পারবো না!
পারবো না!
পারবো না শব্দটার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। চলার পথে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই এটার ব্যবহার করে থাকি।পরিস্থিতি অনুসারে এই শব্দটা অনেকভাবেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে এই শব্দটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এই শব্দটা নিয়ে এমন কিছু ঘটেছে আমার জীবনে যেটার থেকে অনেক শিক্ষা পেয়েছি। সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করবো,
পারবো না কথাটা কখনও কখনও কারো কথা অমান্য করার জন্যেও যেমন ব্যবহৃত হয় তেমনই কোনো কাজে হাল ছেড়ে দেওয়া বা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলা বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়।
অমান্য করার ক্ষেত্রে কিভাবে ব্যবহৃত হয়?
অনেক সময় কেউ আমাদের কোনো কিছু করার কথা বললে তার মুখের উপর বলে দেই পারবো না
বিশেষ করে, যখন ছোট ছিলাম তখন তো এখনকার মতো বোধবুদ্ধি ছিলো না, উচিত অনুচিতের জ্ঞান ছিলো না। এটা তো সত্য যে, ছোটবেলায় সবার মনে উড়ুউড়ু একটা ভাব থাকে। কেউ আমাদের নিজের মন মতো না হলে যেন সে আমাদের কাছে খারাপ হয়ে যেত, ছোটবেলায়।
তখন বাবা বা মা কোনো কাজে বললে কিছু না ভেবেই বলে দিতাম পারবো না।
এটা হয়ত আমরা সবাই কম বেশি করেছি। এই কথাটা শুনে তখন তাদের কেমন লাগতো বা তাদের কতটা খারাপ লাগতো সেটা তখন না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি।
ছোটবেলার কিছু কিছু ঘটনা আমাদের মনে দাগ কেটে যায় এবং আমৃত্যু মনে থাকে। আমার সাথেও এই পারবো না শব্দ নিয়ে একটা ঘটনা ঘটেছিলো।
একদিন মা আমাকে একটা সামান্য কাজ করতে বলে, তবে বিকালবেলায় খেলতে যেতে হবে তাই মাকে বলি এখন করতে পারবো না, খেলতে যাবো।
যদিও পারবো না বলি, তবুও কাজটা আমি করে দিয়েছিলাম। অনেক ছোট ছিলাম, তখন মা আমাকে বলে,
মা: মা-বাবা কিছু বললে তাদের মুখের উপর পারবো বলতে হয় না কখনও, এতে ভগবান রেগে যায়।
তখন আমি বললাম,
পারবো না বলেছি, তারপরও কাজটা তো করে দিয়েছি, আপনার কথা তো শুনেছি।
উত্তরে মা বললো,
মায়ের মুখের উপর পারবো না বলে পরে কাজ করলে তাতেও ভগবান রাগ করে। পাপ হয় তাতে, আর পাপীদের ভগবান ভালোবাসে না।
ছোটবেলা থেকেই আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। ছোটবেলায় প্রতিদিন পূজার সময় পা মহাভারত ও অনেক ধর্মগ্রন্থ পড়তো আর আমি পাশে বসে শুনতাম। গ্রন্থগুলো তো সংস্কৃত ভাষায় রচিত তাই মা আমাকে সেটা বাংলায় বুঝিয়ে দিতো। এখনও মা পড়ে তবে আমি পাশে বসে শুনতে পারি না।
এখন বুঝতে পারি সেদিন মা আমাকে অনেক বড় শিক্ষা দিয়েছিলো। বড়দের মুখের উপর না বললে তাদের অনেক অসম্মান করা হয় এবং এটা করা উচিতও নয়। এভাবে ছোট ছোট অনেক ঘটনার মাধ্যমে মা বাবা আমাদের মূল্যবান শিক্ষা দিয়ে থাকে।
আমরা বড়দের সাথে যেমন ব্যবহার করবো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও আমাদের সাথে তেমনই ব্যবহার করবে, যেমন কর্ম করবো তেমনই ফল পাবো।
পারবো না শব্দটা নিয়ে ছোটবেলায় আরও একটা শিক্ষা পেয়েছিলাম সেটা হলো-
আমার দাদু সব সময় বলতো পারবো না বলে কোনো শব্দ নেই। মানুষ ইচ্ছে করলে সব কিছু করতে পারে। দাদু একটা ঘটনা আমাকে বলে,,
