"কিছু কিছু সংবাদ বোধহয় জীবনে না পাওয়াই ভালো"

in Incredible Indialast year (edited)
20230521_004156_0000_124207.png
"Edited by canva"

Hello,

Everyone,

কমিউনিটির কিছু কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এই সময় একটি বান্ধবীর ফোন এলো, কিন্তু কাজটা যেহেতু অনেক জরুরী, সেই কারণে ওর ফোনটা রিসিভ করলাম না। ভাবলাম হাতের কাজটা সেরে নিয়ে তারপর ওকে আবার কল করব। যেহেতু বান্ধবী কল করেছিল সেহেতু গুরুত্ব কিছুটা হলেও কমই দিয়েছি। কারণ বান্ধবীর সাথে কথা বলার থেকেও কমিউনিটির কাজটা করা বেশি জরুরী ছিল সেই মুহূর্তে।

একবার রিং হয়ে কলটি কেটে যাওয়ার পরেও যখন মিতালী দ্বিতীয়বার ফোন করল, তখন মনে হল নিশ্চয়ই কিছু জরুরী কথা আছে, না হলে পরপর দুবার ফোন করবে না। তাই ভাবলাম ফোনটা রিসিভ করে ওকে বলে দিই যে, আমি কিছুক্ষণ বাদে ওকে কল করছি। ফোনটা রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে ওর গলা শুনে বুঝলাম ও কান্না করছে।

প্রথমত এটাই মনে হল নিশ্চয়ই হ্যাজব্যান্ডের সাথে কোনো ঝামেলা হয়েছে অথবা পারিবারিক কোনো অশান্তি। সাধারণত মন খারাপ থাকলেই আমরা বান্ধবীদের সাথে কথা বলে মন হালকা করার চেষ্টা করি। এরকম কিছু হয়েছে সেটা ভেবেই, ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাওয়ার আগেই ও আমাকে প্রশ্ন করলো, -

"শম্পা তোর অঞ্জনার কথা মনে আছে? আমাদের সাথে স্কুলে পড়তো।

সাথে সাথেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো একটি মেয়ের প্রাণ খোলা হাসিমুখ। মেয়েটি অন্য কেউ নয় অঞ্জনা। ওর সাথে শেষবার দেখা হয়েছিল যখন আমি কলেজে পড়ি। ফাইনাল পরীক্ষার সময় বনগাঁর একটি স্কুলে,ঠিক আমার বেঞ্চের থেকে দুটো বেঞ্চ পরেই অঞ্জনার পরীক্ষার সিট পড়েছিল।

পরীক্ষার সময় আমরা একই ট্রেনে যাতায়াত করতাম। ওর সঙ্গে পরিচয় আমার ক্লাস সেভেন থেকে। উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পর যখন কলেজে ভর্তি হলাম, সে বছরই ওর বিয়ে হয়। প্রাণোচ্ছল একটি মেয়ে, সব সময় মুখে একটি মিষ্টি হাসি লেগে থাকতো। গায়ের রং যদিও কালো, কিন্তু বিশ্বাস করুন অপূর্ব এক মিষ্টতা ছিলো ওর চেহারার মধ্যে। খুব সুন্দর গান করতো। যদিও কোনদিন ও গান শেখেনি।

যাই হোক মিতালী কথাটা শুনে এক মুহূর্তের মধ্যে এই স্মৃতিগুলো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আমি হাসতে হাসতে ওকে প্রশ্ন বললাম, -

"কেন মনে থাকবে না? তবে বহু বছর যোগাযোগ নেই তাই হয়তো এখন দেখলে চিনতেও পারবো না। কারণ বিয়ের পরপরই ও বেশ মোটা হয়ে গিয়েছিল এবং আজকে এত বছর পরে যখন মা হয়ে গেছে, তখন চেহারার আরো পরিবর্তন হয়েছে এটাই স্বাভাবিক।"

আমি উল্টে ওকে প্রশ্ন করলাম,-

"তোর সঙ্গে কি অঞ্জনার দেখা হয়েছিল? হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞাসা করলি?"

কান্না ভেজা গলায় মিতালী জানালো, -

"নারে ওর সঙ্গে দেখা হয়নি, আর হবেও না কখনো।"

কথাটা শুনে দু মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আর কখনো দেখা হবে না মানে? প্রশ্নটা করতে যাব এমন সময় উল্টো দিক থেকে মিতালি বলল, -

"অঞ্জনা আর নেই। গত পরশুদিন ও সুইসাইড করেছে।

এক মুহূর্তে মনের মধ্যে অঞ্জনার প্রাণোচ্ছল মুখটা আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠল।অবাক হয়ে মিতালীকে জিজ্ঞেস করলাম,-

"বলছিস কি ও তো বেশ ভালই ছিলো, তাহলে হঠাৎ সুইসাইড কেন করল রে,জানিস কিছু?"

