"বাড়ি ফেরার পথে একসাথে কাটানো শেষ কিছু আনন্দের মুহূর্ত"
|
---|
Hello,
Everyone,
জীবনে ভালো সময় গুলো বড্ড তাড়াতাড়ি পার হয়ে যায়, অথচ খারাপ সময়গুলো এতটা দীর্ঘ হয় যা সহজে কাটতেই চায় না।
কয়েকদিন আগে বান্ধবীদের সাথে মায়াপুর ঘুরে এলাম ঠিকই, কিন্তু বাড়িতে ফেরার পরেই কেমন যেন নিঃসঙ্গতা চারিদিক থেকে আবার পুনরায় ঘিরে ধরতে শুরু করেছে। আবার দম বন্ধ হয়ে আসছে। পরিস্থিতি থেকে পালানোর সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ হবে জেনেও, মনের ভেতর থেকে যেন চেষ্টাটাকে কিছুতেই সরিয়ে ফেলতে পারছি না।
আমি বিশ্বাস করি শুধু আমি নই, এইরকম ভাবে অনেকেই নিজেদের জীবনের প্রতিটা দিন পার করছে। যাইহোক আজ এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, মায়াপুর থেকে ফিরতি পথে বান্ধবীদের সাথে কাটানো শেষ মুহূর্তের কিছু স্মৃতির কথা।
|
---|
আমাদের বাড়ি থেকে মায়াপুরের দূরত্ব খুব একটা কম নয়। তবে সকালের দিকে যখন আমরা বেরিয়েছিলাম, তখন পরপর ট্রেন পাওয়াতে সময় খানিকটা কম লাগলেও, ফেরার পথে রানাঘাট স্টেশনেই বসে ছিলাম দীর্ঘ প্রায় দেড় ঘন্টা।
অনেকটা সময় ওখানে অপেক্ষা করার ফলে বাড়ি ফিরতে অনেকটা দেরি হয়েছিলো। আমরা যখন স্টেশনে বসে ছিলাম তখন আকাশের প্রচুর মেঘ ছিলো, দেখে মনে হচ্ছিলো তখনই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামবে। চারিদিক অন্ধকার করে এসেছিল, তবে শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছিলো নামমাত্র।
|
---|
যেহেতু আমরা ওখান থেকে সকালেই রওনা করেছিলাম, তাই দুপুরে লাঞ্চ করা হয় নি আমাদের কারোরই। তাই ট্রেনে বসেই সকলে মিলে ব্যাগে রাখা বিস্কুট খেয়েছিলাম। তবে তাতে খিদে মেটেনি কারোরই।
তাই কথা প্রসঙ্গে সকলে মিলেই ঠিক করলাম, বাড়ি ফেরার আগে কোনো একটা রেস্টুরেন্টে সকলে মিলে দুপুরে লাঞ্চটা সেরে নেবো। কারণ আবার কবে সকলে এক জায়গায় হতে পারবো বা আদেও হতে পারবো কিনা সে কথা জানা নেই।
কারন আমরা জীবনে পরিকল্পনা অনেক করি, কিন্তু সমস্তটাই যে বাস্তবায়িত করতে পারি, এমনটা নয়। কখনো নিজের পরিস্থিতি সাথ দেয় না, আবার কখনো উল্টো দিকের মানুষের।
আমাদের সাথেও হয়তো তেমনটাই হবে, কারণ আমাদের সাথে আমাদের এক বান্ধবী গিয়েছিলো, নভেম্বর মাসে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। চাকরি সুত্রে তার হাজব্যান্ড থাকে কেরালা। তাই বিয়ের পরেই সে সেখানে চলে যাবে। তাই এরপর আর কখনো আমাদের ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানে ও নিজে যুক্ত থাকতে পারবে কিনা, সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
|
---|
তাই ভাবলাম আরও কিছুক্ষণ সকলে একসাথে বসে কিছুটা সময় অতিবাহিত করি। কারণ বাড়িতে ফিরলে যে যার জীবনে, যে যার ব্যক্তিগত সমস্যায় ব্যস্ত হয়ে যাবো পুনরায়।সেই সব কিছু ভেবেই আমরা ঠিক করি, সকলে "হৈচৈ" রেস্টুরেন্টে বসে দুপুরের লাঞ্চ করবো। এই রেস্টুরেন্টে ওরা সকলেই আগে বেশ কয়েকবার গিয়েছিল, তবে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা ছিলো।
না তেমন নামি দামি কোনো রেস্টুরেন্ট নয়। তবে মফস্বল এলাকার মধ্যে এরকম একটা রেস্টুরেন্ট পাওয়াটাও সৌভাগ্য মনে হয়। পরিবেশটাও খুব বেশি খারাপ নয়, মোটামুটি ভালোই ছিলো। তবে খাবারের কোয়ালিটি ওদের মুখে যেমন শুনেছিলাম, ততটাও সুস্বাদু ছিল না।
|
---|
যাইহোক আমরা সকলে মিলে প্ল্যান করেছিলাম বিভিন্ন ধরনের খাবার অর্ডার করবো এবং প্রত্যেকেই সব ধরনের খাবার টেস্ট করবো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। প্রথমে ওরা দুই প্লেট বিরিয়ানি অর্ডার করেছিলো।
