ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী ভ্রমণ।
বেশ কয়েক বছর আগে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী নামক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি দেখতে যাওয়া হয়েছিলো। আসলে সেদিন আমাদের গাজীপুরে একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত ছিল। কিন্তু আমরা কিছুটা সকালেই বাসা থেকে হয়ে গিয়েছিলাম গাজীপুরের উদ্দেশ্যে।
আমাদের প্ল্যান ছিল ভাওয়ালের রাজবাড়ী ও শ্মশানেশ্বরী দেখে তারপর আমরা বিয়ে বাড়িতে যাবো। সেই প্ল্যান অনুসারেই আমরা প্রথমে ভাওয়াল এর রাজবাড়িতে যাই এরপর এই শ্মশানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।ভাওয়াল রাজাদের অনন্য কীর্তি ভাওয়াল এই শ্মশান মঠ। যারা বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পছন্দ করেন তাদের কাছে এই শ্মশান মঠ খুবই আকর্ষণীয় একটা স্থান ।
শোনা যায় যে ,মুন্সিগঞ্জ জেলার বজ্রযোগীনি গ্রামে ভাওয়াল জমিদারদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করতেন এবং পরবর্তীতে ভাওয়াল পরগনার জমিদারি তারা কিনে নিয়ে জমিদারি শুরু করেন।
এই জমিদার পরিবারের সদস্যদের মৃত্যুর পরে তাদের শবদেহ দাহ,সৎকার ও পূজা-অর্চনা করার উদ্দশ্যেই রাজবাড়ী থেকে কিছটা দূরে চিলাই নদীর তীরে প্রায় পাঁচ একর জায়গাজুড়ে এই খানিকটা মোঘল আমলের আদলে এই মঠটি তারা স্থাপন করেছিলেন ।
প্রচলিত রয়েছে যে ,এই মঠ নির্মাণের জন্য ভারতের পুরি থেকে তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত স্থপতি কামাক্ষা রায়কে নিয়ে আসা হয়েছিলো। শবদেহ দাহ করা শেষ হলে তারা এখানে পূজা -অর্চনা করে বাড়িতে ফেরত যেতেন।
এই শশ্মানেশ্বরী মঠ এর নাম ও ছবি দেখে এই জায়গাতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল আমার অনেক দিনের কিন্তু সময় সুযোগ কোনোটাই হয়ে উঠতেছিলো না। কিন্তু এই বিয়ের দাওয়াত আমাকে সুযোগ করে দেয় এখানে যাওয়ার এবং এই সুযোগ আমি লুফে নেই।
ভাওয়াল রাজবাড়ী ও শশ্মান মঠ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমি শুনেছিলাম যে এই শশ্মান এর চারপাশে ঘন জঙ্গলে ঢাকা। কিন্তু বাস্তবে যেয়ে এরকম কোনো দৃশ্য দেখতে পেলাম না। তখনা ধারণা করলাম যে হয়তোবা আগে এই শশ্মান এমনি জঙ্গলে ঘেরা ছিল ,আর এখনো সেই কথাই প্রচলিত রয়ে গেছে কালিয়াকুড়, ভাওয়াল গাজীপুর এসব অঞ্চল আগে ঘন জঙ্গলে ঠাসা ছিল । এখন লোকবসতি হয়েছে।
এখানে রাজ পরিবারের মৃত সদস্যদের নামফলক ও সৌধ রয়েছে। এছাড়াও এখানে পোড়ামাটির ফলকে কারুকাজ করা ৬টি স্তম্ভ বিশিষ্ট শিবমন্দির রয়েছে। বর্তমানে এই স্থানটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অধীনে আছে ,তবে তারা শুধুমাত্র তাদের নামের সাইনবোর্ড টানিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে বলে মনে হলো।
