বিশ্ব মা দিবস ও বৃদ্ধাশ্রম (১০%🦊🦊🦊)
কেমন আছেন সবাই ?আশা করি ভালো আছেন।আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। আজ ৮ মে বিশ্ব মা দিবস। আজ আমি আপনাদের সাথে মা নিয়ে কথা বলব।
আসলে আমি মা নিয়ে যা বলি না কেন তাই কম হয়ে যাবে কারণ মায়ের সঙ্গে, মায়ের অনুভূতি কেউ কখনো বলে প্রকাশ করতে পারবে না। আমাদের কাছে প্রত্যেকের কাছে মা হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ যার অবদান কখনোই শোধ হবার নয়। পৃথিবীতে মা হচ্ছে সবথেকে বেশি নিরাপদ আশ্রয়স্থল যেখানে নির্দ্বিধায় সকল কথা ,আবদার, আমাদের চাওয়া পাওয়ার কথা বলা যায়। আসলে আমি মা নিয়ে কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিনা। যদি শুরু থেকে শুরু করা যায় তাহলে বলব মা না থাকলে আমরা এই পৃথিবীর জন্য আসতাম না। আমরা মায়ের গর্ভে থাকাকালীন তিনি আমাদের যে পরিমাণ যত্ন নেন আমাদের প্রতিটা দিন পৃথিবীতে না আসা পর্যন্ত তিনি যে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেন শুধু এইটুকু আমরা যদি কল্পনা করি তাহলে তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা এতটাই বেড়ে যায় যা লিখে
প্রকাশ করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোন কলম নাই যে মা কে নিয়ে লিখে শেষ করতে পারবে। পৃথিবীতে আসার পর মায়ের কষ্ট যেন আরও বৃদ্ধি পায়। সেই ছোট থেকে কত যত্ন সহকারে আমাদের ধীরে ধীরে লালন পালন করে। ছোটবেলায় আমরা মাকে কত ধরনের কষ্ট দিয়ে থাকি গভীর রাতে , শীতকালে রাতে মা যে কষ্ট করত তা এখন উপলব্ধি করতে পারি। আমরাও একদিন মা হব আমাদের এই অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে । কিন্তু তারপরও মায়ের মুখ থেকে কখনো কষ্টের কথা শোনা যায় না ,হতাশা ছেয়ে যায়না তার চেহারায় । ছোটবেলায় আমরা কত আবদার করি মায়ের কাছে ,কত জেদ করি কিন্তু মা কখনো না করবে না। তার সাধ্যমত আমাদের চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ করেন। আমরা সামান্য অসুস্থ হলে মায়ের যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায় তা কখনোই একজন সন্তান ছাড়া কেউ উপলব্ধি করতে পারবেনা। ছোটবেলায় যখন আমরা মা রচনা লিখতাম তখন এত সুন্দর ভাবে মা কে নিয়ে লিখতাম যে সব ভালোবাসা উজাড় করে দিয়ে লিখতাম ।পৃথিবীতে সবথেকে মধুরতম শব্দ হলো মা, হয়তো মধুরতম বললেও কম বলা হবে। আসলে মায়ের কোন বিকল্প রুপক হতে পারেনা। মা শব্দের বিকল্প শুধু মা। মায়ের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা কখনোই কমানো উচিত না। আজ বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে মায়ের প্রতি আমার ভালোবাসা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি
তবে মায়ের প্রতি অবহেলার নিউজ হরহামেশাই শোনা যাচ্ছে। মা সন্তানের জন্য কত কষ্ট করে সেই সন্তান বড় হওয়ার পরে মাকে অবহেলায় বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে থাকা মায়ের জন্য কতটা কষ্ট কতটা বেদনাদায়ক ওই ভুক্তভোগী মা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। যে মা আমাদের ছোটবেলা থেকে লালন পালন করে তার সব সখ-আহ্লাদ ত্যাগ করে আমাদের পেছনে সময় দিয়েছে তাকে কত সহজেই দূরে ঠেলে দিচ্ছি। মায়ের প্রতি অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু মা সহজে ক্ষমা করে দেন তার সন্তানের সকল অযোগ্য অপরাধ গুলো। । আর এই জন্য পৃথিবীতে মা হচ্ছে সবথেকে ক্ষমাশীল ব্যক্তি ,দয়ার সাগর। সন্তানের করা ছোট বড় সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেয় শুধু একবার মা বলে ডাকলে । আপনারা যদি কেউ কখনো বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে থাকেন তাহলে ওখানে গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলবেন দেখবেন তার ভেতরের কষ্ট গুলো ।
বৃদ্ধাশ্রম
আমার মনে আছে করোনার মধ্যে আমার কলেজের বন্ধুদের সাথে এক বৃদ্ধাশ্রমের গিয়েছিলাম। সেখানে এক মায়ের সাথে আমি দীর্ঘক্ষণ থেকে কথা বলেছিলাম তিনি আমাকে তার জীবনের কাহিনী শোনালেন আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
ওনার নাম ছিল জাহানারা বেগম আমি তাকে বললাম আপনার এখানে আসার কারণ কি ?কিভাবে আসলেন ?আপনাকে কে রেখে গিয়েছে এখানে । আমার প্রশ্ন করার সাথে সাথে মনের দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আর বলছে মা এটা আমার কপাল ছিল ।আমি এক হত্যভাগ্য মা। উনি বললেন আর আমি ওনার হাত আমার হাতের উপর নিয়ে বললাম বলুন আমি শুনব। তখন উনি বললেন বিয়ের কয়েক বছর পরেই আমার স্বামী আমাকে রেখে কাজের জন্য ঢাকায় যান। আমিও ওনাকে যেতে দেই সংসারে অভাবের কারণে । দুই এক বছর আমাদের ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ এক ইদে উনি বাসায় আসলেন না।আমার ফোন ও নাই।রাজুর বাপের কাছেও ফোন ছিল না।তাই যোগাযোগ করার বুদ্ধি ছিলনা।এই ভাবে এই বছর কেটে যায় রাজুর বাপ বাডিতে আসেনা। এইদিকে রাজুর বয়স বছর ওকে নিয়ে আমার কষ্টের শেষ নেই। আমাদের এলাকার আরো একজন রাজুর বাপের সাথে রিকশা চালানোর জন্য ঢাকায় গিয়েছিল। হটাৎ একদিন করিম ভাইয়ের সাথে আমার দেখা। আমাকে দেখেই বলছে রাজুর মা রাজুর বাপ তো ঢাকায় বিয়ে করেছে কথাটা শুনে আমার বুকের ভিতর হা হা করে উঠল।পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল।তারপর থেকে রাজুর বাপ আর কোনোদিন আসেনি।তাকে আর কখনো দেখেনি।এই ছোট ছেলেকে নিয়ে মানুষের বাসায় কাজ করে করে ওকে বড় করেছি। কাপড় কিনে দিছি নিজে না খেয়ে আমার কলিজার ধনকে খাওয়াইছি। রাজু স্কুলেও যেত মা।ও অনেক ভাল পড়ালেখা পাইতো।আমার রাজু ছাড়া আর কেউ ছিল না মা কেউ ছিল না বলেই হু হু করে কান্না শুরু করে দিল।রাজু বড় হলো ওকে বিয়ে করাইলাম ওনেক কষ্ট করে গ্রামের পাঁচদশটা মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়াইছিলাম। কিন্ত বিয়ের পর কিছু ভালোই গেল মা।তারপর থেকেই রাজুর বউ আমাক দেখতে পেত না।