আমার দেখা সুন্দর একটি বিয়ে
আমার বন্ধু শাকিল। পড়াশোনা করছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে,অ্যাগ্রিকালচার ডিপার্টমেন্ট। বেশকিছু দিন আগে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে বলছে আগামী শুক্রবার নাকি তার বিয়ে, বর যাত্রীর সাথে আমাকেও যেতে হবে। এবিষয়টা অন্যকেউ শুনলে হয়তো হতবাক হয়ে যেতো যে,পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একজন ছেলে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে,ক্যামন একটা ব্যাপার।প্রতিষ্ঠিত হয়নি,কামাই কাজ করে না, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে না তাকিয়ে কেনো সে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করছে...।কিন্তু আমি তার এই ব্যাপারে মোটেও অবাক হইনি৷
আমাদের সমাজের একটা রীতি আছে সেটা হলো কোনো ছেলে প্রতিষ্ঠিত না হলে তার বিয়ের বয়সই হয়নি বলে ধরে নেয়া হয়।কিন্তু এব্যাপারটি কেনো যেন আমার কাছে মিথ্যা এবং বানোয়াট মনে হয়।আমি বহু মানুষকে দেখেছি যারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই বিয়ে করে সমাজে আজ তারা খুব ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে,এবং বহুমানুষের কর্মক্ষেত্রও তৈরি করেছে তারা।
মানুষ এমনও বলে যে,পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একজন স্টুডেন্ট বিয়ে করলে নাকি তার পড়াশোনা গোল্লায় যায়। এব্যাপারটিও একদম ভূয়া।আমি বহু বিবাহিত মানুষকে দেখিছি যারা স্বামী স্ত্রী দুজনই সরকারি চাকরি পেয়ে বড় বড় অফিসার হয়েছে৷ বিয়ে ব্যাপারটা তাদের জীবনে একটুও খারাপ প্রভাব ফেলেনি বরং প্রতিষ্ঠিত হওয়ার রাস্তায় আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে৷ আমি মনেকরি,বিয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রতিবন্ধক নয়।যাক এসব কথা থাক।
যেটা বলছিলাম....আসল কথা শাকিল আমাকে তার বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছিলো।শাকিল বলল,শুক্রবার সকাল দশটায় রাস্তার মোড়ে এসে দাড়াতে এবং বর যাত্রীর গাড়ি আসলে সেটাতে উঠতে৷তার বিয়েতে বন্ধু যে আমি একাই তা কিন্তু না, নয়ন,রাকিব,মিমও ছিলো।
ওহ আর একটা কথা,শাকিলের সাথে যার বিয়ে ঠিক হয়েছে সেও কিন্তু শাকিলের সাথে একই ব্যাচে পড়ে,ব্যাচমেট আরকি৷ বাড়ি দিনাজপুরেই।নয়ন,ও রাকিব শাকিলের ভার্সিটিতেই পড়ে তাই ওরা দুজন দিনাজপুরেই আছে৷ ওরা ডিরেক্ট বিয়ে বাড়িতে আসবে৷
আমি ও মিম সকাল ১০টায় রাস্তার মোড়ে এসে দাড়ালাম।বর যাত্রীর গাড়ি আসতে অনেক লেট করছে৷ বিয়ে সাদীর ব্যাপারে একটু আধটু দেরি হয়ই,আমরা মানিয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বরযাত্রীর গাড়ি আসলে উঠে পড়লাম। কিছুদুর যাওয়ার পর গাড়ি থামিয়ে বরসহ আমরা সবাই জুম্মার নামায আদায় করে আবার গাড়িতে উঠে রওনা করলাম। ঘন্টা তিনেক সময়ের মধ্যেই আমরা পৌছে গেলাম বিয়ে বাড়িতে।
শাকিলের বিয়ের সিস্টেম অন্যান্য বিয়েগুলো থেকে একদমই ভিন্ন ছিলো। আমরা ডিরেক্ট ওই এলাকার একটা মসজিদে গিয়ে বসলাম। কারণ,মসজিদেই বিয়ে হবে।কিছুক্ষণ পর নয়ন রাকিবও চলে আসলো৷ মেয়ে মেয়ের বাড়িতে আর আমরা বরযাত্রী নিয়ে মসজিদে অবস্থান করছি৷ আগে থেকেই সবকিছু ঠিকঠাক থাকার কারণে ওখানে তেমন দেরি করতে হয়নি৷ বিয়ের কাজ তাড়াতাড়ি সমাপ্ত হলো।
বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে বরসহ আমরা বন্ধুরা মিলে একসাথে খেতে বসলাম।একটা বড় পরাত ভরা নানান আইটেমের খাবার দেওয়া হলো আমাদের সামনে। বন্ধুর বিয়ে বলে কথা,খাওয়ায় কোনো কমতি রাখিনি আমরা,পেট পুড়ে খেয়েছিলাম।
আমার জীবনে শাকিলের বিয়ের মতো সুন্দর বিয়ে দ্বিতীয় আরেকটা দেখিনি।সে একটু ধার্মিক তাই কোনরকম অনৈতিকতা তার কাছে প্রশ্রয় পায়নি৷আমার মতে, প্রত্যেকটা বিয়েই এরকমই হওয়া উচিত।তাহলে বিয়েগুলো ব্যয়বহুল হবে না,অল্প খরচেই বিয়ের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা সম্ভব হবে।
আমার বন্ধু শাকিল তার দাম্পত্য জীবনে সুখি হোক৷এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ।