অন্যের ভালোর কারণ হতে না পারলেও, চেষ্টা করবেন ক্ষতির কারণ না হতে। Try to carry a pure soul- It's free.
আজকে ভেবেছিলাম কমিউনিটির চলমান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবো, কিন্তু সবসময় ভাবনার সাথে ইচ্ছের মিল হয় না।
কিছু ইচ্ছে পূর্তি না হবার পিছনেও আমাদের ভালই অনেক সময় লুকিয়ে থাকে বলেই হয়তো সৃষ্টিকর্তা আমাদের অনেক চাহিদা পূরণ করেন না!
আজকে আপনাদের সাথে একটি কাল্পনিক গল্পের মাধ্যমে নিজের উপরিউক্ত শীর্ষক এর যথার্থতা তুলে ধরবার প্রয়াস করবো।
আশাকরি আপনারা লেখাটি পড়ে, নিজেদের অভিমত প্রকাশ করবেন মন্তব্যের মাধ্যমে।
তাহলে গল্পটি শুরু করা যাক:- |
---|
একটি অফিসে দুজন সাংবাদিক কর্মরত ছিলেন।
যার মধ্যে একজন ছিল মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে নিজের কাজ করতো সততা এবং একাগ্রতার সাথে।
কারণ, বাড়িতে বৃদ্ধ পিতা মাতা আর অবিবাহিত বোন, যার গায়ের রং শ্যামলা, তাই বিয়ে দিতে পারছিল না।
পাত্রপক্ষ আসলেই মোটা অঙ্কের যৌতুক দাবি করতেন, যেটা দেওয়া তার পরিবারের পক্ষে একপ্রকার প্রায় দুঃসাধ্য কারণ উপার্জনের মাধ্যম কেবলমাত্র তাদের পুত্র সন্তান।
পিতা অবসর প্রাপ্ত আর মা সংসার কোনক্রমে চালিয়ে নিতেন।
ছেলেটির সাথে অপর সহকর্মী ছেলেটি ছিল ধূর্ত!
বন্ধুত্বের নাম করে নিজের সমস্ত কাজ করিয়ে নিতেন সহজ সরল ছেলেটিকে দিয়ে।
এরপর সেই কাজ নিজের নামে চালিয়ে পদোন্নতি পেয়ে যেত হামেশাই, সাথে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেই সহজ সরল ছেলেটিকে বলতেন কিছু শেখো তোমার বন্ধুর থেকে!
আসলে বাকপটু ছেলেটি অতি সহজেই মন জয় করে নিতে পারতো সকলের, কিন্তু মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেটি ছিল শান্ত প্রকৃতির।
যাইহোক, এইভাবে মাসের পর মাস চলতে থাকলো, এবং প্রতিদিন শান্ত স্বভাবের ছেলেটি সৃষ্টিকর্তার কাছে নালিশ জানতো এবং বলতো, তুমি তো আসল সত্যি জানো তাহলে কেনো ওই বন্ধুর সত্য সকলের সামনে এনে দিচ্ছ না?
এরপর একদিন বোনকে দেখতে এসে পাত্র পক্ষ অপমান করে চলে যাবার পরে, ছেলেটি নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি, এবং অফিসের উঁচু তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।
যেমনি ভাবনা তেমনি কাজ, পরদিন অফিস গিয়ে যখন নিজের বন্ধুকে ব্যঙ্গ এবং কটাক্ষপাত করতে দেখলো;
কারণ এখন থেকে তাকে তার নিচে কাজ করতে হবে!
অফিসের জানালা দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে ঝাঁপ দিয়ে ফেললো!
যখন চোখ খুললো দেখলো তার সামনে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা দাঁড়িয়ে।
পায়ের নিচে মেঘের ভেলার উপরে দাড়িয়ে থেকে বুঝলো সে আর বেঁচে নেই।
তখনও সৃষ্টিকর্তার প্রতি অভিযোগ করলো কেনো সৃষ্টিকর্তা তাকে রক্ষা করলেন না!
তার মনে হলো অসহায় বাবার কথা, মায়ের কথা এবং অবিবাহিত বোনের কথাও!
এবার, ছেলেটির নিজের সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস হতে শুরু করলো।
এমন সময় সৃষ্টিকর্তা এসে হাজির হলো ছেলেটির সামনে, তাঁকে দেখে ছেলেটি প্রশ্ন করলো প্রতিদিন তোমার কাছে কতকিছুই চাই, কোথায় তখন তো সেগুলো পূর্ণ কর না? আজকে আমি একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম তুমি সেটা পূর্ণ করে দিলে!
চাইলে আমার মনের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন ঘটাতেও তো পারতে?
তুমি মুখ বুজে তোমার বন্ধুর মিথ্যাকে সমর্থন করে গেছো!
তুমি নিজের সততা, নিষ্ঠা এবং পরিশ্রমের কথা কখনো কাউকে জানাবার প্রয়োজন বোধ করনি!
