"দাদু" শব্দটা ছোটো হলেও গভীরতা অনেক!
নমস্কার বন্ধুরা! কেমন আছেন সবাই? আশা করি, সবাই অনেক বেশি ভালো আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি তবে পুরানো কিছু স্মৃতি মনে খুব সাড়া দিচ্ছে। দেখতে দেখতে সময় যে কখন কত দ্রুত আমাদের জীবন থেকে চলে যায় সেটা আমরা নিজেরাও বুঝতে পারি না।
বর্তমান যে কত দ্রুত অতীত হয়ে যায় সেটা আমাদের ছোটবেলার দিকে তাকালেই বোঝা যায়। ছোটবেলার স্মৃতিগুলো মনে পড়লে মনে হয় এই তো কদিন আগেই পার করে আসলাম দিনগুলো। ছোটবেলার স্মৃতির বড় একটা অংশ জড়িয়ে আছে ঠাকুরদা ও ঠাকুরমার সাথে। আজ আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষকে নিয়ে কথা বলবো।
![]() |
---|
ছোটবেলায় হাঁটতে শিখেছি দাদুর হাত ধরেই।আমি ছোটবেলায় দাদু- ঠাকুরমা দুজনেরই ভালোবাসা পেয়েছি কিন্তু এখন আফসোস লাগে আজ ৬টা বছর সেই মানুষটা আমাদের মাঝে নাই।
এতটা বছর দাদুকে ছাড়া থাকতে গিয়ে একটা বিষয় খুব ভালো ভাবে উপলব্ধি করেছি যে, কাছের মানুষটা থাকতে হয়ত তাকে ততটা গুরুত্ব দেই না কিন্তু না থাকলে তার নিশ্বাসটাও মিস করি।
![]() |
---|
যদিও আমার ঠাকুর দাদা আমাদের মাঝে আর নাই কিন্তু আমার ঠাকুরমা এখনও আছে। আমি আমার ঠাকুরদা ও ঠাকুরমার যে জিনিসটা সব থেকে বেশি মিস করি সেটা হলো তাদের ঝগড়া।
বাড়ির কোন গাছটা কে লাগিয়েছে। দাদু বলতো এই আম গাছটা আমার লাগানো, অন্যদিকে ঠাকুরমা বলতো এটা আমার লাগানো এটাই ছিলো তাদের ঝগড়ার বিষয়বস্তু। প্রায়ই তাদের এই নিয়ে ঝগড়া লেগেই যেত। তখন তো ছোট ছিলাম কিন্তু এই ঝগড়া দেখতে অবশ্য আমার খুব ভালোই লাগতো।
যে যার সাথে যতবেশি ঝগড়া করে সে হয়ত তাকে ততটাই ভালোবাসে। দুজন সারাদিন ঝগড়া করত ঠিকই কিন্তু তাদের একে অপরের প্রতি ভালোবাসা আর সম্মান ছিলো দেখার মতো। একজন অন্যজনকে ছাড়া কোথাও যেত না।
![]() |
---|
আমার ছিলো খুব মজার মানুষ।যখন দাদুর কাছে তার বয়স জিজ্ঞাসা করতাম তখন দাদু বলত সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। আমার দাদুর বয়স যখন ১০০+ (সঠিক মনে নেই) আমি তখন ১০ম শ্রেনীতে পড়তাম তখন আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিল। সব থেকে দুঃখের বিষয় হলো, দাদু চলে যাওয়ার পর চিন্তায় চিন্তায় আমার ঠাকুরমা অসুস্থ হয়ে পড়ে। দিন রাত শুধু দাদুর কথা বলতো আর কান্না করতো
