"মায়ের স্মৃতি বিজড়িত একটি মন খারাপের দিন"
Hello,
Everyone,
আজ সারাটা দিন মাকে বড্ড মিস করেছি। যদি বলি প্রতিদিন মায়ের কথা মনে পড়ে, তবে তা মিথ্যা বলা হবে। তবে এমন কিছু কিছু দিন থাকে, যেদিন বিনা কারণেই সারাদিন যেন মায়ের কথা ভেবে মনটা খারাপ হয়।
কোনো কারন ছাড়াই মায়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হয়। সেদিন যদি নিজের নামটা ধরে অন্য কেউ ডাকে বড্ড বেশি বিরক্ত লাগে, কারণ কিছু কিছু দিন মনে হয় অন্য কেউ নয়, মা একটু নাম ধরে ডাকুক। আর আজ ঠিক রকমই একটি দিন কাটালাম।
আজ হিসাব করে দেখলাম, মায়ের সাথে এই জীবনে কত কিছুই করা হয়নি। কোনোদিন ভিডিও কলে কথা বলা হয়নি, কোনোদিন সেলফি তোলা হয়নি, কোনোদিন ম্যাচিং করে শাড়ি পড়া হয়নি, কোনোদিন কোনো রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া হয়নি, কোনোদিন মাকে সাথে নিয়ে গিয়ে মায়ের পছন্দের শাড়ি কিনে দেওয়া হয়নি। যখন মা ছিল তখন স্মার্টফোনের এতো বেশি চল ছিল না। তার থেকেও বড় কথা সেই সময় আমাদের সাধ্য ছিল না।
গতকাল রাতে @hasnahena দিদির একটি পোস্ট ভেরিফাই করার সময়, এক মুহূর্তে ছোটবেলার স্মৃতিতে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেই সময় থেকেই ঠাকুরমার ও মায়ের কথা মনে পড়ছিল। আমি কমেন্টেও সে কথা উল্লেখ করেছিলাম। তারপর থেকে বোধহয় ওনাদের কথা একটু বেশি মনে পড়াতে, রাতে মায়ের স্বপ্নও দেখলাম।
অসুস্থ থাকাকালীন মায়ের মুখটা বড় বিষন্ন থাকতো। তবে ছোটবেলার স্মৃতিচারণায় আমার মায়ের মুখ সবসময় হাসি খুশি। কপালে বড় একটা লাল রঙের টিপ, সিঁথি ভর্তি লাল সিঁদুর, ঠিক সেই মুখখানি কালরাতে স্বপ্নেও দেখলাম। কি যে অনাবিল তৃপ্তি অনুভব করেছি ঘুমের ঘোরে, বলে বোঝাতে পারবো না।
খোলা উঠোনের মধ্যে ছোটবেলার মতন সেই দৌড়াদৌড়ি, মায়ের আঁচলের নীচে দুষ্টুমি করে লুকিয়ে যাওয়া, মায়ের বকা, মায়ের সেই চিৎকার করে, আমার নাম ধরে ডাকা সবকিছু কাল রাতে আরও একবার অনুভব করলাম।
ঘুমের ঘোরে ভাবছিলাম নিজের বাড়িতে শুয়ে আছি, ছেলে বেলার মতো দুই দিদির মাঝে। বেড়ার ঘর, টিনের ওপরে টুপটাপ বৃষ্টির আওয়াজ, হালকা কাঁথা গায়ে, হয় বড়দি না হলে ছোটদি, দুজনের একজনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকা সেই ছোট্ট আমিকে দেখলাম কাল আরও একবার।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙলো। হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখলাম চার দেওয়ালের মধ্যে শুয়ে আছি। যেখানে বেড়ার চিহ্ন মাত্র নেই। বুঝলাম কোনো দিদিই পাশে নেই, দিদিদের ভেবে পাশের কোলবালিশটা জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম।
এই বাড়িতে তো কখনো মা আসেই নি, তাহলে মা ডাকবে কি করে? সবকিছু লন্ডভন্ড হলো, এক মুহূর্তে গলার কাছে সমস্ত অনুভূতিগুলো কেমন যেন দলা পাকিয়ে, কান্না এসে গেলো। বেশ কিছুক্ষণ কাঁদলাম।
আফসোস,অভিযোগ,খারাপ লাগা, কষ্ট, অপূর্ণতা সবকিছু ঘিরে ধরল চারিদিক থেকে, যেগুলো থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করে, বিছানা ছাড়লাম অনেক সকালে । এটা ছিল আজকের সকালের শুরু।
আজ সারাদিন অনেক সাংসারিক কাজ করেছি। বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় কাজও করেছি, যেটা হয়তো আজ না করলেও হতো, তবুও বোধহয় মানসিকভাবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্য করলাম। কিন্তু তবুও তা সম্ভব হয়নি। হাজার কাজের ব্যস্ততায়ও এতো কষ্ট অনুভব করেছি অনেক দিন বাদে।
সবার অলক্ষ্যে অঝোরে কেঁদেছি, কারণ চোখের জল দেখে হাজার মানুষের হাজারো প্রশ্ন, হাজারো জিজ্ঞাসা আরও বেশি বিব্রত করে আমাকে। প্রতিটা মানুষ নিজেদের মতো করে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে আমার কান্নাকে। তারা নিজেদের মতো করে হাজারো কারণ খুঁজতে থাকে আমার মন খারাপের।
তবে আসল কারণটা হয়তো কারো পক্ষেই বুঝে ওঠা সম্ভব হবে না। তাই মনে হয় নিজের মনের ভার, নিজের চোখে জল, নিজের মন খারাপ, সবটাই থাক না ব্যক্তিগত, তাতে সমস্যা কোথায়?
