একটি অপ্রত্যাশিত ভ্রমণ (10% beneficiaries for @shy-fox)

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ আমি শুরু করছি আমার একটি ভ্রমণ গল্প। আমরা সবাই মনের তৃপ্তি মেটানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই। হয়তো আপনাদের মত আমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে পারি না তবু অনেকদিন পর বদ্ধ ঘর থেকে বাহির হয়েছিলাম। সেই রীতিমতো কিছু চেনা জায়গায় তবে এবারের সময় ও আবহাওয়া টা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার বন্ধুরা অনেকদিন ধরে বলছিল আয় ঘুরে যা দিনাজপুর থেকে তারা সবাই হাজী দানেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবপড়াশোনা করেন। অনেকদিন পর বাসা থেকে অনেক কষ্ট করে অনুমতি নিয়ে চলে আসলাম দিনাজপুরে। উত্তরবঙ্গে এখন প্রচন্ড শীত। দিনাজপুরে আরো বেশি গতকাল সকালে ছিল 5 ডিগ্রি।

IMG-20220128-WA0063.jpg

siam,.png

যাইহোক আমরা সবাই ভালো থাকার জন্য কিছু ভিন্ন স্বাদের জন্য নিজেকে ভিন্নরকম পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে চাই। আমি যে অনেকদিন ধরে কোথাও ঘুরতে যাইনি তাই আমার মনটা খুব ছটফট করছিল তারপর যখন এরা এত চাপ দিচ্ছিল ঘুরে করে যা তোর তো আসা হয়না তাই তাদের না করতে পারলাম না। অনেকদিন হলো তাদের সাথে দেখা নেই। কিছু ভালো সময় কাটানোর প্রত্যাশা নিয়ে ছুটে চললাম প্রাণের বন্ধুদের কাছে। তবে তারা আমাকে এত সময় দেবে কিছু শ্রেষ্ঠ দিন উপহার দেবে তা আমি কখনো ভাবি নি। তাদের সাথে ভালভাবে কাটানোর দিন আমার কাছে খুব স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বন্ধুত্বের ভালোবাসা গুলো এভাবেই যেন আমাদের মাঝে থেকে প্রত্যাশা করি সবসময় । যাই হোক রংপুর থেকে বাসে উঠলাম সকাল দশটায় ঠিক বাশেরহাট পৌছে গেলাম ১২ টার দিকে। এই বাঁশেরহাট এই হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত ।বিশ্ববিদ্যালয় ছোট হলেও অনেক গোছানো। আমি আসার আগে থেকে তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আমাকে দেখে তারা খুশি । অনেকদিন পর আমাকে দেখে তারা অনেক উৎফুল্ল হয়ে গেল। আমিও প্রচন্ড খুশি তাদের দেখে। তারা সবাই মেসে থাকে আমার লাইফে কখন মেস দেখা হয়নি। যতদিন কলেজে পড়াশোনা করেছি বাসা থেকেই ।তারপর ঢাকায় হলে থেকেছি। তাই মেস লাইফ সম্পর্কে আমার তেমন কোন অভিজ্ঞতা নাই তবে এদের দেখে মনে হল ভালোই লাগে থাকতে। সবাই কত মজা করে আনন্দ করে। তাদের সাথে কিছুক্ষণ বসলাম বিভিন্ন ধরনের গল্প করলাম । কার জীবন কিভাবে যাচ্ছে ?কে কয়টা প্রেম করেছে? 🤪 অনেক মজা করি বললাম। আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছিল তাই আগে থেকে আমার জন্য তারা মেসে মিল দিয়ে রেখেছিল। ইতিপূর্বে অনেক সময় মেসের খাবার সম্পর্কে শুনতাম আজ খেয়ে দেখলাম খুব ভালো মানের খাবার না হলেও ভালো লেগেছে আমার ভিন্ন ধরনের ভিন্ন স্বাদের। বিকেল বেলা সবাই মিলে বেরোলাম। দিনাজপুর শহরে আসলে ঘোরাঘুরি মত তেমন কোনো জায়গা নেই যা আছে বেশ দূরে দূরে যেমন রামসাগর, সুখ সাগর, সময় স্বল্পতার কারণে আমার ওই দিকে যাওয়া হলো না তাই চলে গেলাম কান্তজিউ মন্দির । এর আগেও কান্তজীউ মন্দিরে গিয়েছিলাম এবং আপনাদের সাথে সেই রিভিউ দিয়েছিলাম তবে এবারের অভিজ্ঞতা মানুষজন ও সময় টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই অনুভূতি গুলো আলাদা। কান্তজিউ মন্দির ইতিহাস মোটামুটি আমরা সবাই জানি তাই সে সম্পর্কে কিছু বললাম না যেহেতু আমি এই সম্পর্ক আগেও পোস্ট করেছিলামন। তবে একটি কথা না বললেই নয় কান্তজীউ মন্দিরের টেরাকোটা আমাকে বারবার ভাবায় চিন্তার অতল গভীরে নিয়ে যায় কিভাবে ওই সময় এত নিখুত ভাবে এত সুন্দর ভাবে এই কাজগুলো করেছিল তারা। প্রতিটি ফলক এক একটি গল্প নিয়ে রচিত।

