১২ বছরের অবসান!
সত্যি বলতে অন্যান্য দিন পোস্ট লেখার সময় মনে খুব আনন্দ নিয়ে লিখি। তবে আজ তার সম্পূর্ণ বিপরীত। ভীষণ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে লিখতে বসলাম আজ। মনের ভিতর অনেক কথা ঘুরপাক খাচ্ছে বটে তবে লিখতে গেলেই গুলিয়ে যাচ্ছে সব কিছু।
![]() |
---|
- এর সঠিক উওরটা আমার জানা নেই। তবে নিজের খুব প্রিয় কোনো কিছু যদি আমাদের কাছ থেকে অনেক অনেক দুরে চলে যায় সারাজীবনের জন্য তখন তার প্রতি আমাদের ভালোবাসা, ফিলিংস, আবেগ এগুলো আরও বেশি প্রবল হতে থাকে এবং সেই সাথে তাকে প্রচন্ড রকম ভাবে মিস করি আমরা।
আজ আমার নিজেরও এমন একটা অনুভুতি হচ্ছে তবে এই অনুভুতিটা কোনো মানুষের জন্য নয়।
- মিস করছি প্রায় ১২ বছর যাবত আমার সঙ্গে থাকা একটা প্রজন্মকে।
![]() |
---|
চলুন আপনাদের সাথে একটা ভালোবাসার গল্প শেয়ার করি-
বেশ কয়েক বছর আগের কথা, তখন ৪র্থ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। স্কুলের পাশে একটা বিড়ালের বাচ্চাকে ঘুরে বেড়াতে দেখি। হয়ত কেউ তাদের বাড়ি থেকে উঠায় দিয়ে গিয়েছে। খুদার জন্য ডাকছিলো তখন আমি বিড়ালকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি।
বিড়ালটা দেখতেও খুব সুন্দর ছিলো, সাদা ও হলুদ রঙ্গের মিশ্রণ ছিলো তার শরীরে। তখন তো আর মোবাইল ব্যবহার করতাম না এজন্য তার কোনো ছবি আমার কাছে নেই। বিড়ালকে বাড়িতে এনে একটু খাতির যত্ন করলেই পোষ মেনে যায় এবং তারপর থেকে আমাদের বাড়ি থেকে আর কোথাও যায় না।
বিড়ালটাকে এত বেশি ভালোবাসতাম আর আদর করতাম যে ওকে নিয়ে রাতে একসাথেই ঘুমাতাম ও গায়ের উপর হাত দিয়ে। ওর কাছেও বিষয়টা খুব ভালো লাগতো হয়ত এজন্য চুপ করে শুয়ে থাকতো আমার পাশে। জীবনে এই প্রথম কোনো বিড়াল ছোট থেকে বড় করে তুলেছিলাম।
![]() |
---|
![]() |
---|
ছোটবেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে একাদশীর ব্রত পালন করা হয়। সেদিন আমাদের বাড়িতে উনুন জ্বলে না। সেদিন একটু দুধ ও অন্যান্য কোনো কিছু খেয়েই কাটিয়ে দিত। একাদশীর দিন সারাদিন ভাত না খেয়েই থাকতো তবে অন্য বাড়িতে যেত না।
প্রকৃত ভালোবাসা হয়ত এমনই হয়, শত কষ্ট মেনে নেয় তবুও ছেড়ে যাওয়ার চিন্তাও করে না।
আমি চেয়ারে বসে থাকলে লাভ দিয়ে আমার কোলে উঠতো এবং গায়ে হাত বুলিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত করতো।
বিড়ালটা আস্তে আস্তে অনেক বড় হয়ে যায় এবং তার দুটো বাচ্চা হয়। তারাও স্বাভাবিকভাবে আমাদের এখানে থাকতো এজন্য বাড়িতে অনেকগুলো বিড়াল সদস্য হয়ে যায়। যার কারনে বাড়ির আশেপাশে ইদুর ঘোরাঘুরি করতেও ভয় পেত।
বিড়ালটার অনেক বয়স হয়ে গেলে সেটা একদিন মারা যায় কিন্তু ওর বাচ্চাগুলো তখন বড় হয়ে গিয়ে তাদেরও বাচ্চা হয়েছে আর এভাবেই ওদের প্রজন্ম ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকে বিগত ১২ টা বছর।
![]() |
---|
![]() |
---|
আমি কোথাও গেলে সেও আমার পিছন পিছন সেখানেই যেত। রাতের বেলায় যদি আমি কল কিংবা অন্য কোথাও যেতাম সে আমার পিছন পিছন সেখানে যাবেই, কোনো ভাবে বাড়িতে রেখে যেতে পারতাম না। হয়ত নিজের সাধ্য মতো আমাকে পাহারা দেওয়ার চেষ্টা করতো।
