ঠাকুমার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ

in Incredible India2 months ago

জন্মের পর ঠাকুমাকে কখনো কাছ থেকে দেখতে পাইনি । ঠাকুমা সাথে দেখা করার জন্য জুন মাসে ২০১৬ সালে আমি কলকাতা বারাসাত আসি আমার পিসির বাড়িতে । কারণ উনি আমার বড় পিসিকে নিয়ে কলকাতায় বসবাস করত।। উনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ২৭ জনু ২০১৬ সালে ।

IMG_20240629_083344.jpg

প্রথম দেখাতেই আমি ঠাকুমাকে প্রণাম করি, ঠাকুমা আমাকে উঠিয়ে আগলে ধরে কেঁদে ফেলল, আমার চোখ দিয়েও অজস্রে জল বের হতে লাগলো। তখনকার সে আবেগঘন মুহূর্ত কাউকে বলে বুঝাতে পারব না। আর আমার দাদু আমার বাবাকে নিয়ে বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলায় বানিয়াচং থানায় বসবাস করত।

IMG_20240629_083857.jpg

IMG_20240629_083517.jpg

ঠাকুমা কলকাতায় বসবাস করার পেছনে লম্বা একটি সত্য ঘটনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরব। আমার ঠাকুমার কাছ থেকে উনার সংসার জীবনের গল্প শোনা। সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ঠাকুমা হবিগঞ্জ সদর জমিদার দেয়ানথ রাম সাহার ভাতিজি ছিল। ১৯৯১ সালে ঠাকুমা আমার দাদুর সাথে বিয়ে হয়ে আমাদের বাড়িতে আসে।

IMG_20240629_084144.jpg

আমার দাদু ঠাকুমাকে খুব ভালোবাসতো সুন্দর করেই তাদের সংসার চলছিল। ঠাকুমা ও দাদু সংসারের আলোকিত করে প্রথম কন্যা সন্তান আসে ১৯৫২ সালে আমার বড় পিসি জ্যোতি রায়। দেড় বছর পর আবার ১৯৫৪ সালে শেষের দিকে তাদের ঘরে ফুট ফুটে পুত্র সন্তান আসে তপন রায় মানে আমার বাবা।দুই সন্তান নিয়ে চলছিল সুন্দর করে ওদের সংসার।

আমাদের একান্নবর্তী পরিবার ছিল। পরিবারের লোক সংখ্যা প্রায় ৩০ জনের মতো ছিল। আমাদের পরিবারে আয় এর উৎস ছিল কৃষি। আর আমার দাদু আবার
ব্যবসা করতো।

আমার দাদু ওরা চার ভাই ও ৫ বোন ছিল তার মধ্যে দুই ভাই ইন্ডিয়া আসাম রাজ্য শিলচর শহরে বসবাস করতো। আমার বাবার পাঁচ পিসির মধ্যে দুই পিসির ইন্ডিয়া শিলচর শহরে বিয়ে হয়। আর আর তিনজন পিসির বাংলাদেশের বিয়ে হয়। আর একজন বাবার পিসিকে বিয়ে দিয়ে স্বামীসহ আমাদের বাড়িতেই রেখে দেয়া হয়।

বাবার পিসিদের যন্ত্রনায় আমার ঠাকুমা সংসারটা লম্বা করতে পারেনি। দাদা ঠাকুমার মধ্যে এত ভালবাসা ছিল সেই ভালোবাসা বাবার পিসিদের সহ্য হতো না। একপর্যায়ে বাবার পিসিদের কূটনৈতিক বুদ্ধিতে ঠাকুমার সংসারটা ভেঙে যায়। ঠাকুমার উপর অত্যাচার করতে শুরু করে।

সেই অত্যাচার শুনে ১৯৬৮ সালে ঠাকুমার ভাই এসে ঠাকুমাকে কলকাতায় নিয়ে চলে যায়। ঠাকুমা কলকাতা তে গিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করে। লেখাপড়া শেষ করার পর, কলকাতা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে সিনিয়র মেট্রন হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

IMG_20240629_084022.jpg

ঠাকুমার দুই সন্তান মানে আমার পিসি ও বাবা কে জোর করে রেখে দেয় বাংলাদেশে।
তারপর আমার দাদু কয়েকবার বাবা ও পিসিকে নিয়ে কলকাতায় আমার ঠাকুমার কাছে গিয়েছিল সন্তানদেরকে দেখানোর জন্য।

একপর্যায় সন্তানেরা বড় হতে লাগলো বাংলাদেশে। একপর্যায়ে আমার পিসি যখন বিয়ের উপযুক্ত হলো, আমার ঠাকুমা বাংলাদেশে আসলো আর আমার পিসিকে সঙ্গে করে কলকাতায় নিয়ে গেল।

কলকাতা বারাসাতে আমার পিসিকে বিয়ে দিল। আমার পিসির সংসারে আমার এক পিসাতো ভাই ও এক বোন আছে। আর আমার বাবা আমার দাদুর সঙ্গে বাংলাদেশে থেকে যায় আর বাংলাদেশে বিয়ে করে।

