হারানো শৈশব কি ফিরে পাওয়া যায়?

in Incredible India2 months ago

Cream Green Illustrated Kids Activity Facebook Post.jpg
Edited by Canva

আসসালামু আলাইকুম

মানুষের জীবন খুবই অল্প সময়ের। এই সময়ের ভেতরেই সে কত ধরনের ধাপ পাড় করে। জন্ম, শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়, মৃত্যু। এক এক সময়ে এক এক অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। তবে আমার কাছে মনে মানবজীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটে শৈশবে। যদিও অনেকের ক্ষেত্রে এটি নাও হতে পারে। কিন্তু এই সময়টাতেই মানুষ মায়ের কোলে কোন ধরনের চিন্তা ছাড়াই আনন্দের মধ্যে বড় হতে থাকে। পৃথিবীতে মায়ের কোলের মত নিরাপদ জায়গা বোধহয় আর নেই।

pexels-shuvrasankha-2616865.jpg
Source

যখন ছোট ছিলাম তখন মনে হতো বড়রা কত স্বাধীন। তাদের যা ইচ্ছা করতে পারে। বলার মতন কেউ নেই। কবে যে বড় হবো। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা পার করছি। এখন মনে হয় আবার যদি ফিরে পেতাম সেই ছোট বেলা। কতই না ভালো হত। মায়ের শাসন তখন অসহ্য লাগতো। এখন মনে হয় যে সেই শাসনটাই যদি ফিরে পেতাম।

আমার জন্ম বিংশ শতাব্দীর একদম শেষের দিকে। তখনও ইন্টারনেট বা মোবাইল এতটা জনপ্রিয় হয়নি। বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলা করাই ছিলো বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। স্কুল থেকে এসে দুপুরে খেয়ে দেয়ে মা যখন আমাকে সাথে নিয়ে ঘুমাতো। আমার একটুও ঘুম আসতো না। খালি মনে হতো কখন ৫টা বাজবে। আর বাইরে যাবো। ৫টা বাজলেও মায়ের ঘুম যাতে না ভাঙে তাই চোরের মতন চুপি চুপি উঠে সাবধানে দরজা খুলে বাইরে চলে যেতাম। দুপুরবেলা বাইরে গিয়ে খেলার জন্য কত মার খেয়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না।

তখনকার সময় লোডশেডিংও ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সন্ধ্যার পর কারেন্ট যাবে এটি একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল। তাই সন্ধ্যায় পড়তে বসলেও অপেক্ষায় থাকতাম কখন কারেন্ট যাবে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়াও ছিল এক প্রকার উৎসবের মতন। আশে পাশের সব প্রতিবেশীরা বাইরে বের হত গরমের কারণে। আর আমরা ছোটরা খেলা করতাম অন্ধকারে। এখনও বাংলাদেশের বিদ্যুতের সমস্যা ঠিক হয়নি। কিন্তু সেই মজাটা আর নেই।

তখন টিভি টাই ছিল যে কোন পরিবারের অবসর সময় পারের কেন্দ্রবিন্দু। অনুষ্ঠান যা ই হত কিন্তু একগাদা এডভারটাইজ দিয়ে ভরে রাখতো। সেই এডগুলো দেখতেও খুব ভালো লাগতো। এড দেখতে দেখতে প্রায় সব মুখস্তেই হয়ে গিয়েছিল। আব্বু আম্মুর কাছে শুনেছি তাদের সময় টিভিতে একটা সিনেমা দেখার জন্য আশে পাশের গ্রাম থেকে মানুষ আসতো। কিন্তু আমার শৈশবে তখন অনেকের ঘরেই টিভি চলে এসেছিল। কিন্তু ডিসের লাইন সহজলভ্য ছিল না। সবাই বিটিভিই দেখতো।

শৈশবের ঈদের আনন্দ ছিল অন্যরকম। ঈদের নতুন জামা লুকিয়ে রাখতাম। কারণ ভাবতাম আমার ঈদের জামা কেউ দেখে ফেললে ঈদ পুরনো হয়ে যাবে। নতুন পায়জামা পান্জাবী পড়ে ঈদের নামায আদায় করে বাসায় দৌড় দিতাম। ঈদ সালামি পেয়েই বন্ধুদের নিয়ে বেরিয়ে যেতাম ঘুরতে। সারা বছর যেন এই দিনটির অপেক্ষাই করতাম। কম্পিটিশন হত কারে ঈদের সালামি কত। কোরবানীর ঈদে আব্বুর সাথে হাটে যেতাম। অথচ এখন ঈদের আনন্দটাও আর সেই শৈশবের মতন নেই। বন্ধুরাও যার যার মতন জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে। দায়িত্ব বেড়ে গেছে। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। যে সময় একবার যায় তা আর কখনও ফিরে আসে না।

এক এক জনের শৈশবৈর স্মৃতি এক এক রকম। তবে আমার মনে হয় শৈশবের সুখমাখা সময়টা ফিরে পেতে চায় অনেকেই। আপনার কি মনে হয় না কখনও যদি আবার মায়ের কোলে ফিরে যেতে পারতাম। আবার ছোট হয়ে শৈশব উপভোগ করার আনন্দ পেতাম? আজ এ পর্যন্তই । সবাই ভালো থাকবেন।

