কিছু লেখা ,কিছু ভাবনা।
অনেক দিন আগে আমাদের দেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমদ এর একটা লেখা পড়েছিলাম। সেখানে তিনি লিখেছিলেন যে ,তার এক জাপান প্রবাসী বন্ধু তাকে প্রাচীন জাপানের একটা প্রচলিত প্রথার কথা বলেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন আগে জাপানে নিয়ম ছিল বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাদের ছেলেরা কাঁধে করে লোকালয় থেকে অনেক দূরের কোন পাহাড়ের উপর নিয়ে যেত। তারপর সেই পাহাড়ের উপর থেকে নিচে ফেলে দিয়ে আসতো।
যখন ছেলেরা কাঁধে করে বাবা -মাকে নিয়ে যেত তখন একটা গাছের ডাল দিয়ে তার বাবা- মা আস্তে আস্তে করে বাড়ি দিতে থাকতো ,যাতে করে একা একা বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথে কোনো খারাপ আত্মা তার সন্তানের কোন ক্ষতি না করে।
এই গল্প শোনার পরে রাতের বেলা লেখক স্বপ্ন দেখেছিলেন যে ,তার ছেলে নুহাশ তাকে কাঁধে করে নির্জন পাহাড়ের উপর নিয়ে যাচ্ছেন আর তিনি তার ছেলের মাথায় গাছের ডাল দিয়ে বাড়ি দিতেছেন। এই স্বপ্ন দেখে লেখকের ঘুম ভেঙে যায় এবং তিনি দেখেন যে তিনি ঘামে ভিজে গেছেন।
নিঃসন্দেহে এটা ভয়ংকর একটা স্বপ্ন। এই লেখাটার কথা মনে পড়ার একটা কারণ আছে। বেশ কিছুদিন আগে একটা লেখা ঘুরতে দেখেছিলাম সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ,সন্তান পালন কোনো ব্যবসা না যে ভবিষ্যতে বাবা-মাকে দেখাশোনা করতে হবে। আর এই ভেবে বাবা -মা সন্তানদের বড়ো করবে। এটা তার দায়িত্ব তাই সে পালন করবে।
এই লেখাটা পড়ার সময় আমি একজন মা এবং একজন সন্তান দুটো হিসেবেই চিন্তা করলাম। সত্যি বলতে এখন যে আমি আমার ছেলেদের বড়ো করতেছি অবশ্যই শুধুমাত্র এই কারণে না যে তারা আমাকে বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করবে। ওদের প্রতি আমার ভালোবাসা থেকে করতেছি। আমি আনন্দ পাই ওদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে।
আমি জানি আমি চাইলেও ওরা ওদেরকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পরবে একটা সময়।
লেবানিজ কবি কাহলিল জিব্রানের একটা বিখ্যাত কবিতা আছে ,
তোমার সন্তানেরা তোমার সন্তান নয়,
তোমরা তোমাদের ভালোবাসা তাদের দিতে পারো- কিন্তু তোমাদের ভাবনা তাদের দিও না!
কারণ তাদেরই নিজস্ব ভাবনা আছ।
এখানে মাত্র দুটো লাইন আছে । এটা আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা এবং এই কবিতার প্রতিটা লাইন আমি মন থেকেই মানি।
অনেকে বলেন বৃদ্ধ বয়সে ওল্ড হোমে গিয়ে থাকবেন ,কারো বোঝা হবেন না। এটা আমিও ভাবি যে অবহেলা সহ্য করার থেকে বৃদ্ধাশ্রমে যেয়ে থাকা ভালো ।
কিন্তু পাশাপাশি এটাও ভাবি যে ,আমি আমার বাবা -মা সহ খুব কাছের কিছু বৃদ্ধ মানুষদের দেখেছি যে ,তারা কি পরিমানে অসহায় এবং তাদেরকে সেবা করাটা কতটা কষ্টের। অনেক সময় বাড়ির মানুষদেরকেও ক্লান্ত হয়ে পড়তে দেখেছি। সেখানে ওল্ড হোমের লোকজন কতটা করবে ।
আমার মা তার শেষ জীবনে শুধু মানুষের হাত ধরে থাকতো। নার্স কিংবা বুয়ার হাত ততক্ষনই ধরতো যতক্ষণ তার সন্তানদের কাছে না পেত। আমাদেরকে দেখলে সাথে সাথে তাদের হাত ছেড়ে আমাদের দিকে হাত বাড়াতো। কয়েক মাস আগে মৃত্যুর আগে আমার এক দাদীকেও দেখলাম একই রকম তার সন্তানদের দিকে হাত বাড়াতে।
এটাও ভাবি যে ,একটা সন্তানের জন্য এতো ত্যাগ স্বীকার করার পরে সে যদি তার সন্তানদের হাতটাকে ধরে শান্তি পেতে চায় ,তাহলে তার চাওয়াটা কি খুব বেশি চাওয়া বলা যাবে ?
আপনার লেখার পড়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে আসলে আমিও তাই শুনেছিলাম যে বাবা মাকে নিয়ে পাহা থেকে ফেলে দেয়। এবং আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমার অনেক কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানার কাছে সুন্দর একটি বিষয় আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আপনি এই কামনাই ঈশ্বরের কাছে।
সত্যিই একটা বাস্তবধর্মী বিষয় নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার পোস্টের লেখা গল্পটি আমিও কোথায় যেন পড়েছিলাম ঠিক মনে পড়ছে না।
আপনি ঠিকই বলেছেন বর্তমান সময়ে বাবা মায়েরা সন্তানদের ভালোবাসার দিক থেকেই বড় করে তোলে। শেষ বয়সে এসে সন্তানরা তাদের দেখাশোনা করবে কিনা সেটা সবারই অজানা। কিন্তু হ্যাঁ! এখানে একটা কথা থেকেই যায়, যদিও দেখাশোনা করবে কিনা জানি না।কিন্তু তারপরও প্রতিটি বাবা-মায়ের সন্তানদের উপর একটা আশা থাকে।
সুন্দর একটি বিষয়বস্তু নিয়ে পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
বাবা-মা যতটা ভালোবেসে একটা সন্তানকে বড় করে, কোন সন্তানই আসলে পারে না তার ধারেকাছে যেতে। তাদের যে সন্তানের প্রতি খুব বেশি প্রত্যাশা এমনও না।সন্তান ভালো থাকলে তারাও ভালো থাকে। তবে মৃত্যুর আগে সন্তানের প্রিয় মুখটা একবার দেখবে কিংবা হাতটা ধরবে এই আাশাটুকুতো করতেই পারে।
কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, অনেক সন্তান এই আশাটুকু পূরণ করতেও কার্পণ্য করে। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময়।