Better life with steem || The Diary Game || 12th May, 2024 ||
"আমার সারাদিন"
Hello,
Everyone,
রবিবার মানেই ছুটির দিন। এই দিনটিকে নিয়ে শনিবার রাত থেকে পরিকল্পনা শুরু করি ঠিকই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ভাবে দিনটি কাটে। আজও তার অন্যথা হয়নি।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি কিভাবে কাটিয়েছে, সেই গল্পই শেয়ার করবো আজকে পোস্টের মাধ্যমে। তার আগে জিজ্ঞেস করি কেমন আছেন আপনারা সকলে?
এইটুকু কুশল বিনিময় না করে লেখা শুরু করলে, কেমন অসম্পূর্ণ লাগে সবকিছু। যাইহোক চলুন তাহলে এবার সারাদিনের গল্প শেয়ার করি, -
"সকালবেলা"
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠার কারণে প্রায় অভ্যাসবশত ঘুম ভাঙলো ৭.২০ মিনিটে। এলার্ম যদিও বাজেনি, তবুও ঘুম ভেঙে গিয়েছিলো। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখে আবার একটু ঘুমানোর চেষ্টা করাতেই ঘুম এসে গেলো।
প্রতিদিন রাত জাগার কারণে এমন ঘুম প্রতিদিন সকালেই পায়, কিন্তু ঘুমানোর সুযোগ থাকে না। এই কা শুয়ে রইলাম তবে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা ঘুম ভাঙলো নটা ৪৫ মিনিটে।
ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে যেটা মাথায় এলো সেটা হলো বাড়ির সকলের প্রতিক্রিয়া কি হবে! বেশ কিছুক্ষণ নিজের মনের মধ্যে যুদ্ধ চলল। নিজেই নিজেকে বোঝাতে শুরু করলাম, -"রোজইতো নির্দিষ্ট সময়ে উঠে পড়ি। একটা দিন দেরি করে উঠলে কারোর কোনো সমস্যা থাকা উচিত নয়, আর যদি থাকেও তাহলে সেটি বেশি পাত্তা দেওয়া ঠিক হবে না।"
"আবার এটাও ভাবলাম যে, যা খুশি ভাবুক তাতে আমার কি?" তবে এই যুদ্ধ শেষে যেটা জিতে গেলো সেটা হলো, নিজের বিবেক। একটু অন্যরকম লাগছিল বটে, কিন্তু বাস্তবতা থেকে পালানোর জায়গা নেই, তাই রুম থেকে বেরিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
শুরুতেই কথা বলতে কেমন একটা বাধা বাধে লাগছিলো। তারপর নিজে থেকে কথা বলতে শুরু করে জানতে পারলাম, ইতিমধ্যেই ব্রেকফাস্টের জন্য শাশুড়ি মা রুটি করে ফেলেছেন। তাই আলাদা করে আজকের জন্য ব্রেকফাস্ট করার কাজ সমাপ্ত। তাই আমি ছাদের গাছে ফুল তুলতে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ বাদে শুভ নিচে এলে ওকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে, আমি কমিউনিটির কাজ নিয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ বাদে ননদ ফোন করে জানালে তার দুই ছেলে আমাদের বাড়িতে আসছে। কারণ ননদ ও ননদের হাজবেন্ড আজ ডাক্তার দেখাতে যাবে। তাই ছেলেদের আমাদের বাড়িতে রেখে যাবে। বুঝলাম সারাদিনের পরিকল্পনার প্রথম ব্যাঘাত ঘটে গেলো, কিন্তু কিছু করার নেই। এই সমস্ত বিষয়গুলি নিয়ে নিজের মন্তব্য প্রকাশের জায়গা এটি নয়, তাই চুপচাপ হজম করে নেওয়াই শ্রেয়।
"দুপুরবেলা"
সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার কারণে আমার কাজ নিয়ে বসতে একটু দেরি হয়েছিলো। ব্রেকফাস্ট করা হয়নি তাই এক ফাঁকে উঠে অল্প একটু জল মুড়ি খেয়ে নিলাম। গত কয়েকদিন ধরে কেন জানি না ব্রেকফাস্টে এটাই আমার খাবার হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে পিকলুর গেটের দিকে দৌড়ে যাওয়া দেখেই, আন্দাজ করলাম ননদের ছেলেরা চলে এসেছে।
ননদের ছোট ছেলেকে প্রশ্নের ভান্ডার বলা চলে এবং তার যত জিজ্ঞাসা সব মামীর কাছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সে অনেক প্রশ্ন করে, তার উত্তর দিতে হয়। এইরকম করেই অনেকটা বেলা হয়ে গেলো।
আজ দুপুরে আমাদের পাশের বাড়িতে নিমন্ত্রণ ছিলো। আমি আর শুভ যেহেতু ওখানে যাবো, তাই এই সপ্তাহে রবিবারের জন্য আলাদা করে চিকেন আনা হয়নি। ননদের ছেলেরা আসবে সেটাও জানা ছিল না, ফলতো তেমন কোনো আয়োজন করা হয়নি বলে, শুধু ওদের জন্য বিরিয়ানি এনে দেওয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে আমি কমিউনিটির কাজ সেরে ঘরের কিছু কাজ গুছিয়ে, স্নান করে পূজা দিয়ে নিলাম। এরপর শুভর স্নান করা বাকি ছিলো, তাই ততক্ষণে আমি ননদের ছোট ছেলেকে বিরিয়ানি খাইয়ে দিলাম। শুভর স্নান করা হয়ে গেলে, আমিও শাড়ি পড়ে চলে গেলাম নিমন্ত্রণ বাড়িতে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া সেরে চলে এসেছি। এসে দেখি ননদ ও ননদের হাজবেন্ডের এসেছে এবং তখন সবে মাত্র তারা খাওয়া-দাওয়া সেরে উঠেছে। পরে কথোপকথনে বুঝলাম শ্বশুরমশাই ফোন করে ওনাদের এই বাড়িতে চলে আসতে বলেছিলেন।
"বিকালবেলা"
প্রথমে ভেবেছিলাম নিমন্ত্রণ বাড়ি থেকে ফিরে দুপুরে একটু ঘুমিয়ে নেবো। কিন্তু ওই যে বললাম, পরিকল্পনা মাফিক সব কাজ যে সব সময় হবে, তার কোনো মানে নেই। তখন একথা ওকথায় আমি, শাশুড়ি মা ও ননদ অনেকটা সময় করলাম। এরপর একটু শুয়ে ছিলাম ঠিকই, তবে ঘুম হয়নি। একটু বাদেই সন্ধ্যা হয়ে এলো, তাই আমি আর অলসতা না করে উঠে পড়লাম।
"সন্ধ্যাবেলা"
সন্ধ্যা পুজো দেওয়ার শেষে, ননদ স্টেশনে যাওয়ার জন্য জোর করলো কিন্তু আমি কোনো রকমে বিষয়টি কাটিয়ে দিলাম। কারন সন্ধ্যা বেলা মানে আমার বুমিং সংক্রান্ত কাজ থাকে। আর আজ দুপুরবেলায় একটুও বিশ্রাম হয়নি বলে যেতেও ইচ্ছে করছিল না। তাই একথা সেকথা বলে বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলাম বলতে পারেন।
সকলেই বসে গল্প করছিলো, আর আমি তখন আমার রুমে গিয়ে বুমিং এর কাজগুলো সেরে নিলাম। তারপর সকলের জন্য চা বসলাম। ইতিমধ্যে শাশুড়ি মা সকলের জন্য সিঙ্গারা ও মিষ্টি নিয়ে এসেছিলেন।
যেহেতু আমি ও শুভ নিমন্ত্রণ বাড়িতে দুপুরে খেয়েছি তাই আমরা কিছুই খাইনি। যেন মনে হচ্ছিল তখনও পর্যন্ত খাবারগুলো হজম হয়নি। ননদরা বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রায় রেডি হচ্ছিলো, তখন শ্বশুর মশাই এসে বললেন এখন আর যেতে হবে না,একেবারে রাতের খাবার খেয়ে তবে যেও।
ওনার জোড়াজুড়িতে ননদরা থেকে গেলো। আসলে সন্তানকে বোধহয় সব বাবা মারাই নিজেদের কাছে এই ভাবে রাখতে চায়।
"রাত্রিবেলা"
