ভালোবাসার পূর্ণতা
আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমি আমার জীবনে ভালবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার সমস্ত ঘটনা আপনাদের মাঝে তুলে ধরব।
মেয়েটি ছিল আমার মামাতো বোন। ওদের বাড়িতে যেতাম আসতাম। ওকে আমার অনেক ভালো লাগতো অনেক আগে থেকেই। কিন্তু আমি ছিলাম একটু ভীতু প্রকৃতির। তাই কখনোই তাকে বলতে সাহস পাইনি।
আমি তখন পঞ্চম সেমিস্টারে পড়ি। একদিন আমি বাড়িতে এসেছি। এরপর আমার এক ঘনিষ্ঠ বড় ভাইয়ের সাথে এই বিষয়গুলো আলোচনা করি। সে আমাকে সাহস যোগায়।
এরপর আমি তাকে প্রপোজ করার সিদ্ধান্ত নেই। তার কোন ফোন ছিল না। সে প্রতিদিন প্রাইভেট পড়তে যেত তার বাড়ি থেকে একটু দূরে। আমি একদিন তার বান্ধবীর ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন দেই।
তাকে সবকিছু বলি। সেই বান্ধবীই ওকে কিছু বলে দেয়। এরপর সে আমাকে ফোন দেয় এবং আমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। আমি এতটাই নার্ভাস ছিলাম যে কথা আটকে যাচ্ছিল আমার।
অবশেষে মনে সাহস যুগিয়ে মনের সব কথা তাকে বলে দেই। সে তখনই আমায় কিছুই বলেনি। শুধু বলেছিল যে এইসব কথা যেন আমি আর না বলি।
এরপর আমি নিরাশ হয়ে যাই। বেশ কিছুদিন পর আমার ফেসবুকে একটি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। সেই রিকুয়েস্টটা ছিল তার। আমি একসেপ্ট করে নেই। এরপর সে আমাকে মেসেঞ্জারে নক করে।
সে নাকি অ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনেছে। তারপর থেকেই আমাদের প্রতিদিন ই কথা চলতে থাকে। আমি মাঝে মাঝে ই তাকে ভালোবাসার কথা বললে সে সেটি অন্যান্য কথা বলে কাটিয়ে দেয়।
এভাবেই আমাদের কথাবার্তা স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে। তারা মনের কথা যখন সে বলে না তখন আমি নিরাশ হয়ে মাঝেমধ্যেই কথা বলা বন্ধ করে দিতাম। কিছুদিন পর সেই আবার আমাকে মেসেজ দিয়ে রাগ দেখায়, যে আমি কথা বলি না কেন তার সাথে।
তার কথাবার্তা শুনে আমি বুঝতে পারি যে আমাকে সে ভালোবাসে কিন্তু বলতে পারছে না। আমার বিশ্বাস ছিল যে সে একদিন আমাকে ভালোবাসার কথা বলবে। সেই আশায় আমি তার সাথে কথা চালিয়ে যেতে থাকি।
আমাদের কখনো ই ভিডিও কল বা ভয়েস কলে কথা হয়নি। যা হয়েছে সব মেসেজের মাধ্যমে। সে তখন ইন্টারের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিল। মাঝে মধ্যেই তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব আসতো।
সে কান্নাকাটি করে সবকিছু ভেঙ্গে দিত। এভাবেই যখন প্রতিনিয়ত বিয়ের প্রস্তাব তার বাসায় আসতে থাকে। তখন সে বাধ্য হয়ে আমাকে বলে যে আমি যেন তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই।
কারণ সে আমাকে অনেক ভালবাসত কিন্তু বলতে পারেনি। পরে বুঝতে পারলাম যে সে আমার জন্যই সব বিয়ের প্রস্তাব ভেঙে দিয়েছে। আমি তখন ডিপ্লোমা শেষে ইন্টার্নিতে ছিলাম।
সেই অবস্থায় সে একদিন হঠাৎ করে আমাকে এসএমএস দিয়ে বলতেছে যে তুমি যদি আমাকে ভালোবাসো তাহলে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাও তাড়াতাড়ি। না হলে আমার অন্য জায়গায় বিয়ে হয়ে যাবে।
সেই কথা শুনে তো আমি আনন্দে আত্মহারা। অবশেষে সে রাজি হয়েছে। তাকে বললাম যে আমার তো কোন চাকরি নাই। সে বলল সমস্যা নেই আমি তাও তোমাকে বিয়ে করব।
এরপর আমি এই কথা বাড়িতে বলি। বাড়িতে বলাতে আমাকে অনেক রাগারাগি করে। এরপর আমি আমার এক ভাইকে এইসব বিষয় বলি। এরপর তিনি আমার বাড়িতে আবারো বলে এবং তার বাড়িতেও বলে।
এতে সবাই একসাথে বসে কথা বলার একটা সিদ্ধান্ত হয়। এরপর সবাই একসাথে বসে কথা বলার সময় অনেক বাজে কথা এবং একেকজনের একেক রকম কথার কারণে সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে যায়।