উত্তরে শুনলাম মিতালীকে আমাদেরই একজন বন্ধু ফোন করেছিল, যার শ্বশুরবাড়ি অঞ্জনার শ্বশুরবাড়ির পাশে। সেখান থেকেই ও শুনেছে অঞ্জনা আর নেই। ওর তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে। শ্বশুর শাশুড়ি ও আছেন, কিন্তু ওর স্বামী কর্মসূত্রে বাইরে থাকে।

মিতালী আরো বলল এটি নাকি সুইসাইড নয়। ওকে নাকি খুন করে সেটাকে সুইসাইড বলে চালানো চেষ্টা করেছে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ওর উপরে মানসিকভাবে শুরুর থেকেই নাকি অত্যাচার করতো। যদিও সেই সম্পর্কে ও কখনোই আমাদের কিছু বলেনি।

শেষবার যখন ওর সঙ্গে দেখা হয়েছিল সাথে ওর শাশুড়ি ছিল। শুধু সেদিন বললে ভুল হবে যে কদিন আমাদের পরীক্ষা ছিল প্রতিদিনই অঞ্জনা ওর শাশুড়ির সাথে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিল। ভাবতাম যেহেতু নতুন বউ তাই তিনি সাথে যান।

এই কথাটা মিতালীকে জানানোর পরেই মিতালী আমাকে জানালো,ওর শ্বশুর বাড়ি থেকে ওকে কখনোই কোথাও একা যেতে দেয়া হতো না। কারণ ওদের আশঙ্কা ছিল অঞ্জনা হয়তো ওদের অত্যাচারের কথা অন্য কাউকে বলে দিতে পারে এবং যেহেতু অঞ্জনার বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না, সেই কারণেই অঞ্জনা মুখ বুজে এই সংসারটা এত বছর করে চলেছে।

কারণ বাবা মায়ের সম্মান এবং তাদের কাছে ফিরে যাওয়ার থেকে ওর কাছে এই সংসারে থেকে যাওয়াটাই উচিত বলে মনে হয়েছে। এমনকি ওর স্বামীর সাথে ওর সম্পর্ক খুব বেশি ভালো ছিল না। প্রায়শই ওদের বাড়ির সকলের সাথেই অঞ্জনার অশান্তি হতো।

people-ge7a623cfc_1280.jpg

source

"অঞ্জনার সাথে এমন কতো দুষ্টুমির স্মৃতি আছে স্কুল জীবনে"

তবে যত বছর অঞ্জনার সাথে আমরা মিশেছি ও কিন্তু খুবই সাধারণ একটি মেয়ে, যার ভিতরে কোনো জটিলতা ছিল না। আর এই কারণেই হয়তো আজকে মেয়েটির জীবনের এই পরিণাম হলো। খবরটা শুনে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। কারণ ও চলে গেলেও ওর সন্তান কিন্তু এই পৃথিবীতেই রয়ে গেল, যাকে মাতৃহারা হয়েই বাঁচতে হবে।

অঞ্জনার সঙ্গে যদি কখনো কথা বলার সুযোগ হতো অন্ততপক্ষে ওকে এইটুকু বোঝাতাম আর কারোর জন্য না হোক, যেন বাচ্চাটির মুখের দিকে তাকিয়ে ও যেন এই ভুল পদক্ষেপ না নেয়।

মিতালী কথাটা শুনেই আমাকে ফোন করেছে, কিন্তু আমি সত্যিই ভাবিনি এত বছর বাদে একজন বান্ধবীর সাথে আর একটা বান্ধবীর সুইসাইড করার বিষয়টি নিয়ে এইভাবে কথা বলতে হবে। অঞ্জনার সঙ্গে বহু বছর দেখা হয় না, আর যদি সারা জীবনেও না হতো, তবুও ওর ওই হাসি মুখটাই আজীবন মনের কোনে থেকে যেত।

কিন্তু আজকে এই মৃত্যুর সংবাদটা সত্যিই মনটা বিষাদে পূর্ণ করে তুলল। অঞ্জনার মতন একটা মেয়ের জীবনের পরিনাম এইরকম হবে সত্যিই কখনো ভাবি নি। আসলে জীবন কখন কাকে, কোন পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করায়, সেটা আগে থেকে বলা সত্যিই খুব কঠিন।অঞ্জনা হয়তো অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত ও হেরে গেছে।

rest-in-peace-g851a2fa8a_1280.jpg

source

"ভালো থাকিস বান্ধবী"

আমি সত্যিই জানিনা এটি সুইসাইড নাকি মার্ডার, এই সমস্ত কিছু আজ আলোচনার উর্ধ্বে। কারণ সত্যি এটাই অঞ্জনা আজ আর নেই, আর ফিরবেও না কখনো।

