আমরাই পারি সমাজকে পাল্টে দিতে, প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা।

in Incredible India6 months ago (edited)
FB_IMG_1715600877540.jpg

আজকে সকাল ১১ টার দিকে কলিং বেল এর সাউণ্ড পেয়ে ভাবলাম হয়তোবা বুয়া এসেছে। দরজা খুলে দেখি আমাদের বাসার দারোয়ান খুরশিদ হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে এক হাতে বেশ বড়সড় একটা ব্যাগ আর অন্য হাতে মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে।
দেখে আমি ভাবলাম হয়তোবা আমাদের বাড়িওলার বাসা থেকে পাঠিয়েছেন। ওই বাসা থেকে ক'দিন পর পরই বিভিন্ন রকমের জিনিস দিয়ে যায়। কিসের মিষ্টি জিজ্ঞেস করার আগেই হাসিমুখে বললো সিয়াম এর রেজাল্ট দিয়েছে, ও এবার ৪.৬ পেয়েছে। আপনাদের জন্যই ওর পড়া হচ্ছে।

20240513_180150.jpg

আসলে আমদের জন্য বললেও আসলে আমরা তেমন কিছুই করি নাই । মাঝে মাঝে ছেলের কথা বলে এই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের কাছে টাকা চায়। যার মন চায় দেয় আবার দুই-একজন দেয়ও না।তবে ও সবাইকে মিষ্টি দিচ্ছে। গতকাল যে এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে এটা অবশ্য গতকালই শুনেছিলাম।

গতকাল সন্ধ্যার দিকে আমার ছোট ছেলে কোচিং থেকে এসে বলেছিলো যে আম্মু জানো এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে আর তাহসিন জিপিএ 5 পেয়েছে। তাহসিন আমার এক কাজিন এর ছেলে। শুনে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিলো। মানুষ এর মনের আনন্দ- বেদনা বোধহয় খানিকটা ছোঁয়াচে। কারো কস্ট দেখলে কস্ট লাগে আবার কারো আনন্দে আনন্দিত হয়ে উঠে।
কিন্তু কিছুক্ষন আগে অন্যরকম এক ভালো লাগাতে মন আচ্ছন্ন হয়ে গেল। কয়েকদিন পরে আজকে ফেসবুকে ঢুকেছিলাম। সেখানে দেখলাম আমার মামী একটা ছবিসহ পোস্ট শেয়ার করেছে।

FB_IMG_1715597135030.jpg

বেশ কয়েক বছর আগে আমি আমার মামার মুখে শুনেছিলাম যে, তাদের বাসায় গ্রাম থেকে একটা ছোট মেয়েকে আনা হয়েছে বাসার টুকটাক কাজ আর মূলত আমার কাজিনকে দেখাশোনা করার জন্য। মামী ওইভাবে বাসায় টাইম দিতে পারতো না, যার কারনে আমার ওই পিচ্চি কাজিনকে একাই সময় কাটাতে হতো বাসার মাঝে ।

কিন্তু যাকে আনা হয়েছে তার একটা জিনিস আমার মামা-মামীর নজরে আসে। সে সুযোগ পেলেই লুকিয়ে নিউজপেপার কিংবা বিভিন্ন ধরনের বই খুলে দেখতো কিন্তু কাউকে দেখলেই দ্রুত রেখে দিতো। এটা খেয়াল করে ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করে পড়তে চায় কিনা। সেই মেয়ে সাথে সাথে রাজী হয়ে যায়।

তাকে মামী কলাবাগান লেকসার্কাস গার্লস স্কুলে ভর্তি করে দেয়। সে ঘরের কাজকর্ম গুছিয়ে স্কুলে চলে যেত। এভাবেই সেভেন ,এইট ,নাইন, টেন পর্যন্ত পড়ছে সুইটি নামের মেয়েটা। গতকাল সেই মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে এবং ৪.১১ এসেছে।

এত কিছু লেখার এটাই কারণ যে, আমরা যদি আমাদের পাশের মানুষটার দিকে সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে তার জীবন অনেকটাই চেঞ্জ হয়ে পারে। এরকম সবাই যদি করে করে তাহলে একদিন পুরো সমাজটাই পাল্টে যাবে। এটা শুধু যে পড়াশোনার ক্ষেত্রেই এমনও না। সবকিছুতেই হতে পারে। প্রয়োজন শুধু আমাদের একটু সদিচ্ছা।

