ট্রেন টু পাকিস্তান উপন্যাসের রিভিউ ।(10% beneficiaries for @shy-fox
ট্রেন টু পাকিস্তান।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
উপন্যাস | ট্রেন টু পাকিস্তান |
---|---|
লেখক | খুশবন্ত সিং |
প্রকাশনা | পেঙ্গুইন বুকস |
ISBN | ৯৭৮০১৪৩০৬৫৮৮৩ |
প্রথম প্রকাশ | ২০১৬ |
পেজ সংখ্যা | ১৯০ |
দেশ | ভারত |
ভাষা | ইংরেজি |
বাংলা অনুবাদক | সুজন চৌধুরীর |
রেটিং | ৪/৫ |
উপন্যাসের সারসংক্ষেপ
খুশবন্ত সিংয়ের দেশভাগের এক জ্বলন্ত ও জীবন্ত দলিল হিসেবে যে উপন্যাসকে মনে করা হয় তার নাম ট্রেন টু পাকিস্তান। সেই সময়ের দেশভাগের মর্মান্তিক ঘটনা গুলো একসূত্রে গেঁথে তোলা হয়েছে ট্রেন টু পাকিস্তান বইটিতে। খুশবন্ত সিং চলমান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শরণার্থীদের দুঃখ, কষ্ট গুলোকে একমালায় গেঁথেছেন যা আমরা এই উপন্যাসের মাধ্যমে খুঁজে পাবো। দায়িত্বশীল জায়গা থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন না করে কিভাবে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেওয়া হয় সে বিষয়টি তিনি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। ১৯৪৭ সালে ২০০ বছরের অত্যাচার, অনাচার ,নির্যাতন ,অবহেলা থেকে বাঁচার জন্য শত আন্দোলনের পড়ে যখন ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারতকে স্বাধীনতা দেওয়া হয় শুধু মাত্র ধর্মের ভিত্তিতে , জাতের ভিত্তিতে । যেখানে উপেক্ষা করা হয় হাজার বছরের ভালোবাসা সম্প্রীতি কে। এক রাতের মাধ্যমে একটিমাত্র কলমের খোঁচায় বিভক্ত হয়ে যায় একটি দেশ। শুরু হয়ে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। দুই দেশের স্বার্থন্বেষী, ক্ষমতালোভী, সাম্প্রদায়িক, রক্তপিপাসুরা মেতে ওঠে রক্তের হোলিখেলায়। ভারত, পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু, মুসলিম নির্যাতন, হত্যা করা হয়। হাজার হাজার নিরীহ, নিষ্পাপ মানুষকে শুধুমাত্র ধর্মের দোহাই দিয়ে হত্যা করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের নোয়াখালীতে সমস্ত হিন্দুদের হত্যা করা হয়, তারই পরিপ্রেক্ষিতে বদলা হিসেবে বিহারের সমস্ত মুসলিমদের হত্যা করা হয়। এছাড়া কলকাতা, মুর্শিদাবাদ দুই দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে হত্যাযজ্ঞ। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় 1 কোটি লোক দেশান্তর হয়ে যায় অপরদিকে প্রায় দশ লক্ষ লোক মৃত্যুবরণ করে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে। যে ধর্ম আমাদের এনে দিয়েছিল ছিল শান্তি। এই সবকিছু ছাড়িয়ে সীমান্ত অঞ্চলে একটি গ্রাম ছিল গ্রামের নাম মারো মাজরা। যে গ্রামে হাজার বছর ধরে শান্তিতে বসবাস করে আসছে হিন্দু, মুসলিম ও শিখরা । সম্প্রীতি, ভালবাসা তাদের আবদ্ধ করেছিল ধর্ম পরিচয়কে উর্ধে রেখ। তাদের একমাত্র পরিচয় ছিল তারা মারো মাজরা গ্রামের বাসিন্দা। এই গ্রামে মুসলিমর মসজিদে নামাজ পড়তো, হিন্দুরা উলোধবনি করত,শিখরা প্রার্থনা করত ।