বিলুপ্তির পথে হাজার বছরের সমৃদ্ধ মৃৎশিল্প।

in Incredible India11 months ago
ধলেশ্বরীর নদীর একটা শাখার নাম বংশী। এই বংশী নদী ধামরাই এর বুক চীরে চলে গেছে। কিছুটা সামনে এগিয়ে আবারও ধলেশ্বরী নাম নিয়েছে।এই বংশীর তীরেই কাগুজিপাড়ার বিখ্যাত পাল পাড়া।সেখানে বহু শতাব্দী ধরেই বসবাস করে আসছে মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত পাল সম্প্রদায়ের লোকজন। আমাদের দেশের মৃৎশিল্পের এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে। সেই ঐতিহ্যের রূপকারেরাই হলেন এই কুমার শ্রেণির মানুষজন।এই কুমার শ্রেণী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।যারা পাল পদবিতেই পরিচিত। বংশপরম্পরায়ই তারা এই মাটির জিনিসপত্র বানানো কাজ করে আসছেন। তারা তাদের শৈল্পিক দক্ষতা ও মনের মঝে লুকায়িত মাধুর্য দিয়ে চোখ ধাঁধানো এই সব কাজ করে থাকেন।


pixabay.

খুব ছোট থেকেই এই পালপাড়াতে আসা যাওয়া ছিলো আমার।কারন আমার স্কুল থেকে খুব একটা দূরে ছিলো না যার কারনে প্রায়ই যাওয়া হতো। ছোট বেলায় যেমনটা দেখেছি এখনো তার থেকে খুব একটা পরিবর্তন আসে নাই সেখানে। বেশির ভাগই পুরোনো টিনের ঘর,যার ভিতরটা দিনের বেলাতেও অন্ধকার। দুই একটি ঘর দেয়াল ঘেরা। সরু সরু রাস্তা।প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছোট ছোট মেশিনে পা চালিয়ে মাটি কাটছেন অনেকে।কাচা মাটির তৈরি দই এর পাতিল,টব,ফুলদানি, পিঠে বানানোর ছাঁচ এর মতো নানা জিনিস শুকাচ্ছে জায়গায় জায়গায় আবার কেউ রং করছে।


pixabay.

পূর্বে বর্তমানের মতোএতসব উন্নত তৈজসপত্র না থাকার কারনে মৃৎশিল্পীদের তৈরি সামগ্রিই ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সামগ্রী ।শুধুমাএ যে আমাদের দেশে এমন না পৃথিবীর প্রায় সব কটা উন্নত সভ্যতার বিকাশের শুরুতে মৃৎশিল্পের ব্যবহার দেখা যায় । বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, মৃৎশিল্পের প্রথম প্রচলন চীনে হয়েছিল । যে শহরে এর প্রথম প্রচলন ঘটেছিলো সেই শহরটি আজও মৃৎশিল্পের শহর নামেই পরিচিত । তাদের হাত ধরেই এটা ছড়িয়ে পরে এশিয়া, ইউরোপে সহ সারা পৃথিবীতে ।


pixabay.

মাটি ছাড়া মৃৎশিল্পের কাজ করা সম্ভব না। তবে সব ধরনের মাটি দিয়ে চাইলেই এই কাজ করা সম্ভব হবে না। এর জন্য পরিস্কার এঁটেল মাটির প্রয়োজন হয়।শুধু এঁটেল মাটি হলেই কাজ হবে এমন ও না।এর৷ জন্য পরিশ্রম, দক্ষ হাত,আর শৈল্পিক নৈপুণ্যের প্রয়োজণ।এক সময় এই মাটির তৈরি তৈজসপত্রই ছিলো এদেশের ঘরে ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। শুধুমাত্র ধামরাই না, রাজশাহী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন শহরে কারিগররা একচেটিয়া রাজত্ব করতেন। তাদের তৈরি আসবাবপত্র, হাঁড়ি-পাতিলই ছিল আমাদের সংস্কৃতির অংশ। কিছু বছর আগেও আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ ছিল মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তখন মাটির তৈরি প্রতিটা জিনিসের চাহিদা এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতো। কিন্তু এখন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই সব মাটির জিনিসপত্রের চাহিদার জায়গা দখল করে নিচ্ছে প্লাস্টিক, কাঁচ এর ধাতব উপাদান সমূহ। নামে মাএ মূল্যে বিক্রি হয় এত কস্টে তৈরি এই সব মাটির জিনিসপত্র। যার কারনে মৃৎশিল্পীরা তাদের কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে অন্য পেশায় যুক্ত হচ্ছেন।দিনে দিনে এক মৃত শিল্পে পরিনত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে এক সময়ের সমৃদ্ধ এই শিল্প।শুধুমাত্র সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমেই এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। যাতে করে এটা আমাদের অন্যতম রফতানি পণ্য হিসেবে বিদেশে স্থান নিতে পারে আর আমাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে। ভবিষ্যতেএই শিল্প যাতে ধ্বংসের পথে আরো এগিয়ে না যায় তার সব প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

pixabay.



Thank You So Much For Reading My Blog
Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 62567.99
ETH 3431.85
USDT 1.00
SBD 2.47