স্মৃতিতে ও বর্তমানের ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার এর সেই বাড়ি ।

in Incredible India3 months ago (edited)

IMG_6607.jpeg

বর্তমান অবস্থা (সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া )

গতরাতে ভালো ঘুম হয় নাই। একটু পর পরই বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়েছি যে কিছু শোনা যায় কিনা।আজকে ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস।প্রতি বছরই ধানমন্ডি ৩২ কে ঘিরে চলে ব্যাপক আয়োজন। এই ৩২ আমার বাড়ির পাশেই। সকালে ঘুম ভাঙে শেখ মুজিবুর রহমানের সেই বিখ্যাত ভাষন শোনে।সত্যি বলতে কান ঝালাপালা হয়ে যেত শব্দে।কিন্তু এবার এর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন।গতকাল থেকেই থমথমে পরিবেশ।
সত্যি বলতে প্রতিবছর এই দিনটাকে ঘিরে এত বেশি বাড়াবাড়ি হয়েছে যে তাতে মানুষ খানিকটা বিরক্ত ছিলো। এর সাথে এবার যোগ হয়েছে এতগুলো মানুষ এর মৃত্যুর ঘটনা। যদিও এই বাড়ি কিংবা শেখ মুজিবুর রহমানের কোন দোষ নেই কিন্তু মানুষের বিশেষ করে ছাত্রদের রাগ যেয়ে পরেছে এই দিনটাকে ঘিরে।

IMG_6604.jpeg

ফেসবুক থেকে নেয়া

এই বাড়িটা ছিলো আমাদের ধানমন্ডি বাসীদের একটা গর্বের জায়গা। এই বাড়িকে কেন্দ্র করেই সবকিছু চলতো বলা যায়। এই বাড়ির কল্যানে আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে কখনো ভাবতে হয় নাই। রাত ৩ টার সময় বের হলেও চিন্তা করি নাই। কিন্তু সেই বাড়ির বর্তমান অবস্থা ভাবলে কস্ট লাগে।
এই বাড়ির একটা বিল্ডিং পরেই ছিলো আমার ছেলের জুনিয়র সেকশন এর স্কুল আর পেছনেই ছিলো ওদের মেইন বিল্ডিং। আগেতো পাঁচ টাকা দিয়ে যেকেউ ভেতরে ঢুকতে পারতো।কিন্তু হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পরে নিরাপত্তা জোরদার করে এর কোভিডের পরে একদমই বন্ধ করে দেয় ভেতরে যাওয়া এমনকি সামনের রাস্তাও বন্ধ করে দেয়।

IMG_6606.jpeg

পুড়ে যাওয়ার পরের ছবি

এই বাড়ির সামনে দিয়ে এত ঘুরাঘুরি করার পরেও কেন জানি একবার এর বেশি আমার ভেতরে ঢোকা হয় নাই। ভেতরে ফোন নেয়ার পারমিশন ছিলো না তাই কোন ছবিও তোলা হয় নাই।
সেদিন বাচচাদের স্কুল ছুটির পরে ওদের জোড়াজুড়িতেই গিয়েছিলাম। ওই সময়টা আমরা ছাড়া আর কেউ ছিলো না। এক গা ছমছমে অনুভূতি হয়েছিলো কেন জানি।নিচ তলাটা ছিলো আধারিতে ঘেরা। বিশাল বিশাল সব ছবি আর ওপরে উঠে দেখতে পেলাম ওয়ালে গুলির চিহ্ন, আধ খাওয়া কোকের বোতল, বিয়ের পাগড়ি , আট বছর এর শেখ রাসেলের সাইকেল ,বঙ্গবন্ধুর পরনের কাপড়, সিড়ির ওপর যেখানে বঙ্গবন্ধু গুলি খেয়েছিলেন সেখানে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ প্রভৃতি জিনিসপত্র। আমার দমবন্ধ হয়ে আসতেছিলো।

IMG_6653.jpeg

এই সিড়িতেই পরে ছিলো বঙ্গবন্ধুর লাশ।সিড়িতে শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ লেগেছিল (সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া )

মনে হচ্ছিল যারা মারা গেছেন তারা ফিসফিস করে কথা বলছে আমার চারপাশে। আমি বের হবার জন্য অস্থির হয়ে গিয়েছিলাম। পাশে অন্য মানুষজন থাকলে হয়তোবা সেদিন এমন অনুভুতি হতো না।দ্রুত বের হয়ে এসেছিলাম ওই বাড়ি থেকে।
পরে অবশ্য পাশের যাদুঘরে গিয়েছিলাম।এখন অবশ্য সেসব শুধুই স্মৃতি কারন পুরিয়ে ফেলা হয়েছে এই বাড়ি ও যাদুঘর।

IMG_6649.jpeg

শিল্পী শাহাবুদ্দীন এর আকা (সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া )

আজকে ছাত্রদের কয়েকটি দল শোক দিবস পালন করতে বাধা দিচ্ছে।কন্যার রাগ তারা পিতার ওপর ঢালতেছে।২০০০ থেকে ২৫০০ জন মানুষ মারা গেছে বলে শোনা যাচ্ছে।এত মানুষ দেশ স্বাধীন এর পরে একসাথে আর মারা যায় নাই।এর ক্ষত এখনো দগদগে। শুকাতে সময় লাগবে।

IMG_6377.jpeg

পুড়ছে ৩২

কিছু এত কিছুর পরেও এখনো মৃত শেখ মুজিব অনেক শক্তিশালী। নাহলে এই পোড়া বাড়িকে এত মানুষ দিয়ে পাহাড়া দিয়ে রাখতে হতো না।এখন সাময়িক কিছুটা দূর্বল মনে হলেও আবার হয়তো একসময় আবারও আগের মতোই হয়ে উঠবে। সেদিন হয়তো শেখ পরিবার আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় না'ও থাকতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে যে , ইতিহাস কখনো বিদায় বলে না, বলে আবার দেখা হবে।



Thank You So Much For Reading My Blog

3KyYabPY3g77mhATvBAAUF5zNR1CtqkeWauN9MRyWDCSJJeN9WZVXxTFs1osy6uhZisoaiFyWVDNasfkuL6TCt1ktBsbpzwrjDQjD5Whfk...ZaM9uuYHaeW4UUPGGgs2cmDJiTjepqhtQSaepYYFHTcDDjyKwJFNySU1pqwEMpSESQC3Gn7hqBvLRjSYsY6BdDKRgFVbQR2Yp7VjXiG9Wvs5d8nxs9LuoDTwMx.png

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.19
JST 0.034
BTC 91295.19
ETH 3130.58
USDT 1.00
SBD 2.89