"মানসিকভাবে বড্ড কান্ত বোধ করছি আজকাল"

in Incredible India18 days ago (edited)
IMG_20240724_192005.jpg

Hello,

Everyone,

অবশেষে বেশ কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো। গত কয়েকদিন বাংলাদেশের পরিস্থিতি যেমন ছিলো, তা যথেষ্ট চিন্তার ও মন খারাপের। নেটওয়ার্কের কারণে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায়, মনের মধ্যে নানান ধরনের চিন্তা ভাবনা আসছিলো।

অবশেষে গতকাল থেকে ডিসকর্ডে দু একজনের মেসেজ দেখে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হতে পেরেছি। আজ সকালেও দুজনের মেসেজ দেখতে পেলাম। ধীরে ধীরে সকলের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করা যায় রবিবারের মধ্যে সমস্তটাই ঠিক হবে এবং আমাদের পরিবারের সকল সদস্য পুনরায় আগের মতন আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।

একটা কথা আমরা প্রায়শই শুনে থাকি, দূরত্ব বাড়লে তবেই সম্পর্কের মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়। এটা এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আরও একবার অনুভব করলাম। হয়তো এখানে প্রত্যেকের সঙ্গেই কাজের সূত্রে পরিচয়।

ব্যক্তিগতভাবে কাউকেই চিনি না। তবে প্রত্যেকের সঙ্গে যে এমন একটা আত্মিক সম্পর্ক কবে, কিভাবে তৈরি হয়ে গেছে তা বুঝতে পারিনি। হয়তো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলে আজও বুঝতে পারতাম না।

আসলে গত কয়েক দিন যাবত পারিবারিক কারণেও মনটা বেশ খারাপ। তার উপরে কমিউনিটিতে সকলের অনুপস্থিতি যেন সেই খারাপ লাগাটাকে আরও অনেকখানি বাড়িয়ে তুলেছিলো।

আপনারা যারা আমার পূর্বের পোস্ট পড়েছেন, তারা জানেন মাঝে শশুর মশাইকে ডাক্তার দেখিয়ে আসার পর, বেশ কিছু টেস্ট দিয়েছিলো। সেই সকল টেস্ট হওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, আমরা ওনাকে একজন লিভার স্পেশালিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম।

সেখানে ডাক্তারের সাথে কথা প্রসঙ্গে যা জানতে পারলাম, তাতে মনটা আরও অনেক বেশি খারাপ হয়ে গেলো। এই বিষয়টাকে কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই, দিদির সাথে কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, আমার জামাইবাবুর এমআরআই রিপোর্টটা ততটাও ভালো আসেনি। যেদিন এমআরআই টেস্ট করতে যাওয়া হয়েছিলো, সেদিনের কথাও আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম।

অপারেশন করার বিষয়ে একবার দিদি ডাক্তার বাবুদের সাথে কথা বললে, তারা জানিয়েছেন সামনাসামনি জামাইবাবুকে তারা একবার দেখতে চান অর্থাৎ আরও একবার দাদাকে নিয়ে হসপিটালে ছোটাছুটি করতে হবে বুঝতে পারছি।

এদিকে শশুর মশাইয়ের এমন অবস্থা যে, তিনি নিজে ইনসুলিন নেওয়া তো দূরের কথা, ভাত খেতে পর্যন্ত পারেন না। শাশুড়ি মা ওনাকে খাইয়ে দেন। এমতাবস্থায় সবকিছু ফেলে কিভাবে দাদার অপারেশনের সময় যাওয়া সম্ভব হবে জানিনা।

অপারেশনের পরেই বা পরিস্থিতি কেমন হবে, অন্যদিকে শশুর মশাইয়ের লিভারের যে টিউমার হয়েছে, সেটির পরিণতি কি হবে, এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে গত দুদিন যাবত সমস্ত কিছু যেন এলোমেলো লাগছে।

সুগার যে আমাদের শারীরিক পরিস্থিতি এতো খারাপ করতে পারে, সে সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল না। আমি যখন বিয়ের পর প্রথম এ বাড়িতে আসি, তখনও আমার শশুর মশাইয়ের সুগার ছিলো। কিন্তু যে পরিমাণে ভাত এবং মিষ্টি উনি খেতেন, তা যে কোনো সাধারণ মানুষের থেকে অনেক গুণ বেশি।

তবে সেই সময় এত শারীরিক সমস্যা না থাকার কারণে, উনি বেশি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করেননি, ফলস্বরূপ আজ তার শারীরিক পরিস্থিতি এমন। সুগারের কারণে চারিদিক থেকে এতো রোগ, এত সমস্যা, ওনাকে ঘিরে ধরেছে যে, এখন টিউমারের ট্রিটমেন্ট করার মতন শারীরিক পরিস্থিতিও নেই।

