স্মৃতি এবং ছবিতে শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেক ।
আমাদের বাসার পিসিটা ইদানীং কেউ আর তেমন একটা ধরে না। গতকাল ডিসকোর্ডে টিউটোরিয়াল ক্লাস করেছি পিসিতে। ক্লাস শেষে পুরোনো ছবি দেখেছিলাম বসে বসে। সেখানেই মাধবপুর লেকের ছবিগুলো দেখলাম। এই লেক শ্রীমঙ্গলের কমলগঞ্জে অবস্থিত। আগে প্রায় প্রতিবছরই আমার শ্রীমঙ্গল যাওয়া হতো।
এখানে বেশি যাওয়ার কারণ ছিল এই জায়গাটা ঢাকার বেশ কাছাকাছি অবস্থিত। কয়েক ঘন্টার মাঝেই চলে যাওয়া যায়।আর এখানে গেলে এই জায়গাটার পরিবেশটাই এমন যে মনের মাঝে আলাদা এক ধরণের শান্তি কাজ করে। এখানকার ঘন সবুজ চা বাগান ,রাবার বাগান ,ছোট ছোট ঝিরি সব কিছু মিলে অশান্ত মনকেও শান্ত করে ফেলে।
কিন্তু প্রায় ২ বছর হয়ে গেছে এখানে শেষ গিয়েছি। এবারও যেতে চাচ্ছি কিন্তু শুনেছি সিলেট রোডে কাজ চলছে। যার কারণে রাস্তাঘাট ভালো না তাই যাওয়াও হচ্ছে না। কিন্তু গতকাল পুরোনো ছবিগুলো দেখার পরে তীব্র একটি ইচ্ছে জাগতেছে যাওয়ার জন্য।
শ্রীমঙ্গল যাওয়া মানেই আমাদের মাধবপুর লেকে বেড়াতে যাওয়া। আর এখানে যেতে হয় বিশেষ করে আমার হাসবেন্ডের আগ্রহের কারণে। মাধবপুর লেক শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১০ কিমি. পূর্ব দিকে অবস্থিত আর এখানে কেউ যেতে চাইলে আমি বলবো যতটা সম্ভব সকালে বের হবেন বিশেষ করে যদি গরমের দিন হয়।
শ্রীমঙ্গল শহরের লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্টের ভেতর দিয়ে চলা পথ দিয়ে এগিয়ে কিছুটা যেতেই দেখতে পাবেন যে,আস্তে আস্তে পাহাড় শেষ হয়ে গেছে এই দুইপাশে সবুজ শস্য ক্ষেত। মাঝে মাঝে মন্দির আর অতি দরিদ্র চা শ্রমিকদের ছোট ছোট ঝুপড়ির মতো ঘর। আগে যখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরাঘুরি করতাম তখন প্রায়ই খুব সম্ভবত কোন এক আফ্রিকান নেতার একটা কথা চোখে পড়তো যে ,
তারা আমাদের হাতে ধরিয়ে দিলো বাইবেল ,আর বিনিময়ে তারা নিলো আমাদের জমি।
শ্রীমঙ্গলের পথে চলতে গিয়ে আমার বার বার একই কথা মনে পেরেছে। কারণ আপনারা যদি কখনো এখানে যান তাহলে দেখতে পাবেন খানিকটা পর পরই মন্দির ,অথচ স্কুল নাই। চা শ্রমিকদের সন্তান চা শ্রমিক হবে ,এটাই যেন অলিখিত আইন হয়ে গেছে এখানকার। অথচ চা বাগান মালিকরা হাজার কোটি টাকার মালিক।
যাইহোক ,এই পথ ধরে এগিয়ে গেলেই একসময় মুখ রাস্তা ছেড়ে কিছুটা উঁচুনিচু পথ ধরে চা বাগানের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে গেলেই মাধবপুর লেকে গিয়ে পৌঁছাবেন ।
এটি আসলে কোনো প্রাকৃতিক লেক না। চা বাগানে পানি দেয়ার সুবিধার জন্য মাধবপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ বাগানের মাঝে অবস্থিত তিনটি টিলাকে বাঁধ দিয়ে পানি জমিয়ে রেখে গড়ে তোলেন এই লেক। লেকের পাড় ঘেঁষে হেঁটে বেড়ানোর জন্য সরু পায়ে চলার পথ এবং টিলার ওপর খড় দিয়ে তৈরি তাঁবু রয়েছে।
চারদিকে পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত লেকটি যেন অপূর্ব এক মায়া ছড়িয়ে রেখেছে। এর টলটলে পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি আর বিভিন্ন ধরণের পাখির কিচিরমিচির পরিবেশটাকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলে।
স্থানীয় লোকজনের মুখে শুনেছি মাঝে মাঝে এখানে বড় বড় কচ্ছপ দেখা যায় আর সেই সাথে বিভিন্ন ধরণের মাছতো আছেই।
সবচেয়ে ভালো লাগে এখানকার স্বচ্ছ পানির মাঝে ফুটে থাকা নীল রঙের শাপলা। লেকের পাশের টিলার উপরেও চা বাগান এবং নিচে লেকের স্বচ্ছ পানি আর চা বাগান সবকিছু মিলিয়ে যেন প্রকৃতির নিজের হাতে আঁকা এক অদ্ভুত সুন্দর ছবি। শীতের সময় আসলে অতিথি পাখিদের ভিড় দেখতে পাবেন। তবে যদি এখন চেঞ্জ না করে থাকে তাহলে সন্ধ্যা ছয়টার পরে এখানে থাকার কোন পারমিশন নাই।
শ্রীমঙ্গলের মাধবপুর লেক আর লেকে শাপলা ফুলের সৌন্দর্যতা দেখা যাচ্ছে ৷ সবমিলিয়ে লেকের পরিবেশ টা যেন চারদিকে ফুটিয়ে তুলেছে ৷
যাই হোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ৷ ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷
আসলেই চমৎকার একটা জায়গা। লেকের সামনের বসার চেয়ার জায়গা আছে। এখানে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো যাবে , কোনরকম বিরক্তি আসার কথা না
চাইলে লেকেরচারপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যাবে আস্তে আস্তে। আবার কেউ যদি মনে করে সে টিলার উপর উঠবে সেটাও করতে পারে। এক কথায় সময় কাটানোর জন্য একটা চমৎকার জায়গা। আবার এখান থেকে কিছুটা দূরেই হাম হাম ঝরনা।
খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। ভালো থাকবেন সব সময় শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
আসলে সময় কোন দিক দিয়ে চলে যায় কখনো বলাই যায় না। আপনি কিছু পুরনো স্মৃতি আবারও আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন।
আমার মনে হয় যে কোন মানুষেরই নিরিবিলি ফাঁকা জায়গায় বসে থাকতে ভালো লাগে।
মাধবপুরের সুন্দর কিছু স্মৃতি শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।