বিলুপ্তির পথে একসময়ের সমৃদ্ধ তামা ও কাসা শিল্প।

in Incredible Indialast year
ছোট বেলাতে প্রায়ই দেখতাম ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যেত পুরো এলাকা।সাথে অদ্ভুত একটা গন্ধ আসতো।ছোট থেকেই সেই গন্ধটার সাথে পরিচিত ছিলাম তাই খুব একটা খারাপ লাগতো না।বাসায় অন্য জায়গা থেকে নতুন কেউ বেড়াতে আসলে তাকে বুঝিয়ে বলতে হতো এই ধোঁয়া আর গন্ধের উৎসের কথা।

শুধু যে এই ধোঁয়া আর গন্ধই ছিলো এমনটা না।আশেপাশের বেশিরভাগ বাড়িতে গেলেই দেখা যেত লাল মাটি কিংবা হলুদ মাটির স্তুপ। এই মাটি কিনতে হতো তাদের। এই মাটি দিয়ে মুষ নামেী এক ধরনের জিনিস বানাতো তারা। এর ভালো নাম কি সেটা আমি জানি না। তবে আমাদের এলাকাতে এই নামেই পরিচিত ছিলো।যা একসময় আমি নিজেও বানানোর অনেক চেষ্টা করছি আশেপাশের বাড়িতে যেয়ে।এই মুষের ভেতরে করে কাসা পেতল মুঠ নামের বিশাল বিশাল মাটির চুলার ভেতরে ঢুকিয়ে দিতো।আর এই কাসা পেতলের গন্ধ৷ আর ধোঁয়াই ছড়িয়ে পরতো আশেপাশে যা আমি শুরুতেই উল্লেখ করেছি।


pixabay

আমার গ্রামের বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই নামক জায়গাতে যা একসময় তামা ও কাসা শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিলো।শুধু যে তামা আর কাসা শিল্পের জন্যেই বিখ্যাত ছিলো এমনটা না।এখানে একসময় উৎকৃষ্ট মসলিন তৈরি হতো।সাথে মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের জিনিস পত্রও তৈরি হতো।মসলিন এখন আর নেই তবে কাসা -তামা আর মৃৎশিল্প এখনো রয়ে গেছে। যদিও তাদের সেই স্বর্নযুগ আর নেই। বাংলাদেশের স্বাধীতার পূর্বে ধামরাই সদরেই লোটা, ঘটি, হাড়ি-পাতিল, থালা,গ্লাস, বদনা ও বিভিন্ন শো-পিচ, দেবদেবী ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি জিনিসপত্র তৈরির জন্য এই এলাকায় প্রায় চল্লিশটির ওপরে কারখানা ছিল। বর্তমানে এই কারখানা সংখ্যা ৪/৫টি। এটা যে শুধুমাএ ধামারাই চিএ এমন না। পুরো দেশের তামা -কাসা শিল্পের একই অবস্থা। কাসা শিল্পের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে মুঘল আমলে এই শিল্প থেকে তৈরি জিনিসপত্র জনপ্রিয়তা অর্জন করে।এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে এইসব ধাতু দিয়ে তখন বন্দুক, কামানোও বানানো হয়েছে।


pixabay

একসময় কাঁসার থালা, বাটিই ছিল দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ বাংলার প্রাচীনতম শিল্পের মধ্যে কাঁসা শিল্প একটি। তবে বর্তমানে স্টিল, মেলামাইন, অ্যালুমিনিয়ামের সঙ্গে পাল্লা দিতে এ শিল্প ক্রমেই বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে।।
অথচ আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, কাঁসা ধাতু খাদ্যকে পরিশুদ্ধ করে। কাঁসার বাসনে খাওয়া-দাওয়া করলে মানুষের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া সহ স্ট্রেস থেকে মুক্তি, শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবাণুনাশক ক্ষমতা থাকায় শরীর সুস্থ থাকে, বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পায়, মস্তিষ্ককে সজাগ এবং সতর্ক করে তোলে।


