#📚📚বুক রিভিউ-শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অরক্ষণীয়া 📚📚(10% beneficiaries for @shy-fox)

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন। আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ আমি আপনাদের সাথে একটি বুক রিভিউ নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা সবাই শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে চেনেন তার কালজয়ী উপন্যাস গুলোর জন্য তিনি বিখ্যাত।সেই রকম একটি উপন্যাস অরক্ষণীয়া। আমি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অরক্ষণীয়া উপন্যাসের রিভিউ আপনাদের সাথে শেয়ার করব। এটি একটি চিরাচরিত সামাজিক উপন্যাস যেখানে সমাজের বাস্তব চিত্র তিনি উপন্যাসের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। তবে চলুন তাঁর এই কালজয়ী উপন্যাস এর কি বিষয় নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন জেনে আসা যাক।

IMG-20220208-WA0006.jpg

উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

উপন্যাসঅরক্ষণীয়া
লেখকশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশকদেজ পাবলিশিং
ISBN817079970x
পেজ সংখ্যা৪৮
দেশভারত
ভাষাবাংলা

মূলবক্তব্য

IMG-20220208-WA0016.jpg

অরক্ষনীয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে যাকে বিবাহ না দিয়ে ঘরে রাখা যায় না। এটি একটি চিরায়ত সামাজিক উপন্যাস। এই উপন্যাসের মাধ্যমে আপনি আমাদের সমাজে আসল চিত্র জানতে পারবেন একজন রুপ না থাকা কালো মেয়েকে বিয়ে দেওয়া যে কতটা কঠিন তা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আছেন গিনি।গিনির বয়স অল্প। গিনিকে ঘীরেই পুরো উপন্যাস। মা দুর্গা মনিকে নিয়ে তার জীবনে দুঃখের শেষ নেই। সমাজের মানুষের বিভিন্ন ধরনের কথা তাকে শুনতে হয় সব সময়। সবদিক থেকেই যেন দুর্গা মনি পরিবারে বিপদ নেমে আসতেছে একদিকে অভাবের সংসার মেয়েকে মেয়ের বিয়ে না দেওয়ার জ্বালা, মেয়ের গায়ের রং কালো সব মিলিয়ে যেন দুর্বিষহ একটি অবস্থা। উপন্যাসে আমরা আরেকটি চরিত্র দেখতে পাবো যার নাম অতুল। এই গল্পে আমরা অতুল এবং গিনির মধ্যে এক সুন্দর সখ্যতার সম্পর্ক দেখতে পাবো। একটা সময় যখন গিনির বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন অতুল গিনি এবং তার পরিবারের সকল দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়। এদিকে দুর্গা মনি মনে মনে স্থির করে গিনির সাথে অতুলের বিয়ে দিবে ।গিনির বাবা মারা যাওয়ার সময় অতুল তাকে কথা দিয়েছিল যে সে গিনিকে বিয়ে করবে কিন্তু দুর্গা মনি যখন অতুলের সাথে গিনির বিয়ের করার কথা বলে অতুল রীতিমতো সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে। এই কথা শোনার পরে দুর্গা মনির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।

