হিরা নদী আর কাজীর গাং নামের দুই মৃত নদীর প্রায় হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস।
ধামরাই অন্যান্য অনেক প্রাচীন জনপদের মতোই নদীকেন্দ্রিক নগরী হিসেবেই গড়ে ওঠেছিলো।এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা শিল্প ও কৃষি এককথায় বলা চলে সবকিছুই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠেছিলো।কারন ধামরাই এর ভেতর দিয়ে বংশী,গাজীখালী,হীরানদী,ধলেশ্বরী, কাকিলাজানি,কাজীরগাং নামের নদীগুলো প্রবাহিত হতো। এসব নদী দিয়ে যে শুধু দেশের অন্যান্য অংশের সাথেই যোগাযোগ ছিলো এমন না।
হীরা নদীর ওপর দিয়ে এক সময় কলকাতা পর্যন্ত স্টিমার চলতো। এই এই হীরা নদীর অস্তিত্ব আর নেই।এই হিরা নদীর উপরই বর্তমানে আমার দাদাবাড়ি। ভাবলে অবাক লাগে যে আমার পায়ের নিচ দিয়েই একসময় প্রমত্তা হীরা নদী প্রবাহিত হতো। কথিত আছে যে সিরাজদৌলার পরাজিত হবার পরে নবাবের খালা ঘসেটি বেগম ও তার অনুচর এবং দাসীবাঁদীদের নবাবপুএ মিরন এর হুকুমে ঢাকা হীরাঝিল প্রাসাদে পাঠানোর কথা বলে কয়েকটা নৌকায় তুলে দেয়। তারা একসময় হীরা নদীতে এসে পরে।ধামরাই এর কেলিয়া গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাঝিরা নৌকার তলা ফুটো করে দেয়। ফলে ঘসেটি বেগম ও তার দাসীবাঁদীরা মারা যায় নৌকাডুবে মারা যায়। যেখানে এই ঘটনা ঘটেছিলো সে জায়গাটি আজও বান্দীমারা নামে পরিচিত।
বংশী নদীর আরেকটা শাখার নাম কাজীর গাং।এই কাজীর গাংও হীরা নদীর মতোই কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমি ছোটবেলায় এই নদীর ওপর গড়ে ওঠা ছোট ব্রিজ দিয়ে পার হতাম আর নিচে সবুজ ধানক্ষেত কিংবা বর্ষার সময় কিছু অংশে পানি দেখতাম। আমার মা বলতো যে এটা একটা নদী। তখন আমি অবাক হতাম যে,এটা কিভাবে সম্ভব যে এটা একটা নদী।
কথিত আছে যে সম্রাট আওরঙ্গজেব এর নির্দেশে হযরত তিরমিযি আল হোসাইনী, হাজী মেফতা উদ্দিন তায়েফি,শের মোহাম্মদ গাজী মিশরী,মীর মখদুম এবং জং বাহাদুর নামে পাঁচ জন আওয়িলা বাংলায় আসেন এবং সিলেটের হযরত শাহ জালালের নির্দেশে ধামরাই এর মোকামটোলায় এসে বসতি স্হাপন করেন।
তাদের আগমনের পরে কাজীর গাং এর মাধ্যমে লোকজন এসে তাদের কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তাদের প্রভাবে এই অঞ্চলে ইসলাম প্রসার লাভ করে।এসময় কাজীর গাং খুব গভীর ছিলো। মানুষ এই নদীর স্রোত ও গভীরতা ভয় পেত। এসময় কিছু মানুষজন যেয়ে সৈয়দ তিরমিযি আল হোসাইনীর কাছে যেয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন। এটা শুনে তিনি কাজীর গাং এর তীরে যেয়ে এর স্রোত ও গভীরতা কমিয়ে দেয়ার প্রার্থনা করেন। এর পর থেকে এর গভীরতা কমতে থাকে। আজও এই পাঁচ জন আওলিয়ার কবর এই কাজীর গাং এর পাশেই আছে যা পাঁচ পিরের মাজার নামে পরিচিত।
কালের স্রোতে এই নদীগুলো হারিয়ে গেছে।ধামরাই এর মূল নদী বংশীও আজ প্রায় মৃতপ্রায়।সরকার অবশ্য ইদানীং চেষ্টা করছে এই নদীগুলোকে দখলমুক্ত করে আবার নতুন করে প্রান ফেরাতে।
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmcbLFsUnAvByRWqVfYseHWp96dDnrerJ2JEAey2YBHMfn/image.png)
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦
আসলেই আমাদের বাংলাদেশটাও নদীমাতৃক দেশ,,, কিন্তু নদীর সংখ্যা এখন অনেক কম। আপনি ধামরাই নদীর কথা আমাদের সাথে উল্লেখ করেছেন। যেখানে আপনি উল্লেখ করেছেন নদীর এখন কোন চিহ্ন পাওয়া যায় না। আসলেই সত্যি,,,, দেশ যত উন্নত হচ্ছে এই নদীগুলো তত হারিয়ে যাচ্ছে।
তবে সেই দেশের সরকারকে আমি অনেক বেশি ধন্যবাদ জানাতে চাই। কারণ তারা আবার জায়গাগুলো দখল করে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। যেটা জানতে পেরে অনেক বেশি ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,,,, এত সুন্দর একটা টপিক নিয়ে এত সুন্দর আলোচনা করার জন্য। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন।
@rubina203(65)
নদীর কথা যখন ভাবি আমার খারাপ লাগে।
সরকার বড় বড় কিছু নদীকে আবার ফেরত আনার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু নদী অনেক আগেই একেবারেই হারিয়ে গেছে। সেগুলোকে আর ফেরানো সম্ভব না।
যাই হোক এত সুন্দর কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইলো আপনার জ
আপনার পোস্টটি পড়ে আমি এটা জানতে পারলাম, প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন জনপদের নাম হল ধামরাই। আমি আরো জানতে পেরেছি ধর্ম রাজিয়া থেকেই ধামরাই নামের উৎপত্তি হয়।
আপনি আরও একটি নদীর কথা উল্লেখ করেছেন, যার নাম হল হীরা এবং এই নদীটির এখন কোন অস্তিত্ব নেই, শুনে খারাপ লাগলো।
আপনি আরো নদীর কথা উল্লেখ করেছেন এবং আরো অনেক কিছু বলেছেন, এবং অনেক পুরাতন দিনের ঘটনাগুলো খুব সুন্দর ভাবে বলেছেন।
আপনার পোস্ট পড়ে আমি অনেক কিছু জানতে পারলাম, আসলে আমি এত কিছু জানতাম না খুব ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, এত সুন্দর একটি শিক্ষনীয় পোস্ট করার জন্য।
@sabus(57)
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমার পোষ্ট পড়ে সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল ভাল থাকবেন।