সব কিছুর উর্ধে জীবন।
কয়েক বছর আগের একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমার মামা মোটরগাড়ি নিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলো। তখন মামার ডান পা ভেঙে যায়। সব থেকে খারাপ বিষয় হলো এক পায়ের দুই জায়গা থেকে ভেঙে যায়, যেটার চিকিৎসা সত্যি অনেক ঝুকিপূর্ণ। চিকিৎসার জন্য খুলনাতে নিয়ে যাওয়া হয়।
খুলনার ময়লাপোতা থেকে শিববাড়ি যাওয়ার পথে রাস্তার বাম পাশে ডক্টরস পয়েন্ট নাম করে একটা হসপিটাল রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই খুলনা শহর চিনে থাকবেন তারা হয়ত জানতে পারেন ডক্টরস পয়েন্ট এর অবস্থান সম্পর্কে। আমি হসপিটালের নামটা মার্কডাউন করে দিয়েছি কারন আমাদের মধ্যে যদি কেউ কখনও কোনো প্রয়োজনে এখানে যাওয়া কথা ভাবেন তাহলে আমার পোস্টের কথাটা যেন মনে পড়ে এবং ভালো ভাবে জেনে শুনে সতর্কতার সাথেই যাবেন।
অপারেশন করার জন্য মামাকে এখানে আনা হয় এবং মামার পায়ের ভিতর পাত বসানো হয় । তবে নির্দিষ্ট সময় পর কয়েকদিন আগে সেই পাতটা বের করার জন্য আবারও ডক্টরস পয়েন্টে ভর্তি হয়। অপারেশনের মাধ্যমে সফলভাবে পাত বের করা হয়। তবে অপারেশন পরবর্তী সময়ে কয়েকদিন হসপিটালে কাটানোর মুহুর্তে বেশ কিছু পরিস্থিতির সাক্ষী হয়েছি, একটা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এমন ভুলকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই এজন্য সেগুলো শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
যেদিন মামার অপারেশন হয়েছিলো সেদিন পাশের কেবিনে আরও একজন মহিলার অপারেশন হওয়ার কথা ছিলো। মামার অপারেশন শুরু হয়েছিলো রাত ৯ টায় একই সময়ে ওনারও অপারেশন হওয়ার কথা ছিলো এজন্য তাকেও অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে আসা হয়। মামাকে যে ডক্টর অপারেশন করবে উনি যথাসময়ে চলে আসে এবং সময়মত অপারেশন শুরু হয়।
তবে যে সময়ে মহিলার অপারেশন হওয়ার কথা ছিলো সেই সময়টা অতিক্রম হয়ে গেলেও ডক্টর তখনও হসপিটালে পৌঁছায়নি। এদিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে এসেছে। তার বাড়ির মানুষের কথপোকথনে যতটুকু জানতে পেরেছি ওনার পেটে পাথর পড়েছে এবং অপারেশনের মাধ্যমে সেগুলো বের করতে হবে।
সময় পার হতে হতে ঘন্টা বেরিয়ে গেলো তবুও ডক্টর আসছে না। ডক্টরকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু ফোন তুলছে না। পেটে পাথর থাকায় এদিকে রোগি পেটের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। শুধু তাই নয়, রোগীর একটা ছোট্ট বাচ্চাও রয়েছে, তাহলে বাচ্চাকে কতসময় মায়ের থেকে দুরে রাখা যায়।
প্রায় আড়াই ঘন্টা পর সফলভাবে মামার অপারেশন সম্পন্ন হয় তবুও তখনও সেই ডক্টর এসে পৌছায়নি। এদিকে তার বাড়ির লোকজন খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। হসপিটালের ম্যানেজমেন্টকে বারবার অনুরোধ করছে তবুও তারাও কোনো ব্যবস্থা করতে পারছে না। সকলে মিলে ডক্টরকে বারবার ফোন দিচ্ছে তবুও ফোন ধরছেই না। একপর্যায়ে হসপিটালের লোকের সাথে রোগীর বাড়ির লোকজনের মধ্যে ঝামেলা শুরু হয় আর এটা হওয়াটা স্বাভাবিক। অনেক রাত হয়ে যাওয়ার আমি ওখান থেকে বাসায় চলে আসি, পরে জানতে পারি ডক্টর অনেক দেরি করে এসেছিলো তবে ভালো বিষয় রোগীর কোনো ক্ষতি হয়নি।
অপারেশন করার দুদিন পর মামাকে বাড়ি নিয়ে আসা হয় এবং আবারও হসপিটাল যেতে হবে পায়ের ব্যান্ডেজ এবং সেলাইগুলো খুলতে। প্রায় দুই সপ্তাহ পরে মামাকে নিয়ে আবারও হসপিটালে যাই। ডক্টর আসার কথা ছিলো বিকাল ৫ টায়। আমরা তার আগেই পৌঁছেছিলাম ওখানে। আমাদের মতো অনেকেই ওখানে ডক্টরের জন্য অপেক্ষা করছিলো তবে ডক্টরের দেখা নেই।
হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ৫ টার সময় আসার কথা থাকলেও তার দেখা পাই ৭ টার সময়। মুখ বুজে সব মেনে নিলাম তবে মনের ভাবনা আটকে রাখতে পারলাম না।
একটা ডাক্তারের উপর তো রোগীর জীবন নির্ভর করে।ডাক্তারকে সৃষ্টিকর্তার সাথে তুলনা করা হয়। অনেক সময় রোগীর অবস্থা অনেক বেশি জটিল থাকে তখন যদি ডাক্তার সময় মতো না আসে তাহলে বড় ধরনের বিপদ ঘটে যাওয়া সম্ভবনা থাকে। তাহলে ডাক্তারদের উচিত একটু সময়ানুবর্তি হওয়া।
একেকজন ডাক্তার অনেকগুলো হসপিটালে কাজের সাথে জড়িত থাকে তাই সব জায়গাতে সময় দিতে গিয়ে মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়। এটা সত্যি যে, সকলে টাকার পিছনে দৌড়ায় তবে অর্থের চেয়েও তো মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি, নাকি ডাক্তারদের চোখে মানুষের জীবন শুধুমাত্র ব্যবসায়ের পণ্যসরূপ। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি। সব ডাক্তার হয়ত এমন হয় না, তবে অধিকাংশের কাছ থেকে এমন ব্যবহার পাওয়া যায় এখন।
সমাজের কিছু কিছু মানুষের সময়কে অন্যদের থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত কারন তাদের উপর অনেকের জীবন নির্ভর করে।তাদের একটু অবহেলার ফল হতে পারে মারাত্মক।
মনে প্রশ্ন জাগে, ডাক্তারা চাইলেই কি, আরেকটু মানবিক হতে পারেন না। তারা কি পারেন না ব্যবসায়ি মনোভাবটা কিছুটা কমিয়ে আনতে??
এখনকার দিনে সব হসপিটালে ডাক্তাররা এইরকমই করে থাকে। আসলে আমাদের মত সাধারন মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না। এইসবের কারণেই কতো মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনার মামা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।
THE QUEST TEAM has supported your post. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags
@sduttaskitchen ম্যাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এভাবে পাশে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন।
আমাদের জীবনটাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে হবে। আমাদের তারা যেন কেউ কষ্ট না পায়। আমরা যেন কারোর মনে কষ্ট না দেই।মানুষকে কষ্ট দেওয়া খুবই নিন্দনীয় কাজ আমরা কাউকে কষ্ট দিব না। তবেই আমাদের জীবনটা সুন্দর হবে।