20220128_160323.jpg

siam,.png

20220128_155845.jpg

siam,.png

মন্দিরের সামনে আমি ।

20220128_161425.jpg
siam,.png

কান্তজীর মন্দির থেকে বের হয়ে গিয়ে উত্তর পাশে এইরকম ভাবনাকে ছোট মন্দির না হয় কোন টিলা হবে । এর পাশ টা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।

20220128_161153.jpg

siam,.png

20220128_160639.jpg
siam,.png

কন্তজির মন্দির এর ভেতর শিব মন্দির।

20220128_160501.jpg

siam,.png

এটি একটা কূপ । সেই সময় হয়তো এই কূপ থেকেই পানি ব্যবহার করতে।

20220128_160408.jpg

siam,.png

এটি হয়তো পুজো পরবর্তী দেব-দেবীদের রাখার জায়গা।

যাই হোক এরপর আমরা পাশেই নদী ছিল নাথ নদী।সবাই মিলের নদীর দিকে ঘুরতে গেলাম। নদী আমার বেশ ভালই লাগে এর শান্ত শীতল বাতাস আমাকে মুগ্ধ করে। তবে নদীতে যেমন পানি নেই চারপাশে শুকিয়ে গেছে। কৃষকেরা বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি লাগিয়েছে। যখন যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখলাম পাশে একটি ড্রাগন ফলের বাগান।

20220128_161750.jpg

siam,.png

ড্রাগন ফলের বাগানের পাশ দিয়ে হেটে চললাম নদীর পথে চারপাশের শুধু কিছু লোক কাজ করছে জমিতে।একটা জিনিস আমার খুব ভালো লেগেছে তিনটি ছোট মেয়ে নদীতে কি যেনো করছিলো আমি যাদের বললাম আসো তোমাদের সাথে ছবি তুলব তারা অনেক খুশি হয়েছিল। আপু আমাদের ছবি তুলবেন বলতে বলতে কাছে চলে আসল। তারা খুব খুশি ছিল আমার সাথে ছবি তুলে। আমারও ভাল লাগছিল তাদের সাথে ছবি তুলতে। তাদের সাথে ছবি তোলার পরই তারা এসে আমার বান্ধবীকে বলল দেখি আপু কেমন হয়েছে ছবিগুলো ।

