একজন সরকারি কর্মকর্তা ও ঋষি বাল্মিকী কথন।
গতকালই সম্ভবত ইউটিউবে আমাদের দেশের এক তুমুল আলোচিত দূর্নীতিগ্রস্থ পলাতক সরকারি কর্মকর্তার মেয়ের ফোনালাপ ফাঁসের অডিও ক্লিপ শুনতেছিলাম।সে কোন এক আত্নীয়র সাথে কথা কথা বলতেছিলো।অনেক অভিযোগ এর ফাঁকে এক সময় বলতে ছিলো যে, এটা ঠিক হলে বিচার হওয়া প্রয়োজন। বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ এর শেষ নেই। অবশ্য কিছু অভিযোগ যে একবারেই অবান্তর এমনও না।
শুনতে শুনতে ছোটবেলায় পড়া ঋষি বাল্মিকীর কথা মনে পরে যাচ্ছিলো। যতটা মনে পরে , তার নাম ছিলো রত্নাকর ও দস্যুতা ছিলো তার পেশা। বনের ভেতর দিয়ে চলা মানুষজন এর জিনিসপত্র নিতো।
একদিন এক সন্যাসীকে আটকানোর পরে সেই সন্যাসী তাকে বলে যে, তুমি যে এই কাজ করতেছো এর জন্যতো তুমি পাপের ভাগিদার হবে এবং তোমার নরকবাস হবে। সে উত্তরে জানায় যে, সে সংসারে সবার মঙ্গলের জন্য এই কাজ করতেছে আর এজন্য যদি তাকে পাপ হয়-ই তাহলে তার এই পাপের ভাগিদার তার পরিবার এর সবাই হবে।
এই কথা শুনে সন্যাসী তাকে বলে যে, আমি কোথাও যাবো না কিন্তু তুমি তোমার পরিবারের লোকজন এক শুনে আসো যে তুমি যাদের জন্য এই দস্যুতা করতেছ তারা তোমার পাপ কার্যের অংশীদার হতে রাজী আছে কিনা।
সে বাড়িতে এসে তার বাবা-মা, স্ত্রী -সন্তান সবাইকে জিজ্ঞেস করে যে তার পাপের ভাগিদার তারা হবে কিনা। উত্তরে সবাই মানা করে দেয় এই বলে যে, আমাদের ভরনপোষণ করা তোমার দায়িত্ব। তুমি কোথায় থেকে আনতেছ সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।আমরা কোনমতেই তোমার পাপের ভাগিদার হবো না।তোমার পাপ শুধু তোমারই।
এই কথা শুনে রত্নাকর দস্যু তার দস্যুতা ছেড়ে দিয়ে ঈশ্বরের ধ্যানে বসে পরেন এবং পরবর্তীতে তিনি ঋষি বাল্মিকী নামে পরিচিত হন।
এই ঋষি বাল্মিকীর কথা মনে পরার এটাই কারন যে, সারাজীবন এই কর্মকর্তা তার অবৈধ পথে অর্জিত সব টাকা তার স্ত্রী -সন্তানদের জন্যই উপার্জন করেছেন। যে মেয়ে তাকে নিয়ে এতো কথা বলেছেন সে নিজেও দেশে বিপুল সম্পদের মালিক এর পাশাপাশি কানাডাতে বিলাসি জীবন যাপন করছেন।যার অতি সম্প্রতি মাক্লারন গাড়ির সাথে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
আর এগুলো সবই তার বাবার অবৈধ পথে অর্জিত সম্পদের মাধ্যমেই। কিন্তু সেই ঋষি বাল্মিকীর সন্তানদের মতোই তিনি তার পিতার পাপের ভাগিদার হতে রাজী নন।
এটা এমন না যে শুধুমাত্র এই কর্মকর্তার কন্যাই এমন। আমার পরিচিত এক দূর্নীতিগ্রস্থ মৃত কর্মকতার ছেলেকে দেখেছি কথায় কথায় মজা করে প্রায়ই বলে আরে আমার বাবারতো সব ঘুষের টাকা।
এই যদি হয় অবস্থা। দেশের মানুষের কাছেতো এরা চোরই কিন্তু ঘরের মানুষেরাও সন্মান করে না। অথচ তারই টাকায় তারা রাজকীয় জীবন-যাপন করে।
ঋষি বাল্মিকী বুদ্ধিমানের কাজ করেছিলেন সব কিছু ছেড়ে দিয়ে। যার কারনে এখনো মানুষ তাকে সন্মান করে। কিন্তু এরা আরো চাই, আরো চাই করতে করতে একসময় টাকা নিয়ে অনেকে দেশ ছেড়ে পালাতে সক্ষম হলেও সবার কাছে হয়ে যায় অসন্মানের পাত্র এবং চোর।
অবশ্য এতে এদের কোনরকম অনুশোচনা আসে বলে মনে হয় না।
আপনি দুনিয়াতে ফ্যামিলির জন্য যা কিছু করেন না কেন, সেটা খারাপ কাজ হোক কিন্তু ভালো কাজ হোক এর সকল কিছুর ভাগেদার আপনাকে নিতে হবে।
যদি আপনি খারাপ কাজ করেন এই পাপের ভাগীদার অবশ্যই আপনার নিতে হবে এতে ফ্যামিলির কোন লোকজন আপনার এই পাপের ভাগীদার কোনদিনই নেবে না এটাই স্বাভাবিক
পরিবারের সবাই জানবে আপনি ভালো কাজ করেন কিংবা খারাপ কাজ করেন তাদের প্রয়োজনগুলো আপনার মেটাতেই হবে কিন্তু এই পরিবারে মানুষের কাছে যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন যে এই যে আমি পাপ কাজ করছি এটার ভাগীদারকে তোমরা নিবা এটা কোনদিন নেবে না। এটাই হলো দুনিয়া
যাইহোক আপনি যে পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করছেন সেটা অসাধারণ ছিল আপনার অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আপনি।
আমাদের পাপের ভাগীদার কেউ হবে না সবার কাছে যখন জানতে চাইবো। সবাই একটা কথাই বলবে আমাদের ভরণপোষণ এবং আমাদের দায়িত্ব একমাত্র তোমার ওপর। তুমি কিভাবে সেটা পূরণ করবে তুমি জানো। তবে নিজের জায়গা সব থেকে অবশ্যই পরিবারের দায়িত্বটা গ্রহণ করতে হবে। তাই মৃত্যুর পরে আমরা যদি আমাদের ভালো কাজের অংশীদার কাউকে দেবো না। এবং মন্দ কাজের অংশীদারও কাউকে দিবো না। তাই জীবনে ভালো থাকা উচিত। ধন্যবাদ উপরোক্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভালো থাকবেন।