দুটো ছবি ফেসবুক থেকে নেয়া

Thank You So Much For Reading My Blog

HfhigaP72YBd6w1Kgyw9eMoDygDx869D1PKa6jG8D9C9MQ5rA8UuUvaGRermEeDs8YYv1jb4TX4QUAAbRoaAJFmmUaGZUojU1gWvH66zbc...wdYfZe5zwHZgv7fSFyfX5YWvwFGCJXq8EuycKeaUaXARJjpb61mUGxLAjp1XsJ6PQbzF28Bu6LQTgryC3MSekzsBvnPpE3TAcMAMTMQbf9uvFuTHezySGMDKr6.png

Sort:  
Loading...
 6 months ago 

সত্যিই অন্যান্য দিনের পোস্ট পড়ার থেকে, আপনার আজকের পোস্টটা পড়ে একদম মন ছুয়ে গেল। মানুষ চাইলে কি না করতে পারে। কিন্তু মানুষ একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে এরকম অনেক মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
যেমনটা আপনার একজন পরিচিত মানুষের মাঝে হয়েছে। সত্যি কথাগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো।
আপনার মামা-মামির জন্য দোয়া করি এবং ওই মেয়ের জন্য শুভকামনা রইল। সে যেন অনেক ভালো মানুষের মতো মানুষ হয়।

 6 months ago 

ঠিকই বলেছেন আমাদের সামান্য সাহায্য একজন মানুষ এর জীবন পাল্টে দিতে সক্ষম।আমিও মন থেকেই চাই মেয়েটা পড়াশোনা করে মানুষ এর মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুক আর সবচেয়ে বড় কথা ও নিজেও সমাজের পিছিয়ে পরা মানুষদের জন্য কিছু করুক।
আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

 6 months ago 

মানুষ এর মনের আনন্দ- বেদনা বোধহয় খানিকটা ছোঁয়াচে। কারো কস্ট দেখলে কস্ট লাগে আবার কারো আনন্দে আনন্দিত হয়ে উঠে।

  • একদমই সঠিক বলেছেন সত্যি বোধ হয় এই অনুভূতিগুলো ছোঁয়াচে হয়। আপনি আজ পোস্টে যাদের কথা লিখেছেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদেরকে চিনি না, বা তাদের সম্পর্কে আপনার এই পোস্টের বাইরে আর কোনো তথ্য জানিও না। কিন্তু কি অদ্ভুতভাবে আপনার সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার পর আমার মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। বুঝলাম আপনার শেয়ার করা এই আনন্দের খবরগুলো আমার মনেও আনন্দ জাগিয়ে তুললো।

  • এইরকম প্রতিভা হয়তো আমাদের আশেপাশে অনেক রয়েছে, শুধু আমাদের নজর তাদের উপরে কখনো পরেনা, বা আমরা কখনো বুঝতেই চাই না যে যারা আমাদের থেকে অনেকখানি নিম্ন শ্রেণীর, তাদের মধ্যেও প্রতিভা থাকতে পারে। দূর থেকে আপনার মামা মামির জন্য আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম রইলো, যে মেয়েটিকে গ্রাম থেকে আনা হয়েছিল তার বাচ্চার সঙ্গ দেওয়ার জন্য, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখে সেই মেয়েটিকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ার মতন মানসিকতা, খুব কম মানুষের মধ্যেই আছে।

  • ঠিক উল্টো দিকেই আপনাদের বাড়ির দারোয়ানের কথা মনে পড়লো। সাধ্য তার হয়তো খুবই সামান্য, কিন্তু মানুষ হিসেবে তিনি অনেকের থেকে অনেক উঁচুতে। সেই কারণে যারা তাকে সাহায্য করেছে, বা যারা তাকে সাহায্য করেনি, সকলের সাথেই তিনি তার আনন্দ ভাগ করে নিয়েছেন। আর এখানেই আসলে মানবিকতার পার্থক্য।

  • আপনার পোস্টে উল্লেখিত প্রতিটি বাচ্চা যেন ভবিষ্যতে ভালো মানুষ হতে পারে,দূর থেকে এটুকুই প্রার্থনা রইলো। ভালো থাকবেন।

 6 months ago 

আমারও আপনার মতো একটাই চাওয়া এরা ভালো মানুষ হোক। ভালো লাগলো আপনার৷ চমৎকার মন্তব্য পড়ে।
ভালো থাকবেন সবসময়।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.16
JST 0.028
BTC 74526.95
ETH 2591.86
USDT 1.00
SBD 2.44