অনেকদিন যাবৎ মানসিক টানাপোড়েন, প্রিয় মানুষের অসুস্থতা, সবকিছু মিলিয়ে বোধ হয় অনেক বেশি ঘেঁটে আছি। এই কারণে মানসিক শান্তি বড্ড প্রয়োজন অনুভব করছি, যার নিশ্চিন্ত ঠিকানা হল মায়ের কোল। আর সেটা নেই বলেই হয়তো ওগুলো আরো বেশি করে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ভিতরে।
আজ শুধু মনে হচ্ছে মায়ের সাথে কথা বলতে পারলে বোধহয় সব কিছু হালকা হয়ে যেতো। আমি আবার উঠতে পারতাম, লড়তে পারতাম, সমস্ত খারাপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে পারতাম।
কিন্তু কেন জানিনা আজ বড্ড দুর্বল মনে হচ্ছে নিজেকে। মন খারাপের সাথে সাথে শারীরিক দিক থেকেও আজ বেশ অসুস্থ বোধ করছি। সকালটা শুরু করেছি একরাশ মন খারাপ নিয়ে, পোস্ট লিখছি চোখের জল মুছতে মুছতে।
জানি সব কাজ সেরে রাতে যখন শুতে যাবো, আবারও একরাশ মন খারাপ ঘিরে ধরবে আমাকে। তবে কাল সকালে আবার হয়তো সব ঠিক হবে, আবার মায়ের কথা চাপা পড়ে যাবে নিত্যদিনের ব্যস্ততায়, আবার নতুন করে, নতুন ভাবনায় মত্ত হবে মন। এইভাবেই তো বেঁচে আছি আমি, আপনি আমরা সকলে, তাই না?
কাল অবশ্য দিদির বাড়িতে যেতে হবে, ওই যে বললাম প্রিয়জনের অসুস্থতা পিছু ছাড়ছে না কিছুতেই। দাদার ব্রেন সার্জারির আগে আরও কিছু টেস্ট করাতে হবে। কারণ এম আর আই রিপোর্ট ভালো আসে নি। তাই মানসিক লড়াই লড়তে হবে আরও একবার।
ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।
|
---|
আপনার পোস্টটি পড়তে পড়তে কখন যে আমার চোখের কোনে পানি এসে জমেছে বলতে পারব না। সত্যিই তো, মায়ের সাথে কখনো ম্যাচিং করে শাড়ি পড়া হয়নি। মাকে নিয়ে কখনো শাড়ি কেনা হয়নি।
পৃথিবীর সব মায়েরাই বোধ হয় এমনই। তাদের খুব একটা চাওয়া থাকে না।তাদের একটাই বড় চাওয়া থাকে,তাদের সন্তান যেন হাসিমুখে থাকে সুখে থাকে।
যেদিন থেকে মা চলে গেছে সেদিন থেকে আমি নিজেকে বারবার বলি এখন আর তোমার কেউ নেই। আপনার মনের অবস্থা আমি ভীষণভাবে অনুভব করতে পারছি। মা বিহীন সন্তানের জীবন কতটা কষ্টের এটা শুধু সেই ব্যক্তিই জানে যার মা বেঁচে নেই।
পৃথিবীর প্রতিটি মায়েরা যারা বেঁচে আছে বা দুনিয়াতে নেই তারা প্রত্যেকেই যেন ভালো থাকেন।পৃথিবীর সব মা যেন সন্তানের সাথে থাকেন এই কামনাই করছি।
চমৎকার একটি পোস্ট লিখেছেন।দিদি আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনার পোস্টটি পড়ে সত্যিই চোখে জল চলে আসলো। মনে মনে ভাবছিলাম কাছের মানুষগুলো না থাকলে কেমন অনুভূতি হয়। কিছুদিন আগে আমার জন্মদিনে আমি ঈশাকে বলছিলাম ।যখন আমার দিদা, শাশুড়ি মা থাকবে না ।কিভাবে চলবে আমার দিনগুলো। এইসব ভেবে আপনার মত কষ্ট আমিও পাই। আমি ছোট থেকেই মাকে কখনো কাছে পাইনি, তবুও মায়ের জন্য খুব কষ্ট হয়। আপনার মত সবাইকে একদিন এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। ঈশ্বরের কাছে কামনা করি, আপনার মা যেখানেই থাকুক ভালো থাক। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি। মন খারাপ করবেন না দিদি ।আসলে ছোটবেলার আবেগ কেউ কখনোই ভুলতে পারে না। মা হয়তো পৃথিবীর ছেড়ে চলে যাই ।কিন্তু তাদের প্রত্যেক মুহূর্ত আমাদের প্রতিটা মুহূর্তে মনে পড়ে। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
আমরা যখন কাউকে নিয়ে বেশি কল্পনা করি সেটাই রাতে স্বপ্নে দেখি। আপনি হাসনাহেনা আপুর একটি পোস্ট পড়ে সেখান থেকেই বেশি মনে পড়ছে আপনার মায়ের কথা।
যাদের এই পৃথিবীতে মা নাই তারাই একমাত্র জানে মা না থাকার কতটা ব্যথা। সবাইকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরোপারে পাড়ি দিতে হবে কিন্তু তাদের স্মৃতি সব সময় আমাদের ভিতরে রয়েই যাবে। আপনাকে কিভাবে সান্ত্বনা দেব তার ভাষা আমার জানা নাই। দিদি ভালো থাকবেন নিজের প্রতি যত্ন নেবেন।