বড় কবে হবো ?

in Incredible India9 days ago (edited)
girl-2067378_1280.jpg

pixabay

এই লেখাটার শুরুতেই যে মানুষটাকে ধন্যবাদ দিতে হয় তার নাম হলো @mukitsalafi। কারণ আজকে আমাদের কমিউনিটিতে তার একটা পোস্ট পড়তে গিয়ে দেখলাম তিনি পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য হওয়ার কারণে পরিবার ও পরিবারের বাইরের মানুষদের দ্বারা কত রকমের বৈষ্যমের শিকার হয়েছেন সেটাই লিখেছেন।

পড়তে গিয়ে মনে হলো আমিওতো তাই-ই। সবার বৈষম্য আর মনে মনে চেপে রাখা কত ধরণের অপমান হজম করে বড় হয়েছি। এই কষ্ট কোনো দিন কারো কাছে বলি নাই। আজকে তো বলা যাই -ই। অবশ্য আমি পরিবারের বাইরের মানুষদের বৈষ্যমের কথা আর লিখি নাই কারণ পরিবারের লোকদের কথাই তো বলে শেষ করার মতো না।

এই বৈষ্যমের শুরু কবে থেকে সেটা মনে নাই তবে মনে পরে ভাইদের ঘুড়িতে হাত লাগাতে দিতো না। অথব আমার কত্তো শখ ছিল আমিও নীল আকাশে ঘুড়ি উড়াবো। এমনকি কাটা ঘুড়ি উড়ে এসে আমাদের উঠানে বা ছাদে এসে পড়লে সেটাকে আমি কষ্ট করে ধরার পরেও ওরা কেড়ে নিয়ে যেত। আমাকে শান্তনা দিতো পরের বার ধরলে তোর কিন্তু কাজের বেলা লবডঙ্কা।

lizard-4974830_1280.jpg

pixabay

সবাই যখন বসে গল্প করতো আমাকে ভাগিয়ে দিতো ছোট বলে। এমনকি পাশের বাড়িতে ঝগড়ার শব্দ শুনে আমি একটু দেখতে গেলে পর্যন্ত ধরে বাড়িতে নিয়ে আসতো !! অথচ আমার কত্তো ইচ্ছে করতো আমিও একটু অমন করে ঝগড়া করবো। কিন্তু কোনো সুযোগই দিতো না।

সবাই যখন বসে গল্প করতো তখন আমি সেখানে আমি মেলা থেকে কিনে আনা বাঁশিতে একটু জোরে ফু দিলে হয় ধমক দিতো না হলে সেখান থেকে বের করে দিতো। সব অপমান চুপচাপ হজম করেছি। ছোট হওয়ার অপরাধে চা'টা পর্যন্ত খেতে দিতো না। অবশ্য আমিও এবেলায় ছেড়ে কথা বলতাম না। কোনো না কোনো সুযোগে সবার চা থেকেই চুরি করে দুই /এক চুমুক খেয়ে নিতাম সবাই বোঝার আগেই।

কত্তো স্বপ্ন দেখেছি বড় হবো। ভাইদের দেখতাম কম্পাস দিয়ে খাতার মাঝে দাগ কাটতে। কেউ কিচ্ছু বলতো না। অথচ আমি একটু দাগ কাটতে গেলেই কেড়ে নিয়ে যেত। ওই কম্পাস , স্কেল আর পেন্সিলে ভর্তি টিনের বক্সটার উপর আমার অনেক দিনের নজর ছিল যে একদিন ঐটা নিয়ে আমিও পড়তে যাবো। একদিন পেয়ে গেলাম সুযোগ। লুকিয়ে নিয়ে ডাটের সাথে রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসলাম। তারপর একদিন আসলেই সুযোগ আসলো ওই বক্স নিয়ে পড়তে যাওয়ার। কিন্তু যতটা ভেবেছিলাম ততটা ভালো লাগলো না।

