কার্টলি অ্যামব্রোস : জীবনের গল্প
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZFwaZCWCjzc7QBgRDAyGhf3Y7oaV73oaWsHCdvCJgu7r/image.png)
source
কার্টলি অ্যামব্রোস হচ্ছেন একজন ভয়ংকর, বিধ্বংসী,ত্রাসসৃষ্টিকারী পেসার।ক্রিকেটে আসার সব কৃতিত্ব নিজের মাকে দিয়ে থাকেন অ্যামব্রোস।অ্যামব্রোসের মা হিলি অটো(পরবর্তীতে হিলি অ্যামব্রোস) একেবারে উল্টো আমাদের এশিয়ান মায়েদের থেকে।ছেলেকে ক্রিকেটার বানিয়েই ছাড়িয়েছেন।এই পেসারের গল্পের আগে একটু অন্যদিকে ঘুরে আসি।
মাঝেমধ্যে ফুটবলে একটা ব্যাপার আমরা দেখি না যে ভুল পেনাল্টি দিল রেফারি আর প্লেয়ার মানা করলেন বা পেনাল্টি নিল না।এই রকম ভদ্রলোকচিত আচরণ বেশ প্রশংসনীয়।আঠারোশ সনের শেষের দিকে আর উনিশ সনের শুরুর দিকে ব্রিটিশ ফুটবলে বেশ নামকরা ক্লাব ছিল করিন্থিয়ান্স ফুটবল ক্লাব।এই দলের ফুটবলাররা আরো বেশি জনপ্রিয় ছিল তাঁদের জেন্টেলম্যানলি স্বভাবের জন্যে।ভুলে পাওয়া পেনাল্টি বারের উপরে কিংবা সাইডে মেরে দিতেন।অথবা নিজেদের গোলিকে বলতেন একটা গোল “এলাউ” করতে।এরা বিশ্বাস করতেন সাম্যে সমতায়।এদের এই আচরণকে বলা হয় “করিন্থিয়ান্স স্পিরিট”।
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmeQX8WsJJaQn1Q96zPWtFGAfgMNLfypXNrNi4ba1QzUae/image.png)
source
এই করিন্থিয়ান্স স্পিরিটের কথা বলেছি আরেক বিখ্যাত দলের কারণে। ১৯৮৮ সালে কার্টলি অ্যামব্রোসের বলে চোয়াল ভেঙ্গে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান পেসার জিওফ লসনের।মোটামুটি এরপর থেকেই ক্যারিবীয় ক্রিকেট দলের ক্রিকেটীয় শক্তিকে কমিয়ে আনার জন্যে বেশ কিছু “লাল ফিতা” এর “আমলাতান্ত্রিক” কৌশলে যায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।এই নিমিত্তে ক্যারিবীয়দের “কালো চামড়ার বুনো বা জংলি” বলেও ডাকা হয়েছিল।সাবেক ইংলিশ পেসার মাইক সেলভি ব্যাপারটার পুরো সমালোচনায় না গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটারদের সাইকি বা মনস্তত্ব নিয়ে বলেছিলেন যে এদের ব্যাপারটাই আলাদা।এরা নিজেদের ঘরোয়াতে নিজেদের বাউন্সার দিয়ে আক্রমণ করে আবার পুল-হুক শটে মেতে উঠে।ক্যারিবীয় ক্রিকেটের সংস্কৃতিই এমন।আক্রমণাত্মক কিন্তু উপভোগ্য একই সাথে ভদ্রও।যেন একেবারে করিন্থিয়ান্স স্পিরিট।
ফিরে আসি অ্যামব্রোসে।কার্টলি অ্যামব্রোসের বিপক্ষ ব্যাটিং অর্ডারে ধস নামানো স্পেল আছে অনেক।ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরো বেশি ভয়ংকরী ছিলেন তিনি।পার্থে অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন।উইকেট দেখেই মনে হল ব্যাটসম্যানদের জন্যে স্বর্গ।অথচ অস্ট্রেলিয়া অলআউট মাত্র ১১৯ রানে।বিকজ অ্যামব্রোস জাস্ট কজড অ্যাঁ মেহ্যাম। সে ইনিংসে তাঁর বোলিং ফিগার ছিল ১৮-৯-২৫-৭ । একসময়ে সে ফিগারটা ছিল ১ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট।ক্যারিবীয়রা ম্যাচ জিতে ইনিংস ব্যবধানে। এরকম আরো বেশ কয়েকটি স্পেল আছে।সেগুলোর খোঁজ নিজ দায়িত্বে নিবেন ক্রিকেটপ্রেমী হয়ে থাকলে।
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmVfM8kEnKF13bHW5faZ6SzmRSeKkxgomsWQLnc29UYqYk/image.png)
source