তবে অঞ্জনার মতন এইরকম পরিস্থিতির শিকার হয়তো আরো অনেক মেয়েরাই রয়েছে। যদি এরকম কোনো মেয়ের সঙ্গে আপনাদের কারোর পরিচয় থাকে, তাহলে অবশ্যই তাকে বোঝাবেন, মুখ বুজে কোনো অন্যায়কে দিনের পর দিন মেনে নিলে তার পরিণতি হয়তো এই ধরনের কিছু হবে।

তাই মুখ বুজে মেনে নেওয়ার বদলে,যদি মুখ খুলে প্রতিবাদ করে জীবনটাকে নতুন করে শুরু করা যায়, তাহলে হয়তো জীবনের অন্য আরেকটা দিক খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। অঞ্জনাকে কখনো আর এই কথাটা বলার সুযোগ হবে না জানি, কিন্তু আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম, যাতে আপনাদের আশেপাশে থাকা কোন অঞ্জনার জীবনের পরিণতি এইরকম না হয়।

আমি জানিনা মেয়েটার ভাগ্যটা এরকম কেন হলো তবে, ওর উদ্দেশ্যে শুধু বলতে চাই-হয়তো আর দেখা হবে না কখনো,কিন্তু তোর স্মৃতি থেকে যাবে আজীবন,শুধু এইটুকু প্রার্থনা করি ওপারের জীবনে ভালো থাকিস বান্ধবী।

খুবই ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজকের লেখাটি এখানেই শেষ করলাম। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।শুভরাত্রি।

Sort:  
Loading...
 last year 
  • আপনার লেখাটা পড়ার পর খুব কষ্ট লাগলো। তবে এটা বাস্তব যে এখনো আমরা হয়তোবা পুরুষ শাসিত সমাজের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছি নিজেদেরকে।
  • হাজারো মেয়ে, হাজারো নারী এবং হাজারো মা এখনো নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে সারা পৃথিবীতে। একজন শাশুড়ি যদি তার পুত্রবধূকে, মেয়ের চোখে দেখতে পারেন তখনই হয়তোবা এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
  • আসলে নিজেকে আত্মহত্যার তালিকাভুক্ত করে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। আমাদেরকে ভুলে যেতে হবে এই নারী-পুরুষ ভেদাভেদ। মানুষ হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতে হবে নিজের কাছে এবং সমাজের কাছে।

TEAM 1

Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator08. We support quality posts , good comments anywhere and any tags.
Curated by : @ubongudofot

Screenshot_20221130-164846_Canva.jpg

 last year 

যখন স্কুল জীবন অতিবাহিত করেছি তখন কতই না বন্ধু বান্ধব ছিল। তাদের সাথে কতইনা দুষ্টামি এবং আনন্দ দুঃখ বেদনা সময় গুলো অতিবাহিত করেছি।

বিশেষ করে একেক জনের প্রতিভা একেক রকম। এগুলো সত্যিই মনে রাখার মত স্মৃতি। তবে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সংসার জীবন পরিচালিত করতে হয়।

কারো কারো জীবন সুন্দরভাবে পরিচালিত হয় আবার কারো কারো জীবন অপূর্ণতা থেকে যায় বিভিন্ন পারিবারিক সমস্যা ব্যক্তিগত সমস্যা পরিপ্রেক্ষিতে। তবে অঞ্জনার এই বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক যদি মার্ডার কিংবা সুসাইড হয়ে থাকে।

যখন একটি মেয়ে শশুর বাড়িতে পদার্পণ করে তখন সে সম্পূর্ণ নতুন তাকে নিজের মেয়েদের মত করে বড় করতে হবে। চাকরের মত নয় ভালোবেসে হৃদয়ে জায়গা করে দিতে হবে।

পরিশেষে তার জন্য দোয়া রইল সে যেন ওপারের জীবনে ভালো থাকে সৃষ্টিকর্তা তাকে যেন ক্ষমা করে দেয় এবং সমস্ত পরিবারকে সঠিক বুঝ দান করে এই দোয়া করি।

 last year 

আপনার পোস্ট প্রথম যখন পড়তে শুরু করলাম ভাবছিলাম হয় তো বা আনন্দ কথা বার্তা আমাদের সবার মাঝে শেয়ার করবেন কিন্তু না আপনার পোস্ট পড়ে কিছু টা খারাপ লাগলো।

আপনার পোস্টে জানতে পারলাম যে অঞ্জনা নামে আপনার এক ফেন্ড সুইসাইড করেছে,, তবে সিউর না যে সুইসাইড করেছে না মেরে ফেলা হয়েছে,,,,সর্বপরি তার হত্যার তদন্ত করা হোক এই টাই আশা করি।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 65375.87
ETH 3337.31
USDT 1.00
SBD 2.63