Journal of 18th July। ভয়াবহ এক দিন।
কোন নাম না জানা ফটোগ্রাফারের তোলা ছবি |
---|
মনটা ভালো নেই, সারাদিনই এত ঘটনা দেখতে ও শুনতে হয়েছে যে নিজেকে এখন অসুস্থ মনে হচ্ছে। বিকেলে ছেলের কথায় ছাদে এসেছি। ছাদে বসেই লেখার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু মনোযোগ দিতে পারছি না কোন মতেই। এখানে এসে আরো খারাপ দৃশ্য দেখতে হলো।
নিচ থেকে শুধু এক জায়গায় ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিলো কিন্তু উপরে এসে আরও একজায়গাতে দেখা যাচ্ছে। অবশ্য ক্যামেরাতে ঠিকমতো আসতেছে না।মাঝে মাঝেই বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে।
টেনশন লাগছে এটা ভেবেও যে, আমার হাসবেন্ড কিভাবে বাসায় আসবে ব্যাং ক থেকে।গতকাল ছেলেমেয়েরা পুরো দেশে শাটডাওন দিয়েছে শুধুমাত্র হসপিটাল এর মতো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে।কিন্তু ব্যাংকেতো যেতেই হবে।
গতকালই দুই ছেলে আজকে অন্য ছাত্রছাত্রীদের সাথে বের হতে চেয়েছে। ওদেরকে মানা করতে গিয়ে নিজের চোখে নিজের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়েছি।আমি সবসময়ই একটা জিনিস বিশ্বাস করি আর সেটা হলো, অন্য মানুষের কাছ থেকে পাওয়া শ্রদ্ধার থেকে আমি নিজেকে কতটা শ্রদ্ধা করি সেটা !
ধোয়ার ভেতর দিয়ে ট্রেন চলে যাওয়ার এই দৃশ্যটা কোন সিনেমার দৃশ্য মনে হলেও এটা বাস্তব ।(সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেওয়া ) |
---|
তাই বড় ছেলেকে বললাম যে, দেখো তোমার ক্যাম্পাস বসুন্ধরায় যা আমার কাছ থেকে অনেক দূরে।আল্লাহ না করুক তোমায় যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে আমিতো এই রকম পরিস্থিতিতে এতদূরে তোমার কাছে পৌঁছাতেও পারবো না।
কয়েকমাস আগেই তুমি তোমার স্কুল ছেড়েছো তাই আমি চাই তোমরা যদি যাও-ও তাহলে স্কুলগুলির ছাত্রছাত্রীদের সাথে যেও কারন প্রতিবাদ করা দিয়ে কথা, সেটা যেখান থেকেই করো না কেন। গতরাতে ৩টার দিক দিয়ে ঘুমিয়েছি কারন গতরাতেও গুলির শব্দ পেয়েছি যার কারনে ঘুমাতে লেট হয়েছে। সকালে আমি উঠে গেলেও ওরা উঠতে পারে নাই,কিছুটা লেট করেই উঠেছে।
আমাকে বলে রেখেছে আমরা যাবো। আমি নির্শ্চিত ছিলাম যে, ধানমন্ডিতে ছাত্রদের গায়ে কেউ হাত দিবে না। কিন্তু ওদের ঘুম থেকে উঠতে সামান্য লেট হওয়ার কারনে বের হতেও লেট হয়েছে। ওদের বের হওয়ার আগ মূহুর্তে বড় ছেলের উত্তেজিত কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম যে, আম্মু ওরা ২৭ নাম্বারে এ্যটাক করেছে। রাপা প্লাজার সামনে প্রচুর মারধর করছে। ওইদিকেই ওদের যাওয়ার কথা ছিলো ।
এমন সময় ভাই কল দিয়ে জানতে চাইলো, ওরা কই? ওদের বের হতে দিস না।এরপর বললো যে, আমি বের হয়ে সামনে এগুতে চেষ্টা করছিলাম কিন্তু দেখলাম যেতে পারি নাই, দাঁড়িয়ে আছি 'প্লাজা এ আর' সামনে । যাকে পাচ্ছে তাকেই পিটাচ্ছে, গুলি করতেছে আর টিয়ারসেল মারতেছে।আমার ভাইয়ের বাসা ২৭ নাম্বারের দুই গলি আগে।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেওয়া |
