নাম সংকীর্তন দ্বিতীয় পর্ব
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি ।এর আগের দিনের যে পোস্টটি আমি লিখেছিলাম তাতে আমাদের গ্রামের আমরা যে পাড়ায় থাকি সেই পাড়ায় স্থানীয় বারোয়ারী মন্দিরের ওপর ব্রহ্ম নাম যজ্ঞ সংকীর্তন সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম আজ আমি সেই পোস্টটি পূর্ণরূপে দিতে চাই। কারণ আমার পোস্টটি খুব বড় হয়ে যাচ্ছিল ।সেই কারণে পুরোপুরি আমি শেষ করতে পারিনি। বাকি তথ্য গুলি আজ আমি এই পোস্টে শেয়ার করছি। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আজ আমি আপনাদের বলতে চলেছি যে এই নাম যজ্ঞ অনুষ্ঠানে কি কি কার্যকলাপ করা হয়।
এই মহানাম যজ্ঞের সূচনায় হয় জল সাজার মাধ্যমে। এই জল সাজা অনুষ্ঠানটি হয় দুপুর বেলায় জল সাজার আগে মন্দিরের পক্ষ থেকে পাড়ার প্রতিটি মহিলাদের একটি করে শাড়ি উপহার দেওয়া হয়। প্রতিটি শাড়ি একই রঙের আসলে এই জলসা যে অনুষ্ঠানটি মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এবারে জল সাজা বিষয়টি কি সেটি হল পাড়ার মহিলারা মাথায় করে মাটির ঘড়া নিয়ে যান নদীতে। তারপর সেখান থেকে জল ভর্তি করে আবার ফিরে আসেন মন্দিরে। এই নদীর জল ভরা ঘট প্রতিষ্ঠা হয় রাধা কৃষ্ণ এবং গৌড় নিতাই এদের বিবাহের সামনে। এই অনুষ্ঠানটি মহা ধুমধামে ব্যঞ্জন বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মাধ্যমে পদযাত্রার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় ।তারপর সন্ধ্যা লগ্ন থেকে শুরু হয় অধিবাসের পর্ব ।এই অনুষ্ঠানটি রাত্রি অবধি চলে।
তারপর ভোরবেলা থেকেই নাম কীর্তন শুরু হয়। দুদিন দুরাত্রি টানা নাম কীর্তন চলার পর শেষ হয় নাম কীর্তন অনুষ্ঠান। এরপর প্রসাদ বিতরণ সব শেষে হয়ে আমাদের এই মহান যজ্ঞ টি শেষ হয়ে যায় ।এই অনুষ্ঠানটি চলাকালীন চারদিনব্যাপী অন্য মহোৎসব এর আয়োজন থাকে। অন্যমৎসবে কি কি ব্যবস্থা থাকে? যেমন প্রথম দিন থাকে ভাত ,ডাল ,সবজি। দ্বিতীয় দিন থাকে ভাত, ডাল পনির ও সয়াবিনের একটি তরকারি। শেষ দিন থাকে ভাত ,ডাল ,সবজি তার সাথে চাটনি, পায়েস, দই এবং মিষ্টি। সুতরাং অনুষ্ঠান দেখতে আসা কোন দর্শক কে ক্ষুধার্ত পেটে ফিরতে হয় না। সবাই পেটপুরে অন্যমহৎসব গ্রহণ করি। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি মহাপ্রভুর এই উৎসব গ্রহণ করাটাও কিন্তু নাকি পুণ্যের কাজ। হরিনাম শোনার যেমন পুণ্যের শ্রম পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি এই অন্য উৎসব গ্রহণ করে একই রকমই ব্যাপার। ছোটবেলায় দেখতাম কলার পাতাতে অথবা পদ্মপাতাতে এই অন্য মহোৎসব খাওয়ানো হতো। তার সাথে মাটির গ্লাস ব্যবহার করা হতো।
কিন্তু বর্তমানে সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে সেসব চল এখন কোথায় হারিয়ে গেছে ।এখন প্লাস্টিকের পাতা অথবা কাগজের পাতা এবং প্লাস্টিকের অথবা কাগজের গ্লাসে অন্ন জল পরিবেশন করা হয়। সারি সারি লোকজন মাটিতে শতরঞ্জি উপরে বসে একসাথে অন্যত্র গ্রহণ করেন ।জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সার্বজনীনভাবে এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই নাম যজ্ঞ অনুষ্ঠানের খরচ খরচা হয় প্রচুর। কিন্তু একটি টাকাও কাউকে জোর করে আদায় করা হয় না । আশ্চর্যজনকভাবে সমস্ত কিছু ব্যবস্থাপনা সেটা অর্থই হোক বা যে কোন কিছুই হোক না কেন যেন আপনা আপনি ব্যবস্থা হয়ে যায়। এমন কি অন্য উৎসবের সমস্ত দান যেমন চাল, ডাল, তেল ,মসলা থেকে শুরু করে দই ,মিষ্টি সমস্ত কিছুই কেউ না কেউ দান করছেন ।আশ্চর্যজনক লাগে নিজের চোখে না দেখলে আপনারা বিশ্বাস করতে পারবেন না। সেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী গ্রহণ করেন। এমনকি নাম সংকীর্তন শোনার জন্য তাদের ভিড় উপচে পড়ে ।প্রতি বছর বছর জৈষ্ঠ মাসে এই অনুষ্ঠান উদযাপিত হয় ।আমাদের মন্দিরে এ অনুষ্ঠানটিকে কেন্দ্র করে পাড়ার সকলেই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত হয়ে থাকেন। সবাই যে যার অন্যান্য ব্যক্তিগত কাজ ফেলে ওই কটা দিন সবাই মহানাম যজ্ঞ উৎসবে সামিল হন। আমিও সেখানে যোগদান করে থাকি ।
যাই হোক আজ আমি এখানে আমার এই পোস্টটি শেষ করছি ।আপনারা সকলেই ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আর আমার এই পোষ্টটি কেমন লাগলো তা কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।