শুভ বন্ধুত্ব দিবস (Happy Friendship Day)
|
---|
Hello,
Everyone,
আজ বন্ধুত্ব দিবস। "বন্ধুত্ব" শব্দটির সাথে আমরা প্রত্যেকেই পরিচিত। জীবনের ব্যস্ততায় ছুটে চলতে চলতে এই দিনগুলোর কথা প্রায় ভুলতেই বসেছি।
যদিও অনেকের মতো আমিও ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি যে, মাদার্স ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, ফ্রেন্ডশিপ ডে, এই সমস্ত কিছু পালন করার আসলে নির্দিষ্ট কোনো একটি দিন হতে পারে না। কারণ এই সম্পর্ক গুলোর মূল্যায়ন নির্দিষ্ট কোনো দিনে করা সম্ভব নয়, কারণ এই সম্পর্ক গুলো আমাদের আজীবনের।
তবে এ কথাগুলো বুঝতে জীবনের অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আমাদেরকে সহ্য করতে হয়, কারণ একটা সময় এই দিনগুলো নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই অনেক স্বপ্ন, অনেক প্রত্যাশা থাকে। কারণ সেই সময় জীবনের বাস্তবতার সাথে পরিচয় হয় না আমাদের। তাই এই ছোট্ট ছোট্ট জিনিস গুলোকে নিজেদের মতন করে সেলিব্রেট করার, এক আবেগ অনুভব করি আমরা।
যাইহোক সন্ধ্যা বেলায় প্রয়োজনেই হোয়াটসঅ্যাপ খুলেছিলাম, দেখলাম বেশ কিছু মেসেজ পেন্ডিং হয়ে আছে। কারা কারা মেসেজ করেছে সেগুলো এক নজর দেখে নিয়ে, শুধুমাত্র একজনের মেসেজ ওপেন করে দেখলাম। তার পাঠানো ছবি দেখে বুঝতে পারলাম আজ ফ্রেন্ডশিপ ডে অর্থাৎ বন্ধুত্ব দিবস।
মেসেজটা করেছিল রাখি, আমার বান্ধবী। যার সম্পর্কে আপনারা হয়তো সকলেই কমবেশি জানেন। ওর ছবিটি দেখার পর, অনেকগুলো মুখ ভেসে উঠলে চোখের সামনে।
যদিও বা তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মুখ প্রায় ম্লান হতে বসেছে। কারণ তাদের সাথে বহু বছর কোনো যোগাযোগ নেই। তবে একটা সময় তারাই কিন্তু আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলো। যখন তাদের সাথে সময় কাটাতাম, তখন মনে হতো জীবন বুঝি বা তাদেরকে ছাড়া একদমই অসম্পূর্ণ। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি আমাদের জীবনের সমস্ত অসম্পূর্ণতা, কখন, কি ভাবে পূর্ণ করে তোলে, তার হিসেব মেলানো বড় কঠিন।
আর ঠিক এই কারণেই কিছু মানুষ ধীরে ধীরে জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, ঠিকই তেমন কিছু মানুষ জীবনের সাথে যুক্ত হয়েছে। তবে আমার মনে হয় বন্ধুত্ব এমন একটি সম্পর্ক, যেটা প্রতিটা সম্পর্কের মূল ভীত হওয়া উচিত। তবে বাস্তবে তা সম্ভব হয় না কখনোই।
কারণ আমাদের জীবনে খুব কম এমন সম্পর্ক তৈরি হয় যেখানে কোনো স্বার্থ থাকে না। আমরা সকলেই আমাদের জীবনে, পাওয়া আর না পাওয়ার হিসেব নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তবে যাদের সাথে আমাদের এই হিসেবে থাকে না, সম্পর্কে কোনো স্বার্থ থাকে না, কোনো লড়াই থাকে না, তারাই আমাদের জীবনে বন্ধু হয়ে থেকে যায়।
জীবনে অনেক কিছুর জন্য আফসোস থাকলেও, অভিযোগ থাকলেও, কিছু কিছু জিনিসের উপস্থিতি জীবনের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে বাধ্য করে। অন্তত আমার ক্ষেত্রে তেমনটাই। কারণ আমি আমার জীবনে এমন সম্পর্ক পেয়েছি, যার জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে, নিজের জীবনের কাছে, সত্যিই কৃতজ্ঞ।
না প্রতিদিন তার সাথে কথা হয় না, দেখাও হয় না, তবে যখন দেখা হয়, বা কথা হয়, তখন মনে হয় না যে মাঝখানে এতগুলো দিন, মাস, বছরের দূরত্ব ছিলো। মনে হয় যেন প্রতিদিনই তাদের সাথে যুক্ত ছিলাম মনে মনে।
মন খুলে কথা বলা যায় যার সাথে, জীবনের যত সব আজগুবি পরিকল্পনা করা যায় যার সাথে, যার সাথে কথা বলতে গেলে হিসেব করার প্রয়োজন পড়ে না, যে আমাকে জাজ করে না, সেই তো আসল বন্ধু। তবে আমাদের জীবনের সব সম্পর্কের সাথে যদি আমরা এমন আচরণ করি, তাহলে বোধহয় কোনো সম্পর্কই আমাদের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