দাদুকে নিয়ে টেনশন করতে করতে ঠাকুরমা হঠাৎ স্ট্রোক করে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত ৪ বার স্ট্রোক করেছে আমার ঠাকুরমা আর বর্তমানে সে আর চলাফেরা করতে পারে না। হয়ত ঠাকুরমা এখন ভাবছে যে আগে যার সাথে সারাদিন ঝগড়া করতো কিন্তু এখন দিনের পর দিন চোখের দেখাও দেখতে পাচ্ছে না। কাছের মানুষ দুরে চলে গেলে ভিতরের ভালোবাসাটা বোঝা যায়।
![]() |
---|
ছোটবেলার স্মৃতির সাথে ঘুড়ি উড়ানোর মুহুর্ত ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমিও ঘুড়ি উড়াতে খুব ভালোবাসতাম আর ঘুড়ি বানানোর জন্য আমার দাদু তো ছিলোই। মানুষ ঘুড়ি, সাপ ঘুড়ি ছাড়াও আরও হরেকরকমের ঘুড়ি বানিয়ে দিত আমাকে।
আমি আর দাদু দুজন মিলে ঘুড়ি উড়াতে যেতাম। কখনও এমনও হয়েছে ঘুড়ির সুতা কেটে গেছে তখন দাদু ঐ ঘুড়ি খুজে নিয়ে আসত অথবা নতুন করে আবার বানিয়ে দিত। এসব কথা মনে পড়লে এত বেশি খারাপ লাগে যেটা বলে বুঝানো যাবে না।
![]() |
---|
ছোটবেলায় হয়ত কিছু বুঝতাম না এজন্য তার কিছু কিছু কথা তখন ভালো লাগতো না কিন্তু এখন বুঝি সে ভালোর জন্যই বলতো সব কিছু।
দাদুর কাছে কত যে পুরানো দিনের গল্প শুনেছি তার ঠিক নেই। মাত্র দুই আনা বাজারে নিয়ে গিয়ে বাজার করা শেষ করে কাছে আরও টাকা থেকে যাওয়ার গল্প এই মানুষটার কাছে শুনেছি। এখন চাইলেও আর সেই গল্পগুলো শুনতে পারি না।
দাদুকে নিয়ে আরেকটা স্মৃতি খুব মনে পড়ে সেটা হচ্ছে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের শরীরের অনেককিছুই অকেজো হয়ে পড়তে থাকে।
তেমনই আমার দাদু কানে একটু কম শুনতে পেতো এজন্য আমার বাবা কানের ডাক্তার দেখিয়ে দাদুকে একটা কানে শুনতে পাওয়ার মেশিন কিনে দিয়েছিলো।প্রতিদিন বিকালে দাদু যখন রাস্তায় বেরোতো তখন ঐ মেশিন দাদুর কানে পরিয়ে দিতে হতো।এটা ছিলো আমার প্রতিদিনের কাজ।
একটা সময় অবুঝ ছিলাম এজন্য দাদুর সাথে তর্ক করেছি, ঝগড়া করেছি আর এখন চাইলেও জড়িয়ে ধরে তাকে বলতে পারি না যে কতটা ভালোবাসি তাকে!