আর এইরকমভাবে প্রতিদিন চোখের সামনে একজন কাছের মানুষকে, ধীরে ধীরে আরও অসুস্থ হতে দেখতে দেখতে, নিজেই যেন মানসিক দিক থেকে রোগী হয়ে পড়ছি। শুধু মানসিক বললে ভুল হবে, আজকাল শারীরিকভাবেও ভীষণ ক্লান্ত অনুভব করি।

শাশুড়ি মায়েরও একই অবস্থা। শশুর মশাইয়ের পিছনে এত বেশি পরিশ্রম দিতে হয় যে, আমাদের দুজনের তেমনভাবে বিশ্রাম হয়ে ওঠে না। তার উপরে টেনশন তো রয়েছেই। কখন কি পরিস্থিতি হবে, তার জন্য নিজেকে মানুসিক ভাবে তৈরি করতে করতে পার হয়ে যাচ্ছে একের পর এক দিন।

আমি নিজে গত কয়েকদিন ধরে দিনে হোক বা রাতে কখনো ঘুমাই, আবার কখনো হঠাৎ জেগে উঠি। মনে হয় যেন শাশুড়ি মা ডাকছেন। একটানা মানুষের যে ঘুমের প্রয়োজন, সেটা কিছুতেই হয়ে উঠছে না। ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যে তাই ঘুম ভেঙে যায়। আবার কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি।

কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে নিজেই যেন অসুস্থ হয়ে পড়ছি। আর এইরকম ভাবে একটানা আরও কয়েক মাস চলতে থাকলে, শশুর মশাই এর সাথে সাথে আমরা সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়বো।

কিন্তু তবুও এই পরিস্থিতিতে কিছু করার নেই। আমরা চাই বা না চাই এই কাজগুলো আরও কতদিন, কত মাস, করে যেতে হবে তার কোনো ঠিক নেই। মাথায় এই টেনশনও ঘোরাফেরা করে যে নিজেরও বয়স বাড়ছে। একটা সময় শশুর মশাইয়ের জায়গায় আমি নিজেও পৌঁছে যাবো। কিন্তু এইরকম ভাবে কেউ আমাকে যত্ন করবে, এই প্রত্যাশা রাখতে পারি না।

তাই সেই সময় নিজের পরিস্থিতি কি হবে সেটা ভেবেই চিন্তিত থাকি প্রায়শই। যেহেতু ভবিষ্যৎ দেখা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়, তাই সেটা অনিশ্চিতিও বটে। তবে আজকাল বর্তমান পরিস্থিতিও বড্ড বিরক্তিকর লাগছে। কোথাও দুদিন বেড়াতে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি। একটু পরিবেশ বদলের দরকার। কিন্তু কিছুতেই হয়ে উঠছে না।

এই দম বন্ধকর পরিস্থিতিতেই দিন কাটছে। যাইহোক এলোমেলো চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরছিলো, আশাকরছি এই সমস্ত কিছু দ্রুত কাটিয়ে উঠতে পারবো। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন, এই প্রার্থনা রইলো।

Sort:  
Loading...
 18 days ago 

দূরত্ব বাড়লে তবেই সম্পর্কের মূল্যায়ন করা সম্ভব হয়। এটা এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আরু একবার অনুভব করলাম। হয়তো এখানে প্রত্যেকের সঙ্গেই কাজের সূত্রে পরিচয়।

আসলে একদমই তাই দিদি আমরা সবাই একটি পরিবারের মতো এখানে কাজ করি এবং আজ কয়েক দিন যাবত আমাদের পরিবারটি শূন্য ছিলো যা আমাদের খারাপ লাগা বেশি কাজ করছিল কিন্তু আজকে কিছুটা মানুষ আমাদের পরিবারে আবার ফিরে দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে।

এবং আমরা সবাই এক সাথে কাজ করতে করতে অন্যরকম একটি সম্পর্ক সবার সাথে হয়ে গিয়েছে এবং সবাই এক সাথে কমবেশি কথা বলি যা আজ কয়েক দিন ধরে আমাদের হয়নি তার জন্য আরো বেশি আমারও খারাপ লাগছিল।

 17 days ago 

ঠিকই বলেছেন দিদি, দূরত্ব বাড়লে তবেই সম্পর্কে মূল্যায়ন করা যায়। সত্যিই আমাদের পরিবারটি ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। আপনার শ্বশুর মশাই এর মতো ।আমার দিদার ও সুগার আছে ।কিছুদিন আগে দিদার সুগার একদম কমে যাওয়ায় ।দিদাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল। দিদার সুগারের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছে। আসলে কাছের মানুষগুলোর শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকলে। নিজেদের মন মানসিকতা কিছুই ভালো থাকে না। আপনার শ্বশুরমশাই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক এই কামনাই করি।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61110.96
ETH 2649.39
USDT 1.00
SBD 2.58