আমার গ্রাজুয়েশন শেষের দিনটি
আমার মনে পড়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের দিকে আমি যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ এ ভর্তি হই। বাবা পাবলিকে পড়ানোর জন্য অত আগ্রহী ছিলেন না। পাশাপাশি আমিও এত ভালো ছাত্র ছিলাম না যে পাবলিকে চান্স পেতেই হবে। তাই এখানে ভর্তি হওয়া। তবে আর যাই হোক, সাবজেক্টটা ছিল বিবিএ প্রফেশনাল।সাধারণের থেকে একটু আলাদা। সবটাই ইংলিশে তাই একটু ভাব ছিল মনে যে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ি।
অনার্সে ভর্তি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে বাবা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে দায়িত্ব এসে পড়লো আমার ঘাড়ে। ২ মাসের মধ্যে একটি কোম্পানিতে ঢুকে পড়লাম পার্টটাইম কর্মী হিসেবে। পড়াশোনা, চাকুরী,কোচিং সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ত জীবন পার হয়েছে। করোনার কারণে ২ বছর পিছিয়ে পড়ায় গ্রাজুয়েশন শেষ হয় ২০২৩ এর শেষের দিকে।
চাকুরীর কারণে সবসময় বন্ধুদের সাথে সময় দিতে পারতাম না। ক্লাসের শেষে যখন সবাই আড্ডা দিত। ইচ্ছা থাকলেও সেখানে যাওয়া হয়ে উঠতো না। কিন্তু তারপরেও সবার সাথে খুব ভালো একটা বন্ডিং তৈরী হয়ে গিয়েছিল। খুব অল্প সময়েই সবাই হয়ে উঠেছিল কাছের বন্ধু। কখনও কেউ বিপদে পড়ে সাহায্য চেয়েছে এবং তা পায়নি এমন নজির ছিল না।
একসাথে ৬টা বছর পার করার পর যখন বিদায়ক্ষণ চলে আসলো তখন যেন আমরা হতবাক। অনেক দীর্ঘ সময় পর আমরা গ্রাজুয়েট হচ্ছি সেটা ভেবে যেমন আনন্দ লাগছিল। তেমনি সবার সাথে আর এভাবে দেখা হবে না ভেবে কান্নাও চলে আসছিল। যে স্যারদের সাথে এত সময় পার করেছি। বন্ধুর মতন আমাদের পাশে ছিলেন তাদের সবাইকে বিদায় দেওয়ার সময় চলে এসেছে।
গ্রাজুয়েশনের দিন আমরা সবাই টাকা তুলে স্যারদের জন্য এবং ডিপার্টমেন্টের জন্য অনেক উপহার কিনি। এমনকি আমাদের অফিস সহকারী মামাও বাদ যায়না। প্রতিটি স্যার আমাদের উদ্দেশ্যে কিছু না কিছু বক্তব্য রেখেছেন। তখন মনে হচ্ছিল খুব জলদিই বুঝি বড় হয়ে গেলাম। আমরা সবাই আবেগ আপ্লুত হয়ে স্যারদের প্রতিটি কথা শুনেছি। চোখের কোণায় একটু পানিও চলে এসেছিল বোধহয়। কতই না স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ক্লাসরুম, এই ক্যাম্পাস, এই কলেজের সাথে। এর পর তো আমরা মেহমান হয়ে আসবো। ভেবেই মনটা হাহাকার করে উঠেছিল।
স্যারদের বক্তব্য শেষে আমরা এক এক জন স্যারদের উপহারগুলো দিয়েছিলাম। তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম ছবি তুলতে। অনার্স জীবনের শেষ স্মৃতি ধরে রাখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ১ ঘন্টা ফটোসেশনের পর সবাই যখন ক্লান্ত তখন স্যারেরা বললো আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা আছে। বিরিয়ানী আনা হয়েছে। খুব আনন্দের সাথে বিরিয়ানী খাওয়া হলে সবাই মিলে। এর মাধ্যমেই আমাদের সকল কার্যক্রম শেষ হয়েছিল।