---|
সারাদিনই বিভিন্ন ধরনের খবর ও ছবি দেখেছি আমার ছেলের গ্রুপের কল্যানে। কিন্তু এই রক্তাক্ত ছবিগুলো দেখে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছি। ওর বন্ধুরা, বন্ধুর বন্ধুরা মারা গুলি খাচ্ছে মারা যাচ্ছে।
প্রাইভেট এর ছেলেমেয়েদেই আজকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি। ওদেরকে অনেকেই ফার্মের মুরগী বলে থাকে ব্যঙ্গ করে।
এরা হয়তো সরকারি চাকরিও করবে না কিন্তু ওরা এগিয়ে এসেছে আজকে সবার পক্ষে বুক চিতিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
আমার দুই চোখ দিয়ে পানি পরছে।এখানে আমার ছেলেরও আজকে থাকার কথা ছিলো ।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া |
---|
উপরের এই ছেলেটা আমার ছেলের বন্ধুর বন্ধু। যার মা যা লিখেছে সেটা অনেকটা এই রকম যে, এটা আমার ফাইয়াজ।ও এখন আর নেই।ওর মৃত্যুর বিচার চাই। ও রেসিডেন্সিয়ালের ছাএ ছিল। পরে ছেলে এসে বললো যে, আমার বন্ধুর বন্ধু।
দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের কথা ছড়িয়ে পরছে। যেগুলোর পক্ষে যায় এমন কিছু জিনিসও দেখতে পাচ্ছি কিন্তু এগুলো আসলেই সত্যি কিনা এখনো জানি না।
ছাদে বসে একটু পর পর বিকট শব্দ পাচ্ছি।সন্ধ্যার দিক থেকে পর্শ্চিম দিক থেকেও ধোয়া দেখতে পেলাম যেটা ক্রমশ আরো ছড়িয়ে পরতেছিলো। সন্ধ্যার পর পর একদম আমাদের মাথার উপর দিয়ে আর্মিদের একটা পতাকা লাগানো হেলিকপ্টার যেতে দেখলাম। বুঝতে পারলাম না কেন আজকে হেলিকপ্টারে পতাকা লাগানো।
সাদা মেঘের মতো জিনিসগুলো ধোঁয়া |
---|
একটু পর পরই খুব নিচু দিয়ে দিয়ে হেলিকপ্টার খুব আস্তে আস্তে উড়ে যাচ্ছে, রাতে এটা আরো বেড়ে গেল ।
রাতে ছেলেদের কাছে শুনতে পেলাম যে, বনানীর বিভিন্ন বিল্ডিং এ ঢুকে গুলি করতেছে আর আগুন লাগাচ্ছে।
রাত দশটার খানিকক্ষণ পরে ভাই ফোন দিয়ে জানালো যে, আমাদের গোলাপবাগ বাড়ির কেয়ারটেকার ফোন করে জানিয়েছে যে, বাড়ির সাথেই লাগানো ২০ তলা বিল্ডিং এ ঢুকে গুলি করতেছে।
আরো একটু পরে শোনলাম যে, ওই এলাকার পাবলিক পুলিশ ব্যারাকে আক্রমণ করেছে আর পুলিশ ছাদে উঠে গুলি করতেছে। কোথাও কোন খবর নেই, ওয়াইফাই চালু ছিলো সারাদিন যদিও স্পিড কম ছিলো কিন্তু রাতে পুরোপুরিই বন্ধ করে দিয়েছে। চারিদিক থমথমে, কোথাও কোন খবর নেই। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।কোথায় যাচ্ছে আমার দেশ।
ট্রেন চলাচল করেছে ধোয়ার ভিতর দিয়ে এটি একটি সিনেমার দৃশ্যর মতই। কিন্তু এই ঘটনাটা খুবই মর্মান্তিক একটি ঘটনা। এছাড়াও পুলিশ এবং যাদের ভিতরে যে ঘটনা ঘটেছে এটা অবশ্যই নিন্দনীয়। তবে এগুলো থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সুন্দর পোস্ট করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি পরবর্তীতে আরো সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করবেন।