IMG-20220208-WA0015.jpg

এতদিনের স্বপ্ন, চিন্তাভাবনা যেন সব নিমিষেই ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল। তাহলে কি এই সম্পর্ক মিথ্যা ছিল? দুর্গা মনে মনে মনে জিজ্ঞেস করে। এইভাবে চলতে থাকে মা মেয়ের কষ্টের জীবন। দুর্গা মনি বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক পাত্র খুঁজতে থাকেন কিন্তু গিনিকে বিয়ে করার মত কোন পাত্র খুঁজে পান না। এইদিকে গিনি হতাশায় ডুবে যাই যখন চারদিক থেকে বিয়ে ভেঙে যায়। তখন সে হীনমন্যতায় ভোগা শুরু করে, সেভাবে আমি সুন্দর না হওয়ায় আমাকে কেউ বিয়ে করছে না। এই গল্পে আরো একটি চরিত্র কে আমাদের সাতগে পাই তিনি হচ্ছেন গিনির চাচি। তিনি গীনির দুঃখে দুঃখিত হন কিন্তু কারো ব্যথা অনুভব করা এবং সে ব্যথা দূর করার চেষ্টা কিন্তু এক না। গিনির কি কোন গুণ ছিল না,? তার সততা ,নৈতিকতা, মূল্যবোধ আচার-ব্যবহার এগুলোর কি কোনো মূল্য নেই?গিনির ব্যবহার সবসময় মনমুগ্ধকর ছিল কিন্তু এই সমাজে কি এগুলোর কোনো মূল্য নেই শুধুমাত্র একটা মেয়ের চেহারা ভালো নয় দেখে তাকে এত অবজ্ঞা শিকার হতে হয় তা আমরা উপন্যাসটি না বললে বুঝবো না। লেখক এখানে ফুটিয়ে তুলেছেন যে একটি মেয়ের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের চেয়ে বাহ্যিক সৌন্দর্য যখন প্রাধান্য পায় তখন সমাজের দিকে আঙুল তোলা কি স্বাভাবিক নয় । এ গল্পটি থেকে আমরা একটি মায়ের তার মেয়েকে ঘিরে প্রত্যাশা, স্বপ্ন, ব্যাকুলতা, অভিমান এবং দুঃখী মায়ের আত্মচিৎকার।
IMG-20220208-WA0014.jpg

এই গল্পে এক পর্যায়ে দুর্গা মনি তার মেয়েকে নিয়ে তার ভাইয়ের বাড়িতে যাই সেখানে শুরু হয় আর এক অসহ্য যন্ত্রণা, প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয় গিনি। এমনিতেই তাকে কেউ বিয়ে করতে ছিলনা তারপরে প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে সে একদম মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে যায়। তার মামা তাকে তার শ্যলোকের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য গিনির মাকে চাপ দিতে থাকে। সব মিলিয়ে এখানে এক ত্রিমুখী দুর্দশার কথা আপনারা জানতে পারবেন। এক অসহায় মায়ের কথা, তার আত্মহত্যার কথা । একটি মেয়ের মুখ ফুটে না বলা রক্তক্ষরণের কথা।
শেষ পর্যন্ত কি গিনির সাথে অতুলের বিয়ে হয়? জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে অরক্ষণীয়া উপন্যাসটি পড়তে হবে।

ব্যক্তিগত মতামত

IMG-20220208-WA0013.jpg

উপন্যাসটি পড়ে সমাজের মানুষের প্রতি এক ধরনের বিতৃষ্ণা চলে আসবে। এই গল্পের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই একটি দুঃখী পরিবারের বাঁধভাঙ্গা কান্না, সমাজের কাছে তার অসহায় ভাবে আত্মসমর্পণ। উপন্যাস এ একটি মেয়ের সততা ,নৈতিকতা ,মূল্যবোধ ,আচার-ব্যবহার থেকে যখন তার বাহ্যিক চেহারা কে প্রাধান্য দেওয়া হয় এই বিষয়টা আমাকে ব্যথিত করেছে। আমাদের সব সময় বাহ্যিক সৌন্দর্য থেকে অন্তর্হিত সৌন্দর্য্যকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত। কালো বলে তাকে বিয়ে করা যাবে না এই ধরনের বর্ণ বৈষম্য আজ আমাদের সমাজে বিদ্যমান। আমরা ভুলে যাই সৌন্দর্য মানুষের বাহ্যিক রূপ নয় অন্তর্নিহিত রূপ যা আপনাকে প্রতিটা মুহূর্ত ভালো লাগবে। সর্বোপরি রূপ না থাকা এক গরীব দুঃখী মেয়ে বিয়ে দেয়া যে কতটা কঠিন তা আপনারা হয়তো জানেন। এই উপন্যাসে বসেই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । আশা করি আপনারা যারা উপন্যাসটি পড়েনি উপন্যাসটি পড়বেন আপনাদের ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ

@abidatasnimora


break.png

banner-abb23.png

Sort:  
 2 years ago 

আপনার রিভিউ করা বইটি কখনো পড়া হয়নি । তবে আপনার রিভিউ থেকে খুব সহজে বুঝতে পারলাম বইটির আসল কারণ । আপনি অনেক সুন্দর ভাবে বইটি রিভিউ করেছেন । আশা করি পরবর্তীতে আরো নতুন কিছু নিয়ে আমাদের সামনে উপস্থাপন করবেন ।
আপনার জন্য শুভকামনা রইল

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে । শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

শরৎচন্দ্রের বই পড়তে আমার খুবই ভালোলাগে। আপু আপনি অনেক সুন্দর ভাবে আপনার এই বুক রিভিউ পোস্টটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। তবে এর আগে আমি এই বইটি কখনো পড়িনি। আপনার এই পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু। আপু আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আপু আপনার রিভিউগুলো আমি নিয়মিত পড়ি। খুব ভালো রিভিউ করেন আপনি কিন্তু কেন যেন বেছে বেছে সব পুরনো দিনের বিখ্যাত উপন্যাস গুলি রিভিউ করেন। পরবর্তীতে আধুনিক যুগের অ্যাডভেঞ্চার ধর্মী বিশ্ব বিখ্যাত কিছু বইয়ের রিভিউ লেখার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি রিভিউ শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

আপনি আমার রিভিউ নিয়মিত পড়েন শুনে ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে ।

 2 years ago 

আপনার সম্পূর্ণ রিভিউ পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। সাজানো গোছানো ভাবে মুল বিষয়টিকে আপনি তুলে ধরেছেন। আমাদের সমাজে বাহ্যিক সৌন্দর্যের দিকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

আমি উপন্যাসটি পড়ে নি তাই আমি জানতে চাই শেষ পর্যন্ত কি গিনির বিয়ে হয়েছিল। আত্মহত্যা করেছিল সেই, নাকি অসমাপ্ত অবস্থায় উপন্যাসটি শেষ হয়ে গিয়েছে।

 2 years ago (edited)

গিনির এক বৃদ্ধার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল কিন্তু পূর্ব মুহুর্তে ভেঙে যায়। এইদিকে অতুল গিনির কাছে তার অপরাদ শিকার করে।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের একত্র হওয়া গল্পে দেখানো হয় না অসমাপ্ত ছিল ।
শরৎচন্দ্রের উপন্যাস পড়ার সময় হলে পড়িয়েন গৃহদাহ আরো সুন্দর সামনে সপ্তাহে রিভিউ দিব।

 2 years ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ ইনফরমেশনটি দেওয়ার জন্য।

আপনার পরবর্তী উপন্যাসের রিভিউ করার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

EZrGNWcrMDNczaEXa66AEJHcKH7nrfa7r2fnEEb26owGbKmVZzVNY38ZTpQGcSKBRTWKQQ1NYenwo9LEQ2PvU7bfyvF5uQyBcpg9GAJ2va...2w7ep3LhhQa9kvWQkCLWjKffNejcyyHjp9ScganhREzkD3tjt9Po5p3UVrueKo7yazdVpNDXMDDSuBxwSR2of5d3Hw7x1SEccV31Hi7jLan7SSYxXeu1BPFSh4.png

আপু আপনার রিভিউগুলো আমার অনেক ভালো লাগে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অরক্ষণীয়া বইটির কথা আগে শুনে ছিলাম আমার এক বন্ধুর কাছে। আজকে আপনার রিভিউ পড়ে ভালো ধারনা পেলাম বইটি সম্পর্কে৷ আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অসাধারণ রিভিউ করার জন্য।

EZrGNWcrMDNczaEXa66AEJHcKH7nrfa7r2fnEEb26owGbKmVZzVNY38ZTpQGcSKBRTWKQQ1NYenwo9LEQ2PvU7bfyvF5uQyBcpg9GAJ2va...2w7ep3LhhQa9kvWQkCLWjKffNejcyyHjp9ScganhREzkD3tjt9Po5p3UVrueKo7yazdVpNDXMDDSuBxwSR2of5d3Hw7x1SEccV31Hi7jLan7SSYxXeu1BPFSh4.png

 2 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60699.39
ETH 2655.06
USDT 1.00
SBD 2.59