Better Life With Steem | The Diary game ,February 15, 2025।বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গ্রামের বাড়িতে যাত্রা। -2
গত পর্বেই লিখেছিলাম যে ,আমরা বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার হাসবেন্ডের কাজিন তার বিক্রমপুরের বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানায়। তার এই প্রস্তাবে আমার স্বামী রাজি হয়ে যায় এবং তাকে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে বলে যাতে করে আমরা বৌভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ফেরত আসতে পারি ।
বিক্রমপুর আমার আগে কখনো ঐভাবে যাওয়া হয় নাই। অবশ্য বিক্রমপুরের উপর দিয়ে যাওয়া রাস্তা ব্যবহার করেছি অনেকবারই। এই এলাকাতে আমার শশুড়বাড়ির দিকের অনেক আত্মীয়ের বাড়ি হলেও তারা এখন আর কেউ এই এলাকাতে বাস করে না। তারা প্রায় সবাই ঢাকাতেই থাকে।
আমার ননদকে অপেক্ষা করতে বলে আমরা চলে যায় আমার খালা শাশুড়ির বাড়িতে।খালা শাশুড়ির বাড়ির পাশেই দেখলাম কাপড় বানানোর প্রস্তুতি চলছে। মেশিনের পাশাপাশি হাতেও কাপড় তৈরি হয় এই এলাকাতে। যদিও এখন কমে গেছে এই হাতে বোনা কাপড় তৈরি।
খালা শাশুড়ির নাতির বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজকে। আমার খালা শাশুড়ি কয়েকমাস আগেই মারা গেছেন। আমার হাসবেন্ড ও তার ভাই-বোনরা আমার এই খালা শাশুড়ি ও তার মায়ের হাতেই মানুষ হয়েছে বলা যায়।
অসম্ভব রকমের আদর করতেন আমাদেরকে। তার সাথে দেখা করার পরে তার কাছ থেকে বিদায় নেয়াটা অনেক কঠিন একটা কাজ ছিল। যতদিন পর্যন্ত হাটতে পারতেন ততদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়ির বাইরে এসে যতক্ষণ দেখা যায় ততক্ষন রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।
এই জেনারেশনটা এখন প্রায় শেষের দিকে। এই জেনারেশনের মতো করে আর কেউ এমনভাবে হয়তো আর ভালোবাসতে পারবো না।আজকে তার নাতির বিয়েতে এসে তাকে মিস করতেছিলাম খুব।
গ্রামের কোনো অনুষ্ঠানে আসলে আমার কাছে ভালোই লাগে কারণ অনেক দিন দেখা না হওয়া কিছু মানুষের সাথে দেখা হয় ,কথা হয়। সাথে সাথে আবার আমার খালা শাশুড়ির মতো কয়েকজনের অভাববোধ করতেছিলাম যাদের আজকের এই বৌভাতের অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিল।
প্রচুর মানুষ হয়েছিল আজকে এই বৌভাতে যার কারণে আমি আর আমার ছেলে খুব বেশি সময় বিয়ে বাড়িতে থাকি নাই। মানুষ ছাড়াও বেশি সময় না থাকার পেছনে আরেকটা কারণ ছিল। আর সেটা হলো আমার শশুরের পুরোনো বাড়িটা ভেঙে ফেলা হচ্ছে সেখানে নতুন করে বিল্ডিং তোলার জন্য। আমার খালা শাশুড়ির বাড়ি আমার শশুর বাড়ির পাশেই অবস্থিত তাই দ্রুতই চলে আসতে পারলাম বাড়িতে।
বাড়িতে ঢুকে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। পুরোনো কাঠের দোতলা ঘরটা ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেখানে ভাঙা ইট ও অব্যাবহৃত কয়েকটা পুরোনো ফার্নিচার পরে আছে।
ছেলেরও দেখলাম মন খারাপ। ওকে সান্তনা দিয়ে বললাম যে ,এটাই পৃথিবীর নিয়ম। পুরোনোকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে হবে আর সবাই তাই-ই যায়। কিছুটা সময় সেখানে কাটিয়ে আমরা বিক্রমপুরের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পরলাম।
মেঘুলা বাজার পেরিয়ে নারিশা আসার পরে রাস্তার একদম গা ঘেঁষেই পদ্মা নদী বয়ে গেছে। আমরা মিনিট পাঁচেকের জন্য সেখানে নামলাম।সূর্যের কারণে নদীর দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না। আমার ননদের বর জানালো আর কিছুক্ষনের মাঝেই এই এলাকাতে লোকজন এসে ভরে যাবে।
এরপর আবারো যাত্রা শুরু করলাম। কিছুক্ষনের মাঝেই সরু এক চমৎকার পিচ্ ঢালা রাস্তায় এসে পৌছালাম। রাস্তা ক্রমশ আরও সরু হতে থাকলো। কোনোরকমে গাড়ি সামনে এগুতে পারে এমন এক রাস্তা ধরে ননদের বাড়ির পাশে এক মাঠের পাশে পৌছালাম সূর্য ডোবার আগে দিয়ে কিছুক্ষন আগে।
শুনলাম আগে এই এলাকার একমাত্র বাহন ছিল নৌকা। মানুষ এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে নৌকাতেই চলাচল করতো। এই এলাকার বেশিরভাগ বাড়িই কাঠের খুঁটির উপরে একতলা কিংবা দোতলা কাঠের ঘর। ইদানিং অবশ্য ডুপ্লেক্স /ট্রিপ্লেক্স সবই হয়ে গেছে। চমৎকার এক নিরিবিলি গ্রাম। বিক্রমপুরের মানুষের আতিথিয়তার প্রশংসা আগে থেকেই জানতাম তারপরও আবারো মুগ্ধ হলাম তাদের ব্যাবহারে। আমরা ৮টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হলাম।
আমাদের প্ল্যান ছিল ননদকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসবো। কিন্তু ননদ তার বাড়িতে আগেই বলে রেখেছে যে আমরা তার বাড়িতে রাতে খাবো। যার কারণে তার বাড়িতে রাতের খাবার রান্নাও করতে বলে দিয়েছে।
আমাদের কোনো চাপাচাপিতেই কাজ হলো না। জোর ওরে তার বাসায় নিয়ে গেলো। যেয়ে দেখি রাতের খাবারের বিশাল আয়োজন। সেখান থেকে খেয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে আমাদের প্রায় রাত একটার মতো বেজে গেলো।
Camera | iPhone 14 |
---|---|
Photographer | @sayeedasultana |
Location | Dhaka,Bangladesh |
আপনারা আবারো গ্রামের মধ্যে গিয়েছেন বৌভাতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্য আসলে গ্রামের বিয়েতে মানুষ বেশি হয় এবং সবাই মিলে অনেক বেশি আনন্দ করে যেটা আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে অতিরিক্ত মানুষ থাকার কারণে আপনি এবং আপনার ছেলে সেখান থেকে খুব দ্রুত চলে এসেছেন।
দ্রুত চলে আসার পেছনে একটা কারণ ছিল যেটা আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন বর্তমান সময়ে পুরনো জিনিস এখন আর কেউ কদর করে না কাঠ দিয়ে তৈরি করা দোতলা বাড়ি আপনারা ভেঙ্গে ফেলছেন নতুন করে বিল্ডিং তৈরি করার জন্য পুরনো মানুষ এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছে নতুন মানুষ এই পৃথিবীতে আছে তাই তারা নতুন করে এসব কিছু সাজানোর চেষ্টা করছে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে একটা দিনের কার্যক্রম শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।