কারণ ব্যক্তিগত জীবনে, সামাজিকতা রক্ষা করতে গেলে আমরা এমন অনেক সম্পর্ক সাথে নিয়ে চলি, যা কেবলমাত্র লোক দেখানো। যেখানে একে অপরের প্রতি বিশ্বাসের, ভরসার কোনো জায়গায় নেই, অথচ সামনের মানুষগুলোকে সবসময় দেখানোর একটা আপ্রাণ চেষ্টা চলে- বেশ ভালো আছি।
তাই লোক দেখানো এই সম্পর্ক গুলিতে যদি বন্ধুর মতন বিশ্বস্ততা, ভরসা, আবেগ, অনুভূতি খোঁজার চেষ্টা করি, তাহলে তা সারা জীবন অধরাই থেকে যায়। আর ঠিক এই কারণেই বন্ধুত্ব আমাদের জীবনে আলাদাই স্থান পায়। এই কারণেই বোধ হয় জীবনের যে কোনো বয়সেই, আমরা সেই বন্ধুটাকে খুঁজি, যার সাথে মন খুলে নিজের অনুভূতি শেয়ার করতে পারি।
|
---|
আমার জীবনে আমি এমন বন্ধুত্ব পেয়েছি। যার কাছে ব্যক্তিগত জীবনের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা যেমন মন খুলে শেয়ার করতে পারি, তেমনি নিজের মন খারাপের কথাগুলো নির্দ্বিধায় বলে ফেলতে পারি।
আবার নিজের ইচ্ছে গুলোকে অপকটে স্বীকারও করতে পারি, কারণ আমি জানি উল্টোদিকে থাকা মানুষটাকে এই সমস্ত কিছু কারণ বোঝাতে হবে না। বেশিরভাগ সময় তো এমন হয়, কোনো কিছু মুখে না বললেও, সে মনের ভিতরে চলা টানাপোড়েন, দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সবটাই বুঝে ফেলে।
এমন সম্পর্কই তো আমরা খুঁজি, এমন সম্পর্কের সঙ্গেই তো আজীবন বাঁচতে চাই, কিন্তু চাওয়া এবং পাওয়ার মাঝখানের এই দূরত্বকে অনেকে আজীবন বইতে পারে না। সেই কারণে খুব প্রিয় মানুষটির সাথে, কখন যেন যোগাযোগ ম্রান হয়ে যায়। মনে মনে হয়তো দুজনের অলক্ষ্য সাক্ষাৎ ঘটে, কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ করার সুযোগ তারা পায় না।
এদিক থেকে জীবন আমার প্রতি কিছুটা সুবিচার করেছে এ কথা মানতেই হবে। কিছু সম্পর্কের পূর্ণতা এ জীবনে না পেলেও, কিছু পাওনা যেন আজীবনের হয়েছে। যে পাওনা গুলো আমার মত করে অন্য কেউ, কখনো পাবে না। এটা ভেবেই নিজেকে কখনো কখনো জয়ী মনে হয়। তবে এক্ষেত্রে লড়াইয়ের কোনো প্রয়োজন হয়নি।
বিনা লড়াই করে কখন দুজন দুজনের জীবনের সব থেকে মূল্যবান সম্পর্কের জড়িয়ে গেছি, তার ব্যাখ্যা বোধ হয় কারোর কাছেই নেই। তবে এমনটাই বোধহয় হয়, কিছু কিছু প্রাপ্তি আজীবন ব্যাখ্যার আড়ালেই থেকে যায়। যার হিসেব শুধুমাত্র সেই দুজন ছাড়া, অন্য কেউ কোনোদিন মেলাতে পারবে না। কারণ তারা মেলানোর মতন কোনো কিছুই খুঁজেই পাবে না।
যে অনুভূতি দুজন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের কোনো প্রশ্নই নেই, যেখানে প্রত্যাশার কোনো জায়গা নেই, অথচ শুধুমাত্র তার কাছ থেকে পাওয়া যায় আজীবনের প্রশান্তি, সেই সম্পর্কের নামই বোধহয় সত্যিকারের বন্ধুত্ব।
সকলের জীবনে এমন বন্ধুত্ব প্রাপ্তি হোক, এই প্রার্থনা করে আজকের লেখা শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।
বিডি প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই শুভ বন্ধু দিবস সম্পর্কে খুব ভালো একটি আর্টিকেল আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করার জন্য। আর আপনি একদমই ঠিক বলছেন যে মাদার্স ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, অথবা ফ্রেন্ডশিপ ডে নির্দিষ্ট একটি দিনে পালন করার মানে এটাই না যে শুধু এই একটি দিনেই তাদেরকে ভালবাসতে হবে আসলে তাদেরকে আমরা সবসময় ভালোবাসি তবে একটি উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই জড়িয়ে থাকে।
ছোট থেকে বড় হওয়া পর্যন্ত আমাদের বন্ধুত্ব সম্পর্কে এমন যে অনেক বন্ধু আমরা ছেড়ে এসেছি আবার জীবনে নতুন বন্ধু যুক্ত হয়েছে। তবে ছেড়ে আসা বন্ধুগুলোকে আমরা কখনোই ভুলি না কোন না কোন সময় তাদেরকে মিস করি। আপনাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সারা জীবন এভাবেই বজায় থাক এই দোয়াই করি ভালো থাকবেন।