অনেক ঝামেলা হয়েছিল সেদিন। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমাদের ভালোবাসা যেহেতু কেউ মেনে নিচ্ছে না। তাই সবার কথাই থাক আমাদের ভালোবাসা বিসর্জন দিলাম।
এরপর আমি বাড়িতে বলে যাই যে তোমরা যা বলবা তাই হবে আমরা সবকিছু ভুলে যাব। প্রায় ২০ দিন পর সে আমাকে মেসেজ দেয়। দিয়ে সেখানকার সকল ঘটনা খুলে বলে। সেখানে আসলে বেশি কিছু ঝামেলা হয়নি।
কিন্তু আমাকে তখন বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে যা হয়েছে তার থেকে অতিরিক্ত বলেছে। এর কারণেই আমি ভুল বুঝেছিলাম। তবে তার মেসেজ দেখে সবকিছু বুঝতে পারি।
এরপর থেকে আমাদের কথাবার্তা আবারো চলতে থাকে। কিন্তু এই ব্যাপারে আর কেউ জানতো না। সবাই ভাবতো যে আমাদের মধ্যে আর কিছু নেই। ভালোই চলতে থাকে।
কিছুদিন পর আমার সিলেটে চাকরি হয়ে যায়। আমি সিলেটে চলে আসি চাকরি করতে। আর ওদিকে কিছু দিন পর পর ওর বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে অন্য জায়গা থেকে।
সে আমাকে এতটাই ভালবেসে ফেলে যে যেখান থেকেই বিয়ের প্রস্তাব আসুক না কেন সে কোন না কোন উপায়ে তা ভেঙ্গে দিত। এতে করে তার বাড়ি থেকে তার ওপর অনেক মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হতো।
আমি গত ঈদে ছুটিতে বাড়িতে যাই। ঈদের দুই দিন পর সে হঠাৎ করেই আমার সাথে দেখা করতে চায়। এর আগে আমি অনেকবার তার সাথে দেখা করতে চেয়েছি কিন্তু সে কখনোই রাজি হয়নি।
সে দেখা করতে চায় আমিও রাজি হয়ে যাই। দুজনে একটা কলেজে মাঠে বসে অনেক সময় ধরে কথা বলি। সে আমাকে বলে এভাবে আর কতদিন এবার কিছু একটা করো না হলে আমাকে জোর করে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমি বললাম একটু ধৈর্য ধরো আমি সবকিছু ঠিক করব।
আমি ছুটি শেষে সিলেটে চলে আসি। এরপর একদিন চিন্তা করলাম যে না আর দেরি করা ঠিক হবে না। না হলে হয়তো বা আমি তাকে হারিয়ে ফেলতে পারি। অনেক ভালোবাসি তাকে হারিয়ে ফেললে তাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।
আমার সরাসরি বাড়িতে বলার সাহস ছিল না। তাই আমি ঘটক হিসেবে আমার দুইজন দুলাভাইকে আমার বাড়িতে পাঠাই এবং তার বাড়িতে পাঠাই। তারা আমাদের দুজনের বাড়িতেই গিয়ে দুজনের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে।
প্রথমে তো কেউই রাজি হয়নি। এরপর সেই দুলাভাইরা অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে সাজিয়ে দুই পক্ষকেই রাজি করায়। এরপর আমাদের বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়। ২৮ শে এপ্রিল ২০২৪ আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়।
এরপর আমি সেই অনুযায়ী বাড়িতে আসি এবং বিয়ে করে ফেলি। এর মাধ্যমে ই আমাদের দীর্ঘদিনের ভালবাসা পূর্ণতা পায়। আর সে এখন আমার অর্ধাঙ্গিনী।
শুন্য পকেটে যে নারী পাশে থাকে সেই বউ হওয়ার অধিকার রাখে। সে আমার শূন্য পকেট থেকে পাশে ছিল, এখনো আছে। বলতে গেলে এখনো আমার শূন্য পকেটই। কারন আমার বেতন অনেক কম।
তা সত্ত্বেও সে আমাকে বিয়ে করার জন্য রাজি ছিল। এখন আমরা অনেক ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ। দুই পরিবারই আমাদের নিয়ে খুশি।
আমি তাকে অনেক ভালোবাসি। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে যেতে পারি।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে তোমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছি তার জন্য আলহামদুলিল্লাহ আর তোমাদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক সারা জীবন দুজনে একসাথে থাকো এবং চলতে পারো সে দোয়া করি। ভালো থাকবে সুস্থ থাকবে বউয়ের যত্ন নিবে
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ধন্যবাদ ভাই। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।