macro-5154179_1280.jpg

pixabay

মামার মাউথ অর্গান এর উপর আমার লোভ ছিল অনেক বেশি কিন্তু আমি নাকি থুতু দিয়ে ভরে রাখি এই মিথ্যা অভিযোগ আমার উপরে এনে আমাকে ধরতে দিতো না। কত্তো কত্তো কষ্ট নিয়ে আমারেই বড় হওয়া । সেই সব অপমানের কথা মনে পড়লেও কষ্ট লাগে। কত ইচ্ছে হতো সবার নামে যে চিঠি আসে সব আমি পড়বো।
অথচ হিংসুকগুলি পড়তে দিতো না ,শুধু নিজেরাই পড়তো । কত্তো মাথা খাটিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি বের করে এনভেলাপ খুলে চিঠি বের করে পড়তাম অথচ একটা মানুষেরও সেই ক্রিয়েটিভিটি নজরে আসতো না। বরং বিভিন্ন ধরণের হুমকি-ধামকি দিতো। শুধু তাই না দুই -চার ঘা মার-ও লাগতোও ।

post-office-403145_1280.png

pixabay

দাদির পানের চুন -সুপারি খেতে ইচ্ছে করতো ,দুই আঙুলের মাঝে চেপে সিগারেট খেতে ইচ্ছে করতো ,ইচ্ছে করতো ছাদের কার্নিশের উপর হাটতে কিন্তু একটুও করতে দিতো না। তাই একদিন চুরি করে দাদির পান খেতে যেয়ে উল্টা হয়ে পরে ছিলাম।
আমাকে সবাই বলেছিলো যে ওর মাঝে ওই শুকনা পাতা খেয়েই এই অবস্থা কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম যাতে দাদির পান খেয়ে শেষ করে না ফেলি এজন্য ওরাই শত্রুতা করে কিছু একটা মিশিয়ে দিয়েছিলো পানের মাঝে আর নাম দিয়েছিলো ওই শুকনো পাতার। ।

একটু দুই আঙুলে চেপে সিগারেট খেতে গিয়েছিলাম বলেও মার খেয়েছিলাম। যদিও পরেরবার সেই শখ পূরণ করেছিলাম। আমার সাথে যেমন ওরা শত্রুতা করতো আমিও তেমনি সুযোগ পেলেই ছেড়ে কথা বলতাম না।

to-dye-5821297_1280.jpg

pixabay

হাজীসাহেব মামা নিয়মিতই আখের গুড় কিনে নিয়ে যেত পলিথিন ব্যাগ করে। ওই ব্যাগ থেকে এতো গুড় খাওয়ার লোভ হতো অথচ মা খেতে দিতো না। আমিও তাই ব্যাগ দাঁত দিয়ার ছোট্ট করে কেটে চুষে চুষে খেতাম ।

মামার ওয়াটার আর পোস্টার কালার ধরতে দিতো না। বলতো আমি নাকি এক রঙের সাথে আরেক রং মিলাই। সব মিথ্যা অভিযোগ আমার উপরই চাপাতো । উল্টো সবাই মিলে বলতো আমিই নাকি মিথ্যা বলি।
এতো এতো মিথ্যা কথার শিকার হবো , আগে জানলে কোনোমতেই ছোট হয়ে জন্মাতাম না। সবার থেকে থেকে বড় হয়ে জন্মাতাম ।



Thank You So Much For Reading My Blog

HfhigaP72YBd6w1Kgyw9eMoDygDx869D1PKa6jG8D9C9MQ5rA8UuUvaGRermEeDs8YYv1jb4TX4QUAAbRoaAJFmmUaGZUojU1gWvH66zbc...wdYfZe5zwHZgv7fSFyfX5YWvwFGCJXq8EuycKeaUaXARJjpb61mUGxLAjp1XsJ6PQbzF28Bu6LQTgryC3MSekzsBvnPpE3TAcMAMTMQbf9uvFuTHezySGMDKr6.png

