ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই খাবার এর ইতিকথা।-১

in Incredible Indialast month

lalbagh-fort-2368310_1280.jpg
pixabay

খাদ্যাভ্যাস যেকোনো জাতির সংস্কৃতির অংশ। যেমন, বাঙালির পরিচয় মাছে ভাতে। অবশ্য এর পেছনে কারণও আছে ।এই অঞ্চলে প্রচুর নদী থাকার কারণে এখানে মাছ পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে।এছাড়া এখানে প্রচুর পরিমানে ধান উৎপন্ন হতো। এই ধান আর মাছের প্রাচুর্যতার কারণেই ভাত মাছ হয়ে উঠে এই অঞ্চলের প্রধান খাবার।

অষ্টম-দ্বাদশ শতকের প্রথম সাহিত্যিক নিদর্শন ‘চর্যাপদে’ চালের উল্লেখ রয়েছে ,সাথে দুগ্ধপানের কথাও উল্লেখ আছে। আবার চতুর্দশ শতাব্দীতে অবহট্ট ভাষায় লেখা ‘প্রাকৃত পৈঙ্গল’ বইয়ের একটি পদে বলা হয়েছে,

যে প্রেয়সী (নিয়মিত) ওগরা বা নরম-গরম ভাত কলার পাতায় গাওয়া ঘি-দুধের সংযোগে মৌরলা মাছের ঝোল ও নালিতা শাক পরিবেশন করে, তার কান্তা বা স্বামী (অবশ্যই) পুণ্যবান।’

যদিও ৪০০ বছর আগে ঢাকা যখন প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি পায়, কিন্তু তার বহু আগে থেকেই ঢাকায় জনবসতি ছিল।একেক সময় তাদের খাদ্যতালিকা, রন্ধনপ্রণালি ছিল একেক রকম। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনেরসাথে সাথে ঢাকার আদি খাবারে সাথে অন্য নতুন ধরণের সংস্কৃতির প্রভাব পড়ে।

fishing-6008631_1280.jpg
pixabay

সময়ের সাথে সাথে বহু বিবর্তনের পর খাবারে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন-বিয়োজনে নতুন ধারার খাবারদাবার আত্মপ্রকাশ করে। ঢাকার অধিবাসীদের রসনাতৃপ্তিতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জাতির আগমন এর ফলে তাদের রুচিবোধের সাথে বাঙালি স্বাদ মিশে সৃষ্টি হয়েছে ঢাকাই খাবারের বর্তমান পরিমার্জিত রূপ।

ঢাকা বিশেষজ্ঞদের মতে, অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত ঢাকায় পাল ও সেনরাজাদের অধীনে জনগণের খাদ্যাভ্যাস ছিল এক ধরনের। বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাবে ঢাকার খাদ্যতালিকায় প্রাধান্য ছিল মূলত ভাত ও বিভিন্ন ধরণের নিরামিষ এর । সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এতে মাছ ও দুধ ঢুকে যায় ঢাকাবাসীর দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায়।

ai-generated-8250948_1280.png
pixabay

সুলতানি আমলের কথা বললে তখন ঢাকার খাদ্যাভ্যাস ছিল তুর্কি, আরব, ইরানি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত । এসময় তাদের মাংস ও রুটি খাওয়ার অভ্যাস ঢাকার ভাত-মাছের অভ্যাসের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।
এরপর আসে মোগলরা। তাদের সাথে উত্তর ভারতীয়সহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ আসে এ সময় ।একসময় সুবেদাররা চলে যাওয়ার পরও থেকে যায় এই বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষেরা । পরবর্তীতে মাঝে বিয়েশাদির মাধ্যমে পারস্পরিক সংস্কৃতি আদান প্রদানের মাধ্যমে ঢাকার খাবার ও খাদ্যাভ্যাসে নিয়ে আসে যুগান্তকারী পরিবর্তন।

তবে ঢাকার খাবারে মোঘলদের প্রভাব সবচাইতে বেশি। সুবেদার ইসলাম খানের বাবুর্চিদের হাতে তৈরি খাবার মোগল খাবার হিসেবে পরিচিতি পায়। অত্যন্ত ভোজনরসিক হিসেবে পরিচিত মোগলরা খাবার নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করতেন। কোন খাবারের স্বাদ কিভাবে বাড়ানো যায় এটা নিয়ে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতা চলতো ।

shish-kebab-2665944_1280.jpg
pixabay

সেসময় তারা কাবাবের জন্য যে গরু ব্যবহার করতো ,সেই গরুকে জাফরান খাওয়াতো নিয়মিত। শোনা যায় , এতে মাংসের মধ্যে একধরনের সুগন্ধ এসে স্বাদ বাড়িয়ে দিতো কাবাবের। এই যুগে ঢাকাই খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয় বেশকিছু সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবার। ঢাকার সাধারণ মানুষজন এসব সুস্বাদু খাবার লুফে নেয়।



Thank You So Much For Reading My Blog

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFZtXBBbvSyg7mut1UXDfs91vJBbjvRWniW7kqxJWyzxfBiUR15zUSmmBJcNfGq...Ht8czzm6jLNcmNtMoo5CkngVjPkfuaMSLwsyZ4C5H6d9jw4uJUs6CASqouF5fYyKSD1UQmTGYWz78pUD8S1PSYbAD7jA5t5jwPtEujVi2vgQth35XJdpamtpjp.png

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSj1ATxRsaEvyH89EyziiK3D1ksn1tTDvDwLCveqrhctVcDnDqtNbsqFMtuqD1RetzrgjG.png

45GhBmKYa8LQ7FKvbgfn8zqd6W2YEX34pMmaoxBszxVcFZtXBBbvSyg7mut1UXDfs91vJBbjvRWniW7kqxJWyzxfBiUR15zUSmmBJcNfGq...Ht8czzm6jLNcmNtMoo5CkngVjPkfuaMSLwsyZ4C5H6d9jw4uJUs6CASqouF5fYyKSD1UQmTGYWz78pUD8S1PSYbAD7jA5t5jwPtEujVi2vgQth35XJdpamtpjp.png

Sort:  
Loading...

