আমার স্বপ্ন ভাঙ্গা গড়ার দিন (10%beneficiaries for @shy-fox
w3w
মানুষ মাত্র তার একটি সুন্দর স্বপ্ন থাকবে। আমিও তার ব্যাতিক্রম ছিলাম না। আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থী বড় হয় তাদের বুকে একটি স্বপ্নকে লালন করে। ২০১৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ইউনিটে পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম রংপুর থেকে। সাথে ছিল আমার বাবা। মানবিকের ছাত্রী হওয়ায় আমার এক মাত্র লক্ষ্যে ছিল বি ইউনিট। যথারিতি সময়ের আগেই পরীক্ষার কেন্দ্রে হাজির হয়েছি। পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল বুয়েট ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল এন্ড কলেজ। আমার মতো হাজারো শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার অপেক্ষায় ছিল ১ ঘন্টার পরীক্ষার পর তাদের জীবন কি ঘটবে তার উপর। অর্থাৎ তখন এক ঘন্টায় আমাদের জীবনের গতিপথ বদলে যেতে পারে এমন ভাবনায় ছিল।
w3w
যাইহোক ১০ টায় পরীক্ষা শুরু হলো। প্রথম সাধারণ জ্ঞান দিয়ে শুরু করলাম। তারপর বাংলা এবং সবার শেষে ইংরেজি। কিন্তু আমার জীবনের দুঃস্বপ্ন চলে আসে তখনি। ইংরেজি প্রশ্নে দুইটা ভাগ ছিল একটি সাধারণ ইংরেজি যেটার উত্তর করব আমরা যারা বাংলা মিডিয়াম থেকে এসেছি আর ইলেক্টিভ ইংলিশ ছিল যেটির উত্তর করবে এ লেভেল/ও লেভেলের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আমি ভুলে ইলেক্টিভ ইংলিশ দাগিয়ে ফেলি। পরে যখন বুঝতে পারি তখন স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেছে আমার। পরীক্ষা শেষে এই মুখ বাবাকে দেখানোর ইচ্ছা ছিল না। কি করব আমার চোখে পানি দেখে বাবার বোঝার কিছু বাকি রইল না।নিজের ভুলে এতো বছরের স্বপ্ন শেষ হলো। ভাবতেই পারছিনা। বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে ভেঙ্গে পড়ছিস কেন বিশ্ববিদ্যালয় তো আরো আছে। সেখানে হয়ে যাবে। আমি কি করে বুঝাবো বাবা আমি যে এখানেই পড়তে চাই। আমার স্বপ্ন এইভাবে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে এটা মেনে নিতে পারলাম না। বাবাকে বললাম চলো বাসায় যাই। ক্যাম্পাস নীলক্ষেতে এসে ঠিকানা বাসে চড়ে কল্যাণপুর নাম। সেখান থেকে এস আর ট্রাভেলস করে বাসায় রওনা দিলাম।
আমার কষ্ট একটায় এইভাবে ব্যর্থ হবো। আমার আর পড়া হলোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সবাই পড়বে আমি পড়ব না এসব বলছি আর কান্না করছি। বাসে সবাই আমার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু কি বলবে তারা। স্বপ্নভঙ্গের কোনো স্বাত্বনা হয়না। পুরো রাস্তা আমি বাবার চোখে চোখ রাখতে পারিনি। বাসায় গিয়ে সোজা রুমের দরজা বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে কাঁদছি কি করলাম আমি। আমার অনেক ফ্রেন্ড দিচ্ছে আমি ফোন ধরছিনা। দুইদিন পর রেসাল্ট হলো। আমার কাছের এক বান্ধবী মেধা তালিকায় ৩৫ তম হয়ে আমাকে ফোন করে কি খবর আমার জানতে চাওয়া আগেই আমি বলে দিলাম আমার হয়নি।
w3w
সেদিন আমি আর কান্না করিনি। আমি নিজেকে জিজ্ঞাস করলাম আমি কি শেষ হয়ে গেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার কি আমার সব দরজা বন্ধ? না এখনো বন্ধ হয়নি। কারণ এখনো ঘ ইউনিটের এক্সাম বাকি আছে। যদিও ঘ ইউনিটে আমার বি ইউনিটের সীট সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৩ টি। অর্থাৎ আমাকে চান্স পেতে হলে মেধা তালিকায় ১-৫৩ জনের মধ্যে থাকতে হবে। এইটা শুনে যে কেউ নির্দিধায় বলবে অসম্ভব। কিন্তু আমাকে সম্ভব করতে হবে। যেহেতু সীট কম প্রতি্যোগিতা বেশি আমাকে আগের থেকে অধিকতর পরিশ্রম করতে হবে। আমি একমাস বাসার বাহিরে বের হইনি। ১৪-১৬ ঘন্টা করে পড়েছি। প্রিপারেশনের কোনো ঘাটতি রাখিনি আমি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর এক্সাম ছিল ২০১৬ সালের ২৮ অক্টোবর। তার আগের দিন এক্সাম ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি রাজশাহীতে এক্সাম দিয়েই রওনা দিয়েছি ঢাকার উদ্দেশ্য আর একবার স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে সাথে যথারীতি বাবাই৷ ২৮ অক্টোবর আমার সীট পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম তলায়। আজ আমার কোনো ভয় ছিল না আত্ববিশ্বাসের সাথে পরীক্ষা দিয়ে বের হলাম। পরীক্ষা কেমন দিয়েছি বাবা জিজ্ঞাস করল না আমিও বললাম না। তবে কেন জানি ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে ইচ্ছা করছিল না। দুইদিনেই মায়ায়, প্রেমে পড়ে গেছি। বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিব এমন সময় এক ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। আমার রোল নিয়ে জানালো মেধা তালিকায় আমার অবস্থান ৭৭তম। বাবা শুনার সাথেই এক প্রশান্তির হাসি হাসল। আমার প্রাণজুড়ে গেলো। যদি ঢাবি পাইতাম তাহল তাহলে কতই না খুশি হতো এই ভেবে আমি চুপ করে রইলাম। যথারীতি বাসায় আসলাম। আগের মতোই হাসি আনন্দ নেই। তবে এইটুকু প্রশান্তি যে অন্তত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন পূরণ হলো। দুইদিন পর ঢাবির রেসাল্ট। তবে আমার কোনো গুরুত্ব ছিলনা রেসাল্ট নিয়ে কেননা মাত্র ৫৩ টা সীট। সন্ধ্যায় বাসায় সবাই বসে আছি। আমার কাজিনের ফোন আপু রেসাল্ট পাইছ। আমার উত্তর না!
আরে আপু তুমি তো ৫০ তম হইছ। শুনেই আমার চোখের পানি ছলছল করে পড়ছে, বাবা বলছে কি হইছে মা। আমি সবাইকে জড়িয়ে ধরে বলছি বাবা আমি জিতে গেছি। তোমাদের স্বপ্ন পূরণ করেছি। আমি ৫০ তম হয়েছি। সেই বাধভাঙ্গা উল্লাস, আনন্দ, আমি আর কখনো তাদের মুখে দেখিনাই।
এইতো গেল আমার গল্প, আজ ছিল ঢাবির ঘ ইউনিটের পরিক্ষা কত শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভাঙার গড়ার দিন।বাবা-মাদের প্রত্যাশা পূরণের দিন। কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
w3w
w3w
উপরের যে ছবি গুলো দেখছেন এখানে প্রতি বাবা-মা এক বুক আশা নিয়ে বসে আছে। কি করতেছে তাদের সন্তান। শুধু মাত্র ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট পরেই আমার সন্তানের অবস্থান নিশ্চিত হবে। কেউ হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেছে কেউ বা উৎকণ্ঠায় সময় পার করছে।
w3w
পরীক্ষার সময় শেষ তাই অধির আগ্রহে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছে পিতামাতা।
w3w
উপরের যে দুইটি ছবি দেখছেন মেয়েটি পরীক্ষার ১০ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর এসেছে। কান্না করছে আর নিজের রুম নাম্বার জিজ্ঞাস করছে। তার সীট পড়ছে ব্যবসায় অনুষদ। তারমানে এখন ও মিনিমাম ১০ মিনিট সময় যাবে তার। বিএনসিসির সেচ্ছাসেবক তাকে কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ সে ২০ মিনিট পরে খাতা পাবে। ভাবুন তো তার মনের কি অবস্থা। তার এতো দিনের পরিশ্রম, স্বপ্ন কিভাবে ধুলিৎসাত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
w3w
w3w
এই মেয়েটির ও একই সমস্যা দেরিতে কেন্দ্রে এসেছে।
w3w
এই ছবিগুলো পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তোলা।কারো মুখে হাসি কারো মুখে হতাশার ছাপ দেখে আমার সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেল।
প্রজেক্ট | স্বপ্ন ভাঙ্গা গড়ার দিন |
---|---|
location | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস |
camera | Samsung galaxy S6 |
Photo by | @abidatasnimoral |
সিট্ সংখ্যা সীমিত থাকলে খুবই সমস্যা হয়ে যায় ভর্তির ক্ষেত্রে। ভালো নম্বর পেয়েও অনেক সময় মিস হয়ে যায় স্বপ্নটা, নিজের পছন্দের জায়গায় না ভর্তি হতে পারলে। আর এক্সামের পরেও মনের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব চলতে থাকে যে সবকিছু ঠিকঠাক দিয়েছিলাম না কি হলো, এই নিয়ে টেনশন শুরু হয়ে যায়। আপনি সবকিছু ভালোভাবে লিখে উপস্থাপনা করেছেন।
হা দাদা যারা পরীক্ষার্থী তারা ১০০% ভালো করলেও ভিতরে একটি খটকা থেকেই যায় যে আমি ভালো করব কিনা। চান্স পাবো কিনা। ধন্যবাদ দাদা আপনার মন্তব্য জন্য।
শুরুতে পড়ে খারাপ লাগলো খুব। তবে কঠোর পরিশ্রম করে যে আপনি অবশেষে ভর্তি হতে পেরেছেন দেখে নিজের কাছেই ভাল লাগলো অনেক। অনেক শুভ কামনা রইল আপু আপনার জন্য।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনার ভালো লেগেছে শুনে খুশি হলাম।