ইট দিয়ে সামান্য সংস্কারকাজ করা হলেও মন্দিরগুলোর অবস্থা আমি বেশ শোচনীয় দেখে এসেছিলাম। খোদাইকরা নকশাগুলো এখনো দৃশ্যমান হলেও শ্যাওলা ধরে ও মন্দিরের অনেক স্থানের দেয়াল পরে যাচ্ছে বলে মনে হলো। তবে এগুলি কয়েক বছর আগে কথা, এর মাঝে উন্নয়ন কাজ হলেও হতে পারে।
তবে এই পুরোনো মন্দিরের বা দিকে আরো দুইটি নব-নির্মিত মন্দির গড়ে উঠেছে এবং তাতে নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়। এছাড়াও ডান দিকে আরো একটি অস্থায়ী মন্দির দেখেছিলাম আমি যেখানে দেবী দুর্গার মূর্তি দেখে এসেছিলাম।
এর পাশেই একটা কবরস্থানও রয়েছে।
- কিছু টিপস ও সতর্কতা
ঢাকার খুব কাছেই হওয়ার কারণে দিন গিয়ে দিনেই ফেরত আসা যায়।এখানে বাস অথবা ট্রেনে করে খুব সহজেই যাওয়া সম্ভব। এর আশেপাশে ভাওয়াল রাজবাড়ী ,বেলাইবিল সহ আরো বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এগুলো অবশ্যই ঘুরে আসবেন।
এটা যেহেতু একটা ধর্মীয় স্থান তাই এখানে গেলে এমন কিছু করবেন না যাতে তাদের ধর্মীয় কাজে কোনো ধরণের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। মন্দিরটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এখানে ঢোকার চেষ্টা করবেন না সেইসাথে এর কোনো ধরনের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করা আইনত দন্ডনীয় । ময়লা ফেলবেন না এবং সন্ধ্যার পূর্বেই এই স্থান ত্যাগ করতে হবে
আসলে আজকে আপনি ভাওয়াল রাজবাড়ী নিয়ে অনেক সুন্দর একটি বিষয়ে আমাদের মাঝে আপনি শেয়ার করেছেন, আসলে আমি এর পাশেই থাকে কিন্তু কখনো যাওয়া হয় নাই কিন্তু আপনার এই পোস্টটি পড়ে আমারও মনের ইচ্ছা জাগছে যে এই ভাওয়াল রাজবাড়ীতেই দেখে আসার জন্য। যাই হোক আপনার ভাওয়াল রাজবাড়ীর এই গল্পটি অনেক সুন্দর ছিল।
আসলে আমরা আমাদের কাছের দর্শনীয় স্থানগুলিতে কমই যাই। এটা যে শুধু আপনি এমন না, আমি নিজেও তাই। আমার আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে যেগুলিতে অনেক বার যাবো যাবো করার পরও যাওয়া হয় নাই। আর এজন্যই হয়তো প্রবাদ আছে যে ,মক্কার মানুষ হজ পায় না। তবে ইচ্ছে আছে সবগুলিই দেখার। এইসব জায়গা আপনার যেহেতু কাছে তাই সময় করে একদিন যেয়ে দেখে আসবেন।
জায়গাটা দেখতেই খুব সুন্দর লাগছে আপনার ওখানে গিয়ে ঘুরে এসেছেন এবং সেই জায়গা সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তার সাথে আপনি কিছু টিপস আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। অবশ্যই সেগুলো মাথায় রেখে ওখানে ঘুরতে যেতে হবে যেহেতু মন্দিরটি একটি পুরনো তাই ওখানে ঢোকা থেকে বিরত থাকতে হবে। ধন্যবাদ চমৎকার ভ্রমণ করার বিষয়টা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আমার কাছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে খুবই ভালো লাগে। এজন্যই সুযোগ পেয়ে হাতছাড়া করি নাই।
মন্দিরটা আসলেই খুব সুন্দর ও অনেক কারুকাজ করা। তবে এখন ধ্বংসের পথে।
এখানে ঢুকাটা আসলেই বিপদজনক তাই না ঢোকাই ভালো।