কান্তজির মিউজিয়াম দর্শন (10% beneficiaries for @shy-fox)

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি ।
আমি এর আগে যখন কান্তজির মন্দির ভ্রমণ করতে গেছিলাম তখন আপনাদের বলেছিলাম কান্তজীর মন্দির একটি জাদুঘর আছে সে জাদুঘর সম্পর্কে আপনাদের পরে জানাবো আজ আমি জাদুঘরের সামান্য কিছু সংগ্রহ নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। সেই সাথে আপনার ভ্রমণের বিষয় তো থাকছেই।

তখন বেশ বিকাল গড়িয়ে পড়ছে আমার কৌতূহল মন জাদুঘরে যেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।জাদুঘরে গিয়ে দেখি প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কেননা তখন বিকেল পাঁচটা বাজতে কয়েক মিনিট বাকি। আমাদের অনুরোধে তারা আমাদের ঢুকতে দিলো বললো বেশী সময় নাই দ্রুত বের হবেন। যথারীতি আমরা জাদুঘরে প্রবেশ করলাম প্রবেশ করেই জাদুঘরের অসাধারণ টেরাকোটার কারুকার্য দেখে আমরা মুগ্ধ হই। আমি বরাবরের মতই আপনাদের সাথে যে বিষয়টি আলোচনা করেছিলাম সেই প্রাচীন আমলের মানুষদের সৃজনশীলতা দেখে তাদের দক্ষতা দেখে আমার এখনো প্রশ্ন জাগে তারা যদি থাকতো কত সুন্দর সুন্দর দৃশ্য গুলো আমাদের মাঝে শোভা পেত।

20220128_172450.jpg

এটি কান্তজির মন্দির জাদুঘরে গেট এ দেয়ালে টেরাকোটার মাধ্যমে ওই সময়ের রাজ-রাজড়াদের বিভিন্ন গল্পে ফুটে উঠেছে। তারা মাটির ফলকে তাদের জীবন বৃত্তান্ত তাদের রাজত্বকাল এর সময়কার বিভিন্ন বিষয়গুলো ফলকের মাঝে তুলে ধরেছেন। যে কোন উৎসুক মনের অন্তরালে এসব নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। ঠিক আমিও আমার ভাবনার চোখ নিয়ে দেয়ালের গভীরে দেখার চেষ্টা করেছিলাম বুঝতে চেষ্টা করেছিলাম কি বুঝিয়েছে এই দেয়ালগুলোর পোড়ামাটির ফলক দিয়ে। তখন দেখলাম সেই সময়ে যেভাবে যুদ্ধ করা হতো তার বিভিন্ন কলাকৌশল ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যুদ্ধের দামামা বাজলে যখন শিংগায় ফুঁক দেয় সে বিষয়টি এছাড়াও রাজারা হাতিতে হাতিতে যুদ্ধ করত। অর্থাৎ হাতিগুলোকে যুদ্ধ সাজে সাজিয়ে সেখানে রাজা ও তার পেছনে তীর-ধনুক নিয়ে সৈন্য-সামন্ত যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতো সেই বিষয়গুলোকে সুন্দরভাবে এই পোড়ামাটির ফলক এর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছে।

20220128_172512.jpg

তারপরে আমার চোখ চলে গেল পাশের দেয়ালে সেখানে গিয়ে দেখলাম একই ধরনের পোড়ামাটির ফলক দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নৌকা বাইচ। তখন বুঝলাম সেই সময়ে আনন্দ উৎসবের জন্য নৌকা বাইচ খেলা হতো। তবে সেই খেলাগুলো ছিল বর্তমান খেলা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এছাড়াও নৌকার মাধ্যমে নদীপথে বিবাহ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হতো সেই বিষয়টিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পোড়ামাটির ফলক এর মাধ্যমে। এর ঠিক নিচে আমার চোখ যায় দেখলাম কিভাবে হরিণ শিকার করে সেই দৃশ্য সুন্দর করে দেখানো হয়েছে। এবং পুরো দৃশ্যকে আরো দৃশ্যন্দিত করে তোলার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুলের ফলক চারপাশে লাগানো হয়েছে।