রাজুও বউয়ের কথা শুনে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করল। আমি বললাম বাবারে তুই ছাড়া আমার কে আছে। ছোট থেকে তোক কত কষ্ট করে মানস করছি জানিস তো। তোর বউ আমাকে তেমন খেতেও দেয়না।রাজু কিছুই বলেনা।বলে আমার কামাই না অতো খাওয়া কই থেকে আসবে কথা শুনে আমার বুক টা ছেত কর উঠলো মা।বাপ ছাড়া মানস করে ছোল আমাকে এই কথা কয়।খোদা মরন দাও আমাকে।কথা গুল শুনে আমার এতটাই খারাপ লাগছিল বোঝাতে পারব না। এর উনি বললেন হঠাৎ একদিন রাজুর বউ কইয়া বসল তোমার মাও এই বাড়িত থাকলে আমি তোমার ভাত খামো না। হয় তোমার মা থাকবি না হয় আমি।৭ দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নাও।আমি পাশের ঘর থেকে সব শুনতেছিনু মা।
রাজু কয় তুমি কও মা কোথায় যাবি। মায়ের যাওয়ার কই যায়গা আছে। তখন রাজুর বউ কয় বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসো তোমার মাকে।তোমার মায়ের মুখ আর একদিন ও দেখতে চাইনা। পরের দিন রাজু আমাকে এসে বলে মা তোমাকে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া লাগবে তোমার জন্য বউ হারাতে পারব না।সংসারে অশান্তি করতে পারব। আমিও ভাবলাম ছেলে আমার ঠিকই তো বলছে-
আমার জন্য বউ হারাবি কেন-
সেই থেকে আমার আপন ঠিকানা এই বৃদ্ধাশ্রম মা বলেই আমার হাত ধরে কান্না আর বলছে মা রাজুর বউয়ের মতো হসনা শাশুড়ী কে নিজের মায়ের মতো দেখিস।
ধন্যবাদ
মা কথাটি অত্যন্ত ছোট হলেও এর ভাবার্থ এর মর্যাদা সবকিছুর থেকে অনেক উর্ধ্বে। একজন মা জাহানারা বেগমের কথা শুনে আমার ভেতরটা যেন কেপে উঠলো। আজকে এই মা দিবসে আমরা সকলে প্রতিজ্ঞা করব আর কোন মাকে যেন বৃদ্ধাশ্রমে যেতে না হয়। আর রাজুর মতো কোন ছেলে যেন কারও ঘরে জন্ম গ্রহণ না করে। আপনার লেখাটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার নিজের ভিতরটা ও কেপে উঠেছিল যখন কাহিনী শুনেছিলাম।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।
রাজু নামের সন্তানরূপি এইরকম জানোয়ার এখন দেশ ভরা। যে মানুষ তার মায়ের না হতে পারে সে দুনিয়ার কারো হতে পারে না। মা এমন একটা অনুভূতি তাকে নিয়ে যতো কথাই বলি সেটা কম হবে । বৃদ্ধাশ্রম এর প্রতিটা মানুষের জীবনে এমন গল্প লুকিয়ে আছে ।ভালো লিখেছেন আপু । ধন্যবাদ আপনাকে ।
আমার খুব খারাপ লেগেছে ভাইয়া যখন ওনার কথা গুলো শুনতেছিলাম।ধন্যবাদ আমার লেখা আপনার ভালো লেগেছে শুনে।
কথা তিতা হলেও এটাই সত্য মা দিবসে এতো মা ভক্তি দেখায় কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে এতো মা কেন? প্রতিবছরই অনেক মায়ের ঠিকানা হয় এই বৃদ্ধাশ্রম। জাহানারা বেগমের কাহিনীটা পড়ে খারাপ লাগলো আপু। এরকম অনেক মাই আছে যাদের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে। রাজুর মতো এমন সন্তান যেন কারো না হয় এই কামনাই করি। ভালো থাকুক পৃথীবির সকল মা বাবা।
আপনি একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া।আমি আপনার সাথে একদম একমত ।অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।