ডিন জোন্স একবার অ্যামব্রোসকে তাঁর হাতের সাদা রঙের রিস্টব্যান্ড খুলে বোলিং করতে বললেন।সাদা বলের সাথে সাদা ব্যান্ড তাঁকে বিভ্রান্ত করতে পারে এই যুক্তিতে।ব্যাপারটা অ্যামব্রোসকে বেশ বিরক্ত করল।অ্যামব্রোসকে বিরক্ত করার ফল কখনোই ভাল হয় না।জোন্সকে করা ওই ওভারের বলগুলো যেন একেকটা গোলাবারুদ ।ওই ম্যাচে অ্যামব্রোসের পাঁচ উইকেট প্রাপ্তি ক্যারিবীয়দের ম্যাচ জেতাটা সহজ করে দিয়েছিল।জোন্স পরবর্তীতে মজা করে বলেছিল ওই ম্যাচে ১১ উইন্ডিজ প্লেয়ারের সাথে জোন্সকে তাঁর ব্যাটিং পার্টনার মার্ক টেইলর পর্যন্ত স্লেজিং করেছিল।এমনকি অ্যামব্রোজকে ক্ষ্যাপানোতে টেইলর জোন্সকে বলেছিল “কেন শুধু শুধু ওকে ক্ষ্যাপালে, আমার দুটো বাচ্চা রয়েছে”।
মার্ক টেইলরের কথাটা সবচেয়ে ভাল বুঝতে পেরেছিল স্টিভ ওয়াহ।জোন্সের মতন একই ভুল বড়ো ওয়াহও করেছিল।যার স্মৃতিচারণ করে নিজের আত্মজীবনীতে স্টিভ লিখেছিল “অ্যামব্রোস হয়তো আমাকে সেদিন মেরেই ফেলত”।তেড়েও গিয়েছিলেন স্টিভের দিকে,শেষ পর্যন্ত ক্যাপ্টেন রিচি রিচার্ডসন তাঁকে টেনে নিয়ে আসেন।স্টিভ ওয়াহ আরো বলেছিল অ্যামব্রোসের দুর্দান্ত লাইন-লেন্থ মোকাবেলা করার পরে আপনাকে ব্যস্ত রাখবে ওঁর বাউন্সার যা আপনার মাথার দিকে তেড়ে আসছে।তাতেও শেষ নয়।এরপর রয়েছে অ্যামব্রোসের ফিজিক্যালিটি।তার লং ইমোশনলেস স্টেয়ারিং।একবার অস্ট্রেলিয়া সফরে তাঁর বলে বারবার পরাস্ত হল ডেভিড বুন।একটা বাউন্সার মিস করল আর অ্যামব্রোস তাঁর বিখ্যাত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বুনের দিকে।পরে অবশ্য হাতে ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়েছিল বুন।এমন অনেক গল্পের সাথে জড়িয়ে আছে কার্টলি অ্যামব্রোসের নাম।
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRscBXSnqUYyWbiWCSiVrt4Dw9Wyi1T8NBNcpMK9aHmqQ/image.png)
source
ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগার সোয়েটেসে জন্ম নেয়া অ্যামব্রোস কখনোই ক্রিকেটার হতে চাননি।নেই কোনো আইডল ক্রিকেটারও।বরঞ্চ জুলিয়াস আরভিং,চার্লস বার্কলি,ডমিনিখ উইলকিন্স,টিম ডানকানদের ভালোবেসে বাস্কেটবলই খেলতে চেয়েছিলেন।কেভিন ডুরান্ট,মাইকেল জর্ডান,ম্যাজিক জনসনরাও তাঁর প্রিয়।ক্রিকেটে এসছেন সম্পূর্ণ মায়ের জন্যে।তার মা হিলি অটো এতটাই ক্রিকেট ভালবাসতেন যে অ্যামব্রোসের মধ্য নাম লিনওয়াল রেখেছেন অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট পেসার রে লিন্ডওয়ালের নামেই যদিও বানানে রয়েছে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন।হিলি অটো এমনকি ছেলে অ্যামব্রোস যখনই টেস্ট উইকেট পেতেন সোয়েটাসে তাঁদের বাড়ীতে রাখা ঘন্টা বাজাতেন।মধ্যরাত পর্যন্ত জেগে জেগে রেডিওতে শুনতেন ছেলের কীর্তি। অ্যামব্রোস যখন প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে পা রাখলেন তখন তাঁর বয়স ছুয়েছে ২১। ভিভের দলে খেলেছিলেন প্রথম ম্যাচ।চার উইকেট পেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর থেকেও বড়ো অর্জনটা ছিল ভিভের প্রশংসা পাওয়া।ভিভ এতটাই পছন্দ করেছিলেন অ্যামব্রোসকে যে বলেই বসলেন “এতদিন তুমি কোথায় লুকিয়ে ছিলে?”।মাঠে যতই ত্রাসের সৃষ্টি করতো না কেন মাঠের বাইরে তিনি একজন পুরোদস্তর ভদ্রলোক।
Gracias por apoyar esta comunidad
This post has been upvoted by @boss75 from @steemcurator07 Account with support from the Steem Community Curation Project.
For more updates, keep following @steemitblog.
Best Regards!!!