রাতের বেলায় সকলে অন্য কোনো কিছু খাবে না বলায় শুধুমাত্র সিদ্ধ ভাত করা হলো এবং দুপুরের মাছের ঝোল ও ডাল ছিলো, সেগুলো দিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ হলো। আমি রাতে কিছুই খাইনি, কারণ আমার একটুও খিদে ছিল না।
আমি শুধু পিকলুকে ডিনার করিয়ে দিয়েছিলাম। শাশুড়ি মা সকলকে খেতে দিয়েছিলেন। সকলের খাওয়া শেষে ননদরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলে, আমি ও শাশুড়ি মা বাকি সবকিছু গুছিয়ে নিলাম এবং তারপর আমি কমিউনিটির কাজ নিয়ে বসলাম। ভেরিফিকেশন শেষ করে, নিজের লেখা শুরু করলাম।
এইভাবে আজকের দিনটা কাটিয়েছি। তবে প্ল্যান ছিল দিনটাকে একটু অন্যরকম কাটাবো। নিজের ব্যক্তিগত কিছু কাজ করবো কিন্তু দিনশেষে তার কোনটাই হলো না। এটাই আসলে বাস্তবতা। জীবন সম্পর্কে আমরা যতই প্ল্যান করি না কেন, আমাদের হয়ে প্ল্যান করার জন্য উপরে একজন বসে আছেন, সেটা অস্বীকার করার জায়গা নেই।
যাইহোক লিখতে অনেকটা দেরি হলো। এখন ঘুমিয়ে পড়বো। আগামীকাল পোস্টটি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। ভালো থাকবেন সকলে।
দিদি প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই দিনলিপিটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। ছুটির দিন সবার কাছেই একটু আলাদা এবং অন্যরকম। আপনিও প্রতিবার ছুটির দিনের আগে বিভিন্ন পরিকল্পনা করে রাখেন। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে বিভিন্ন কাজ এসে আপনার সামনে হাজির হয়।
যাইহোক আপনি সবকিছু ম্যনেজ করে চলছেন এটাই অনেক বড় কথা। অন্যকেউ হলে মনে হয় পারতো না। আপনার কাজের প্রতি রইলো অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। ভালো থাকবেন দিদি।
আমাদের পরিকল্পনা মাফিক আসলে কোনো কিছুই হয় না। আমরা শুধুমাত্র পরিকল্পনাই করতে পারি নিজেদের ইচ্ছা মতো, তবে তার কতখানি বাস্তবায়িত হবে সে বিষয়ে ঈশ্বরের মর্জি অবশ্যই প্রয়োজন।
আসলে সাপ্তাহিক একটা দিন ছুটি থাকলে সেইদিন কাজ বেশি থাকে ঠিকই, তেমনি সেই দিনটাতেই বিশ্রাম নিতেও বড্ড বেশি ইচ্ছে করে। সপ্তাহের অন্যান্য দিন একই রুটিনে চলতে চলতে, সেদিন একটু অভ্যাস বদল করার ইচ্ছে হয়, একথা অস্বীকার করার জায়গা নেই।
তবে হ্যাঁ একমাত্র আমি নই এমন ভাবেই সকলেই নিজেদের জীবন ম্যানেজ করে, তাই এটা আপনার ভুল ধারণা যে আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে পারতো না। আপনার স্ত্রী ও নিশ্চয়ই এমন ভাবেই সমস্ত কিছু ম্যানেজ করে, কারণ আমরা মেয়েরা এগুলো কখন কিভাবে শিখে যাই, নিজেরাও বলতে পারি না। অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য।ভালো থাকবেন।
আমরা যতই চেষ্টা করি না কেন? আমাদের দিনটা আমাদের পরিকল্পনা মাফিক কখনোই কাটানো সম্ভব হয় না। যতই চেষ্টা করি নিজের মতো করে থাকব, কিন্তু সেটা কবে হবে বা কখন হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। যেমনটা আজকে আপনি একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠে, অনেক কিছু চিন্তা করেছেন। ওই দিন আমার সাথে এমনটা হয়েছিল, তবে আমি সকাল আটটা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে অনেকটা তড়িঘড়ি করে বাহিরে বের হয়ে দেখি, শাশুড়ি নাস্তা বানানো শেষ, যেটা দেখে আমার মাথায় বাজ পড়লো।
