📚📚শরৎচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস রিভিউ- গৃহদাহ📚📚১০ ভাগ লাজুক খ্যাঁকের জন্য

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago
কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভাল আছেন আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সকল সদস্যদের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ আমি আপনাদের সাথে একটি বুক রিভিউ আলোচনা করব। আমি ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের উপন্যাস, নাটক পড়তে ভালোবাসি। বিশেষ করে উপন্যাস পড়তে আমার বেশ ভালো লাগে। আগে শুধু উপন্যাস পড়ে যেতাম তা কখনোই মনে করার চেষ্টা করতাম না বা কখন লিখে রাখতাম না কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মে যোগ হওয়ার পরে সেই পড়াগুলো আজ কাজে লাগছে।
গৃহদাহ
IMG-20220314-WA0009.jpg

siam,.png

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম একজন উপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তার বহুমাত্রিক প্রতিভার মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে বিরাট অবদান রেখেছেন। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস গুলো সাবলীল ভাষায় লেখা যা পাঠককে আকৃষ্ট করে। তার উপন্যাস পড়ে আমরা সহজেই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ধারণা পায়।
তার উপন্যাস গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে

  • গৃহদাহ
  • মেজদিদি
  • বড়দিদি,
  • পরিণীতা ,
  • শ্রীকান্ত
  • দেবদাস
  • পথের দাবী
  • অরক্ষণীয়া
  • চরিত্রহীন ও পল্লীসমাজ

ইতিপূর্বে আমি আপনাদের সাথে অরক্ষণীয়া উপন্যাসের রিভিউ তুলে ধরেছি। এবার তার কালজয়ী একটি উপন্যাস গৃহদাহ আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

IMG-20220314-WA0013.jpg

siam,.png

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

উপন্যাসগৃহদাহ
লেখকশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রকাশকাল১৯২০
ভাষাবাংলা
পৃষ্ঠা২৬৭
IMG-20220314-WA0010.jpg

siam,.png

মুলকাহিনী

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস গুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় উপন্যাসটি হচ্ছে গৃহদাহ। এই গৃহদাহ উপন্যাস অবলম্বনে একটি সিনেমা আছে যেখানে অভিনয় করেছেন কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। গৃহদাহ উপন্যাসটির ১৯২০ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়। আমরা এই উপন্যাসে যে প্রধান চরিত্র গুলো দেখতে পাবো। চরিত্রগুলো হচ্ছে-
  • মহিম
  • অচলা
  • সুরেশ

মহিম এবং সুরেশ পরম বন্ধু। মহিমের জীবন বাঁচাতে সুরেশ তার নিজের জীবনের পরোয়া কখনো করে না। মহিম খুব দরিদ্র আর সুরেশ এর টাকা -পয়সা, ধন- সম্পদের কোন অভাব নেই। মহিম নিজস্বতায় অটল তাই সুরেশের
টাকা-পয়সার দিকে তার লোভ নাই। কিন্তু মহিমের সাথে একটা মেয়ের সম্পর্ক ছিল তাদের বিয়েও একপ্রকার ঠিক হয়ে গেছে। মেয়েটার তার নাম অচলা । কিন্তু সমস্যা বাঁধে একজায়গায় তা হচ্ছে সুরেশ ব্রাহ্মণদের পছন্দ করত না। তাই তার পরম বন্ধু কে ধর্ম ত্যাগ করে ব্রাহ্মণ মেয়েকে বিয়ে করতে সে রাজি না। তাই সে মহিমকে অচলার কাছ থেকে দূরে নিয়ে যেতে চায় । তাই সুরেশ মুহিকে একমাস অচলা বাড়িতে যেতে নিষেধ করে। তার কিছুদিন পর মহিমের কোন খোঁজ না পেয়ে সুরেশ সন্দেহ করে যে সে হয়তো অচলা বাড়িতে গিয়েছে তাই, সে অচলার বাড়ি যায়। বাড়ি গিয়ে সে বুঝতে পারে মহিম বন্ধুত্বের মান ক্ষুন্ন করে এ বাড়িতে আসেনি।