এই গ্রামের ছেলে জুগগাত সিং নামে এক ছেলে যা ধর্ম ছিল শিখ। সে প্রেমে পড়ে মুসলিম পরিবারের সন্তান নুরুনের। দুজন দুজনার প্রেমে বিভোর হয়ে থাকে, স্বপ্ন বোনে একদিন তারা এই গ্রামে বসবাস করবে একই ঘরে। জুগগাত রাতে ডাকাতি করে এসে নরুন এর কাছে ডাকাতির শিকার হয়ে যেত।কিন্তু এসব মলিন হয়ে যায় হঠাৎ একদিন তাদের গ্রামে এক ভুতুড়ে ট্রেন এসে হাজির যে ট্রেনের হাজারো শরণার্থীদের লাশ ভর্তি ছিল। ট্রেনটি এসেছিল পাকিস্তান থেকে। শুরু হয়ে যায় শান্তিপ্রিয় একটি গ্রামের অশান্তির লীলা খেলা। যে খেলায় খলনায়ক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন সরকারি কর্মকর্তা হুকুম চাঁদ এবং তার সহযোগী পুলিশ ইন্সপেক্টর। মারো মাজরা গ্রামের শান্তি প্রিয় মানুষদের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে উস্কানি দেয় এই সহকারী কর্মকর্তা গুলো। তারা তাদের স্বার্থ হাসিল ও অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য বীজ বপন করে সাম্প্রদায়িকতার । অল্পসময়ের মধ্যেই পুরো গ্রামকে তছনছ করে দেয় করে দেয়, রক্তে সমুদ্র পরিণত হয় মারো মাজরা গ্রাম। মুসলমানরা তাদের জন্মভূমি ভালোবাসার সেই গ্রামটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে থাকে এবং জুগগাত সিংকেউ ছেড়ে চলে যেতে হয় নুরুনকে। কে সমাপ্ত হয় এক অসাম্প্রদায়িক ভালোবাসার। অন্যদিকে হুকুম চাঁদ প্রেমে পড়ে তার হাঁটুর বয়সী এক মেয়ে যার নাম হাসিনা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে হাসিনা কেউ যেতে হয় পাকিস্তানের। কিন্তু সেই ক্ষমতালোভী, রক্তপিপাসু যাদের রক্তের নেশা যেন কাটছেই না। তারা পরিকল্পনা করে যে ট্রেন পাকিস্তানে যাবে তাদের সবাইকেই হত্যা করা হবে। খুনের বদলা নেওয়া হবে। তবে সেই ট্রেনটা কি পাকিস্তানের যেতে পেরেছিল? নাকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জয় হয়েছিল? ভালোবাসার জয় হয়েছিল নাকি সাম্প্রদায়িকতার। এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ট্রেন টু পাকিস্তান বইটি পড়তে হবে।
উপন্যাস থেকে শিক্ষা
এই উপন্যাস পড়ার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারব কিভাবে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর অসহায়, অত্যাচারিত, নিপীড়িত সাধারণ মানুষদের হত্যা করা হয়েছিল ?কিভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কে উস্কে দেওয়া হয়েছিল? ওই সময়ের মানুষদের কত অসহায়ের মতো জীবনযাপন করতে হয়েছিল। কেউ বাবাকে হারিয়ে, মাকে হারিয়ে এতিম হয়েছিল। কেউবা সন্তানকে হারিয়ে পিতৃহারা হয়েছিল। এছাড়াও ক্ষমতার কাছে মানুষের জীবন যে মূল্যহীন তার জীবন্ত দলিল হচ্ছে ট্রেন টু পাকিস্তান উপন্যাসটি।
নিজস্ব মন্তব্য
