ভয়াবহ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা নগরায়নের স্রোতে ভেসে।
ছেলের ডাকে এগিয়ে যেয়ে ছবিগুলি দেখতেই কেমন জানি একটা অনুভূতি হলো। বেশ কিছুদিন আগে ঠিক এমনি একটা অনুভূতি হয়েছিল আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে।
ভাইয়ের গাড়ির ড্রাইভার আমাকে নিয়ে একটা অপরিচিত জায়গায় নিয়ে গাড়ি থামালো। জায়গা বললে ভুল হবে ,বলা চলে রীতিমতো একটা শহর। চারদিকে উঁচুউঁচু বিল্ডিং মাঝখান দিয়ে রাস্তা কিন্তু জায়গাটা আমার একদমই অপরিচিত। এইখানে আমি বড়ো হয়েছি কিন্তু আজকে আমি চিনতে পারছি না। সবচেয়ে বড়ো কথা এটা আমার পরিচিত আমার এলাকার সাথে কোনোভাবেই মিলছে না।
ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কোন জায়গা। সে রহমত নগর বা এই জাতীয় একটা নাম বললো যা আমার একদমই অপরিচিত। ড্রাইভার কোনদিক দিয়ে বের করে আনলো সেটাও বুঝতে পারলাম না ঠিক মতো।
ফেরত এসে আমার ভাইকে বলে ও যে জায়গার কথা বললো সেখানে আমি কয়েক বছর আগে শেষবার ছেলেকে নিয়ে হাঁটতে গিয়েছিলাম।জায়গাটা নিরিবিলি ছিল বলে আমার ভাই সেখানে দৌড়াতো প্রতিদিন। এই কয় বছরে রাতারাতি এতো পাল্টে যাবে চিন্তাও করতে পারি নাই।
একই রকম লাগলো আজকে ল্যাপটপে থাকা দিয়াবাড়ির পুরোনো ছবিগুলি দেখে। আগে আমরা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই যেতাম এখানে। আমার ভাই এসে প্রথমে এই জায়গার সন্ধান দিয়েছিলো আমাকে। ও বলেছিলো যে সন্ধ্যার দিকে ওর ড্রাইভার রাস্তা ভুল করে ঐদিকে ঢুকে পড়েছিল কিন্তু বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছিলো না । দুইপাশে কাশবন আর সব রাস্তায় প্রায় একই রকম থাকার কারণে। ও ভয় পাচ্ছিলো ওদেরকে কেউ কিডন্যাপ না করে।
ওর মুখে এই গল্প শোনার বেশ অনেকদিন পরে প্রথম ওই দিকে গিয়েছিলাম ছেলেদেরকে নিয়ে বেড়াতে। ভাঙাচোরা রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়েছিলাম ,তখন বিলিডিং গুলি মাত্র বানানো হচ্ছে। পাশে বড়ো বড়ো ক্রেইন দাঁড়িয়ে আছে। তখন আমরা বলাবলি করতেছিলাম এই ভেতরে কে আসবে থাকতে। এখানে মানুষ আসতে কম করে হলে ২০ বছর লেগে যাবে। ভাঙাচোরা পেরিয়ে লেকের মতো এক জায়গাতে এসে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম।পেছন দিয়ে একটু পর পরই প্লেন নামতেছিলো।
সেদিন আমরা ছাড়া আর কয়েকজন মানুষকে দেখতে পেয়েছিলাম ,কিন্তু তারাও বোধকরি স্থানীয় মানুষজনই ছিল । এটা খুব সম্ভবত ২০১৫ /১৬ সালের দিকে হবে। এর পরের বারই যেয়ে দেখি লোকজন বেড়ে গেছে অনেকটা। চটপটি বিক্রি করতেছে দুই-এক জায়গাতে। আস্তে আস্তে আরো মানুষজন আস্তে দেখি কিন্তু তারপর নিরিবিলিই বলা যেত।কিন্তু শেষবার গিয়েছিলাম কোরোনার আগে, গিয়ে মনে হলো মেলায় এসেছি। তারপর আর যায় নাই , ইচ্ছেই হয় নাই। ইদানিং অনেক সময় বিভিন্ন ভিডিওতে দিয়াবাড়ি চোখে পরে কিন্তু সেটা ঐভাবে নজরে আসে নাই , স্বাভাবিকই লেগেছে।উন্নতি দেখে বরং একধরণের ভালোলাগা কাজ করেছে।
কিন্তু আজকের এই ছবিগুলি যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো যে ,দেখো কত পরিবর্তন। সাথে সাথে এটাও মনে হলো যে ,কোথাও পড়েছিলাম যে ,২০৫০ সালে আমাদের দেশে চাষাবাদ যোগ্য জায়গাও থাকবে না। ভয়াবহ লাগলো এটা চিন্তা করে যে কোথায় যাচ্ছি আমরা এই নগরায়নের স্রোতে ভেসে?
আসলে যত দিন যাচ্ছে ততই বাসা বাড়ি এবং বিল্ডিং বাড়তেছে। ঠিক তেমনি আপনার গল্প পরেও আজকে তাই মনে হল।
আপনার ভাইয়ের গাড়ির ড্রাইভার হঠাৎ এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যেখানে আপনি কখনো যাননি মনে হয়েছে।
কিন্তু পরে যখন জানতে পারলেন আপনার পরিচিত জায়গায়। কিন্তু এখন অনেক বিল্ডিং হওয়ার কারণে আপনি চিনতেই পারেননি।