"আলো আধাঁরির জীবনে কিছু ভালো মুহুর্ত"
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
রাত যতই অন্ধকার হোক না কেন, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ভোরের আলো ফুটবেই, এটা পৃথিবীর নিয়ম। ঠিক এরকম ভাবেই আমাদের জীবনেরও নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম রয়েছে। আমাদের জীবনের খারাপ সময় যতই দীর্ঘ হোক না কেন, একটা সময় তা অতিক্রম করে ভালো মুহূর্ত গুলো জীবনে ধরা দেয়।
শশুরমশাইকে নিয়ে অনেকদিন যাবৎ আমাদের টানা পোড়েন চলছে। তারপর লক্ষ্মী পূজার পরদিন থেকে আমিও অসুস্থ হয়ে পড়লাম। সংসারে সমস্ত কাজের ভার আমার শাশুড়ি মা একাই টেনে চলেছেন।
সবকিছু মিলিয়ে বেশ খারাপ সময় অতিক্রম করছি আমরা। এরই মাঝে এই খারাপ লাগা যেন আরও অনেকখানি গভীর হয়ে ধরা দিলো, যখন শশুর মশাইকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো।
বরাবর আমি শ্বশুর মশাইকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই, তবে এই সপ্তাহে আমি নিজে এতখানি অসুস্থ যে আমার পক্ষে ওনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া সম্ভব ছিলো না। এই কারণেই আমার ননদ ওনাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন।
এটাকে সৌভাগ্য বলবো নাকি দুর্ভাগ্য জানিনা, তবে শশুর মশাইয়ের অবস্থা এই মুহূর্তে খুব খারাপ। ভালো হওয়ার আর কোনো সম্ভবনা নেই। তবুও কিছু ওষুধের পরিবর্তন করে দিয়েছেন, সেগুলো শেষ করে আবার দশ দিন বাদে টেস্ট করে রিপোর্ট দেখাতে হবে।
সৌভাগ্য মনে হচ্ছে এই কারণেই যে, এই কঠিন সত্য বলে গুলো আমাকে নিজের কানে শুনতে হয়নি। আর দুর্ভাগ্য এই কারণে যে, মেয়ে হয়ে আমার ননদ কে নিজের বাবার শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে হয়েছে।
যেদিন ডাক্তার দেখাতে যাওয়া হয়েছিলো সেদিনই আমার ননদের বড় ছেলের জন্মদিন ছিলো। প্রতিবছর বড় করে অনুষ্ঠান হয় না ঠিকই, তবে আমাদের বাড়ির সকলে ননদের বাড়িতে গিয়ে জন্মদিন পালন করি। আমার শ্বশুরমশাইয়ের ননদের বড় ছেলের প্রতি একটা অন্যরকম টান আছে। কারণ ছোটবেলা থেকে তিনি ওকে অনেক আদর যত্নে বড় করেছেন। ছোটো জনের প্রতি টান আছে, তবে বড় জনের প্রতি একট বেশি।
এবার শ্বশুরমশাইয়ের শারীরিক অবস্থার কারণে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তাই ননদ রাতে বেলায় কেক এবং খাবার নিয়ে আমাদের বাড়িতে চলে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো।
মানুষের জীবনের কথা কিছু বলা যায় না। হয়তো একটা বছর ঘুরতে ঘুরতে শ্বশুরমশাই আমাদের সাথে থাকবেন না।তাই হয়তো ননদ ভেবেছে আদরের নাতির এই জন্মদিনটা অন্তত দাদু দিদার সাথে একসাথেই কাটুক।
মানুষ মরণশীল কথা আমরা সকলেই জানি। তবে কাছের মানুষের প্রতিদিন একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়ার সাক্ষী থাকার থেকে কঠিন বোধ হয় জীবনে আর কিছু হয় না।
শ্বশুর মশাইয়ের ক্ষেত্রে তেমনটাই হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকেই জানি একটা করে দিন কেটে যাওয়া মানে, তার জীবন থেকে আমাদের সঙ্গে থাকার মেয়াদ ফুরিয়ে আসছে একটু একটু করে। এ বছরে জন্মদিনের মতন করে বোধহয় আর কোনো জন্মদিন কাটবে না। কারণ একজন মানুষের অনুপস্থিতি আজীবন থেকে যাবে।
অনেক কষ্ট করে শ্বশুর মশাইকে তুলে আনা হলো। দুই নাতিকে সাথে নিয়ে কেক কাটলা। শ্বশুর মশাই বেশ খুশি হয়েছিলেন, ছবিটিতে তার হাসি দেখলে আপনারাও সেটা বুঝতে পারবেন। বয়সের সাথে সাথে বয়স্ক মানুষগুলো একটু করে বাচ্চা হয়ে ওঠে, সেটা আমার শ্বশুর মশাইকে দেখে আমি অনুভব করলাম।
ক্যামেরাবন্দি এই মুহূর্তগুলো হয়তো পরের বছর আমাদের এই দিনের স্মৃতিচারণনা করতে সাহায্য করবে। কেক কাটা শেষে খাওয়া-দাওয়া করে, ননদরা বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলো।
তবে একটু ভালো মুহুর্ত কাটিয়ে, আমার মন খারাপ শুরু হয়েছিল, কারণ তখন থেকে জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে হারানোর কষ্টের ব্যাথা মনের ভেতরে নাড়া দিচ্ছিলো। কারণ ২২ তারিখের পরে ২৩ তারিখ ছিলো সেই দিন, যেদিন মাকে হারিয়ে ছিলাম চিরতরে।
যাইহোক, যেমন শুরুতেই বললাম আলো আধাঁরের মত জীবনে ভালো লাগা মন্দ লাগাগুলো এমন ভাবেই পালা বদল করে। আর এই ভাবেই বোধহয় আমরাও বেঁচে থাকি বছরের পর বছর।
ভালো থাকবেন সকলে।
Thank you so much for your support @malikusman1 Sir. 🙏
যারা এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যায় শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারে। জীবনে একটা সময় এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমাদেরও কাটাতে হয়েছে তাই আপনার পোস্টটা অনেকখানি রিলেট করতে পারলাম। মৃত্যু চরম সত্য। তবুও মনকে বোঝানো কঠিন।
ছেলেমেয়ে হয়ে বাবা-মায়ের সম্পর্কে এধরণের কথা শোনা যে কতটা কঠিন সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। শুধু যে বাবা-মায়ের কথা শুনতে হয়েছে সেটা না শাশুড়ি মায়ের ক্যান্সারের কথাও শুনতে হয়েছে।
ছবিগুলি দেখে আমার শাশুড়ি মায়ের শেষদিনগুলির কথা মনে পরে গেলো। আমার ছেলের জন্মদিন ছিল তার শেষ কোনো জন্মদিনে উপস্থিত হওয়া। সেদিনও এমনই একটা ঘরোয়া কেক কাটার আয়োজন হয়েছিল। এর ৯ দিন পরে সে আমাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।