আজ নিজের বিবেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ আমি ।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া |
---|
জাহানারা ইমামের 'একাত্তরের দিনগুলি' বইটা একসময় একাধিক বার পড়েছিলাম ।এখন খুব একটা মনে নেই তবে এটুকু ভালো মতোই মনে আছে যে ,জাহানারা ইমামের ছেলে রুমির আমেরিকার খুব নামকরা এক ইউনিভার্সিটিতে পড়তে যাওয়ার সব ব্যবস্থা হয়েগিয়েছিল। আর তখনিই দেশ জুড়ে পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের শুরুর দিকের এক সময়ে রুমি এসে তার মা জাহানারা ইমামকে বলেন যে ,আমি যুদ্ধে যেতে চাই।
আমি চাইলে তোমাদেরকে না বলেও যেতে পারতাম কিন্তু তোমাদের পারমিশন নিয়ে যেতে চাই। তুমি যদি বলো তাহলে আমি যুদ্ধের ট্রেনিং নিতে যাবো না। আমেরিকায় চলে যাবো কিন্তু সারাজীবন আমার মনের মাঝে এই অনুভূতি কাজ করবে যে যখন আমার দেশের আমার প্রয়োজন ছিল তখন আমি সেই ডাকে সাড়া দিতে পারি নাই। কাপুরুষের মতো প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বিদেশে চলে এসেছি ।
সেদিনকার কথা জাহানারা ইমাম লিখেছিলেন যে ,আমার কি হলো জানি না। আমি বলে ফেললাম যে তোকে দেশের জন্য কোরবানি করে দিলাম। সেদিন সেই ঘরে উপস্থিত আরো কয়েকজন এর কথা তিনি লিখেছিলেন যে ,তারা তার এই কোথায় চমকে গিয়ে জাহানারা ইমামের দিকে তাকিয়েছিলেন।
এর পর জাহানারা ইমাম তার ছেলেকে নিজে ড্রাইভ করে যতটা মনে পরে শ্যামলীর দিকে নামিয়ে দিয়ে যান। এরপর রুমি মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দিতে একবারও পেছনে না তাকিয়ে সামনে এগিয়ে যান আর জাহানারা ইমাম অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন যতক্ষণ তার ছেলেকে দেখা যায়।
পরবর্তীতে রুমি একবার বাড়িতে এসেছিলেন এবং সেই রাতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মাঝে একুশের আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানের সুরকার আলতাফ মাহমুদ ,আজাদ প্রমুখ ব্যাক্তিরা ছিলেন। যাদের পরবর্তীতে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নাই।
মন ভালো নেই কদিন থেকেই। দেশে যা কিছু ঘটছে এই কদিনে সেটাকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারছি না।আজকে জাহানারা ইমামের কথা মনে পড়ছে বার বার। কারণ যতবার জাহানারা ইমামের এই বই পড়েছি বা তার সম্পর্কে ভেবেছি তখন মনের মাঝে একটা সন্মান কাজ করেছে এবং এটাও ভেবেছি যে প্রয়োজনে তার মতো মা হবো।
কিন্তু বাস্তবে আজকে সন্ধ্যায় আমার বড়ো ছেলে আমাকে বললো যে ,আমার এক বন্ধুর বন্ধু গতকাল ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে মারা গেছে। আরো কিছুক্ষন পরে এসে ভয়ঙ্কর রক্তাক্ত কিছু ছবি দেখিয়ে বললো যে আমার বন্ধু পাঠিয়েছে ওর অন্য কয়েক বন্ধুদের ছবি।গতকাল রাতেও বসুন্ধরা এলাকায় পুলিশ আর ছাত্রলীগের তান্ডবের অনেক কিছুই আমাকে এসে এসে বলেছে যেগুলি মিডিয়াতে সব আসে নাই। ওর কয়েক বন্ধু ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে।
একটু আগে এসে বলতেছে আম্মু গতকাল সবাই আসতেছে ,আমিও কাল যেতে চাচ্ছি। কি বলবো আমি। আমার দুই মামা মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তাদের ভাগ্নি হয়ে কি বলবো আমি। তারপরও মিনমিন করে বললাম যে দেখো তোমার জায়গায় আমি থাকলে অবশ্যই যেতাম। কিন্তু আমি যেহেতু তোমার মা তাই এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে তোমাকে ঠেলে দিতে পারি না।
ও উত্তরে আমাকে বললো ,আম্মু ওরা সবাই কারও না কারো ছেলে। তুমি চাইলে আমি যাবো না কিন্তু আমার ভাগের লড়াই ওরা লড়ছে। আমি কিভাবে ঘরে থাকবো। আমি নিজেও শুরু থেকেই এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছি। আমি জানি যে ও ঠিক বলছে ,কিন্তু আমি কি বলবো আমি এখনো জানি না।
এই লেখা পোস্ট করার আগে মুহূর্তে আমার ছোট ছেলেও এসে বললো যে ,আগামীকাল মাস্টারমাইন্ড ,সানিডেল ,ম্যাপেললিফ ধানমন্ডি টিউটোরিয়াল এর মতো স্কুলগুলোও নামবে। আমিও যাবো।
কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে এই আন্দোলন চলছে, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ছাত্রদের যৌক্তিক কোটা বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন করেছে, কিন্তু কিছু সংখ্যক লোক ছাত্রদের যুক্তিকে আন্দোলনের বিরোধিতা করছে, এবং তাদের মন আক্রমণ করছে, ইতিমধ্যে কিছু ছাত্র নিহত হয়েছে, আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।