pixabay

যুগ যুগ ধরে ব্যবহার্য ঐতিহ্যবাহী কাঁসা-পিতলের তৈরি তৈজসপত্র আজকাল আর দেখাই যায় না।ক্রমেই বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাচ্ছে।এই পেশার সাথে জড়িত মানুষজন ক্রেতার অভাবে তাদের পূর্ব পুরুষদের পেশা ত্যাগ করে নতুন পেশার সাথে যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন।অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধ করছে এই শিল্প ও এর সাথে জড়িত ব্যাক্তিরা।অথচ এই পেশায় যুক্ত থেকেই যুগের পর যুগ তারা সংসার চালিয়েছেন ভালোভাবে।


pixabay

এই শিল্পটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাচাতে কাচামালের সহজলভ্যতাসহ বিভিন্ন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে।সাথে সরকারকেও উদ্যোগী হতে হতে যাতে করে একসময় এর এই সমৃদ্ধ শিল্পটি হারিয়ে না যায়।



Thank You So Much For Reading My Blog
Sort:  
 last year 

আধুনিক এই যুগে প্লাস্টিকের ব্যবহার অতিমাত্রায় বাড়ার কারণে কিছু কিছু জিনিস বিলুপ্ত হতে চলেছে যেমন তামা ও কাঁসার জিনিসগুলো আগে প্রতিটা বাড়িতেই ব্যবহার হতো কিন্তু এখন এটা শুধু স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে কোন বাড়িতেই তামা ও কাসার জিনিস পাওয়া যায় না। কত বাহারি রঙ্গে ডিজাইন ছিল দেখতে কতই না সুন্দর লাগতো জিনিসগুলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পুরোনো স্মৃতি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য।

 last year 

@mdsahin111(58)
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে আপনার মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন এই শুভকামনা রইলো

Loading...

আমার ছোট বেলায় আমার দাদির ঘরে তাকের উপরে এই কাসা পিতলের কলসি,জগ, গ্লাস সাজানো ছিলো। পিতলের খুন্তি, চামচ ব্যবহার করতে দেখেছি। আগের দিনে কোনো অনুষ্ঠানে উপহার দেয়া হতো এই কাসা পিতলের তৈজসপত্র। এখন এইসব হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিকতার আধুনিকি করনের ফাঁদে পরে।
আপনার পোস্ট টি পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

 last year 

@rashidaakter(56)
আপনার মন্তব্য এর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো আর সুস্থ থাকবেন সবসময়।

আধুনিক যুগের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে পুরাতন সব জিনিসপত্র। যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয় আশা তামা ও কাঁসার জিনিসপত্র আজ তার বিলুপ্তর কথা। মনের অজান্তে সত্যি ভুলেই গেছিলাম তামা ও কাঁসার জিনিসপত্রের কথা। আপনার পোস্ট পড়ার মাধ্যমে আবার মনে পড়ে গেল এসব জিনিস গুলোর কথা। এত সুন্দর একটা জিনিস শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 last year 

@oishymaria(62)
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে মন্তব্য করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন এই শুভকামনা রইলো

 last year 

আধুনিক যুগে এগুলোর প্রচলন অনেক ছিল ৷ কিন্তু আস্তে আস্তে এগুলোর এত যে দাম বাড়ছে যা মানুষের নেওয়ার সাধ্যের বাইরে চলে গেছে ৷ তবুও আমাদের সনাতন ধর্মের মানুষেরা বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে তারপর অন্নপ্রাশনে এই কাসার শিল্প গুলো প্রয়োজন পরে থাকে ৷

বর্তমান সমাজে অনেক মানুষ আছে এই ধরনের কাসার শিল্প গুলো ক্রয় করতে পারে না ৷ তাছাড়াও এই কাসার শিল্প গুলো আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

 last year 

@yoyopk
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর ভাবে আপনার মন্তব্য করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন এই শুভকামনা রইলো

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56159.14
ETH 2370.54
USDT 1.00
SBD 2.30