Thank You

Sort:  
Loading...
 2 months ago 

যদি আমরা সেই হারানো শৈশব ফিরে পেতাম তাহলে কতই না ভালো হতো, শৈশবের স্মৃতি আসলে মনে রাখারই মতো আমাদের গ্রামে কোন টেলিভিশন ছিল না পাশের গ্রামে যেতাম প্রতি শুক্রবার টেলিভিশন দেখতে সবাই একসাথে দল বেঁধে যেতাম আবার দল বেদে বাড়িতে আসতাম। আরো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যখন শৈশবের অন্য মানুষের স্মৃতিগুলো পরী । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শৈশবের স্মৃতি আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য অনেকদিন পর ফিরে গিয়েছিলাম সেই শৈশবে আপনার লেখা পড়তে পড়তে।

 2 months ago 

আমরা হারানো শৈশব আর খুঁজে না পেতে পারি কিন্তু এর কিছু বাঁক পেতে পারি। এখন তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি দেশ আগেকার সময় আমরা বিকাল হলেই মাঠে যেতাম খেলাধুলা করার জন্য। কিন্তু এখনকার সময় সব সময় ছোট থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত স্মার্টফোন হাতে হাতে ইন্টারনেট সুযোগ ঘরে বসেই মোবাইলে তারা সময় কাটায়। ছোটবেলা আমি যখন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সময় পেতাম খেলার জন্য উদ্দীপ হয়ে যেতাম। এখনকার সময় পড়ার পরে যদি সুযোগ পায় তাহলে মোবাইল নিয়ে বসে পড়ি

ঠিক বলেছেন ঈদের দিনের কথা গুলো একদমই ভুলা যায় না। জামা কাপড় কিনে নিয়ে এসে লুকিয়ে রাখাটা কতটা মজার ছিল সেটা এখনকার মজাটা নেই। বাবা কাকা দাদা ও গুরুজনদের কাছ থেকে ঈদের সালামি পেতে অনেক ভালো লাগতো অনেক আনন্দ লাগতো
কিন্তু এখন নাই। আমাদের দেশে তথ্য প্রযুক্তির ও ইন্টারনেট দেওয়া ব্যবস্থাটা অনেকটা আমাদের কাছ থেকে শৈশব কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ধন্যবাদ ভাই আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক অনেক ভালো লাগলো ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন

 2 months ago 

শৈশবের সম্পর্কে বলতে গেলে কখনো শেষ হবে না।আসলে মানুষের সব থেকে সোনালী সময় হচ্ছে শৈশব। এই শৈশবের ঈদ গুলো কতোই না আনন্দ মুখরিত ছিলো।আর বর্তমানে ঈদের দিনে মনেই হয় না যে এটা বিশেষ কোনো দিন।আসলে ভাই শৈশবকে আমরা হারিয়েছি।চাইলেই আর ফিরবেনা কোনোদিনো এই দিনগুলো।

 2 months ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যিই খুব ভালো লাগলো, আপনার লেখা গুলো মন ছুয়ে গেলো।

তখন বুঝতে পারিনি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা পার করছি।

এটা ১০০ ভাগ সত্যি কথা। আমাদের জীবনের সব থেকে মধুর সময়টা তখনই ফেলে আসি আমরা। হয়ত তখন বাবা মায়ের শাসন বারন ভালো লাগতো না বলে মনে হতো কবে বড় হবো আর এসব থেকে মুক্তি পাবো তবে এখন মনে হয় তখনকার ঐ কড়া কথাগুলোই আমাদের জন্য ভালো ছিলো।

আর কখনও ঐ দিনগুলো ফিরে পাবো না। কাদা ছোড়াছুড়ি আর দৌড়ঝাঁপ করার মুহুর্তগুলো চোখের সামনে ফেঁসে ওঠে। ভালো থাকবেন।

 2 months ago 

শৈশবের দিনগুলো আর ফিরে পাওয়াটা সম্ভব নয়। আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করে সত্যি কথা বলতে চোখের সামনে, সেই ছোটবেলার মুহূর্ত গুলো ভেসে উঠতে লাগলো। শৈশবের ঈদ আনন্দ কতটাই না স্মৃতি মধুর ছিল। সকালবেলা গোসল করে ঈদের জামা পড়ে, সবাইকে সালাম করে ঈদের সালামি নেয়ার মধ্যে কতটা আনন্দ ছিল। কিন্তু সেই আনন্দ বর্তমান সময়ে এখন আর পাওয়া যায় না।

শৈশবে আমাদের একমাত্র আনন্দের খোরাক পূরণ করার জন্য। বিটিভি ছিল। যেখানে আমরা বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার বাংলা সিনেমা দেখা হতো। সেই সিনেমা দেখার জন্য পুরো একটা সপ্তাহ আমরা অপেক্ষা করতাম। আবার আলিফ লায়লা দিত, যেগুলো দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। শুক্রবারে হাতিম দেখানো হতো যার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতাম। সেই দিনগুলো সত্যিই অনেক বেশি সুন্দর ছিল।

আমরা তো ঈদের আগের দিন রাত অর্থাৎ চাঁদ রাত অনেকটা সুন্দরভাবে উদযাপন করতাম। ছোটবেলায় আমরা টিনের তৈরি যে লিকুইড দুধ পাওয়া যায়। সেই পট গুলো নিয়ে প্যারা কের সাহায্যে ছিদ্র করে নিতাম। এর পরে তার মধ্যে মোমবাতি জ্বালিয়ে সারা উঠুন সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াতাম। সেই দিনগুলো যদি ফিরে পেতাম তাহলে কতই না ভালো হতো। ধন্যবাদ শৈশবের স্মৃতি নিয়ে এত সুন্দর একটা বিষয় আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58167.06
ETH 2592.42
USDT 1.00
SBD 2.44