বিদায়ক্ষণে যেন যেতেই মন চাচ্ছিল না। খালি মনে হচ্ছিল যে বের হয়ে গেলেই সব শেষ। আর এ মুহুর্তগুলো ফিরে পাবো না। তবুও আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে যে যার গন্তব্যে চলে গিয়েছি। এখন হয়তো একসাথে করা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপটাতে মাসে একটি ম্যাসেজও হয় না। কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নোটিশও আসে না। সবাই তার স্বপ্নের পেছনে ছুটতে ব্যস্ত। হয়তো কয়েক বছর পরে কোন এক রিইউনিয়নে আবার সবাই একত্রিত হবো। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিবো। এটাই বোধহয় মানুষের জীবন। স্মৃতি আগলে বেঁচে থাকে মানুষ। ফেলে আসা সময় কখনও ফিরে আসে না।
প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন জানাই, আপনি জীবনের নতুন একটা ধাপ অতিক্রম করেছেন। আজ আপনার জীবনের অন্তত্য গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন। শেখার কোনো শেষ নেই। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শেষ হলেও প্রকৃত পক্ষে শিক্ষা জীবন শেষ হয় না। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার সুন্দর মুহুর্তগুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
প্রথমে আপনার জন্য শুভেচ্ছা জানাই জীবনের একটি বড় ধাপ পার হওয়ার জন্য। আসলেই মানুষের জীবনটাই বড় অদ্ভুত। দেখতে দেখতেই যেন দিনগুলো চলে যায়। যেমনটা আপনার ক্ষেত্রেও হয়েছে।
আপনি অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর আপনার বাবা না ফেরার দেশে গেছেন। বিষয়টি জেনে খারাপ লাগলো। পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় সংসারের চাপ আপনার ঘাড়ে এসে পড়েছে। তবুও আপনি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
একসঙ্গে কাটানো সব বন্ধুবান্ধব সবাই এখন বিভিন্ন কাজে আলাদা হয়ে যাবে। যদিও গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হয়েছে এদিক দিয়ে চিন্তা করলে খুব ভালো লাগে আবার শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটলো এদিক দিয়ে চিন্তা করলে আবার খারাপ লাগে।
আপনার গ্রাজুয়েশনের শেষ দিনটির কথা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ছবিগুলি আপনার স্মৃতির মণিকোঠায় সারা জীবন থেকে যাবে। আপনার বাবার অকাল প্রয়াণ আপনাকে আরো দায়িত্ববান করে তুলেছে। পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো।
TEAM 5
Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator08.গ্র্যাজুয়েশনের পাশাপাশি আপনার পরিশ্রম , পার্ট টাইম জব , সবই আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কারণ হবে। কারণ পরিশ্রম ছাড়া তো কোনো কিছুই প্রাপ্তি হয়না। খুবই ভালো ভাবে আপনি দিনটি শেয়ার করেছেন। আপনাকে অভিনন্দন । প্রাতিষ্ঠানিক শেষ হলেও পড়াশোনা বজায় রাখবেন। এটাই আশা রাখি। অনেক ভালো হোক আপনার।
একটা কথা রয়েছে যা শুরু আছে তা শেষও আছে আর তার গ্রাজুয়েট শেষের দিনটি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।। আর হ্যাঁ পরিস্থিতি অনেক সময় অনেক কিছু চাইলো করতে দেয় না যেমন আপনি চাকরি করেছেন চাইলেও বন্ধুদের সময় দিতে পারেনি।। আর হ্যাঁ পড়াশোনা অবস্থায় আপনার বাবা না ফেরার দেশে চলে গেছে শুনে খারাপ লাগলো।।
আপনার পরবর্তী জীবন আনন্দের ও সুখের হোক এই প্রার্থনাই করি ভাল থাকবেন।।