প্রসঙ্গতা জানিয়ে রাখি আমি রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানি খেতে একদম পছন্দ করি না। তাই বিরিয়ানি থেকে আমি বাদই ছিলাম। ওরা দু প্লেট চিকেন বিরিয়ানি অর্ডার করেছিলো, যাতে চারজনে মিলে ভাগ করে খেতে পারে।
|
---|
|
---|
|
---|
দুর্ভাগ্যবশত বিরিয়ানির ছবি তোলার কথা আমার মনে ছিল না। আসলে সেই সময় আমি অন্য একটা কাজে ব্যস্ত ছিলাম আর যেহেতু ফোনে কথা বলছিলাম, তাই ছবিটা আলাদা করে তোলার কথা মনে ছিল না। তার সাথে অর্ডার করা হলো, বাটার নান ও বাটার চিকেন মশালা এবং এগ ফ্রাইড রাইস ও চিলি চিকেনের কম্বো।
|
---|
|
---|
সবকটা খাবারই টেস্ট করেছিলাম ঠিকই, তবে আমার সব থেকে ভালো লেগেছিল বাটার নান আর বাটার চিকেন মশালা। যদিও এর থেকে বেশি সুস্বাদু চিকেন মশালা আমি খেয়েছি, তবে বাকিগুলো আইটেমের তুলনায় এটি বেশি সুস্বাদু ছিল।
খাবার তেমন ভালো না লাগলো, পরিবেশটা বেশ ভালো ছিলো। সকলে নিজেদের মতন প্রচুর ছবি তোলা হয়েছে। কখনো সিঙ্গেল, কখনো গ্ৰুপ ফটো। এমন মুহূর্ত আর কখনোই ফিরে আসবে না জেনেই, সকলে যেন মুহূর্তগুলো আটকে রাখার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।
এরপর হয়তো আরো ভালো সময় আসবে, নয়তো বা খারাপ। কিন্তু ওই দিনটা আর কোনদিনই ফিরে আসবে না। ফাঁক মতো আমিও আমার প্রিয় বান্ধবীর সাথে একটা সেলফি তুলে নিয়েছিলাম। সকলের ভিড়ে আমাদের আর আলাদা কোন ছবি নেই তাই ভাবলাম শেষ মুহূর্তে এটুকুই নয় স্মৃতি হোক। খাওয়া-দাওয়া শেষ করে, আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম আইসক্রিম খেতে খেতে স্টেশনের দিকে যাবো। তবে স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছাতেই শুনতে পেলাম ট্রেনের অ্যানাউন্সমেন্ট হচ্ছে। তাই আইসক্রিম খাওয়ার জন্য যদি ট্রেনটা মিস করি, তাহলে সেখানে আরো এক থেকে দেড় ঘন্টা লেট হবে ভেবে, প্রায় দৌড়ে ট্রেনটা ধরেছিলাম। একটা স্টেশন পরেই ওরা সকলে একসাথে নেমে গিয়েছিলো। আমাকে আরও পাঁচটা স্টেশন আসতে হয়েছিলো একা একা।
এই সময়টায় একটা অসম্ভব খারাপ লাগা কাজ করছিল নিজের ভেতরে। ওরা সকলে নেমে যাওয়ার পর কেমন যেন নিঃসঙ্গ লাগছিলো। বাড়িতে ফিরতে মনই চাইছিল না। তবুও নিজের মনকে অনেক কষ্টে বুঝিয়েছি, যেখানেই ঘুরতে যাই না কেন বাড়িতে তো ফিরতেই হয়, তাই আমাকেও ফিরতে হবে। সেদিন থেকে এখনও পর্যন্ত বাড়ির সামনের রাস্তায়ও ওঠা হয়নি। এই সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে মাঝে মধ্যেই যেমন দম বন্ধকর পরিবেশ তৈরি হয় নিজের ভিতরে। প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য তখন বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা করে এমন জায়গায়, যেখানে না থাকবে কোনো দায়িত্ব, না থাকবে কর্তব্য। শুধু নিজের মতন করে একটা দুটো দিন উপভোগ করার মতন সুযোগ খুঁজতে মরিয়া হয়ে ওঠে মন। মাঝেমধ্যে মনে হয় এমনটা কি আদেও সকলের সাথে হয় নাকি আমি সবার থেকে বেশি ব্যতিক্রমী?
আপনাদের সাথে এমনটা হয় কিনা অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। যাইহোক সবকিছু মিলিয়ে ওই দুটো দিন বেশ ভালোই আনন্দ করেছিলাম। ফিরতি পথে রেস্টুরেন্টে কাটানো এই মুহূর্তগুলো ছিল উপরি পাওনা। তাই সেই অনুভূতিটা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। কেমন লাগলো আজকের পোস্ট পড়ে, জানাতে ভুলবেন না। ভালো থাকবেন সকলে, আনন্দে থাকবেন। শুভরাত্রি। |
---|
TEAM 4
Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator06. Good post here should be..Thank you for your support @jyoti-thelight ma'am. 🙏