দাদুর যখন মাঝ বয়সি ছিলো তখন দাদুর ধুমপান করার অভ্যাস ছিলো। অভ্যাস বলতে ভীষণ আসক্ত হয়ে পড়ছিলো। কোনো ভাবেই ছাড়তে পারছিলো না। কোনো কিছুতে আসক্ত হওয়া যে কতটা মারাত্মক সেটা আমরা সকলেই জানি, ইচ্ছা করলে সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি না।
তবে দাদু একদিন ঠিক করে, যে আর কখনও সে ধূমপান করবে না। যে কথা সেই কাজ, প্রথমদিন সে সারাদিনেও একবার ধূমপান করেনি তবে বিপত্তি বাঁধে রাতের বেলায়।
আচ্ছা বলে রাখা ভালো যে আমার দাদুর অনেক বড় দোকান ছিলো। আগেরকার দিনে তো এখনকার মতো মোড়ে মোড়ে দোকান ছিলো না। আমাদের আশেপাশের ২/৩ টা গ্রামের মধ্যে একমাত্র আমাদের দোকান ছিলো, তাহলে বুঝে নিন যে কত বড় দোকান।
দাদু রাতে খাওয়া দাওয়া করার পর রাতের বেলায় দোকানে ঘুমাতো যাতে করে চুরির মতো দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে। দোকানের ভিতর তাকের মধ্যে বিভিন্ন জিনিস থাকতো তার মধ্যে ধূমপান জাতীয় দ্রব্যও ছিলো কারন দোকানে বিড়ি, সিগারেট জাতীয় দ্রব্য বিক্রি করাটাতো স্বাভাবিক।
দাদু ভীষণ জেদি একজন মানুষ ছিলো যা বলতো তাই করতো। সারাদিন নিজেকে অনেক কষ্ট করে আটকে রেখেছে এবং রাতে ঘুমিয়েও পড়েছে। তবে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গিয়েছে এবং ঘুমের মধ্যে ধূমপান করা শুরু করেছে।
দাদু বুঝতে পারে এভাবে হবে না, তারপর থেকে ঘুমানোর আগে হাতের কাছ থেকে সব কিছু সরিয়ে অন্য জায়গায় রাখতো যেন ঘুমের মধ্যে খুজে না পায়।
এভাবেই দাদু তার বাজে অভ্যাসটা থেকে নিজেকে বের করে আনতে সক্ষম হয়। তখন গল্পটা শুনে অনেক মজা পেয়েছিলাম তবে এখন বুঝি গল্পটা যতটা না মজার তার থেকেও বেশি শিক্ষনীয়।
আমরা হয়ত কখনও কোনো কাজে সফল না হলে মনে হয়, সব বুঝি শেষ হয়ে গেলো, আমার দ্বারা আর সম্ভব নয়, অনেক চেষ্টা করেছি আর পারবো না। তবে এটা একদমই ভুল ধারনা।
মানুষ ইচ্ছে করলেই সব কিছু করতে, সেটা যত বড় কঠিন কাজ হোক না কেন, শুধু প্রয়োজন কাজটা করার ইচ্ছা আর দূঢ় মনোবল।
আমাদের জীবনের ছোট ছোট অনেক ঘটনা আছে যেটার থেকে অনেক বড় শিক্ষা নিতে পারি, প্রয়োজন শুধু সেটা উপলব্ধি করার ক্ষমতা!
খুবই চমৎকার একটি পোস্ট করেছেন আপনার টাইটেলটা দেখেই আমার ভালো লেগেছিল।। এটা একদম সঠিক দে ছোটবেলায় আমাদের জ্ঞান তেমন থাকে না তাই পারবো না শব্দটা বেশি ব্যবহার করে থাকি।। আমি তো এখনো কোথাও খেলতে গেলে আমাকে কোন কাজের কথা বললে বলে দেই পারবো না।। খুবই ভালো লাগলো ভাই পোস্টটি পড়ে।।
আজকে আপনি আমাদের সাথে অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য যেটা আসলে অনেক ভালো লেগেছে, আপনাকে অসংখ্য ভাবে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
আপনার মা একদম সঠিক কথা বলেছিলেন। বড়োরা বিশেষ করে বাবা এমন কিছু বলে না যেটা বাচ্চারা পারবে না কিংবা তাদের জন্য ভালো না। কিন্তু তাদের মুখরে উপর পারবো না বলাটা ঠিক না।
মানুষ চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। আপনি আপনার দাদুর ধূমপান ছাড়ার কথা বলেছেন আমাদের ,কিভাবে তিনি দোকানের জিনিসপত্র হাতের নাগালের বাইরে রাখতেন যাতে তিনি ঘুমের মাঝে চাইলেও ধূমপান না করতে পারেন।
হ্যা, বাবা মা কখনওই সন্তানের খারাপ চায় না৷ তারা যেটাই বলে না কেন সেটা শুনতে খারাপ লাগলেও সেটা আমাদের ভালোর জন্যই বলে। মানুষ ইচ্ছে করলেই সব কিছু করতে পারে।