20220128_162229.jpg

siam,.png

ছবি সুন্দর হয়েছে দেখে তারা বেশ খুশি। তারা যাচ্ছিল আর আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছিলাম। । হুট করে তারা পেছন থেকে এসে বললো আপু আর কয়েকটা ছবি তুলে দিন না আমরা পানির মধ্যে যাচ্ছি বলেই তারা নদীর দিকে ছুটল। আমার খুব ভালো লাগবে তাদের প্রাণবন্ত দেখে হয়তো ছোট থাকলে আমরাও এমন করতাম। তারা এই ঠান্ডা জলে নেবে বিভিন্ন ধরনের পোচ দেওয়া শুরু করলো তাদের পোচ দেখে আমরা অনেক হাসলাম ছোট বাচ্চা কত সুন্দর পোচ দিচ্ছে।
20220128_162317.jpg

siam,.png

20220128_162333.jpg

siam,.png

ছোট বাচ্চাগুলো অনেক খুশি আমাদের অনেক ভালো লাগলো। সেখান থেকে ফিরে চলে আসলাম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর তবে জাদুঘরের পোস্ট নিয়ে আপনাদের সাথে অন্যদিন আলোচনা করব। একটা অটো করে আমরা সবাই চলে আসলাম বাঁশের হাট এ। তবে একটি বিষয় আমার খুব খারাপ লেগেছে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় সন্ধ্যা ৭টা পরে ক্যাম্পাসে কোন মেয়ে করতে পারে না। আমার কাছে এটা বিশ্ববিদ্যালয় নামটির সাথে ভীষণ বেমানান মনে হয়েছে । একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে প্রগতিশীল, সংস্কৃতিমনা, ও স্বাধীনতার প্রাণকেন্দ্র। আচ্ছা সেখানে সন্ধ্যার পরে কেউ ক্যাম্পাসে থাকতে পারে না সেখানে নাকি সান্ধ্য আইন চালু আছে। তাই তাদের সাথে সন্ধ্যেবেলায় ক্যাম্পাসে ঘুরতে পারলাম না। তবে তাদের এখানে নাকি একটি দারুন টং রেস্টুরেন্ট আছে এটাই নাকি এখানকার বিখ্যাত জায়গা ।সন্ধ্যাবেলায় সেখানে চা আরো কিছু ফাস্টফুড খাবার পাওয়া যায়। সেখাকার চা নাকি ভীষণ স্বাদ । আমি ভাবলাম এই অমৃতের স্বাদ না নিয়ে যাই কিভাবে । রেস্টুরেন্ট এর নাম ছিল এলাইক। তাই তাদের সাথে এলাইক এ গেলাম । রেষ্টুরেন্টটি সম্পূর্ণ কাঠ এবং বাঁশ দিয়ে তৈরি । কাঠের তৈরি সিঁড়ি দিয়ে উঠতে আমি খুব ভয় পাচ্ছিলাম। উঠে দেখে যা বুঝলাম সব সময় জাঁকজমক থাকে এই জায়গা। যেহেতু তারা ক্যাম্পাসে থাকতে পারে না তাই এই জায়গায় তাদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে বিশেষ করে কাপল দের কাছে। 🤪

20220128_193930.jpg

siam,.png

প্রথমে তারা কিছু নুডুলস পাকোড়া আলুর চপ অর্ডার দিল । আমি আগে ভাগেই খাওয়া শুরু করলাম বেশ সুস্বাদু লাগলো আমার কাছে। সত্যি কথা বলতে আমার বেশ ভালো লাগছিলো ঈদের সাথে থাকতে খুব উপভোগ করছিল পুরো সময়টুকু। খাওয়া শেষে সেই অমৃতের মত চা খাওয়ার জন্য ভীষণ আগ্রহ পোষণ করলাম তাদের কাছে। দ্রুত কর চা খেতে চাই ।