তোমার বোনের ত্বকের রঙের কারণে যখন পাত্র পক্ষ তাকে অপমান করে চলে যাচ্ছিল, তুমি প্রতিবাদের পরিবর্তে, তাকে বিয়ে দেবার জন্য অধিক অর্থ নিজের সাধ্যের বিপরীতে গিয়ে জমা করবার প্রয়াস করছিলে! তোমার বোনের যোগ্যতাকে সম্মান না করে বিপরীত পথ অবলম্বন করেছ।
এমনকি জীবনের সাথে লড়াই করবার পরিবর্তে তুমি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছ, সেটাও তোমার সিদ্ধান্ত তাহলে আমাকে দোষারোপ করছো কেনো?
সৃষ্টিকর্তা আরো বললেন আমি যদি সকলের ইচ্ছে পূরণ করি তাহলে পৃথিবীর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে।
মানুষ পরিশ্রমের অর্থ ভুলে যাবে।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে সকলেই নিজের আত্ম স্বার্থ চরিতার্থ করবে, যদিও তার পরিণতির জন্য তারাই দায়ী থাকবে.
দেখো তোমার সেই কপট বন্ধু যে তোমার কাজকে নিজের বলে প্রতিদিন চালিয়ে যেত, আজকে তোমার অনুপস্থিতির ফলে সেই সুযোগ পাচ্ছে না!
কাজেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও তার দৌরাত্ম বুঝে গিয়ে তাকে অফিস থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছে, এবং সকলেই এখন তোমার সততা এবং পরিশ্রমের মূল্য উপলব্ধি করতে পারছেন।
কারণ, তোমার সাথে কাজ করতো একটি মেয়ে যে মনে মনে তোমাকে ভালোবাসতো, সে সব সত্যি তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে।
কাজেই, জানবে কেউ কারোর ক্ষতি করে বেশিদূর যেতে পারে না, সত্যি হয় নিজেকে বলতে শিখতে হয়, নয়তো সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে হয়, ধৈর্য্য সহকারে। কারণ সত্যি কোনোদিন লুকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।
ছেলেটি নিজের ভুল বুঝতে পারলো, এবং অন্তর্যামী তার মনের কথা বুঝতে পেরে দেখলেন তার শরীর এখনো চিকিৎসারত এবং প্রতিদিন সৃষ্টিকর্তাকে নিজের রাগের কারণ হিসেবে স্মরণ করলেও সে, তাঁকে স্মরণ করতে কোনোদিন ভোলেন নি, তাই ছেলেটিকে সঠিক শিক্ষার সাথে জীবনদান দিয়ে সৃষ্টিকর্তা মেঘের মধ্যে বিলীন হয়ে যান।
এরপর ছেলেটি চোখ খুলে দেখে সে হাসপাতালের বিছানায় শয্যারত এবং তার পরিবারের মানুষেরা তাকে ঘিরে দাড়িয়ে।
সময়ের সাথে সুস্থ্য হয়ে উঠলে অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে সাদরে গ্রহণ করেন এবং ক্ষমা চেয়ে নেন তাদের ব্যবহারের জন্য।
কারোর ক্ষতি করলে, নিজের তার চাইতে অধিক ক্ষতি হয়, এটি অপরিবর্তিত সত্য।
অবশেষে বলতে চাই অন্যের ক্ষতিতে আজকে জয়লাভের আনন্দে মেতে লাভ নেই;
প্রত্যেকের হিসেবের অঙ্কের খাতা একদিন মিলিয়ে দেবেন সৃষ্টিকর্তা সুদ সমেত।
আজকে এই পর্যন্তই, গল্পটি থেকে কে কি শিখলেন জানাবেন নিজেদের মতো করে এই আশা নিয়ে বিদায় নিলাম।
আসলে চুপ থাকা মানুষগুলো হয়তোবা কিছু বলতে পারেনা। কিন্তু সত্যিটা কখনো চাপা থাকে না। একটা সময় না একটা সময় সেটা বের হয়ে আসে। সৃষ্টিকর্তা সবকিছুই ফিরিয়ে দেয়, শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।
অন্যের ক্ষতি করে অল্প সময়ের জন্য খুশি হওয়ার চাইতে। অন্যের ক্ষতি না করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আপনার গল্পটা পড়ে বাস্তবতা মনে হচ্ছিল চোখের সামনে ভাসতে শুরু করেছে। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা গল্প আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য।ভালো থাকবেন।
TEAM 1
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator04. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.Thank you @𝖾𝗅-𝗇𝖺𝗂𝗅𝗎𝗅 for this encouraging support 🙏
আপনার পোস্টটি পড়ে বুঝলাম এবং হাড়ে হাড়ে বুঝলাম।
আমি ওই ছেলেটিরই মতো। আমি বিশ্বাস করি, Time will tell.
আমার খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে একজনের জন্য কমিউনিটির কনটেস্টে আপনার পোস্টের থেকে আমরা সবাই বঞ্চিত হলাম।