প্রথমেই বলে নেই নির্মম কাহিনী কখনোই এই রিভিউ মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয় কষ্টের অনুভূতি গুলোকে কখনোই লেখায় প্রকাশ করা যায় না। খুশবন্ত সিং ট্রেন টু পাকিস্তান উপন্যাসের মধ্য দিয়ে মাজরা গ্রামের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কাহিনীকে সমস্ত ভারত উপমহাদেশের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন কিভাবে একদিনের সিদ্ধান্তে প্রিয়জনকে, প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে,শৈশবের ধূলীকণা ছেড়ে একটি দেশে যেতে হয়েছিল। তিনি আরো বোঝাতে চেয়েছেন ক্ষমতালোভী স্বার্থন্বেষী মহল নিজের সুবিধার জন্য, নিজের স্বার্থের জন্য কিভাবে অন্যের জীবনকে বলি দেয়। মারো মাজরা গ্রামে তিন ধর্মের লোকজন খুব শান্তিতে বসবাস করে আসছিল কিন্তু কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল সেই শান্তিপ্রিয় গ্রামে অশান্তির বাতাস বয়ে দেয়। তাদের ভেতরে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের খেলা শুরু হয়ে যায়। সেই খেলা পরিণত হয় রক্তের নেশায়। যে মানুষটির সাথে নিজের দুঃখ, কষ্ট, হাসি, কান্না সুখ ভাগাভাগি করে নেওয়া নিয়েছিল সেই মানুষরা কিভাবে একে অপরকে হত্যার জন্য উন্মাদ হয়। সত্যি এই উপন্যাসটি না পড়লে বোঝা যাবেনা।
তবে ভালবাসার কোনো ধর্ম হয়না।
ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৫/৫
উপন্যাসের পিডিএফ লিংক এখানে
বুক রিভিউ | ট্রেন টু পাকিস্তান |
---|---|
রিভিউ করেছেন | @abidatasnimora |
আপু আসলে সত্যিই কিছু কিছু বিষয় থাকে যেগুলো ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। সত্যি বলতে এই বিষয়গুলি আগে থেকেই জানা ছিল তবে আজকের পোস্ট থেকে মনে হয় সব খুব সুন্দর হবে জানতে পারলাম। মাঝে মাঝে এমন বিষয় নিয়ে উপস্থাপনা করবেন সত্যি এতে করে আমরা অনেক অজানা জিনিস জানতে পারব।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অবশ্যই চেষ্টা করব কিছু বিষয়ে জানানোর জন্য ।আর আমি এই ধরনের পোস্ট করতে বেশি ভালোবাসি।
হ্যাঁ আপু আপনি এটা ঠিক কথা বলেছেন যে নির্মম অত্যাচার মুখে বলে কখনোই প্রকাশ করা যাবে না। আসলে 1947 সালে 200 বছর অত্যাচার করেছিল নির্মমভাবে মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল।এটি খুবই দুঃখজনক যা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না। আপনি তো আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম আজকের ট্রেন টু পাকিস্তান এর মাধ্যমে।সত্যিই এটা খুব খারাপ লাগছে যে তিন ধর্মের লোকজন মারো মাজরা গ্রামে শান্তিতে বসবাস করতে আসছিল কিন্তু স্বার্থন্বেষী মহল সেই শান্তিপ্রিয় গ্রামে অশান্তির বাতাস বয়ে যায় তাদের ভেতর বিশ্বাস অবিশ্বাস নিয়ে খেলা শুরু হয়ে যায় দারুন ভাবে তুলে ধরেছেন মুহূর্তগুলো ।
আপনি বরাবর সুন্দর কমেন্ট করে আমার পাশে থাকেন এজন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপু আপনার বুক রিভিউ গুলো পড়লাম। কিছুদিন আগে সম্ভবত একটি রিভিউ দিয়েছিলেন হাজার বছর ধরে উপন্যাসের। আর এখন আপনার কল্যানে জানতে পারলাম ট্রেন টু পাকিস্তান সম্পর্কে। আমিও একটা রিভিউ লিখব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না। ধন্যবাদ আপনাকে
আপনার জন্য শুভকামনা রইল।