IMG-20220314-WA0007.jpg

siam,.png

তবে সেখানে সে মহিমের সাংসারিক অবস্থার কথা কেদারবাবু বলে দেয়। অচলার বাবা বলে মহিমের স্ত্রী-সন্তান চালানোর মতো টাকা-পয়সার নেই একথা জেনে কেদারবাবু তার মেয়েকে মহিমের হাতে হাতে তুলে দিতে চান না ।তবে সুরেশের সবকিছু দেখে ঐদিন কেদারবাবু তাকে তার মেয়েকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। যদিও সুরেশ ব্রাহ্মন সমাজ কে একদম পছন্দ করতো না কিন্তু অচলাকে দেখেতার প্রতি দুর্বল হয়ে যায় ।আমরা জানতাম হিন্দু ঘরের মেয়েদের আগে ১০/১২বছরেই মেয়েদের বিয়ে দিত সুতরাং মেয়েদের বিয়েতে মতামতের তেমন কোন গুরুত্ব ছিল না। তাই কোনো কোনো হিন্দু ঘরের অবিবাহিত মেয়েকে ১৮ বছর থাকা অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করা হতো। তবে ব্রাহ্মণ সমাজে নিয়ন্ত্রণ বয়স মোটামুটি ১৭ থেকে ১৮ বছর হলেও অচলা অবিবাহিত ছিল। কিন্তু ব্রাহ্মণ সমাজে মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। সুরেশ ব্রাম্মণ সমাজকে পছন্দ করতোনা বলে সে বিয়ে ভাঙ্গার পরিকল্পনা নিয়ে যায় কিন্তু সেখানে কেদারবাবু সাথে তার সম্পর্ক হয়। এদিকে কেদারবাবু সুরেশকে জামাই মনে করে নির্দ্বিধায় তার কাছে টাকা ধার নিয়ে সব দেনা পরিশোধ করে। এ বিষয়টা অচলার একদম পছন্দ হয়না। সুরেশ তার বাবাকে টাকা ধার দেওয়ার ফলে একরকম অচলার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ সম্পন্ন সুরেশ অচলাকেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়।

IMG-20220314-WA0008.jpg

siam,.png

কিন্তু অচলা মহিমকে ভালোবাসত তাই সে তাকে গুরুত্ব দিত। সুরেশের সাথে অচলার মত না থাকার শেষমেষ তার বাবা মহিমের সাথে বিয়ে দেয় কিন্তু মহিমের মাটির বাড়িতে এসে অচলা গ্রামের সম্পর্কে সব ধারণা ভেঙে যায়। অচলার কবিতার মত গ্রাম আর এই গ্রামের যে আকাশ পাতাল পার্থক্য তা সে বুঝতে পারে। এখানে এসে অচলার মৃণালের সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে।কিন্তু মৃণালের সতিন বলে ডাকা অচলার একদম পছন্দ হতো না।সেভাবে মৃণালের সাথে মহিমের কোনো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু অচলার উন্নত জীবনের কথা মনে করে এক পর্যায়ে

অচলা দ্বিধান্বিত হয়ে একদিন মহিমের সাথে রাগ করে সে সুরেশকে বলে সুরেশ বাবু আমাকে তোমরা নিয়ে যাও, যাকে ভালোবাসিনে, তার ঘর করবার জন্য আমাকে তোমরা ফেলে রেখে দিওনা।

সেই রাতে মহিমের বাড়িতে আগুন লাগে এবং পুরো বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মহিমের প্রতি আবার মায়া জাগে অচলার। এই ভাবে পুরো উপন্যাস জুড়ে অচলা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে । তাদের এই ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনীর আরো গাঢ় হতে থাকে। এক পর্যায়ে অচলা সুরেশের সাথে চলে যায়। কিন্তু অচলার সুরেশের সাথে চলে যাওয়ার পরে কি হয়? অন্যদিকে মহিমের সাথে দীর্ঘদিন অচলার যোগাযোগ হয় না কিন্তু হঠাৎ একদিন এক আত্মীয়ের বাড়িতে অচলা সাথে মহিমের দেখা হয়। তারপর কি হয় তাদের জীবনে এই ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী জানতে হলে আপনাকে অবশ্যই গৃহদাহ উপন্যাসটি পড়তে হবে।