নিমন্ত্রণ বাড়ি খেয়ে এসে ঘুমানোর একটা চিন্তা ছিল। কিন্তু সেটাও আর হলো না। সবার সাথে গল্প করতে করতে সময়টা কেটে গেল, ঘুমাতে আর পারলেন না।রাতে সবার জন্য ভাত রান্না করলেন, আসলে রুটি প্রতিদিন খেতে তেমন একটা ইচ্ছে করেনা। মাঝে মাঝে অবশ্যই ভাত খাওয়া উচিত। ধন্যবাদ একটা দিনের কার্যক্রম উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
কিছু জিনিস আসলে আমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে তৈরি করে নিয়েছি। আমরাই সবার আগে উঠবো, আমরাই প্রতিদিন ব্রেকফাস্ট তৈরি করবো। এই দায়িত্বগুলো নিজেরা নিজেদের কাঁধে নিয়ে নিয়েছি বলে, অন্যেরাও আমাদের উপরে নির্ভর করে থাকে।
তাই একদিন একটু দেরি হয়ে গেলে নিজেদের মধ্যে যেমন খারাপ লাগা কাজ করে, তেমনি অন্যদের মানুষগুলোও অসন্তুষ্ট হয়।তবে এখন আমার মনে হয় যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভ্যাস তৈরি না করাই ভালো, যখন যেমন হবে তখন সেই ভাবে চলাতে সকলের অভ্যস্ত হওয়া উচিত।
তাহলে অপরপক্ষের যেমন আমাদের দিক থেকে কোনো আশা তৈরি হবে না। তেমনি আমরা নিজেরাও বিবেক দংশনে আহত হবো না। সংসার মানেই দায়িত্ব সকলের, শুধুমাত্র আমার না। আমরা মানুষ তাই মাঝেমধ্যে যন্ত্রের মতন পরিচালিত হতে নাই ইচ্ছে করতে পারে, সেটাও অন্যদেরকে বুঝতে হবে। যাইহোক ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্ট পড়ে নিজের মন্তব্য শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আমার মনে হয় ছুটির দিনের রুটিনটা সবারই একটু ভিন্ন রকম থাকে। ছুটির দিন আসলে আগের দিন রাত থেকেই অনেক পরিকল্পনা করা হয়।
যাইহোক সকালবেলা ঘুম ভাঙলেও আবারও ঘুমিয়ে গিয়েছেন। ঘুম থেকে উঠে নাস্তা বানানোর ঝামেলা পোহাতে হয়নি।
আপনার ননদের ছেলে আপনাকে অনেক প্রশ্ন করতে থাকে। এটা অবশ্যই একটি ভাল দিক। ছোট বাচ্চাদের মনে প্রশ্ন থাকলেই না তারা শিখতে পারবে।
সারাদিনের কার্যক্রম গুলো শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আর বলবেন না, আমি তো মজা করে আমার ননদের ছেলেকে কোশ্চেন ব্যাংক বলে ক্ষ্যাপাই। কত যে অবান্তার অগণিত প্রশ্ন তার মনে, সে বলে বোঝাবার নয়। তার প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেলেও প্রশ্ন কিছুতেই শেষ হয় না।
ছোটবেলা থেকেই ওর সাথে আমার বন্ডিং তবে বেশ ভালো। ওর মামার থেকেও বেশি আবদার আমার কাছে, কারণ মামা কোনো প্রশ্নের উত্তরই দেয় না। ছুটির দিন নিয়ে পরিকল্পনা তো সত্যিই করি এবং সেটা প্রতি সপ্তাহেই, তবে দেখা যায় কিছু কিছু পরিকল্পনা কোনো কোনোদিন পূরণ হয়, আবার কোনো কোনো দিন তো একটাও পূরণ হয় না। এই সপ্তাহের দিনটা তেমনি একটি অপূরণের দিন ছিলো। ধন্যবাদ আপনাকে আমার পোস্ট পড়ে এত সুন্দর মন্তব্য শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।