আধুনিক সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে টিকে থাকা এক প্রাচীন শিল্পের নাম 'টেরাকোটা'।

in Incredible Indialast year
কুমার পাড়ার খুব কাছেই আমার স্কুল থাকাতে প্রায়ই যাওয়া হতো। বিশেষ করে তাদের তৈরি মাটির পুতুল ছিলো খুবই প্রিয়। আমাদের এলাকাটা প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন একটা এলাকা। এখানকার অনেক কিছুই যেমন, মসলিন,পেতলের জিনিস, লোহার তৈরি সামগ্রী, মৃৎশিল্প সেই প্রাচীনকাল থেকেই খুব বিখ্যাত ছিলো। এখন সেসব জিনিস এর সেই স্বর্নযুগ না থাকলেও রয়ে গেছে সামান্য অংশ। এসব শিল্পের সাথে জড়িত মানুষেরা কিছুটা যুগোপযোগী করে নিজেদের জিনিসপত্র তৈরি করছেন।উদাহরণ স্বরুপ বলা যেতে পারে এখনকার মৃৎশিল্পীরা আগের মতো হা্ড়ি পাতিল কম বানাচ্ছেন।তারা এখন টব,ফুলদানি, পুতুল আর বিশেষ করে টেরাকোটার দিকে বেশি ঝুঁকতেছেন।


pixabay.

এখন অনেকেই এসব মৃৎশিল্পীদের কাছ থেকে অর্ডার দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো টেরাকোটা তৈরি করে নিজেদের বাসাবাড়ি, রেস্টুরেন্ট কিংবা বাগান সাজাচ্ছেন। টেরাকোটা অবশ্য নতুন কিছু না। সেই প্রাচীন কাল থেকেই এর প্রচলন ছিলো। টেরাকোটা শব্দটি আসলে আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের দেয়া কোন নাম না।এটি একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ মাটি পোড়ানো।আগুন আবিস্কার এর পর সভ্যতার বিকাশের শুরু থেকেই মানুষ তার নিজের প্রয়োজনেই মৃৎশিল্পের বিকাশ ঘটিয়েছে। সুমেরীয় সভ্যতা থেকে শুরু করে ব্যাবীলনীয় সভ্যতা ও মায়া সভ্যতায,চিন, মিশর, ক্রিট, সাইপ্রাস, গ্রীস, ইতালি এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় টোরাকোটার দেখা পাওয়া যায়।


pixabay.

সিন্ধু অববাহিকায় আবিষ্কৃত মহেঞ্জোদারো সভ্যতায়ও এর ব্যবহার দেখা গেল। শুধু মাএ সিন্ধু অববাহিকায়ই না বাংলা অঞ্চলেও মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন আমলের নানা নিদর্শনেও টেরাকোটার ব্যাবহার দেখা যায়। ইতিহাসে ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায় পাল আমলের সবচেয়ে বড় কীর্তিটি হচ্ছে সোমপুর মহাবিহার। সেখানকার মূল মন্দিরের গায়ে প্রায় দুই হাজার টেরাকোটা ছিল একসময় । আশপাশেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল আরও প্রায় আট শতাধিক টেরাকোটা। সেন আমলে নির্মাণ হওয়া অসংখ্য মন্দিরের গায়েও টেরাকোটার দেখা পাওয়া যায়। কারুকার্যময় ইটের ব্যবহার দেখা যায়।পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়াও টেরাকোটার জন্য বেশ নাম করা।


pixabay.

তবে বাংলা ভূখন্ডে পাওয়া টেরাকোটার সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শনটি রয়েছে কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত হওয়া সাভার এর কাছাকাছি উয়ারী-বটেশ্বর ও মহাস্থানগড়সহ তার আশপাশের এলাকায়। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের। উয়ারী-বটেশ্বর এলাকার আদি মাতৃদেবীর মূর্তির সাথে পশ্চিম এশিয়া ও সিন্ধু সভ্যতার মাতৃদেবীর অনেক মিল রয়েছে।শুরুতেই আমার এলাকায় তৈরি হওয়া মৃৎশিল্প ও টেরাকোটার কথা বলেছিলাম। এই উয়ারী বটেশ্বর আমার এলাকা ধামরাই এর খুব কাছেই অবস্থিত।বাংলার টেরাকোটার কথা বললে দিনাজপুর এর কান্তজীর মন্দির আর পুটিয়ার মন্দিরগুলোর কথা না বললে অসম্পূর্ন থেকে যাবে।শুধুমাএ যে মন্দির গাএেই এর ব্যবহার দেখা গেছে এমনও না এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সুলতানি আমলে মসজিদ ও কবরের আচ্ছাদনে এর ব্যবহার দেখা গেছে।


pixabay

বেশিরভাগ প্রাচীন শিল্পই আধুনিক সময়ের সাথে পাল্লা দিতে যেয়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। কিন্তু টেরাকোটা আধুনিক সময়ের সাথে টেক্কা দিয়ে আগের মতোই টিকে আছে তার আপন মহিমায়।


◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦

image.png

Sort:  
Loading...
 last year 

আসসালামু আলাইকুম
আপনার অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন খুব ভালো লেগেছে।
সিন্ধু অববাহিকায় আবিষ্কৃত মহেঞ্জোদারো সভ্যতায়ও এর ব্যবহার দেখা গেল। শুধু মাএ সিন্ধু অববাহিকায়ই না বাংলা অঞ্চলেও মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন আমলের নানা নিদর্শনেও টেরাকোটার ব্যাবহার দেখা যায়। ইতিহাসে ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায় পাল আমলের সবচেয়ে বড় কীর্তিটি হচ্ছে সোমপুর মহাবিহার। সেখানকার মূল মন্দিরের গায়ে প্রায় দুই হাজার টেরাকোটা ছিল একসময় । আশপাশেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল আরও প্রায় আট শতাধিক টেরাকোটা। সেন আমলে নির্মাণ হওয়া অসংখ্য মন্দিরের গায়েও টেরাকোটার দেখা পাওয়া যায়। কারুকার্যময় ইটের ব্যবহার দেখা যায়।পশ্চিমবঙ্গের বাকুড়াও টেরাকোটার জন্য বেশ নাম করা।

সত্যি অসাধারণ, আপনারা জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা

 last year 

@karobiamin71(59)
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 59388.60
ETH 2528.39
USDT 1.00
SBD 2.50