![]() |
---|
ধন্যবাদ সবাইকে |
---|
যেকোনো মানুষেরই দাদা-দাদি, নানা-নানি খুব আবেগের নাম।আমি যদিও নানি ছাড়া আর কাউকে পাই নাই।কিন্তু তাকে মিস করি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই।তার কাছ থেকে যে ভালোবাসা পেয়েছি এটা আর কারো কাছ থেকে পাই নাই।আমি প্রেগ্ন্যাসির কারনে তাকে মৃত্যুর পর দেখতে পাই নাই এ কস্টবোধ সবসময় থাকবে আমার।
তবে আমি চেষ্টা করেছি আমার ছেলেরা যেন তাদের দাদি আর নানা নানির প্রতি দায়িত্ব পালন করে আর ভালোবাসে। সেটা তারা আর করেছে মৃতু্্যর মূহুর্ত পর্যন্ত।
আমি যেটা পারি নাই সেটা তারা করেছে।
ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে।
ভালো থাকবেন।
আপনি যেমন শুধু নানির ভালোবাসা পেয়েছেন কিন্তু আমি সবার ভালোবাসা পেয়েছি কিন্তু আমার দাদা এখন আর নেই এটা ভাবলো খুব কষ্ট হয় আর মনে পড়ে নানা স্মৃতি। ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মতামতের জন্য।
দাদুর আদর অনেক পেয়েছি যখন আমি ছোট ছিলাম ৷ ছোট বেলায় আমাদের জন্য চকলেট নিয়ে আসতো প্রতিদিন ৷ কিন্তু এখন ভাবতে অবাক লাগছে সেই মানুষ টা আর নেই ৷ 🧡🌼
ঠিকই বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মতামত করার জন্য।
আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই আমার মন্তব্যে রিপ্লে দেওয়ার জন্য ৷ শুভকামনা রইলো আপনার জন্য ৷ ভালো থাকবেন 🧡
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আপনার মত আমিও আমার ঠাকুর দাদা অনেক মিস করি, তাদের দেওয়া জ্ঞান ও আদেশগুলো এখনো চোখের উপরে ভাসে। তারা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অনেক আগেই চলে গেছে তবে তাদেরকে আমরা ভুলতে পারি নাই হৃদয়ে রয়েছে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পুরাতন কিছু স্মৃতি আমাদের কাছে উপস্থাপনা করার জন্য।
তারা আমাদের মাঝে না থাকলেও তাদের দেখানো পথে আমাদের হাটতে হবে সারাজীবন। মূল্যবান মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ঠিক তাই গুরুজনের আশীর্বাদ ও তাদের দেখানো পথ প্রদর্শন গুলো আমাদের চলার পথ সহজ করে তোলে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কমেন্টের সুন্দরী রিপ্লাই দেওয়ার জন্য।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আমি ছোটবেলায় আমার দাদুকে দেখতে পাইনি। তবে আমার দাদী মাকে দেখতে পেয়েছি। যে কিনা আমাকে অনেক যত্ন করে বড় করে তুলেছে। যে আমার নামটা রেখেছে। সেই মানুষটা বিগত এক বছর আগে আমাদেরকে এই পৃথিবীতে রেখে চলে গেছে। আসলে যারা চলে যায় তাদের জন্য মায়া হয় অন্যরকম। ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য ভালো থাকবেন।
ঠিকই বলেছেন আপু, যারা চলে যায় তাদের জন্য মায়া আর ভালোবাসা বেড়ে যায় কয়েক গুন।।ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।
আপনি আপনার সম্পর্কে বেশ কথা উপস্থাপন করেছেন।। আসলে দাদু আমাদের জীবনের একটি পাঠ।। আমি আমার দাদুকে প্রায় দুই বছর আগে হারিয়েছি কিন্তু দাদী এখনো রয়েছে।।। ভালো লাগলো আপনার দাদার সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জেনে।
সুন্দর মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।আশা পরবর্তীতেও মতামত জানিয়ে পোস্ট লিখতে উৎসাহী করবেন। ভালো থাকবেন।
দাদু শব্দটার গভীরতা অনেক বেশি হলেও আমি এই দাদুর দেখা পাই নি। জন্মের অনেক আগেই দাদু না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তবে বিয়ের পর গিন্নির দাদুকে পেয়েছি। তাতেই বুঝেছি দাদু কতটা আপন আর এই সম্পর্কের গভীরতা কত মধুর।
আপনি দাদুর দেখা না পেলেও আমি পেয়েছি, আর দাদুর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো মনে সাড়া দেয় প্রতি মুহুর্ত। ভালো থাকবেন।
আপনি ভাগ্যবান। তাইতো দাদুর স্মৃতি আপনার মনে গাথা। আজীবন দাদুর স্মৃতি গুলো বয়ে বেড়াতে পারবেন। সেদিক থেকে আমার নিজেকে অভাগাই মনে হয়। ভালো থাকবেন।
আপনিও ভালো থাকবেন।
গুরুত্বপূর্ণ মতামত জানানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।