"বাঙালির আবেগ- রবীন্দ্র সঙ্গীত "

in Incredible India3 months ago
IMG_20240720_220701.jpg
"কোনো এক জ্যোৎস্না রাতে জানালায় বসে চাঁদ দেখার মুহূর্ত"

Hello,

Everyone,

সকাল এখন আটটা ৮.৪৩ মিনিট। বসে আছি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ওয়েটিং লঞ্জে । অন্যান্য দিন এই সময় হয়তো রান্না ঘরে ব্যস্ত থাকি, আজও ব্যস্ততা আছে তবে তা একটু ভিন্নধর্মী।

শ্বশুরমশাইকে নিয়ে এসেছি ই.ই.জি করানোর জন্য। বর্তমানে ওনার নার্ভের একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেই কারণে ডক্টর বেশ কিছু টেস্ট করিয়ে, সেগুলোর রিপোর্ট দেখানোর কথা বলেছেন। তার মধ্যে একটি টেস্ট হলো এই ই.ই.জি।

গতকাল অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছিল এবং রিসেপশন থেকে সময় বলেছিল সকাল ৮.৩০ টা। সেই কারণেই সকালে ঘুম থেকে উঠে, ফ্রেশ হয়ে, শশুর মশাইকে রেডি করে, শুভ এবং আমি দুজনে মিলে পৌঁছে গেছি এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে।

হ্যাঁ, শুভ আজ অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে। কারণ শশুর মশাইয়ের যে শারীরিক পরিস্থিতি, তাকে একা নিয়ে আমার পক্ষে আসা সম্ভব ছিল না। এমনকি এরপরে আবার সিটি স্ক্যান করাতে হবে এবং সেটা আমাদের এখানে করানো সম্ভব না, তাই ওনাকে নিয়ে আবার বারাসাতে যেতে হবে, যে কারনে শুভকে বাড়িতে থাকতেই হতো।

মিনিট দুই হবে শ্বশুরমশাইকে ভেতরে ঢোকানো হয়েছে। আর শুভ বাইরে গিয়েছে দুপুরবেলায় সিটি স্ক্যান করাতে যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানকার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার জন্য।

যদি আজকে করানো সম্ভব হয়, তাহলে সেটাও করিয়ে নেওয়া হবে। কারণ ওর পক্ষেও প্রতিদিন অফিস বন্ধ করা সম্ভব নয়। যদিও বা আজকে না হয়, তাহলে আগামীকাল রবিবার অবশ্যই করিয়ে নিতে হবে।

IMG_20240720_091104.jpg
"আজ ওয়েটিং লঞ্জে বসে তোলা ছবি, টিভিতে বাজছে রবীন্দ্র সঙ্গীত"

বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে। তাই ভাবলাম শুধু বসে থেকে লাভ কি, নিজের পোস্ট লেখা খানিকটা এগিয়ে রাখি। কারণ এই সময় ওয়েটিং লঞ্জ প্রায় ফাঁকা বললেই চলে। দু একজন মানুষ রয়েছেন, তবে কোলাহল নেই। আশেপাশটা সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ, তার মধ্যেই কানে ভেসে আসছে রবীন্দ্র সংগীতের সুর।

এর আগে এই ওয়েটিং লঞ্জে বসেছি অনেক বার, তবে সব বারই এসেছিলাম দুপুরবেলায়। মানুষের ভিড় থাকতো প্রচুর এবং সামনে টিভিতে চলত অ্যানিমেল ওয়াইল্ড লাইফ। সেটা দেখেই উপস্থিত অনেক বাচ্চারা এবং বয়স্করা খুব উউচ্ছ্বসিত হতো। আমারও খুব একটা মন্দ লাগতো না।

কারণ সময় কাটানোর জন্য অন্তত কিছু তো দরকার। আসলে ভিতরের দিকে ফোনের নেটওয়ার্ক একদমই থাকে না। ফলতো চাইলেও নিজের ফোনে কিছুই দেখা সম্ভব হয় না। তাই অগত্যা রিসেপশনের এই ছোট্ট টিভিটাই ভরসা ছিলো।

তবে আজকের সকাল বেলাটা এই ওয়েটিং লঞ্চে এতো সুন্দর ভাবে শুরু হবে, সত্যিই বুঝতে পারিনি। সত্যি বলতে রবীন্দ্র সংগীতের প্রতি বাঙালির যে আবেগ, সেটা বোধহয় অন্য কোনো গানে নেই।

রবীন্দ্র সংগীতের প্রতিটি কথার সাথে আমাদের জীবনের কোনো না কোনো পরিস্থিতি কেমন যেন অদ্ভুতভাবে মিলে যায় এবং আমরা এটা ভাবতে শুরু করি, গানটি বোধহয় আমার পরিস্থিতি অনুযায়ী তৈরি হয়েছে।

তবে একথাও সত্যি, সব পরিস্থিতিতে কিন্তু রবীন্দ্র সংগীত আমাদের মনে জায়গা করে নিতে পারে না। আর কিছু পরিস্থিতি এমন থাকে, যেখানে রবীন্দ্র সংগীত ছাড়া অন্য কোনো গান স্থান পায় না। কারন তখন গানের কথার সাথে মিলেমিশে যায় আমাদের অনুভূতিগুলো। আর সেই পরিস্থিতি বোধহয় আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একবার নয়, একাধিকবার এসেছে।

রোদ,বৃষ্টি, ঝড়,আনন্দ, হাসি, কান্না, মনখারাপ,একাকীত্ব সমস্ত কিছুর এক অদ্ভুত মেলবন্ধন এই রবীন্দ্র সংগীত। আলাদা করে কোনো একটি রবীন্দ্র সংগীত আপনার মনের খুব কাছাকাছি থাকবে, আর বাকিগুলো আপনার অপছন্দের হবে, এমনটা বোধহয় কারোর ক্ষেত্রেই হয় না।

কারণ প্রতিটি গানের ভিতরেই কোনো না কোনো অংশ, কোনো না কোনো লাইন আপনার খুব প্রিয় হবে, এটাই বোধহয় রবীন্দ্র সঙ্গীতের বিশেষত্ব। যেখানে সম্পূর্ণ গানে না হলেও, বিশেষ কিছু লাইনে আপনি আপনার মনের অনুভূতির মিল অবশ্যই পাবেন।

ঠিক এই মুহূর্তে টিভিতে যে গানটি বাজছে সেটি হলো-
"যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝরে..."
ঠিক কত দিন বাদে যে গানটি শুনলাম, তা মনেও নেই। কিন্তু মনে হলো গানটি বোধহয় প্রতিটি বৃষ্টির রাতের অনুভূতির সাথে মিলে গেলো।

মনের ভেতরে গানটির লাইনগুলি নিজেও গুনগুন করছি। এক লহমায় কতো স্মৃতি ভীর করলো মনের আঙিনায়। আমার বিশ্বাস এই পোস্টটা পড়তে পড়তে যাদের কাছে এই গানটি চেনা, তাদেরও এই গানটি সুর মনে পড়বে। আর ঠিক এখানেই অন্যান্য সমস্ত গানের সাথে রবীন্দ্র সঙ্গীতের পার্থক্য।

আজকে এমন একটা সকালের জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলাম না। প্রথমত এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে শ্বশুরমশাইকে নিয়ে এখানে আসার একটা টেনশন কাজ করছিল। কারণ ওনার শারীরিক পরিস্থিতি সত্যিই অনেকখানি খারাপ।

তারপর এখানে এসেই টেস্ট করানো, টেস্টের রিপোর্ট কেমন হবে, তারপর আবার কিভাবে বারাসাতে নিয়ে যাবো, এইরকম অনেক কিছু মাথার মধ্যে কাজ করছিলো। কিন্তু যখন থেকে এখানে বসে আছি এবং এই রবীন্দ্রসঙ্গীত গুলো একের পর এক শুনছি, অদ্ভুত একটা প্রশান্তি কাজ করছে মনের মধ্যে।

এই শান্তিটুকু আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বলে পোস্ট লিখতে শুরু করলাম। কখন শেয়ার করতে পারবো জানি না। আজ তবে এই পর্যন্তই থাক। কেননা খুব ইচ্ছে করছে এই শান্তিটুকু কিছুক্ষণ মনের মধ্যে থাকুক, আরো দু একটা গান উপভোগ করি একান্ত বসে। কারন কিছুক্ষণ পরেই এই পরিবেশটা আর থাকবে না।

এমন প্রশান্তি থাকুক প্রতিটি মানুষের জীবনে। সকলের দুঃখ, কষ্ট নির্মূল হোক, সকলের জীবন ভরে ওঠুক আনন্দে, এই প্রার্থনা রইলো। সকলে খুব ভালো থাকবেন।

Sort:  
Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68381.81
ETH 2449.96
USDT 1.00
SBD 2.63