Sort:  
 9 days ago 

যাইহোক আজকে আপনাদের পোস্টটি পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে, আসলে মানুষের জীবনে এমন কিছু কিছু কাজ আছে যেগুলো মনে পড়লে অনেকে কষ্ট পাওয়া যায়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 9 days ago 

সত্যি বলতে এসব কথা মনে পরলে ভালোও লাগে আবার কিছুটা অপরাধ বোধেও ভুগি এটা ভেবে যে, ছোটবেলায় অনেক খারাপ কাজও করেছি। যেমন, আমার এটো চা সবাই খেত না জেনে। কাজটা একদমই ঠিক হয় নাই। অনেক অন্যায় কাজ করেছি না বুঝে তাদের সবাই আজ বেচেও নেই।
ভালো লাগা ও খারাপ লাগা মিশ্রিত এক ধরনের স্মৃতি এগুলো।

 9 days ago 

হাহা। ছোটবেলার চিন্তা চেতনাগুলো এমনই ছিলো। তখন অনেক অভিমান হত আপনার বোঝা যাচ্ছে। আমি পরিবারের বড় ছেলে তাই আমার ওসব তেমন সহ্য করতে হয়নি। তবে আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হলো ছোট ভাইয়ের উপরে বোধহয় অন্যায় করাই হয়ে গেছে। এসকল স্মৃতিগুলোই মনে থাকবে আজীবন। ভাই-বোনদের এসকল খুনশুটি চলবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম। অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে। ধন্যবাদ।

 9 days ago 

আপনি বাড়ির বড় ছেলে তাহলেতো আমার শত্রুদের তালিকাভুক্তই। অবশ্য আপনি যে বুঝতে পেরেছেন যে, আপনি আপনার ছোট ভাইয়ের ওপর অত্যাচার করোছেন তাই আপনাকে শত্রু তালিকার বাইরে স্থান দিলাম।😀
একদম ঠিক বলেছেন যে, ভাই-বোনদের এমন খুনসুটি চলবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।

Loading...
 8 days ago (edited)

প্রথমেই আপনার টাইটেল দেখে মুকিত ভাইয়ের কথা মনে পড়ে গেল কারণ তার পোস্টটা আমি পড়েছিলাম ।। পরে দেখতে পারলাম আপনি তাকে ক্রেডিট দিয়েছেন সেটা আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে।।

আপনার লেখার সাথে আমার জীবনের অনেকটা মিল রয়েছে আমিও ছোটবেলায় ভাইয়াদের অনেক জিনিস ধরতে চাইতাম কিন্তু ছোট থাকার জন্য তারা ধরতে দিত না।। অনেক সময় খেলতে যাইতাম ছোট থাকার জন্য আমাকে নিতেও না তখন অনেক বেশি কষ্ট হতো আর মনে হতো কবে বড় হব।। সত্যি আপু অনেক ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পরে।।

 8 days ago 

এই লেখাটার কথা মুকিত ভাইয়ের পোস্ট পড়েই আমার মাথায় এসেছে তাই ক্রেডিট তার প্রাপ্য।
আসলে আমরা যারা বাড়িতে ছোট তারা দেশের যে প্রান্তেই বাস করুক না কেন, তাদের বলতে গেলে একই রকমের দূর্ভাগা।
এজন্যই আপনার ছোটবেলা অনেকটা আমার মতোই ছিল।
এটা জেনারেশনের পর জেনারেশন চলতেই থাকবে।

 7 days ago 

আমরা অনেক মানুষ রয়েছি অন্যকে ক্রেডিট দিতে চাই না অন্যের কাছ থেকে কোন কিছু শেখার পর টাকার মূল্য করিনা এমনটা করা কখনো উচিত নয়।। জি আপু আপনার মত আমারও ছোটবেলার অনেক ঘটনা আছে।।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57849.42
ETH 3122.29
USDT 1.00
SBD 2.43