দায়িত্ববোধ আসে পরিস্থিতির চাপে পড়ে
সময়ের সাথে সাথে মানুষের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। কথাটি সব সময় সঠিক নয়। দায়িত্ববোধের উথান ঘটে পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায়। অনেক অল্প বয়সেও অনেককে দায়িত্ব নিতে দেখা যায়। কারণ দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। বাস্তবতার কাছে হেরে যেতে না চাইলে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
আমরা প্রায়শই রাস্তা ঘাটে চলার সময় দেখি, ছোট ছোট বাচ্চারা কাজ করছে। কিছু বিক্রি করছে। ওদের অনেকের কাছেই জিজ্ঞেস করলে দেখবেন তারা বলবে তাদের পরিবারের উপর দিয়ে কী বয়ে যাচ্ছে। যে বয়সে তার স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সে তাকে কত বড় দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। এই অল্প বয়সেই তারা বাস্তবতা কী জিনিস তা বুঝতে পেরেছে। পিতা-মাতা সন্তানদের আগলে রাখেন এটিই নিয়ম। কিন্তু প্রকৃতির নির্মম পরিহাসে অনেক সময় এই নিয়মেরই ব্যত্তয় ঘটে। এই দায়িত্ববোধটা কিন্তু যদি এই পরিস্থিতিতে না পড়তো তাহলে এত দ্রুত তাদের মাঝে আসতো না।
আমাদের দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী ছেলে বা মেয়ে পড়াশোনা শেষ করবে তারপর ভালো একটা চাকুরী করবে তারপরে গিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করবে। কিন্তু এই হুট করে দায়িত্ব গ্রহণ করতে গিয়ে অনেকেই ২৫-২৬ বছর বয়সে এসেও হিমসীম খায়। এতদিন বাবা-মায়ের আদরের দুলাল থাকার পড়ে হুট করে বড় ধাক্কা সইতে তাদের সময় লাগে। মায়ের আচলের নীচ থেকে বের হয়ে বাস্তবতা চিনতেই তাদের পেরিয়ে যায় বেশ কিছু বছর। হয়তো সবাই এক নয়। কিন্তু বেশীরভাগই মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়।
অন্যদিকে পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই ১৮ বছর হলেই বাবা- মা থেকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। তখন সে স্বাধীন নাগরিক। নিজের ভরণ- পোষণের দায়িত্ব নিজের নিতে হয়। নিজের ভালো মন্দ নিজের বুঝতে হয়। না চাইতেও তারা দায়িত্ববোধের জালে আটকে যায়। ফলে দ্রুত ম্যাচিউর হয়ে উঠে। যা একজন মানুষের ব্যক্তি জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। আমি বলছি না পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ করতে কিংবা বুড়ো বয়সে বাবা মাকে একলা রেখে অন্য কোথাও চলে যেতে। কিন্তু আমাদের বাবা মায়েরা যে ননীর পুতুলের মতন সন্তানদের আগলে রেখে তাদের কত বড় ক্ষতিটা করছেন সেটা কি তারা বুঝতে পারছেন।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থার সাথে মিল রেখেই আস্তে আস্তে সন্তানদের উপর একটু একটু করে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত। তার নিজের ভালো মন্দ বোঝার মত পরিস্থিতি তৈরী করে দেওয়া উচিত। দায়িত্ব পালন না করতে করতে যখন অভ্যাস হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে এটাতে খাপ খায়িয়ে নিতে যখন সন্তানরা অপরাগ হয় তখন পুরো দোষটাই পড়ে সন্তানের ঘাড়। কিন্তু এর পেছনে যে বাবা- মায়ের হাত রয়েছে তা অনেকেই বুঝতে চান না।
সন্তানকে মানুষের মতন মানুষ তৈরী করতে দায়িত্ববোধের প্রয়োজন অনেক। কষ্ট কি, বাস্তবতা কি এসব বিষয় সম্পর্কে কেউ যত জানবে তত দ্রুত এগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে পারবে। তাই সকল মা-বাবার উচিত পড়াশোনার পাশাপাশি এগুলো সম্পর্কেও তাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়া।
আপনার লেখনীর সাথে আমিও একমত পোষণ করছি। প্রকৃত অর্থে পরিস্থিতির চাপে মানুষের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। তাই প্রত্যেক সচেতন মা বাবারই উচিত সন্তানদেরকে বাস্তবিক পরিস্থিতির সাথে মুখোমুখি করানো।
ননীর পুতুলের মতো সন্তানকে লালন পালন করলে আখেরে সন্তান অথর্ব হয়ে যায়। পরবর্তীতে বাস্তব পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না। সুন্দর একটি বিষয় কি আপনি সহজ ভাবে গুছিয়ে লিখেছেন। ভালো লাগলো আপনার এই লেখা পড়ে।
দায়িত্ববোধ কখনো বয়সের উপর নির্ভর করে না। রাস্তার পাশে এমন হাজারো ছোট বাচ্চাকে দেখা যায়। যারা কিনা নিজেদের পরিবারের দায়িত্ব পালন করার জন্য, প্রতিনিয়ত কতটা পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাদের মুখে যখন তাদের পরিবারের কষ্টের কথা শোনা হয়। সত্যি কথা বলতে ভেতরটা ফেটে যায়। ইচ্ছে করে নিজের সবটুকু দিয়ে যদি তাদেরকে সাহায্য করতে পারতাম। তাহলে কতই না ভালো হতো।
তবে আমার মনে হয় আমরা যারা একটু ভালো অবস্থানে রয়েছি। তাদের সবারই পরিবারের কিছু না কিছু দায়িত্ব অবশ্যই নেয়া উচিত। সময়ের সাথে যেমন দায়িত্ব বেড়ে যায়, ঠিক তেমনি আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে। আমাদের বাবা-মা এই পৃথিবীতে সারা জীবন থাকবে না। হঠাৎ করে যদি কিছু হয়ে যায়। তাহলে পরিবারের দায়িত্ব আমাদের কেই নিতে হবে। ধন্যবাদ চমৎকার বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আসলেই আপনি ঠিক বলেছেন, একেকজনের দায়িত্ববোধ একেক সময় অর্পিত হয়।কেউ বা ছোট বেলায় আবার কেউ বা একটু বড় হয়ে পরিবারের দায়িত্ব কাধে পেয়ে থাকে।তবে এটা চিরসত্য যে প্রত্যেককেই কোনো না কোনো সময় এই সময়ের মুখোমুখি হতে হবেই।খুব সুন্দর একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।ধন্যবাদ
যদিও বলেছেন সময়ের সাথে সাথে দায়িত্ববোধ বেড়ে যায় সেটা আসলে ঠিক। কিন্তু পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি আসে অল্প বয়সেও অনেক বেশি দায়িত্ব কাঁধে পড়ে যায়। সম্পূর্ণ পরিস্থিতির শিকার।
দায়িত্ববোধ যদি সময় অনুযায়ী হত। তাহলে রাস্তার পাশে এরকম ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে দু'ঘণ্টা খাওয়ার জন্য উপার্জন করত না।
সুন্দর একটি শিক্ষনীয় পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।