরীক্ষাই শেষ হয়ে যাবে সাথে শেষ হয়ে যাবে হাজারো শিক্ষার্থী স্বপ্ন। তবে সে স্বপ্ন সবাই পূরণ করতে পারে না সবার পক্ষে সম্ভব না। হাজারো শিক্ষার্থী তাদের স্বপ্নচূড়া পৌঁছে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু লক্ষ্য স্টুডেন্ট এখনো তাদের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে এক অজানা গন্তব্যের পথে চেয়ে আছে সেই এক পথিকের কথাই বলবো আমি ।তার নাম স্বর্ণা। সবার মত সেও স্বপ্ন দেখেছিল সেও ক্যাম্পাসে তার পায়ের ধুলো দিতে চেয়েছিল হয়তো সে পারেনি তাই বলে কি সে ব্যর্থ। তাই বলে কি সে নিজেকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবে ?এটাই কি জীবন ?বিশ্ববিদ্যালয় পড়াই কি সবকিছু ,সবাই কি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারে? আর যারা পারেনা তারা কি জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না? যারা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে তারা কি সবকিছু করে তারা কি সফলতা সর্বোচ্চ চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ?আমাদের এই ভুল ধারণাগুলো ছোটবেলা থেকেই আমাদের ভিতরে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সফলতার সবকিছুই বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যালে , বুয়েট পড়া জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে কত সম্ভাবনাময় স্বপ্নময় শিক্ষার্থী আজ বিপন্ন । এই যাত্রায় প্রতিটি শিক্ষার্থী দিন রাত সমান করে কঠোর পরিশ্রম করে যাই ।এটা আমরা সবাই জানি কিন্তু দুই এক মার্কের জন্য হয়তোবা কেউ পারে ,কেউ পারে না। এর মানে এই প্রমাণিত হয় না যে ,যে পারল না সে মেধাবী নয়, সে ব্যর্থ । তার বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ অধিকার আমাদেরকে কেড়ে নিতে হবে । এটা কোন ধরনের সীমালংঘনকারীতা এটা কোন ধরনের ভালবাসা আপনার সন্তানদের প্রতি। আমাদের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজনদের কবে হুঁশ ফিরবে বলতে পারেন! বাবা-মা তাদের কর্মস্থলে ,আত্মীয়স্বজনের কাছে , কি জবাব দিবে হেন অপমান কিভাবে সহ্য করবে সেই জন্য সন্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নিজের স্বপ্ন পূর্ণ করার ব্যর্থতার পুরোটা দায় দেওয়া চরম অন্যায়। আপনার স্কুলের শিক্ষক, কলিগ আপনাকে জিজ্ঞেস করবে আপনার মেয়ে কোথায় চান্স পেল? আপনার আত্মীয় জিজ্ঞেস করবে সে কোথায় চান্স পেল ?এইসব প্রশ্নের ভয়ে আপনি আপনার জন্ম দেওয়া সন্তানের সাথে যে অবিচার করতেছেন এটার কি জবাব দিতে পারবেন ? এখানে কি আপনার কোন ব্যর্থতা নেই? এখানে কি আপনার কোন দায় নেই?
একজন শিক্ষার্থী যখন তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনা সে কতটা বিধ্বস্ত হয়ে যায় ,সে কতটা আনকোরা হয়ে যায় সেটা কি আমরা কখনো দেখি? আমরা যে প্রতিনিয়ত তাদের উপর মানসিক নির্যাতন করি এটা কি আমাদের কাম্য? এই মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কত শিক্ষার্থী হতাশায় জীবন বিসর্জন দিচ্ছে আমরা কি সেটা কখনো ভেবে দেখেছি ? আপনার চোখের আড়ালে রাতের গভীরে বালিশ ভেজানোর গল্প কি শুনতে চেয়েছি কখনো ।জানার চেষ্টা করি না আমরা কখনো একজন শিক্ষার্থী চান্স না পেলে তার মানসিক অবস্থা কেমন হয়। এটা কি আমাদের বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব কখনো বোঝে না ।তাদের দগ্ধ হৃদয় পোড়া মনের গন্ধ কি তাদের নাকি প্রবেশ করে না। স্বর্ণা সারা দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দিয়েছে দুর্ভাগ্যবশত কোনোটাতে সিরিয়াল আসলেও হয়তো চান্স হবে না তার মামাতো বাই চান্স পেয়ে পেয়েছে দেশের স্বনামধন্য দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ।একই পরিবারের যখন একজন চান্স পাই আর একজন পায় না তখন যে পায় না আর সে কি পরিমান কষ্ট লাগে এটা কি পরিবার আত্মীয়-স্বজন বোঝনা ।কেন তার পরেও তার সামনে বারবার বিশ্ববিদ্যালয় চান্স না পাওয়া আর ব্যর্থতার কথা বলতে হবে? তাকে খোটা দিতে হবে কেন উল্লাসে মেতে উঠতে হবে তার সামনে ।
তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে সেটা কি তারা বোঝে না কেন হতে পারে। আমি মানছি প্রতিটি বাবা-মা তাদের সন্তানকে ঘিরে এক স্বপ্নে রচিত করে তাদের ভিতর নিজের লালিত স্বপ্ন পূরণ করার ব্রত নিয়ে থাকে কিন্তু এর মানে এই নয় সেটা অত্যাচারে পরিণত হবে তার জন্য হুমকিস্বরূপ এ কেমন ভালোবাসা। তবে সব থেকে বড় কথা হচ্ছে এই ভুক্তভোগী যখন একজন মেয়ে হয় তখন তার জন্য বেঁচে থাকাটা কষ্টকর হয়ে। দাঁড়ায় যদি না পরিবার তাকে সাপোর্ট না দেয় তাকে অনুপ্রেরণা দেয় তার পাশে না দাঁড়ায় তার হাতটি শক্ত করে না ধরে। তার হৃদয়ে এখনো রক্ত ঝরছে তাজা রক্ত কিন্তু দেখুন বাবা-মা তার বিয়ে দেয়ার জন্য তার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সে কান্না করছে আর বলছে আপু আমি আর বাঁচতে চাই না, এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে আর কেউ নেই ।আমার ব্যথাগুলো কেউ বোঝেনা ,আমাকে কেউ বুঝতে চায় না আমি বেঁচে থেকে কি করব সে বলছে আর চোখের জল মুছতেছে ।আমি বুঝতে পারছি আমার ভিতরে আমার ভেতরটা পুড়ে যাচ্ছে আমার কোন শান্তি নাই আমার কোনো আশ্বাস আজ তার মন ভরছে না নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে এই সমাজের কাছে একজন অসহায় নারী হেরে যাবে এটা মানতে পারছি না আমি।
তবে আমি বলবো একজন শিক্ষার্থীকে একজন মানুষকে ইস্পাতের নেয় শক্ত হতে হবে পাহাড়ের নাই অটল থাকতে হবে। হৃদয় দগ্ধ হবে চারপাশে পোড়া গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে কিন্তু ছাই হয়ে উড়ে যাব না ।সেই আগুন নিজের ভেতরে জ্বালিয়ে রাখবো একটি দিনের জন্য আমি ওকে বললাম চান্স পাও নাই দেখে তোমার জীবন শেষ এটা ভাবার কোন কারণ নেই। তুমি এত দ্রুত ফুরিয়ে যাবে এটা কেন ভাবছো ? জীবনে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা এখানে পড়লে জীবনে স্বর্গ পাওয়া যায় এটা ভাবার কোন কারণ নেই তোমার যদি শক্তি থাকে, পরিশ্রম করার মন-মানসিকতা থেকে থাকে, অদম্য ইচ্ছা থাকে ,লেগে থাকার বাসনা থাকে, নিজের সামর্থ্য উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে তাহলে দয়া করে নিজেকে ব্যর্থ দাবি করবে না ।নিজের ভেতরে জমিয়ে রাখা স্বপ্ন একদিন ঠিকই চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে ।তোমার সকল অপমান অবজ্ঞা জবাব দিবে ।শুধু হতাশ হবেনা আমার এই অনুরোধ টা রাখো। হতাশ তোমার জীবনকে, জীবনের সব আশা শক্তি-সামর্থ্য কে নষ্ট করে দিবে ।মৃত্যুর পথযাত্রী করে দেবে তোমাকে।
আপু আমি রাতে ঘুমাতে পারি না খাইতে পারি না আমার পেটে খাবার ঢোকেনা , সব বলছে আর কান্না করছে আমি বাঁচবো না আমি বাঁচতে চাই না আমার বাঁচার অধিকার নেই ।বাবা মার স্বপ্ন পূরণ করতে পারলাম না। আমি তাকে অনেক বুঝালাম চেষ্টা করলাম জীবন এতো ঠুনকো না ,এত তুচ্ছ না অনেক কিছু বাকি আছে জীবনে । কেবল শুরু আবার জেগে ওঠে প্রমাণ করো, কিন্তু আমার হাজারো কথা তার সিদ্ধান্ত তার মাইন্ডন সেট আপ চেঞ্জ করতে পারছেনা সে এতটাই হতাশায় পৌঁছে গেছে এখান থেকে আর ফিরে আসা সম্ভব না সেটা বুঝাচ্ছে ।আমি লিখছি আমার হাত কাঁপছে ,হৃদয় পুড়ছে ,তার চেহারা চোখের সামনে ভেসে উঠছে আর সকালের অপেক্ষায় আছি ওর বাবা মাকে ফোন দিব ।যারা স্বপ্ন দেখতে জানে যারা স্বপ্নকে ভালবাসতে জানে তারা সবার আগে যে কাজটি করে নিজের জীবনকে ভালবাসতে পারে আপনি যদি নিজের জীবনকে ভালবাসতে না পারেন আপনার পক্ষে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তর করা কখনও অসম্ভব না ।জীবনে হতাশা, গ্লানি আসবে কিন্তু নিভিয়ে যাওয়া যাবে না ।অদম্য শক্তি রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে বাধা আসবে সে পাহাড়কে টপকানোর মত মন মানসিকতা আমাদের থাকতে হবে। জীবন মৃত্যুর কাছে কখনো হার মানতে পারেনা জীবন বেঁচে থাকবে কর্মের মাধ্যমে সবার মাঝে।