20220128_172413.jpg

আগের ছবিটি ছিল গেইটের বাম পাশে এই ছবিটিতে ডানপাশে এখানেও মেইন গেটের মত করে যুদ্ধের কৌশল গুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে টেরাকোটা ও মাটির পড়া ফলকের মধ্য দিয়ে।
এরপরে আমরা সোজা সদর দরজা দিয়ে জাদুঘরের প্রধান সংগ্রহশালা তে প্রবেশ করি। যদিও ছোট্ট একটি জাদুঘর সংগ্রহ কম তাই আমি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ফটোগ্রাফি করার চেষ্টা করছি আপনারা বিভিন্ন সময় দেখে অভ্যস্ত তবুও এতে কান্তজীর মন্দিরের সংগ্রহ এজন্যই আমি এগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

20220128_172153.jpg

কালো পাথর দিয়ে তৈরি এই ভাস্কর্যে আপনারা দেখছেন এর আগেও তবে একজন মা তার শিশুকে কিভাবে দুগ্ধপান করছে সে বিষয়টিকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। এই ভাস্কর্যটি প্রায় ১১/১২ শতক পূর্বের। এটি বগুড়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

20220128_172145.jpg

এর পরেই আমার পাশের ভাস্কর্যটির উপর চোখ পরে আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম এটা এমন কেন। তখন আমি আমার পাশের জনকে বললাম এটা রহস্য কি? তখন সে বলল যিনি শুয়ে আছে তিনি মহাদেব আর ওনার বুকের উপর যে দুটি পা দেখতে পাচ্ছি তার স্ত্রী মহাকালীর। আমি জিজ্ঞেস করলাম তার এই অবস্থা কেন তখন সে বলল আমি শুনেছিলাম কালী যখন প্রচন্ড রেগে ছিল এবং আশেপাশের সব কিছু ধ্বংসলীলা চালাচ্ছিল তখন তাকে শান্ত করার জন্য মহাদেব শুয়ে পড়ে বুকের উপর দিয়ে হাঁটলে যদি মহাকালী শান্ত হয় সে উদ্দেশ্যে। ছবিটি আমি খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম। শ্বেত পাথরের তৈরি ভাস্কর্যটি আনুমানিক 18 শতকের।রংপুর জেলা কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

20220128_172023.jpg

তারপর পাশেই গ্লাসের ভিতরে আবদ্ধ কিছু ভাস্কর্য। আমি প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম আসলে কি লেখা ছিল কিন্তু দুঃখের বিষয় পড়তে পারলাম না। তবে ভাস্কর্যটি বিষ্ণুমূর্তি। একটা জিনিস আমি সবসময় খেয়াল করেছি এই ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলো বিশেষ করে মূর্তিগুলো বেশিরভাগই বিষ্ণুমূর্তি। এমনকি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বরেন্দ্র জাদুঘর, মহাস্থান জাদুঘর, থেকে শুরু করে আপনি যে জাদুঘরে যান না কেন অনেক বেশি পরিমাণ বিষ্ণুমূর্তি আপনি দেখতে পাবেন। তাহলে কি ওই সময় এত বেশি পরিমাণ বিষ্ণু মূর্তি তৈরি হতো এবং কথিত আছে এই মূর্তি গুলো নাকি ভীষণ দামী কেননা কালো পাথর দিয়ে তৈরি। যদি আমি বিশ্বাস করিনা তবে লোককথা আর কি ।