IMG-20220128-WA0056.jpg

siam,.png

চা পাওয়ার সাথে সাথে আমি শুরু করেছিলাম তাই ওদের থেকে আমারটা একটু কম পরে অবশ্য একজন থেকে ঢেলে নিয়েছি কিছু। সত্যি চা অনেক স্বাদের ছিল । আমি সাধারণত দুধ চা খাই না তবে একখানকার আমার খুব ভালো লেগেছে। এখানে চা ভালো আর প্রধানকে বিশেষত্ব তা হচ্ছে গরুর খাঁটি দুধ ব্যবহার এবং দীর্ঘক্ষন ধরে দুধ গরম করে ঘন করা হয় ।

IMG-20220128-WA0057.jpg

siam,.png

চা খাওয়ার মধ্যে দিয়ে দারুন সব অনুভূতি নিয়ে শেষ হলো আমার আজকের ঘোরাঘুরি। সেখান থেকে সোজা চলে আসলাম তাদের মেসে।এসে কিছুক্ষণ আড্ডা ।তারপর ঘুম ।

আমার ফটোগ্রাফির
W3W location

ধন্যবাদ

@abidatasnimora

siam,.png


break.png

banner-abb23.png

Sort:  
 3 years ago 

আপু মনে হচ্ছে অনেক বেশি ঘোরাঘুরি করলেন। আপনি তো দেখলাম ঘোরাঘুরি নিয়ে অনেক বিষয়ে বর্ণনা দিয়েছেন। এত বেশি লেখালেখি দেখলে খুবই ভালো লাগে। কারণ এখানে আমরা লেখালেখি করা বেশি পছন্দ করি। সেখানকার তিনটি মেয়েকে দেখে তাদের সাথে ছবি তুললেন দেখে খুবই ভালো লাগলো। মেয়ে গুলোকে দেখতে অনেক সুন্দর ছিল। আর কান্তজির মন্দির দেখলাম অনেক ঘুরাঘুরি করেছেন। ঘোরাঘুরি করার পর আবার খাওয়া দাওয়াও করেছেন। সব মিলিয়ে অসাধারণ একটি মুহূর্ত কাটিয়েছেন। এত অসাধারন একটি মুহূর্ত আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

 3 years ago 

আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

আপনি খুব সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। সময়গুলো খুব চমৎকারভাবে উপভোগ করেছেন। আপনার ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ ছিল।

  • আপনাকে একটি কথা বলবো তা হলো আপনি পোস্টে মাক ডাউন (কোড )ব্যবহার করবেন। এতে করে লেখাগুলো পড়তে এবং পোস্টটি দেখতে অত্যন্ত চমৎকার দেখাবে।

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন, ধন্যবাদ।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

কার জীবন কিভাবে যাচ্ছে ?কে কয়টা প্রেম করেছে? 🤪

আপনারা একসাথে বসলে এসব কথা হয় বুঝি আপু 🤭 । যাইহোক আপনার বান্ধবীদের সাথে ভালো সময় কাটিয়েছেন । কান্তজির মন্দির কখনো দেখিনি, শুনেছি তবে আপনার ফটোগ্রাফির মাধ্যমে আজকে সুন্দর করে দেখতে পেলাম । অনেক কারুকাজ পূর্ণ এবং দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরনো । তবে একটা জিনিস খারাপ লাগলো যে এখনো সান্ধ্য আইন আছে তাহলে !

 3 years ago 

প্রথমত কান্তজির মন্দির আমার খুব পছন্দের একটি জায়গা, বন্ধুরা সহ বেশ কয়েকবার গিয়েছি। আপনি যে জায়গাগুলোতে ছবি তুলেছেন ঠিক সেই জায়গায় আমিও অসংখ্য ছবি তুলেছিলাম এক সময়ে। যাক সব স্মৃতির পাতায় তোলা থাক। যাক সবমিলিয়ে দারুন পোস্ট ছিলো ভীষণ উপভোগ করলাম ♥️
শুভ কামনা রইল।
আর এখন বেশি ঘোরাঘুরি করার দরকার নেই আপু আবহাওয়া ভীষণ খারাপ।
ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন ✨

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58986.04
ETH 2580.24
USDT 1.00
SBD 2.53