আমাদের সংসারে আমরা দুই ভাই এক বোন ২০১৫ সালে ছোট বোনকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাতে। আর আমি ২০২০ সালে,আমাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

গল্পটি আজকে এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।

Sort:  
Loading...
 2 months ago (edited)

Hello,
@tomalroy,

হরে কৃষ্ণ। কমিউনিটির পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগতম। এটা আমাদের কমিউনিটিতে আপনার প্রথম পোস্ট যেটা পরিদর্শন করে বেশ ভালো লাগলো।

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ-

  • ইতিমধ্যে আমি আপনার প্রোফাইল ও পরিদর্শন করেছি। দাদা, সকল কর্মস্থলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী থাকে। তাই আপনাকে অনুরোধ করবো আমাদের ডিসকর্ড সার্ভারে যোগাযোগ করার জন্য।

  • আশাকরি, সকল চলমান আপডেট গুলো জানতে পারবেন। তাছাড়া আমাদের কমিউনিটির নিজস্ব ভেরিফিকেশন পদ্ধতি রয়েছে সেখানে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করছি।

  • উদাহরণস্বরূপ; #story কোনো হ্যাশট্যাগ না।

👇👇

Discord link

 2 months ago 

Thank you Didi
for your kind information.

 2 months ago 

আপনার পরিবারের অতীত গল্প আজকে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আসলে অতি আপন জনের কাছে পরিস্থিতির
শিকার হয়ে কতজনের সংসার ছিন্ন হয়েছে তাই
আমরা বিভিন্ন মানুষের জীবনের দিকে
তাকালেই জানতে পারি।

আপনার ঠাকুরমা অত্যন্ত দৃঢ় চিত্তের মানুষ। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে উনি ভেঙে পড়েন নি বরং পড়াশোনা করে নিজের জীবনের গতিপথ নির্ধারণ করেছেন।

আপনার ঠাকুমার জন্য প্রার্থনা করি যাতে সৃষ্টিকর্তা ওনার মনের আশা পূর্ণ করে দেন। আপনি আপনার পরিবারসহ ভালো থাকুন এই কামনাই করছি।

 2 months ago 

Dear sister,
Thanks for your beautiful comments.

 2 months ago 

আপনার ঠাকুমার জীবন কাহিনী শুনে সত্যিই খুব ভালো লাগলো। আসলে অনেক মেয়েদের জীবন হয়তো এইরকমই হয়। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারে অনেকে বাপের বাড়িতে এসেই বসবাস শুরু করে। আগেকার দিনের মতো আমাদের সমাজে এখনো এইসব কূটনৈতিক চলে আসছে। কূটনৈতিক এর কারণে কত মানুষের সংসার ভেঙে যাচ্ছে। তবে আমি কোনদিন আমার ঠাকুমাকে চোখে দেখিনি। তিনি অবশ্য এখনো বেঁচে আছেন। আপনার ঠাকুমার জন্য প্রার্থনা করি উনি বাকি জীবনটা সুস্থভাবে ভালোভাবে কাটুক।

 2 months ago 

প্রথমেই, বলবো অসাধারণ আপনার ঠাকুমার জীবন কাহিনী শুনতে পেলে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।

একটা মেয়ে তার জীবন সঙ্গিনী কে নিয়ে কত শত স্বপ্ন দেখে আর সেই স্বপ্নগুলো যখন কাছের মানুষের কারণে, ভেঙ্গে যায় তখন এর থেকে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।

তবে শুকরিয়া আপনার ঠাকুরমা সুস্থ আছে এবং নিজে কিছু করতে পেরেছি ভালো থাকবেন তাকে নিয়ে, অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 2 months ago 

দুই পরিবার দুই দেশে কিন্তু একই মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া দুই ভাই বোন আলাদা দেশে থাকে। তাতে কি হয়েছে মনের মিল থাকলে যে কোন পর্যায়ে যে কোন মুহূর্তে দেখা করা যায়। আজকে আপনি আপনার ঠাকুমার সাথে দেখা করেছেন এবং ওনার মুখ থেকে ওনার জীবনের কিছু অংশ শুনে নিয়েছেন। যেটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনার ঠাকুমার সাথে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্তটা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।

 2 months ago 

আপনি খুব সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন। ঠাকুমার সাথে দেখা হবার পর আমাদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি এবং ধারণা হয়েছে। যা ওনার সাথে দেখা না হলে হয়তোবা জানতে পারতাম না। পরিবারদের কিভাবে আপন করে নিতে হয় আমার ঠাকুমা একটি দৃষ্টান্ত। কারণ উনি ওই দেশে থেকে ও প্রত্যেকদিন আমাকে ফোন করে আমাদের পরিবার সম্পর্কে খোঁজ খবর নেন। আর আমি আমার ঠাকুমাকে খুব ভালোবাসি। আমারটা তোমার একটাই কষ্ট যে ওনার কাছে আমরা নেই। ঈশ্বর আমার ঠাকুমাকে দীর্ঘায়ু করুক এই প্রার্থনা করি। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 58171.46
ETH 2472.55
USDT 1.00
SBD 2.42