20220128_171917.jpg

এর পাশে আরেকটি বিষ্ণু মূর্তি ছিল তবে এটি বাহিরে। তখন আমি দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলাম এই মূর্তিটি সুন্দর করে সংরক্ষণ করা হয়েছে ক্লাসের মধ্যে দিয়ে কিন্তু এটি এত সুন্দর চকচকে কিন্তু বাইরে কেন। তখন তিনি বলল ওই মূর্তিটা হচ্ছে আসল কিন্তু এটিও আসল কিন্তু অরিজিনাল কালো পাথর দিয়ে তৈরি নয়। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম আপনি আসল এবং নকল কিভাবে চিনলেন তখন তিনি বললেন এসব তো আসলে বলা যায় না তবুও আপনি যখন জিজ্ঞেস করেছেন তখন শোনেন আসল বিষ্ণুমূর্তি একবারে প্লেন হয় অর্থাৎ এর কোন ছিদ্র থাকে না এপাশ থেকে ওপাশ দেখা যায় না পেছনটা সমান হয়। তো এই মুহূর্তে দেখুন এপাশ থেকে ওপাশ দেখা যাচ্ছে অর্থাৎ পিছনের টা সামান্য কিছু জায়গা ফাকা। তখন আমি ভাবলাম তার কথাটা তো যুক্তি আছে কেননা তা ছাড়া এভাবে খোলা জায়গায় তো রাখত না। তবে এগুলো খুব রিসেন্ট পালিশ করেছে। এটিও ১১/১২ শতকের । বগুড়া শেরপুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

20220128_171902.jpg

যেহেতু বেশি পরিমাণ সংগ্রহ ছিল না এবং শুধুমাত্র একটি ঘরেই সংগ্রহ ছিল তাই আমাদের দেখতে বেশ দেরি হয়নি। সবগুলোই একই ধরনের হাওয়াই খুব কম গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে তার পরও ফিরে আসার সময় আরেকটি মূর্তি দেখতে পেলাম আমরা। এই মুহূর্তগুলোকে বলা হয় নবগ্রহ প্যানেল। নবগ্রহ প্যানেল আসলে কি জিনিস সে সম্পর্কে একটু জানতে তখন গুগোল করে দেখতে পারলাম এটি মূলত জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতিক। এখানে যে নয়টি মূর্তি আছে এগুলো চন্দ্র ও সূর্যের সাথে সম্পর্ক রেখে মানুষের জীবন বৃত্তান্ত শাস্ত্রের মাধ্যমে বলে দেওয়ার কি।

  • রবি
  • চন্দ্র
  • মঙ্গল
  • বুধ
  • বৃহস্পতি
  • শুক্র
  • শনি
  • রাহু
  • কেতু

এই নয়টি নামকে বলা হয় নবগ্রহ প্যানেল । সেই সময় এই নয়টি প্যানেলের মধ্য দিয়ে জ্যোতিশাস্ত্র তাদের জ্যোতিবিদ্যা প্রয়োগ করত।
এরপর আমরা দেখা শেষ করে বের হয়ে আসলাম আমাদের খুব ঠান্ডা লাগছিল সেই সাথে বেশ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিল তাই দ্রুত রুমে চলে আসলাম । এই ছিল আমার কান্তজীর মন্দিরের জাদুঘর ভ্রমণ।

আমার ছবির লোকেশন W3Wlocation

ধন্যবাদ

@abidatasnimora


break.png

banner-abb23.png

Sort:  
 2 years ago 

গত দুই বছর আগে কান্তজির মন্দির পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। পোড়ামাটির শৈল্পিক কারুকার্য আমাকে দারুণভাবে আকর্ষিত করেছিল। তারমধ্যে নৌকা বাইচ ছবি, যুদ্ধের কলাকৌশল ছিল অন্যতম। জাদুঘরে রাখা বিভিন্ন ভাস্কর্য ছিল চমৎকার দেখতে।
বিশেষকরে বিষ্ণু মূর্তি, কালো পাথরের মূর্তি ছিল উল্লেখযোগ্য।


আপনার ভ্রমণটি নিশ্চয়ই দারুন হয়েছে। চমৎকার করে উপস্থাপন করেছেন।

ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়, এমন সুন্দর একটি বিষয় আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার চমৎকার মন্তুব্য আমি মুগ্ধ। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 59737.47
ETH 3186.24
USDT 1.00
SBD 2.43