তবে সব কিছুই যেন এক নিমিষে শেষ হয়ে গেলো। এত বছরের রীতি পরিবর্তন করে সব কিছু যেন আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। এত বছরে অনেক বিড়াল জন্ম নিয়েছে আবার বয়স হয়ে গেলে মারাও গিয়েছে। তবে এবার আর একটাও অবশিষ্ট নেই। অসুস্থ হয়ে শেষ বিড়ালটাও মারা গিয়েছে। মা বলল কয়দিন যাবত নাকি কিছুই খেত না।এই খবরটা মায়ের কাছ থেকে শুনে অনেক অনেক বেশি মন খারাপ করছে।
জানি না কিভাবে অবুঝ প্রাণীর প্রতি এত ভালোবাসা জন্মে গেলো। এত দিনে ওরা আমাদের পরিবারের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিলো। পরিবারের একজন আমাদের ছেড়ে দুরে চলে গেলে যেমনটা কষ্ট হয় তেমনই একটা খারাপ লাগা কাজ করছে।
![]() |
---|
ভালোবাসা আর আবেগ শুধুমাত্র রক্তের সম্পর্কের প্রতি থাকবে এমনটা নয়, কখনও কখনও অজানা, অচেনা, অবলা প্রাণীর প্রতিও হয়ে থাকে,এটা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারছি। মনে ভিতর থেকে নিজের প্রিয় জিনিসের হারানোর অন্য রকম একটা বেদনা হচ্ছে যেটা হয়ত বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
আমার নিজের৷ বেশ কয়েকটি বিড়াল ছিলো।তাই এরা মারা গেলে যে কেমন লাগে জানি আমি। আমার জেরি নামের বিড়ালটার শূন্যতা আজও আমি অনুভব করি।
এত আদুরে হয় এরা আর এদের কার্যকলাপ দিয়ে এরা জোর করে তাদের প্রতি ভালোবাসা আদায় করে নেয়।
আর এদের চলে যাওয়া শূন্যতা পূরন হবার না।
একদমই তাই এরা এতটা আদুরে হয় যে জোর করে হলেও আদর ভালোবাসা আদায় করে নেই এটা আমি নিজেও অনুভব করেছি। আমি বসে থাকলে ইশারায় আদর করতে বলতো আর সেটা না করলে মুখ দিয়ে হালকা করে কামড় দিতো, এমন ভাবে কামড় দিত যাতে আমার ব্যথা না লাগে, এসব অনেক বেশি মিস করছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রথমেই বলি আপনার লেখা পড়ে আমার মনটাও ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। আর পিকলুকেও কখনো এইভাবে হারিয়ে ফেলতে হবে, এই ভাবনাটা মনে এলো। আমার তো মনে হয় রক্তের সম্পর্কের মধ্যেও স্বার্থপরতা লুকিয়ে থাকে। নিঃস্বার্থভাবে ভালো বাসতে পারে শুধু এই অবলা জীবগুলো। অবশ্য পিকলু আমার জীবনে আসার আগে পর্যন্ত আমি এ কথাগুলো এতো গভীর ভাবে কখনো অনুভব করিনি। ভালো থাকবেন।
আপনি ঠিকই বলেছেন রক্তের সম্পর্কের মধ্যেও স্বার্থপরতা লুকিয়ে থাকে তবে এই সব অবলা প্রাণীগুলোর মনে স্বার্থপরতা বা বিশ্বাসঘাতকের ভাবনা থাকে না।এরা শুধুই চায় ভালোবাসা। এতটা বছর যাবত আমার সুন্দর মুহুর্তের সঙ্গী ছিলো এরা তবে আজ আর নেই আমার সাথে। সত্যি ভীষণ খারাপ লাগছে। ভালো থাকবেন।
Oh yes! We support ANY quality post and good comment
ANYWHERE and at ANYTIME
Curated by : @patjewell
@patjewell
Thank you so much. 🙏
Pleasure! 🎕
মানুষ নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে না পারলেও এদের ভালোবাসায় কোন খাদ থাকে না। আমি এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ টা বিড়াল পেলেছি। এর মধ্যে ৩ টা মারা গিয়েছিলো। সে যে কী কষ্ট প্রিয় প্রাণীটিকে হারানো। সেটা যার যায় সেই বুঝে। কোন অসুখ হলেই বিড়াল খাওয়া বন্ধ করে দেয়। তারপর আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায়। পোস্টটা পড়ে কষ্ট লাগলো খুব।
