Better Life With Steem | The Diary game 19, July | দমবন্ধ করা একদিন।
সকাল |
---|
ভোর ৫ টার আগ দিয়ে ফোনের রিংটোন শুনে ঘুম ভেঙে গেছে। হাবির কখায় বুঝতে পারলাম যে, তার বন্ধুর ফোন।তার ছেলে এসেছে অস্ট্রেলিয়া থেকে ১০ দিনের জন্য তাই তার গ্রামের বাগান বাড়িতে সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন এ উপলক্ষে।
ওরা এখন বের হচ্ছে কারন বেলা বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। আমার হাসবেন্ডেরও যাওয়ার খুব ইচ্ছে। কারন ঘরে বন্দী থাকতে সে একদমই পছন্দ করে না।
কিন্তু গতকাল রাতেই আমি ও আমার দুই ছেলেই মানা করে দিয়েছি যে যাবোনা। কারন এই ধরনের কোন পার্টি করার মতো কোন মন মানসিকতাই নেই আমাদের।
সকাল থেকেই থমথমে একটা দিন। খুব বড়ো কোন ঝড় থেমে যাওয়ার পরে যেমন চারিদিকে এক ধরনের থমথমে নীরবতা বিরাজ করে ঠিক তেমনি এক নীরবতা নেমে এসেছে চারিদিকে।
দুপুর |
---|
কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারতেছি না। বিভিন্ন ধরনের কথা ছড়িয়ে পরছিলো কিন্তু সেগুলো সত্যি না মিথ্যা কিছুই বুঝতে পারছি না। টিভি নিউজও আর আগের মতো নেই।
সাড়ে তিনটা/চারটার পরপরই নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যবরোটোরির দিক থেকে বাতাসে ভেসে আসা মানুযের শব্দ, গুলির শব্দ, সাউণ্ড গ্রেনেড এর মতো বিকট শব্দ ভেসে আসতেছিলো মুহুর্মুহু।
একটু পরেই ওই দিক থেকে ধোঁয়া দেখতে পেলাম।ওইদিকে ২৭ নাম্বারের দিক থেকেও একই রকম শব্দ শোনা যাচ্ছিলো।এর সামান্য আগেই ছোট ছেলে ওর মামার বাড়ির ছাদে খেলতে গেল অনেকটা জোড় করেই এটা বলে যে, আমাদের এলাকায় কিছু হবে না।
এটা অনেকটা আমিও বিশ্বাস করি কারন ৩২ নাম্বার এর খুব কাছেই আমরা থাকি যার কারনে এই এলাকার সিকিউরিটি অন্য রকম। তার পরও টেনশন থেকেই ওকে কল করলাম কিন্তু ও কল ধরছে না
১৯ তারিখে করা ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট যার কারণে আজকের ডেট দেখাতে পারে |
---|
এরই মাঝে ২৭ নাম্বার এর দিক থেকে গুলির আর গ্রেনেড ফাটার মতো শব্দ আসা শুরু হলো। আর ওইদিকে ছেলে ফোন রিসিভ করছে না।
পরে ভাইয়ের ছেলেকে কল দিলাম সেও কিছু বলতে পারছিলো না।একটু পরেই অবশ্য ও কল ব্যাক করে জানালো যে, ওদের বিল্ডিং এরই অন্য এক বাসায় গিয়েছিলো।
ভাগনেকে বললাম যে, ওকে যেন এখন কোনমতেই বাইরে বের হতে না দেয়।এই বয়সী ছেলেমেয়েদেরকে কন্ট্রোল করাটা কঠিন কাজ।আমার বড়ো ছেলেটা পরিস্থিতি অনেকটাই বোঝে কিন্তু ছোট ছেলেটাকে বোঝানো কঠিন।
এরই মাঝে দেখলাম হেলিকপ্টার দিয়ে পানি নিয়ে নিউমার্কেট এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু দূর থেকে দেখে মনে হলো পানি না অন্য কিছু দিচ্ছে, কেমন জানি লালচে রঙের। র্্যাবের হেলিকপ্টার একদম নিচু দিয়ে টহল বেরাচ্ছিলো।
একটু পরেই দেখি উত্তর-পূর্ব দিক থেকেও কালো ধোঁয়া উঠছে। নীলচে গোলাপি আকাশের মাঝে কালো ধোয়া, এ এক ভয়ংকর সৌন্দর্য।
কিছুক্ষনের মাঝেই সবদিকে আগুন। পানি নিয়ে ছুটছে হেলিকপ্টারগুলো। সেই সাথে মাথার উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে হেলিকপ্টার।
এক অজানা আতন্ক ঘিরে ধরছিলো।সাড়ে দশটার দিক থেকে হেলিকপ্টার এর আনাগুনা থেমে আসলো।
হেলিকপ্টার দিয়ে পানি নেয়া ।১৯ তারিখে করা ভিডিও থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট যার কারণে আজকের ডেট দেখাতে পারে |
---|
এরই মাঝে হাবি এসে বার বার বলতেছিলো যে, এমন কিছু লিখো না যাতে বিপদে পরো।এটা আমিও জানি কিন্তু আবার এটাও চিন্তায় আসলো যে, অনেক কিছুরই ডকুমেন্টস থেকে যাবে কিন্তু আমরা যারা সাধারন মানুষ আছি যারা কোনোভাবেই এর সাথে জড়িত না হয়েও জড়িয়ে গেছি তাদের কথাও লেখা থাকা প্রয়োজন।
কিভাবে আমাদের দিন কেটেছে এটা সময়ের সাথে সাথে ভুলে যাবো আমি নিজেও। যাতে না ভুলি এই চিন্তা থেকেই লেখা শুরু করলাম।
আমার হাসবেন্ড বেচারা সারাদিনই টিভি দেখছে এবং এখনো দেখেছে।তাকে এতো টিভি দেখতে দেখে আমার নিজেরই ক্লান্ত লাগছে। অবশ্য সে-ও ক্লান্ত হয়ে মাঝে বার দুয়েক ঘুমিয়েছে।।বেচারার কিছু করারও নেই।
রাত |
---|
কিছু করার নেই তাই দ্রুতই ঘুমাতে গেলাম আমি।যদিও এত আগে ঘুমানোর কোন অভ্যাসই আমার নেই। এরই মাঝে ছেলে এসে বলে গেল যে বসুন্ধরায় ওর ফ্রেন্ড এর বাসায় রেইড হয়েছে। পুলিশ এসে সবার ফোন চেক করছে।
রাত ১২ টার দিকে ছেলে এসে জানালে সরকার কারফিউ দিয়েছে।
জানি না সামনে আরো কি দেখতে হবে।
Camera | iPhone 14 |
---|---|
Photographer | @sayeedasultana |
Location | Dhaka,Bangladesh |