প্রয়োজন শুধু একটু ভালো ভাবে চিন্তা করার। Transgender।

in Incredible India7 months ago (edited)

pixabay

আগে আমি যে বাসায় ছিলাম সেই বাসায় আমাদের নিচতলাতে একটা পরিবার থাকতো। বড় ছেলেটা আমার বড় ছেলের থেকে বেশ কয়েক বছরের বড়ো আর আর মেয়েটা আমার ছোট ছেলের থেকে বছরখানেক বা আরেকটু ছোট হতে পারে। ওর মা স্টান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংকে জব করতেন।
বাবাও কোন একটা ব্যাংকে ছিলেন। আমার সাথে খুব একটা ক্লোজ ছিলোনা কখনো সিড়িতে বা রাস্তায় দেখা হলে হাই, হ্যালো পর্যন্তই ছিল।

মেয়েটা অসম্ভব রকমের দুষ্ট প্রকৃতির ছিলো। কখনো কখনো দেখতাম বের হয়ে আসতো আর পেছনে পেছনে কাজের মানুষ ছুটে আসতো।
ও কয়েকবার আমার বাসায়ও ঢুকে পরেছে রুমে ঢুকেই ভেতর থেকে রুম লক করে দিতো। তারপর যা কাজকর্ম করার সেগুলো করতো। বিষয়টা আমার কাছে নরমালই লাগতো কারন কোন কোন বাচচা একটু বেশিই দুষ্ট হয়।আমার ছোটছেলেও তাই ছিল।
বরং পেছনে পেছনে কাজের মানুষের দৌড়াদৌড়িই কিছুটা অস্বাভাবিক লেগেছে আমার কাছে।

pixabay

এরই মাঝে আমি আরও একটা জিনিস খেয়াল করি যে, ওর মা কোথাও গেলে শুধু ছেলেকেই নিয়ে যায়। আমার পাশের বাসার ভাবির সাথে ওই বাড়ির প্রধান কাজের খালার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে দুজনে একই এলাকার হবার কারনে ।

তখন ওই ভাবির কাছ থেকে জানতে পারি যে, ওই মেয়ে জন্মের পর থেকেই এই কাজের খালার কাছেই বড় হয়েছে। ওর মা দেশের বাইরে বেড়াতে গেলেও এই খালার কাছেই রেখে যায়।ছোট থেকে খালার কাছেই ঘুমায়। এর মাঝে আমার পাশের বাড়ির ভাবির সাথে ওর মায়ের সাথে কিছুটা সম্পর্ক গড়ে উঠে ।
তখন থেকে ওর মা বাসায় থাকাকালীন সময়ে মাঝে মাঝে খেলতে নিয়ে আসতো আমাদের ফ্লোরে। পাশের বাসার মেয়ে, আমার দুই ছেলে আর ওই মেয়ে খেলতো।

এর মাঝে একদিন বড় ছেলেকে স্কুল থেকে বাসায় নিয়ে আসার পরে শুনলাম যে, সব বাচচারা প্যান্ট খুলে টয়লেট যাওয়া খেলেছিলে সেটা কোনভাবে ওর মা জেনে ভাবির বাসায় এসে অনেক কথা শুনিয়ে গেছে। এই নিয়ে ভাবির মন অনেক খারাপ ।এর পর থেকে আর ওকে আসতে দিত না।
কয়েকবছর পরে ওকে নিয়ে ওর মা বেশ অনেক দিনের জন্য দেশের বাইরে চলে যায়।

pixabay

তখন সেই খালা এসে ভাবিকে জানায় যে, সেদিন ওর মায়ের রাগের কারন। ও ছিলো তৃতীয় লিঙ্গের বাচচা।এটা নিয়ে ওর মা এক ধরনের সিকিউরিটির অভাবে ভুগতো। আর ওর সাথে এরকম ব্যবহার করতো।
আর ওকে নিয়ে থাইল্যান্ড গিয়েছিল ওকে সত্যিকারের মেয়ে বানানোর জন্য। নয় বছরের আগে ওর এধরনের সার্জারী সম্ভব ছিলো না। ওকে নিয়ে আমার এতো কথা লেখার কারন একটাই। ইদানীং ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা নিয়ে প্রচুর পরিমানে আলোচনা সমালোচনা চোখে পরছে।

আপনি যদি গুগল করেন তাহলে দেখবেন লেখা আসবে ,

রূপান্তরিত লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার হল সেসব ব্যক্তি যাদের মানসিক লিঙ্গবোধ জন্মগত লিঙ্গ চিহ্ন হতে ভিন্ন। রূপান্তরিত লিঙ্গের ব্যক্তিবর্গ যদি তাদের লিঙ্গ পরিবর্তন করতে ডাক্তারি সাহায্য কামনা করে তবে তাদেরকে অনেকসময় রূপান্তরকামী নামে ডাকা হয়।