আপনার সাথে আমি একদমই সহমত মানুষ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে না পারলেও এসব প্রাণীরা ঠিকই সেটা পারে। আসলেই এদের ভালোবাসায় কোনো খাদ থাকে না। জেনে ভালো লাগলো যে আপনিও অনেক গুলো বিড়াল পালন করেছেন। আমার বিড়ালটাও খাওয়া বন্দ করে দিয়েছিলো আর তারপর যা হওয়ার হলো। অনেক অনেক খারাপ লাগছো, একটু শুন্যতা অনুভব হচ্ছে। ভালো থাকবেন।
আসলে যারা প্রানীজগতের প্রেমিক তারাই সব থেকে বড় মনের মানুষ। আপনি এভাবে বিপদে পড়া একটা বিড়ালের জীবনে এভাবেই দাড়িয়েছিলেন যে আপনাকে সয়ং সৃষ্টিকর্তা পুরষ্কিত করবে।যেহেতু আপনার প্রিয় বিড়ালটা মারা যায় সেক্ষেত্রে আপনি ওর রেখে যাওয়া প্রজন্মগুলোকে বিস্তার করতে থাকেন। ধন্যবাদ
মানুষকে যতই মন থেকে ভালোবেসে আগলে রাখার চেষ্টা করা হোক না কেন সে একদিন না একদিন ছেড় চলে যায় তবে প্রাণীরা কখনও বিশ্বাস ভাঙ্গে না। ওরা শুধু ভালোবাসা চায়। বিড়ালটিকে আমি অনেক আগেই আমার কাছে নিয়ে এসেছিলাম আর তারপর থেকে ওরা আমাদের পরিবারের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু হঠাৎ করে সব শেষ হয়ে গেলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মতামত প্রদানের জন্য। ভালো থাকবেন।
ভালোবাসাটা সত্যিই সুন্দর সেটা যে কারো কাছে বা যে কারো সাথেই হতে পারে। আপনার সাথে বিড়ালের ভালোবাসা ছিল অন্যরকম। আসলে ওরা খুবই প্রভু ভক্ত হয়ে থাকে। কেননা যাদেরকে ওরা একবার ভালবাসে তাদেরকে ছেড়ে কখনো চলে যায় না। তাই হয়তো বা আপনার বাড়িতে খাবার না থাকলেও, আপনার কাছেই থেকে গেছে কিন্তু। ও মারা যাওয়ার পরে আপনার কাছে কি পরিমান খারাপ লাগছে, সেটা আমিও বুঝতে পারছি।
আমার একটা বিড়াল ছিল বিগত দু'বছর আগে আমি ওকে এত পরিমাণে ভালোবাসতাম। ওর কিছু হলে আমি সাথে সাথে ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতাম। এটা নিয়ে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি হাসাহাসি করত। কিন্তু আমি কখনোই তাকে অবহেলা করতাম না। সব সময়টাকে ভালোবাসার চেষ্টা করতাম। সে সবসময় আমার আশেপাশে ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি সে মারা গেছে। সত্যি কথা বলতে আমি এত পরিমাণে কান্না করেছিলাম, যেটা আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না। যাই হোক আপনার পালন করা বিড়ালের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। ভালো থাকবেন।
একদমই তাই ভালোবাসা যে কারো সাথেই হতে পারে, সেটা হোক মানুষ বা প্রাণী। আসলেই প্রাণীরা অনেক প্রভু ভক্ত হয়ে থাকে৷ মানুষের থেকেও প্রাণীদের ভালোবাসা খাঁটি হয়ে থাকে। ওদের ভালোবাসায় কোনো স্বার্থ থাকে না আর বা থাকে বিশ্বাস ভাঙ্গার ভয়। আমাদের বাড়িতে অনেক দিন যাবত রয়েছে আর এত দিন পর ওকে ছাড়া থাকতে অনেক বেশি খারাপ লাগছে। মনে কোনে কেমন একটা শুন্যতায় ভুগছি। ধন্যবাদ আপনাকে মূল্যবান মতামত করার জন্য। ভালো থাকবেন।