যখন মেডিক্যাল কলেজ এ ছিলাম, তখন আশে পাশে ছিল নান্না বিরিয়ানি, শমসের ভুনা খিচুড়ি, রাজ্জাক হোটেল। বিরিয়ানি ছাড়া ঢাকাই খাবার জমেই না।

আর রমাযানের সময় ছিল চকবাজারের ইফতারীর জমজমাট আসর।

খাবার নিয়ে ঢাকাইয়াদের কোন কম্প্রোমাইজ নাই😜

সুন্দর পোস্ট লিখেছেন ইতিহাস এর প্রেক্ষাপটে।

Posted using SteemPro Mobile

 last month 

তাহলেতো এ সময় এসব খাবার এতো খেয়েছেন যে এখন আর না খেলোও কোন আফসোস থাকার কথা না 😀
এটা একদম ঠিক কথা বলেছেন , ঢাকাইয়াদের খাবার নিয়ে কোন কম্প্রোমাইজ নাই।
আমার এক ফ্রেন্ড আছে, ওর জামাই এর প্রায়ই মাঝ রাতে বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে হয়।আর এমন হলে ওকে ঘুম থেকে টেনে তুলে।আর ও ফ্রিজ থেকে টেনে মাংস বের করে গরম পানিতে ভিজিয়ে ওর জামাইকে বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়ায়। তাই খেতে চাইলেও পুরনো ঢাকার মেয়ে বিয়ে করতে হবে। যে নিজেও খাবে আর সবাইকে খাওয়াবে😜
ধন্যবাদ আপনাকে চমৎকার মন্তব্য করার জন্য।

Posted using SteemPro Mobile

 last month 

ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই খাবার এর ইতিকথা জানতে পেরে খুবই ভালো লাগলো ৷ আসলে একেক জায়গায় একেক ধরনের বিখ্যাত খাবার থাকে যা মানুষ খেয়ে তঁপ্তি নিতে পারে ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

 last month 

ঠিকই বলেছেন একেক জায়গায় একেক ধরনের বিখ্যাত খাবার থাকে যা খেয়ে মানুষ তৃপ্তি পায।

আর পুরানা ঢাকাইয়ারা তো খাবার খাওয়ার জন্য সারা দেশের মধ্যে বিখ্যাত। তারা যেমন নিজেরা খায় তেমনি অন্যদেরকেও খাওয়ায়।

ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে।
ভালো এবং সুস্থ থাকবেন সব সময় এই শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

 last month 

আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই আমার মন্তব্যে রিপ্লে দেওয়ার জন্য ৷ শুভকামনা রইলো আপনার জন্য ৷ ভালো থাকবেন 🧡 দিনটি আপনার জন্য শুভ হোক এই কামনাই করি সৃষ্টিকর্তার কাছে ৷

 28 days ago 

এই ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে আগে কিছুটা শুনেছিলাম। মোগল আমলে সবাই কাবাব বানানোর জন্য গরুর মাংস ব্যবহার করত। আপনি এই ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে প্রথম পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 28 days ago 

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে জানেন না এমন মানুষ আমাদের দেশে খুব কমই আছে। বাংলাদেশের মানুষ এর খাওয়া মানেই পুরানো ঢাকার খাবার। এরা খাওয়াতে এবং খেতে দুটো করতেই খুব পছন্দ করে।
আপনার মন্তব্য করে খুব ভালো লাগলো। এতে সুন্দর করে একটা মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো এবং সুস্থ থাকবেন সবসময় শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 27 days ago 

অসংখ্য ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য, ঢাকা ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে অনেক তথ্য আমাদের শেয়ার করেছেন।
মুঘল সম্রাটদের আমলে শেয়ার করেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

 27 days ago 

এই পোস্টের মাধ্যমে খুব সুন্দর করে ঢাকায় খাবারের কথা তুলে ধরেছেন। আমার কাছে ঢাকাই খাবার খেতে খুবই মজা লাগে। মাংস আর রুটি আমার অন্যরকম পছন্দের একটি খাবার। আর কাবাব পেলে তো কথাই নেই। পেট ভরে গেলেও মনে হয় আরো খাই। পেটের ক্ষুধা মিটে গেলেও চোখের ক্ষুধা মিটতে চায় না সহজে।

 26 days ago 

ঢাকাই খাবার আসলে সবারই পছন্দ। তবে অথেন্টিক ঢাকাই খাবার পাওয়া কিছুটা কঠিনই বর্তমানে। তারপরও যা হাতের কাছে পাওয়া যায় সেগুলোও সবার পছন্দেরই খাবার।
রুটি মাংস পছন্দ করে না এমন মানুষ কমই আছে।আপনার মতোই আমিও কাবাব খুব পছন্দ করি।
ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পড়ে। এতো সুন্দর করে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.29
TRX 0.12
JST 0.034
BTC 63010.40
ETH 3137.33
USDT 1.00
SBD 3.85