IMG-20220314-WA0015.jpg

siam,.png

ব্যক্তিগত মতামত

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যতগুলো উপন্যাস পড়েছি তার মধ্যে গৃহদাহ আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি যখন উপন্যাসটি পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল আমার চোখের সামনে বাস্তব ঘটনাগুলো ঘটছে। আপনি যখন এই উপন্যাস পড়বেন তখন আপনার কল্পনা শক্তি এতটাই গভিরে যাবে যে আপনি চোখ বন্ধ করলেই পুরো ঘটনাটি আপনার সামনে দেখতে পাবেন। চন্দ্রচট্টোপাধ্যায় প্রতিটি উপন্যাস রূপক ধর্মী হলেই সামাজিক প্রেক্ষাপটের বিভিন্ন বিষয় গুলো তিনি উপন্যাসের মধ্যে ফুটে তুলেছেন।এই উপন্যাসের যেমন সুরেশ ও মহিমের পরম বন্ধু ছিল যা আমাদের বাস্তব সমাজের বিভিন্ন সময় দেখা যায় কিন্তু সুরেশ বন্ধুর দুর্বলতার সুযোগে অর্থের লোভ দেখিয়ে তার প্রেমিকাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। সমসাময়িক মেয়েদের সম্পত্তির প্রতি লোভ ও উচ্চ জীবন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে ফুটে ওঠে। কিন্তু সব বাঁধা উপেক্ষা করে অচলা মহিমকে কে বিয়ে করলেও একটা সময় সুরেশের প্রতি তার দুর্বলতা কাজ করে এবং চলতে থাকে ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী। বিভিন্ন কবিতায় সাহিত্যে গ্রামের যে রুপ সম্পর্কে বলা আছে সেই রূপে মুগ্ধ হয়ে অচলা গ্রামে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু গ্রামে গিয়ে দেখে তার উপন্যাস কল্পনার সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। উন্নত জীবনের আকাঙ্ক্ষায় সুরেশের কথা ভাবতে থাকে। সামগ্রিক উপন্যাস পর্যালোচনা করে বোঝা যায়, বাঙালী নারীর চরিত্র উদঘাটন করাই ছিল শরৎচন্দ্রের মূল উদ্দেশ্য। আপনারা যদি উপন্যাসটি পড়েন আশা করছি হতাশ হবেন না। এই গ্যারান্টি আপনাদের দিতে পারি।

IMG-20220314-WA0014.jpg

siam,.png

ব্যক্তিগত রেটিং -৪/৫

উপন্যাসের পিডিএফ লিংক

ধন্যবাদ

@abidatasnimora


break.png

banner-abb23.png

Sort:  
 3 years ago 

এই চমৎকার উপন্যাসটি পড়েছি আমি। তবে স্মৃতির পাতায় হারিয়ে যেতে বসেছিল , আপনার মাধ্যমে তা আবার ফিরে পেলাম ☺️।
সত্যিই অসাধারণ রিভিউ করেছেন।
শুভ কামনা রইল আপনার জন্য 💌

 3 years ago 

হ্যা ভাইয়া অনেক সুন্দর একটি উপন্যাস। আপনিও পড়েছেন দেখে ভালো লাগল।ধন্যবাদ আপনাকে।

আপু আপনার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গৃহদাহ উপন্যাস বইটি খুব সুন্দর করে রিভিউ করছেন।গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো।আর অনেক কিছু আমাদের মানব জীবনের সাথে মিল আছে।তবে আমি উপন্যাসর বইটি পড়ে হয়ে উঠে নাই।এতে সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

রিভিউ আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমারো ভালো লাগল।

 3 years ago 
গৃহদাহ বইটা আমি এখনো পড়ি নাই। তবে আপনার রিভিউ পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো। আসলে সময় হয় না তাই বই পড়ি না। তবে বইটা আমার এক বন্ধু কিনছে আমি অবশ্যই বইটি পড়বো শরৎচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে কথা। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু। 🎈🎈❤️
 3 years ago 

বইটি পড়বেন আশা করি অনেক ভালো লাগবে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 
প্রিয় আপু মনি শরৎচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস রিভিউ- গৃহদাহ📚📚খুব সুন্দর করে আপনি তুলে ধরেছেন চাওয়ার অনেক ভালো লাগলো গৃহদাহ আমি এখনো করিনি তবে বইটা কিনেছি অবশ্যই করবো আপনার রিভিউ আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে♥♥
 3 years ago 

অবশ্যই পড়বেন আপু। দারুন একটি গল্প ফুটে উঠেছে।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 62781.37
ETH 2461.15
USDT 1.00
SBD 2.64