ভারতে প্রতি বছর সমীক্ষায় দেখা যায় জোর করে পড়াশোনার বোঝা বইতে গিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী নিজের কাছে হার মেনে আত্মহত্যা করে।এটা আমাদের সমাজের একটা বিকলাঙ্গ মানসিকতা যে নিজের ইচ্ছা ও সামাজিক সম্মানের স্বার্থে আমরা সন্তানের উপর অনেক কিছু জোর করে চাপিয়ে দেই।থমাস আলভা এডিসন বলেছিলেন যে তিনি কখনো পরীক্ষা নিয়ে চিন্তিত নন।কারণ পরীক্ষার কয়েকটি পাতা তার জীবনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।অর্থাৎ একটা পরীক্ষাই তোমার যোগ্যতার মাপকাঠি নয়।
দাদা এটা কেউ বোঝেনা। জীবন মানে শুধু ভালো কোথাও পড়া না। ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কোনো জায়গা থেকেই হয়।
আপু আপনার আজকের এই লেখাটি অন্য কেও বুঝতে বা ফিল করতে না পারলেও আমি খুব ভালো ভাবেই ফিল করতে পারছি। আপনার পোস্টটি পড়ে আমার মেডিকেলের রেজাল্ট এর দিনের কথাটি মনে পরে গেলো।আমার মনে আছে আমি মেডিকেলের যেইদিন রেজাল্ট দিলো ওইদিন থেকে এর পরের দুইদিন কিছুই খাইনি আর সারা দিন রাত কান্না করেছিলাম।আমার আব্বু আম্মু তেমন কিছু বলেনি তবে আশেপাশের মানুষগুলো!!
কাজিন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে তবে আমি পাইনি।বুঝেন অবস্থা!!তবে আমি কাঁটিয়ে উঠেছিলাম। হয়তো কাঁটিয়ে উঠতে পারেনি, জাস্ট ঘা টা পুরনো হয়েছে এটাই। তবে কেনো জানিনা কমেন্টটি লিখতে চোখে পানি চলে আসলো।😇
আমিও এমন দিন পার করছিলাম আপু তবে হার মানিনি কখনো।
আসলে আপু একদম ঠিক বলেছেন। আমি মনে করি যারা লাস্ট বেঞ্চের স্টুডেন্ট তারা অনেক ভালো করতে পারে। আসলে এটা সত্যি আমরা ছোট থেকেই নিজেদের ইচ্ছার উপর চলতে পারিনা। আমাদের মাথার উপর একটি বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়। তুই ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবি। আসলে আমি ব্যক্তিগতভাবে কি হতে চাই সেটার মূল্যায়ন কারো কাছেই থাকে না। আমি মনে করি আপনার এই পোষ্ট সকল বাবা-মায়ের কাছে যদি পৌঁছে দেয়া যেত তাহলে হয়তোবা অনেক ছেলে মেয়ে আত্মহত্যার হাত থেকে বেঁচে যেত।
সুন্দর মন্তব্য করেছেন ভাইয়া ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনার লেখা বাস্তব ঘটনাটি পড়লাম। পড়ে আমি যেটা বুঝতে পারলাম স্বর্ণা মেয়েটি হয়তো তার বাবা-মাকে অনেকটা ভয় পায়। মনে হতে পারে সে তার বাবা-মার সাথে ততটা ফ্রী না যতটা প্রত্যেকটা সন্তান তার বাবা-মার সাথে হওয়া উচিত। তা না হলে কোন ছাত্র-ছাত্রী বাবা মার ভয়ে আত্মহত্যা করার মনোভাব পোষণ করতে পারে না। এটা হচ্ছে তার ব্যক্তিগত মনোভাব হয়তোবা হতে পারে এরকম কিছু চিন্তাভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সত্যি কথা বলতে জীবনটা ছোট নয় আর এই বিশাল জীবনে এত অল্পতে হতাশ হয়ে গেলে জীবনের ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়া হলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনি অনেক গঠনমূলক মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
মাঝে মাঝে জীবনে এমন পরিস্থিতি আসে যে পরিস্থিতিকে কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলি। অবশ্যই শক্তভাবে সেই পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যদি ভেঙে পড়ি তাহলে হয়তো সারা জীবনেও ভুলগুলো শুধরে নিতে পারব না। আপনার লেখার প্রতিটি লাইন আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে দারুন ভাবে গুছিয়ে দারুন দারুন লেখা আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার জন্য।
ধন্যবাদ আপনাকে আপু