আমার পাশের বাড়ির সেই বাচ্চাও কিন্তু একধরণের ট্রান্সজেন্ডারই।ও যদি হিজরা থেকে একটা মেয়ে হিসেবে জীবন যাপন করতে পারে তাহলে সমস্যা কোথায়।
পরিচিত এক ভাইকে দেখেছি সারাজীবন লিপস্টিক লাগাতে আর ওরনা পরতে কারন সে মনের দিক থেকে মেয়ে।কখনো বিয়েও করে নাই।
সে যদি নিজেকে পুরোপুরি মেয়ে হিসেবে গড়ে স্বাভাবিক জীবন পালন করতো তাহলেতো কোন সমস্যা দেখি না।বরং এখন একা লিপস্টিক লাগিয়ে ঘুরে এটাই অস্বাভাবিক।

বেশ কিছু বছর আগে এরকম কয়েকজনের লেখা পড়েছিলাম, তাদের লেখায় দেখছিলাম যে তারা কতটা মানসিক যন্ত্রনার মাঝে থাকে। শরীর এক কিন্তু মন আরেক।
প্রকৃতিতে সবাই স্বাভাবিক হিসেবে জন্ম নেয় না।বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে যদি সেটাকে স্বাভাবিক করা যায় তাহলে সেটাই করা উচিত।
অনেকই ধর্মকে টেনে আনবেন সেটাও জানি।মধ্যযুগের পরে যখন বিজ্ঞানের স্বর্নযুগ শুরু হলো তখন চার্চ বিজ্ঞানিদের শ্যাটানিক হিসেবে আখ্যা দেয়।মানে শয়তানের সহচর।
কিন্তু সেটা আজকে চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখন কেউ বিজ্ঞান নিয়ে এ ধরনের কথা বলে না। সেটা চার্চই হোক কিংবা অন্য কেউ।

pixabay

বেশিদিন আগের কথা না,আমার বাবা বৈরুত এর আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছিলেন যার কারনে ওই ব্যাচের সবাইকে সৌদি আরবের সরকার ফ্রিতে ওমরা করার সুযোগ দিয়েছিলো কারন তারা আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলো।
এটা করে সৌদি সরকার ভেবেছিলো তাদের জন্য একটা ভালো কাজ করেছিল। বাবা যখন ওমরা করতে সৌদি আরবে যান তখন টিভি ছিলে না। কারণ টিভি দেখা জায়েজ কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা চলতেছিল।
সবকিছুই সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল।একদিন হয়তোবা এই ট্র্যান্সজেন্ডারদের নিয়েও আর কোন বিতর্ক হবে না।কিন্তু এখন আমরা তাদের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলছি।



Thank You So Much For Reading My Blog
Sort:  
 7 months ago 

চমৎকার একটি প্রসঙ্গ আজকে এনেছেন আপনি। বেশ কিছুদিন ধরে সামাজিক মাধ্যম ও সব জায়গাতেই এই ট্রান্সজেন্ডারের চর্চা চলছে। হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার যে এক বিষয় নয় এটা অনেক মানুষই জানে না। এরমধ্যে কোনটি সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত আর কোনটি মানুষের মনের কারসাজি এটা এখন কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। আমাদের উচিত হিজড়াদেরকে তার প্রাপ্য সম্মান দেয়া। এবং এ দুটি নিয়ে বিষয় নিয়ে যে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে নিজের অবস্থানকে পরিষ্কার করা। খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে।

 7 months ago 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এত বেশি আলোচনা হচ্ছে যে বিরক্তিকর লাগতেছে।সমকামিতার সাথে ট্র্যান্সজেন্ডার গুলিয়ে ফেলেছে বেশির ভাগ মানুষই।
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Loading...
 7 months ago 

আপনি অত্যন্ত সুন্দর একটি পোস্ট নিয়ে আমাদের মাঝে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। যদিও এই বিষয়ে সম্পর্কে আমার আগে বিগত দিনে তেমন একটা অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু আপনার পোস্ট পড়ে আজকে মোটামুটি হলে অভিজ্ঞতা নিতে পেরেছি। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 7 months ago 

ট্র্যান্সজেন্ডার নিয়ে আমাদের জানার ঘাটতি আছে অনেক এরই। কিন্তু ভালোভাবে না জেনে মতামত জাহির করি আমরা বেশিরভাগ সময়ই।
চমৎকার করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 58495.14
ETH 2461.74
USDT 1.00
SBD 2.36