আপনার গল্প পড়ে আমার নিজের চোখের পানি গড়িয়ে পড়তেছে। আসলেই মানুষ কতটা চাওয়ার পর ও যদি সেটা নিজেরই ভুলের কারনে হারাতে হয়, এর চেয়ে আর কষ্টের কিছু হতে পারে না। তবে ইচ্ছা ও ধৈর্য্য শক্তি চাইলেই সবকিছু করতে পারে আপনি তার দৃষ্ঠান্ত প্রমাণ। আপনাকে হাজারো সালাম আপনি ধীরে ধীরে আমার আইডলে পরিণত হয়ে যাচ্ছেন।
আপনার সুন্দর মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এবং পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি তার সাথে আপনার কিছু নিজ অভিজ্ঞতা অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় তুলে ধরেছেন। তবে আপনার পোষ্টটি পড়ে একটি জিনিস ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি সেটি হল ভর্তি পরীক্ষার গুরুত্ব এবং আত্মবিশ্বাস তবে মোটের উপর যদি বলতে যাই তাহলে একটি ছাত্রের সামগ্রিক রুপ রেখা টেনে তুলে ধরেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি একজন নিয়মিত পাঠক নিহত আপনার পোস্টগুলো পড়তে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে
পরিশ্রম - প্রচেষ্টা - তীব্র ইচ্ছা কি সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন আপু।আসলেই মানুষ যদি চেষ্টা করে তবে কীয় না পারে।আপনার আগামী দিনগুলোর জন্যেও শুভকামনা রইলো।
ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
আপনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন পরীক্ষার বিষটা পড়ে খারাপ লাগলো।বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ছোট ভুলের জন্য মিস হয়ে গেছে। কিন্তু মেধাবীরা ঠিকই তাদের স্থান খুঁজে নেয়। সফলতা চরম দৃষ্টান্ত আপনি।ভালো থাকবেন।ধন্যবাদ আপনাকে।
পোস্ট পড়ে সন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
ভর্তি পরীক্ষা মানেই এক মহারণ।কঠোর পরিশ্রমের পর যারা জিতলো তারা তো দিন শেষে শেষ হাসিটা হাসলো।কিন্তু যারা পারলো না তারা হাল ছেড়ো না।বড় জয় তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।আপনার লেখাটি খুব সুন্দর হয়েছে।
পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া। পিছনের গল্প গুলো এক একটা রক্তক্ষরণের গল্প। খুব কষ্ট পেয়েছিলাম তখন ভাইয়া।
সেই কষ্টকে শক্তি করেই আপনি আজকে আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা।
আসলে আমি তেমন কিছুই না দাদা। আমার থেকে কত শিক্ষার্থী আছে যারা রাতে রিক্সা চালায় দিনে ক্লাস করে। শুধু স্বপ্ন পূরণের জন্য। আসল অনুপ্রেরণা তো পাব তাদের থেকে।
আসলে পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই এটাই চরম সত্যি কথা, আপনি অনেক কঠোর পরিশ্রম করে আপনি অবশ্যই ভর্তি হতে পেরেছেন দেখে অনেক ভালো লাগলো আপনার জন্য শুভকামনা, আপনি জীবনে অনেক বড় কিছু হতে পারেন এই দোয়া করি।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ
আপু আপনার জীবনের স্বপ্ন ভাঙ্গা গড়ার গল্পটি শুনে কেন জানি না অনেকটা ভাবুক হয়ে পড়লাম। এমন একটি সময় আমাদের প্রতিটা শিক্ষার্থীদের জীবনে এসেছে বা আসবে। এই সময় গুলো আমাদের জীবনে যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সময় তা আমরা সময় পার হবার পরেই বুঝতে শিখি। কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছা শক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্ন কে জয় করতে পারি। আপু আপনি খুব সুন্দর ভাবে আপনার জীবনের ভাঙ্গা-গড়ার গল্পটি ফুটিয়ে তুলেছেন যা পড়ে আমি অনেকটাই অনুপ্রাণিত হলাম। আপু আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
আমার জীবনের গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হয়েছেন শুনে ভালো লাগল।
|স্বপ্নভঙ্গের কোনো স্বাত্বনা হয়না।
একদম ঠিক বলেছেন আপু।তবে কঠিন পরিশ্রমের পর আপনি ব্যর্থ হন নি ,এটা জেনে আমি অনুপ্রেরণা পাচ্ছি।আমাদের মাঝ পথে থেমে যাওয়া উচিত নয়।সত্যিই আমি খুশি হলাম, আপনার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে জেনে।শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
ধন্যবাদ আপু আপনাকে